পরাজিত আমি

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের জন্য মরতে পারি ২০ জুন, ২০১৩, ০৪:৩৩:২০ বিকাল

দরজা খুলে রাস্তায় নামব বলে

রোজ রোজ সেজে গুজে নিজেকে ফকফকা করে

দরজার হাক খুলতে উদ্যোত হয়ে

এক পা দু পা করে এগোতে গেলে

হয় চেয়ার নয় টেবিল কিংবা

কোন না কোন অপঘাতে ব্যাঘাতে

আমার আর দরজা পর্যন্ত পৌছানো হয় না

বন্ধ দরজা বন্ধই থেকে যায়

আমার দরজা ও আর খোলা হয় না ।

জানালা খুলব বলে

হরহামেশার দিনে অথবা রাতে

রংয়ের আবেগে মোহিত হয়ে

ছায়াপথে ভাললাগা ভালবাসার বাত্তি জ্বেলে

দ্বিধায় পড়ে যাই কোনটা খুলি আগে -

উত্তরী না দখিনা জানালা, পরিশেষে

দক্ষিণা জানালা খুলতে গেলে

উত্তরী জানালা কাঁদা মাটি জলে

আমাকে ভিজিয়ে ভাসিয়ে ডুবিয়ে যায়

জমা কাল - অকাল বৈকাল্যে ক্ষয়ে যায়

আমার আর জানালা খোলা হয় না ।

এইতো সেদিন

সম্ভবত,রবি কি সোম বার হবে হয়তবা

সারাদিন স্মৃতিপথে পায়চারী করে করে

ঠিক করলাম,আগত দিন যখন ভৈরবী সুরে গাইবে

তখনিই ঠিক আমার এ পা ফেলব -

আমার দরজার ওপারে - বাইরে, কিন্তু তারপরেও

কত শত আগত দিনেরা যে হারিয়ে গেল

ভাতির বাতির নিচে অন্ধকারে, কারন

আজো আমি সন্দিহান --

ঠিক কোন পা প্রথমে রাখলে দরজার বাইরে

আমি আলোর মশাল হতে পারব, তাই

বন্ধ দরজা বন্ধই থেকে গেল

অমেরুদণ্ডীরা জবরদখল করে নিলো,

কেবলমাত্র, আমারি দরজার বাইরের জমিনের দখল

আজো আমার হয়ে উঠল না ।

পঞ্জিকার পাতা উল্টে পাল্টে দেখে দেখে

পূর্ণিমা জাগার দিন ক্ষণ মুহুর্ত

হৃদয়স্থ করলাম

মনে মনে নিজেকে আনন্দে উদ্বেলিত করলাম

এবারকার পূর্ণিমা চাঁদ আমি

উপভোগ করবই করব

কিন্ত , ঠিক পূর্ণিমা জাগার পূব দিন থেকে

শুয়ে গেলাম আমি বিছানায়,

ভুলে গেলাম আমি- পূর্ণিমা উপভোগের কথা

আমাকে কেউ মনে ও কেউ করে দিলো না

আমার আজো তাই পূর্ণিমা দেখা হলো না ।

সেদিন, মাসিমা বলেছিলো ,

আজ - অমাবশ্যা জাগতে পারে

পারলে অমানিশায় জোনাক দেখিস-

আনন্দ পাবি, শিখতে ও কিছু পারবি

অন্ধকারে আলোর মশাল কেমনে আসে কাজে।

ভেবেছিলাম তিথি হবে না মিছে , কিন্তু

বিধি মোর বাম,

কোথা থেকে এক লয় ঝড় এসে

মুহুর্তেই উড়িয়ে নিয়ে যায় নদীর কাছে,

বসতভিটা নদীর জলে ভাসে

অনিলের পরিহাসে

আবাস ছেড়ে এসে বনবাসে ।

ঘরের বাইর দেখা জুটল যখন

তখন ভেবেছিলাম দেখা পাব জোনাকীর;

কিন্ত না, ঘুটঘুটে মরার অন্ধকারে

সারারাত ধরে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে - ভিজে

জ্বর বাঁধিয়েই পুনরায় শয্যা নিলাম

আমার আর জোনাক দেখা হল না ।

আমাদের পূব পাড়ার বোষ্টমী বউ

ব্রাম্মণ হবে বলে

ঢাক ঢোক পিটিয়ে কাশীতে গেল

গঙ্গাজলে ভিজে ভিজিয়ে

ডুবিয়ে চুবিয়ে ঘসে মেজে

ময়লা সাফ করে গলে পৈতে ঝুলালো-

দেশি বিদেশী মন্ত্র তন্ত্র আত্মস্থ করল

বাড়ীর উত্তর পূব কোনে ধর্মশালা গড়ল

পদাবলী রাম কীর্তণ বেদ গীতা ঠোঠস্থ

করে করে খাসা সীতা বনে গেল,

কিন্তু বিধি তার বাম,-

তার দর্শণার্থী আর পানি প্রার্থিরা বিরোধীতা

যত না করল, তারচে বেশি দূর্ভেদ্য দেয়াল তুললো

তার ঘর আর বিছানার লোক,

সমাজ বসল বিচার হলো স্বাক্ষী দাঁড়িয়ে গেল

পরিশেষে পরিহাসে

সমাজে যতটুকু না একঘরে হলো

তারচে নিযুত গুন

নিজের ভিটাবাড়ীতেই সে একঘরে হলো,তাই

বোষ্টামী বউয়ের আর ব্রম্মণ হওয়া হলো না,

আমারো আর বোষ্টামী বউয়ের

মণ্ডপে পূঁজা করা দেখা হলো না ।

দাদু আমাকে, সেই কবে বলেছিল

দাদু, তোমাকে অমরত্ব শেখাব ।

দাদু আজ বেঁচে নেই,

আমার ও যাবার ডাক পড়ার উপক্রম হলো,

মেঘে ঢাকা আকাশে বার বার বিজলী জ্বলছে,

সারা ঘর দুয়ার বিছানা পত্র

ভিজে পঁচে বসবাসের অযোগ্যপ্রায়, কিন্তু

আজো আমার আর অমরত্ব শেখা দেখা

হওয়া ও হলো না, বেঁচে থাকা ও হলো না ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File