আফগান গ্রামে এখনো তালেবান শাসনঃ তালেবানদের ন্যায়বিচার বনাম পশ্চিমা দালালদের অবিচার(বিবিসি থেকে প্রথম আলো)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৩৮:৫৭ রাত
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের অবসান হয়েছে ২০০১ সালে। মার্কিন প্রশাসনের সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সরকার ক্ষমতায় বহাল প্রায় ১২ বছর ধরে। এর পরও দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামে এখনো এই সরকারের শাসন পৌঁছায়নি। কোনো কোনো গ্রামে তা আছে নামে মাত্র। এসব গ্রামে বিচারের প্রয়োজনে এখনো মানুষকে ধরনা দিতে হচ্ছে তালেবান নেতাদের কাছে। কিছু গ্রামে রয়েছে তালেবানের ছায়া সরকার। আজ সোমবার বিবিসির অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। আফগানিস্তানের অনেক গ্রামে কারজাই সরকারের সুশাসন নেই। বিচারব্যবস্থার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনেকে সুবিচারের আশায় তালেবানের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে বক্তব্য দেন।
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কুনারের চাপাদারা জেলার বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী গুল জামান। তিন বছর ধরে তিনি তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি জানান, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কয়েকজন লোক তাঁর ভাই মোহাম্মদ জামানকে হত্যা করে। এর পরের তিন বছর তিনি বিচার চেয়ে আদালত এবং বিচারকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন।
গুল জামানের ভাষ্য, ‘তাঁরা প্রত্যেকে আমার অভিযোগ শোনার জন্যও ঘুষ চেয়েছেন। কিন্তু আমি তা দিতে না পারায় তাঁরা আমাকে পথভ্রষ্ট পশুর মতো তাড়িয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘তিন বছর পর সেই হত্যাকারীদের একজন ফিরে এসে আমার আরেক ভাইকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে। তবে এবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের মনে হয়েছিল এবার হয়তো বিচার পাব।’
গুল জামান পরে শুনানির দিন আদালতে হাজির হয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বিচারক আমার কাছে জানতে চান—আমি কী দিতে পারব। কিন্তু আমার কিছুই দেওয়ার নেই বলার পর বিচারক আসামির কাছেও একই জিনিস জানতে চান।’
গুল জামানের ভাষ্যমতে, আসামি বিচারককে একটি ষাঁড়, একটি গাভি ও ১০ কেজি আখরোট দেওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেন। পরে আসামিদের একজন তালেবানে যোগ দেন। সাধারণ লোকজন বিচারক ও অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থা নিয়ে খুব বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘শেষ আশ্রয় হিসেবে আমি প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও তালেবানের কাছে বিচার চাইছি।’
এই গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা ফজলে মোহাম্মদ। তিনি জানান, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাঁর পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করা হয়। তিনিও বিচারের আশায় সরকারের নিয়োগ দেওয়া বিচারকদের কড়া নেড়েছেন। কিন্তু ঘুষের জন্য পোহাতে হয়েছে হয়রানি। এভাবে কয়েক মাস কাটার পর তিনি তালেবানের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি জেলা তালেবানের কাছে যান। সেখানে সংগঠনটির বিচারক ও মোল্লারা ছিলেন।তাঁরা পবিত্র কোরআন ও শরিয়া আইন অনুযায়ী এ মামলার রায় দেন। জমি দখল করা ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে জমি ফেরত দিতে বলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি এ রায় মেনে নিতে না চাইলে তাঁকে বাধ্য করা হয়।
তালেবানের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘এই বিরোধপূর্ণ জমির মালিক আমি এবং কেউ এটি দখল করতে চাইলে তাঁকে তালেবানের রোষের মুখে পড়তে হবে। এরপর থেকে কেউ আর আমার জমি দখল করার সাহস করেনি।’
চাপাদারা জেলার গভর্নর খান মোহাম্মদ সাফি বলেন, ‘আমাদের জেলায় কোনো বিচারক নেই। কৌঁসুলি নেই। তাঁরা রাজধানী থেকে কাজ করেন। তাই এসব লোকের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। ঠিক সময়ে মামলার মীমাংসা হয় না। তালেবানের ক্রমাগত হামলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কোনো বিচারক এখানে কাজ করতে চান না।
কুনার প্রদেশের রাজধানী আসাদাবাদের সরকারি কৌঁসুলিরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে তাঁরা স্বীকার করেছেন, কুনারের চার জেলায় কোনো বিচারক ও সরকারি কৌঁসুলি নেই।
কাবুলের সুপ্রিম কোর্টের তথ্য পরিচালক মোহাম্মদ সাদেক ঝোবাল বলেন, গুল জামান যদি মনে করেন তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছে, তাহলে তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয় আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন বা তথ্য প্রমাণ নিয়ে কাবুলে আসতে পারেন। আমাদের সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন। বিচারকেরা কোনো গল্পের ওপর ভিত্তি করে রায় দিতে পারেন না।
সরকারের মৌলিক সেবার ঘাটতির কারণে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় শাসন পরিচালনায় সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষকে তালেবানের বিচারিক ব্যবস্থার শরণাপন্ন হতে হচ্ছে; যা তাঁদের কাছে কঠোর, কিন্তু কার্যকর বলে মনে হয়।
সূত্রঃ প্রথম আলো
বিষয়: বিবিধ
১০৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন