আল-শাবাব কেনো নাইরোবিতে হামলা করেছে(আল-জাজিরা কর্তৃক আল-শাবাবের মুখপাত্রের সাক্ষাৎকার)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:২১:৫৬ রাত
শনিবার শুরু হওয়া ওই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ জন নিহত এবং আরো ১৫০ জনেরও বেশি আহত হয়। সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আল-শাবাব যোদ্ধাদের বন্দুকযুদ্ধ চলছে।
হামলার নেপথ্য কথা জানতে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরার হামজা মোহাম্মদ আল-শাবাবের সামরিক মুখপাত্র শেখ আবদুল আজিজ আবু মুসকাবের একটি সাক্ষাৎকার নেন।
সাক্ষাৎকারে আবদুল আজিজ মুসকাব নাইরোবিতে তাদের হামলার কারণ সম্পর্কে বলেন। এ সময় তিনি কেনিয়ার সরকার কর্তৃক ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত মোম্বাসা ইউথ সেন্টারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েও আলোচনা করেন।
আল-জাজিরা অনলাইনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি আরটিএনএন’র পাঠকদের জন্য এখানে তুলে দেয়া হলো:
আল-জাজিরা: কেনিয়ার সেনাবাহিনী আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সোমালিয়ায় প্রবেশ করেছে আজ প্রায় দুই বছর হয়েছে। কিন্তু আল-শাবাব এতোদিন পরে এসে কেন নাইরোবিতে হামলা চালালো?
শেখ আবু মুসকাব: নাইরোবিতে হামলা চালাতে গিয়ে আমরা আসলে অনেক দেরি করে ফেলেছি। তবে আরো আগেই আমরা হামলা চালাইনি এ কারণে যে, তারা ধারণা করছিল- আমরা হামলা চালাবো। কিন্তু আমাদের কৌশল হলো- আমাদের শত্রুদের ওপর আমরা তখনই হামলা চালাবো, যখন তারা ভাববে যে, আমরা এখন আর হামলা করবো না। এবার তারা ভাবেনি- আমরা হামলা করবো, আর এ কারণেই এসময়টাকে আমরা হামলা চালানোর জন্য বেছে নিয়েছি। এটাই ছিল হামলার সবচেয়ে মোক্ষম সময়।
আল-জাজিরা: এটাই কি নাইরোবিতে আল-শাবাবের প্রথম হামলা?
শেখ আবু মুসকাব: এই মুহূর্তে এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- আমরাই এখন হামলা চালিয়েছি। আমরা আগেও হামলা চালিয়েছি কিনা তা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আল-জাজিরা: ওয়েস্টগেট শপিংমলে হামলার সময় সেখানে ক্রেতাদের প্রচুর ভীড় ছিল। কিন্তু আল-শাবাব বেসামরিক লোকজনে পূর্ণ একটি জায়গায় হামলা চালালো কেন?
শেখ আবু মুসকাব: ওয়েস্টগেট শপিংমল এমন একটি জায়গা যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা শপিং করতে আসেন, যেখানে কুটনৈতিকরাও জড়ো হন। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে কেনিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আনন্দ বিনোদনের জন্য যান। ওয়েস্টগেট এমন একটি শপিংমল যেখানে ইহুদি এবং মার্কিনিদের অনেক দোকান আছে। আর এসব কারণেই আমরা সেখানে হামলা করেছি।
আর বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ব্যাপারে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে কেনিয়াকেই আগে জিজ্ঞেস করা উচিত যে, তারা কেন উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়া সোমালি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ করেছে। কেন তারা গেডো এবং জুবা অঞ্চলের নিরপরাধ জনগণের ওপর বোমা হামলা করেছে। বেসামরিক নাগরিকদের নিহত হওয়ার ব্যাপারে আমাদেরকে প্রশ্ন করার আগে তাদেরকেই প্রশ্ন করা উচিত।
আল-জাজিরা: আল-শাবাব দাবি করে, তারা মুসলিম এবং সোমালিদের রক্ষা করার জন্য লড়াই করছে। কিন্তু ওয়েস্টগেট শপিংমলে তো অনেক মুসলিমও নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
শেখ আবু মুসকাব: ইতিহাস আমাদের দাবির সমর্থন করে। আমরাই একমাত্র সোমালিদের এবং সোমালিয়াকে রক্ষা করছি। আমরাই একমাত্র সংগঠন যারা সোমালিয়ার ঐতিহাসিক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমরাই একমাত্র সোমলিয়ার শত্রুদেরকে ‘না’ বলার ক্ষমতা রাখি।
ওয়েস্টগেটে যারা নিহত হয়েছে তারা মূলতঃ সেনা সদস্য। যারা আমাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কিন্তু যেসব বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে তারা যে আমাদের গুলিতেই নিহত হয়েছে তার কোনো প্রমাণ নেই। ওয়েস্টগেট শপিংমলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সব মুসলিমকে ছেড়ে দিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীরাও এ ব্যপারে আমাদের পক্ষেই কথা বলবে।
আল-জাজিরা: আপনি কি মনে করেন এ হামলার ফলে কেনিয়া সোমালিয়া থেকে তার সেনাদের সরিয়ে আনবে?
শেখ আবু মুসকাব: এই প্রশ্নের জবাব আমরা দেবো না। এর জবাব দেবে কেনিয়ার সরকার। কেনিয়ার সরকারই সিদ্ধান্ত নিবে তারা তাদের সেনাবাহিনী সোমালিয়া থেকে প্রত্যাহার করবে কি করবে না।
যদি সোমালিয়া থেকে তারা তাদের সৈন্য প্রত্যাহার না করে তাহলে এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে। যদি তারা সৈন্য প্রত্যাহার না করে তাহলে এমনও হতে পারে প্রতিদিনই কেনিয়ার শহরগুলোতে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
আল-জাজিরা: ২০১১ সালে কেনিয়ার সেনাবাহিনী সোমালিয়ায় যাওয়ার আগে কেনিয়ার সরকারের সঙ্গে আল-শাবাবের সম্পর্ক কেমন ছিল?
শেখ আবু মুসকাব: আমরা সব সময়ই জানতাম যে কেনিয়া সোমালিয়ার জনগণের শত্রু। যখন থেকে আমরা সীমান্ত শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতাম তখন থেকেই আমরা এটা জানতাম। কেনিয়া আমাদের দেশে হামলা চালাবে তা অপ্রত্যাশিত ছিল না। আমরা তাদের বিশ্বাস করিনা এবং তাদের ওপর ভরসাও করি না।
আল-জাজিরা: কেনিয়া বলছে যে এই হামলার দোসরদের পরাজিত না করা পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
শেখ আবু মুসকাব: আমরা এই হামলার জন্য দায়ী নই। আমরা শুধু আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছি। সোমালিয়ার জনগণের অধিকারের জন্য লড়ছি।
আজ কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার চেয়ে এতো বেশি দুর্বৃত্তপনার রেকর্ড আর কারো ঝুলিতে নেই। তিনি ওয়েস্টগেটে আজ সামান্য কয়েকজন লোকের মৃত্যুর ব্যপারে হম্বিতম্বি করছেন। অথচ তিনিই আবার কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় কয়েক হাজার লোককে হত্যা করার জন্য দায়ী। কেনিয়ার জনগণ যদি কাউকে কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করতে চায় তাহলে প্রথমে তাকে দিয়েই তাদের শুরু করা উচিত।
আল-জাজিরা: সোমালি এবং কেনিয়ার সরকারসহ অনেকেই বলছে যে আল-শাবাব বেসামরিক লোকজনে পূর্ণ একটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে। এ থেকে তাদের দুর্বলতাই প্রকাশ পায় এবং অচিরেই তারা একটি অতীত ইতিহাসে পরিণত হবে। এটা কি সত্যি?
শেখ আবু মুসকাব: আমদেরকে মূল্যায়ন করার তারা কে? এদের দুর্বলতা তো প্রকাশ্য, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। সোমালি সরকার শুধু ট্যাঙ্ক ব্যবহার করেই ক্ষমতায় টিকে আছে। কেনিয়ানরা তো শুধু বিদেশি সহায়তার ওপরই টিকে আছে। এমনকি ওয়েস্টগেটের মতো একটি সামান্য বিষয়েও তাদেরকে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়, তারা পশ্চিমাদের সহায়তা চেয়েছে।
আল-জাজিরা: সবশেষে, কেনিয়া মোম্বাসা ইয়ুথ সেন্টারকে (এমওয়াইসি) একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সংগঠনটি অনেকগুলো উপলক্ষেই আল-শাবাবকে সহযোগী হিসেবে গ্রহন করেছে। আল শবাবের সঙ্গে এমওয়াইসি’র সম্পর্কটা আসলে কী?
শেখ আবু মুসকাব: এমওয়াইসি এবং আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক মুসলিমদের মধ্যকার সম্পর্কের মতোই। তারা আমাদের মুসলিম ভাই। ইসলাম আমাদের সম্পর্কের সাধারণ ভিত্তি এবং অন্যান্য মুসলিমের মতোই তারাও আমাদের কাছে একই অধিকার প্রাপ্য।
আল-জাজিরা অনলাইন অবলম্বনে মাহবুবুল আলম তারেক(আরটিএনএন)
http://america.aljazeera.com/articles/2013/9/23/q-a-al-shabab-defendsnairobiattack.html
বিষয়: বিবিধ
১২৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন