সক্কালের স্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের জন্য মরতে পারি ১৭ জুন, ২০১৩, ১০:০০:৪৮ সকাল
যে কখনো জলে নামেনি তার জলে নামার অথবা ভেজার প্রতি বরাবরই বেশ কৌতুহল থাকে কিন্তু ভীতি যে এক্কেবারে থাকে না, তা বোধ হয় বলা ঠিক হবে না । জলে নামাতে বা গাছে চড়াতে সবাই ভূমিকা নেয় কিন্তু সাঁতার শেখাতে বা গাছ থেকে নামানোর সংখ্যা খুব একটা সুবিধাজনক নয় । বর্তমানে জলে ডুবে মরতে বসলে, জল থেকে ডাঙ্গায় তুলতে যতোটা না হাত জলে ভেজে, তার থেকে সহস্রাধিক ওৎসুক চোখ-হাত জলের কিনারে দাঁড়িয়ে ওদ্ধারকারীর হর্ষধ্বনিতে শীষ দিতে কিংবা বাঁচানো না গেলে কপট মায়াজাল-হাহাকার আহা বলতে অথবা তার চৌদ্দুগুষ্ঠি নিয়ে বা চরিত্র নিয়ে চটকাচটকি করার অভাববোধ হয় না, আর এসব সম্ভব হয়েছে শুধু আকাশ সভ্যতার ওল্লঙ্গতার কল্যানে নৈতিকতার নোঙ্গর থেকে ছিটকে পড়ার কারনে ।
তা বলে এটি শূন্য সংস্কৃতির অবদানে আহরিত নয়, নিছক একটা গ্রামীণ অজপাড়াগাঁয়ের ঝিয়ারীর জীবন কাহিনী । মেয়েটির নাম কি আর বলব, সত্যিটাই বলি, নাম তার শ্যামা ।
বার কি তের বছরের কিশোরী । আট ক্লাসের বিদ্যার্থী বলে শুনেছিলাম । এ বয়সের ছেলেরা যখন পাড়ায় পাড়ায় খেলাধুলো করে ঘুরে বেড়ায়, ফল ফলাদি বন্ধুরা মিলে চুরি করে তৃপ্তে ভক্ষণে বদহজম করে, হাঁস-মুরগি চুরি করে রাতের অন্ধকারের এক কোনে চড়ুইভাতি করে; তখন মফস্বলের কিশোরীদের কারো স্বামী সন্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় অথবা মায়ের হাতের কাজের সাহায্যকারী হয়ে ধণ্য থাকতে হয় । সংসারের ব্যস্ততা ডিঙি্গয়েই তবে এদের বিহঙ্গের মতো ডানা মেলবার ফুসরত মেলে ।
রোববার কি সোমবার হবে, সঠিক মনে নেই । এমনি একদিন শ্যামা বন্ধুদের সাথে পাঠশালা থেকে বাটীতে ফিরছিল, পথিমধ্যে চোখে ধরা পড়ল, তার বাবা তেরাস্তার পূব পশ্চিম বাঁকে দাঁড়িয়ে অচেনা মোচয়ালা বাবার বয়সী একজনের সাথে কথা বলছে । সন্নিকটে আসা মাত্র সবুজ মিয়া তাকে মা বলে ডাকল । শ্যামা হাঁসতে হাঁসতে তার বাবার দিকে এগিয়ে গেল । স্কুলে সব কটা ক্লাস হয়েছে কি না, পড়া পেরেছে কি না, এসব কথা জিজ্ঞাসা করার পর সবুজ মিয়া শ্যামার হাতে বিশটি টাকা গুঁজে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলল । শ্যামা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ইতস্তত করতে-করতে টাকাটা নিয়ে মনে-মনে ভাবতে-ভাবতে ধীর পায়ে বাড়ির পথ ধরল । যে বাবার কাছে এক টাকা চেয়ে কখনো পায়নি, আজ সে কিনা না চাইতে এক টাকা দু টাকা নয় বিশ বিশটি টাকা পেয়ে খুশি না হয়ে কিছুটা দ্বিধায় পড়ল।
বাড়ীতে এসে বই খাতা বিছানার পরে ছুড়ে দিয়ে আনমনস্ক হয়ে মাটির পাটিতে বসে পড়ল। ওদিকে মা সুরমা বেগম ডাকাডাকি করছে কাজ করার জন্য ।
যে হাতে কখনো জল সরেনি আজ সে হাতে রীতিমত ঘি সরল, আর লোকটিই বা কে ? অন্যদিকে যার এক বেলা কাজে না গেলে হাঁড়ি চুলোয় চাপে না, ওপোষের সাথে সহবাস করতে হয় আর সবাইকে, আজ কাজ ফেলে সে কিনা বাজারে ! এসব বিস্তর ভাবনার জলে সাঁতার কাটতে গিয়ে শ্যামা ঘেমে ভিজে জগাখিচুড়ী অবস্থা ।
কি রে মা, এখনো কাপড় ছাড়িস নে, একা-একা বসে কি করছিস ? মন খারাপ নাকি ? নে মা ওঠ, আমার হাতে অনেক কাজ বাকী, ওদিকে তোর বাবা এক্ষুনি বাজার থেকে ফিরে এসে খেতে চাবে, জলদি আয় মা, আমার গোস্ত রান্না এখনো বাকি আছে । মায়ের চলে যাবার পর, বলে যাওয়া গোস্তের কথা শুনে আরো বেশি হতবাক হয়ে ভাবনার বিড়ম্বনায় পড়ে গেল । যে বাটিতে ঈদের দিন গোস্ত কেনার কানাকড়ি থাকে না, সে বাড়িতে আজ গোস্ত !সবকিছু গোলক ধা ধা লাগছে শ্যামার । ব্যাপার খানা কি ?
মাযের পীড়াপীড়িতে আনমনায় স্তফা দিয়ে পুকুরে পানি আনতে গেল । ফিরবার পথে পাশের বাড়ির এক চাচী বেশ তাচ্ছিল্যতায় বলল ‘কি রে শ্যামা, তরা নাকি আজ গোস্ত দে ভাত খাবু, তোগো বাড়ীত নাকি আজকা ঈদ, ব্যাপারডা কি রে বেডি, দেখস যেন চিত খারাপ লস না নোতন বাড়ীত গে । শ্যামা একট থতমত খেয়ে গেল চাচীর শেষ কথাটা শুনে । তার সাথে এসব কি হচ্ছে, কেনই বা হচ্ছে, এসবের কোন ওত্তর কারো কাছে না পেয়ে সে চিন্তাকে একটি আঁইলের ওপর খাঁড়া করাল যে, সে কবিরাজ চাচার কাছে গিয়ে এর একটা বিহিত করবে, কারন এ মুহুর্তে সে কবিরাজ চাচা ছাড়া আন কাওকে নিজের করে ভাবতে পারল না।
জল অদ্ভুত এক পদার্থ, সমান্তরালে ঢাললে কখন সে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে আবার কখন বা মাটির পিপাসায় শুষে নেয়, যদি বা নিন্ম পথে ঢালা হয়ে তাহলে তলদেশ ঠিকই খুঁজে নেয় ।
না ভাই, আপনার ছেলে আর আমার ছেলের মধ্যে ত ফারাক নেই, ও ত আমার ছেলে হয়েই থাকবে, আর জানেনই ত আপনি-আমার কোন ছেলে নেই । না, সবুজ মিয়া, তুমি অতসব ভেব না ত, আমার ত ওই একটাই চেলে, আমারও ত কোন মেয়ে নেই, ও আমার মেয়ে হয়েই থাকবে। ভাই শ্যামা কিন্তু আমার মেয়ই শুধু নয়, ও আমার মা, জানেনই ত আমি মা হারিয়েছি সে-ই ছোটবেলায় । কি যে বল সবুজ মিয়া, পুরোনো কথা মনে করে দিয়ে আর কষ্ট নিয়ো না ত। আমি ত তোমার বন্ধু, শুধু এতটুকু মনে রাখলেই চলবে ।
বন্ধু একটি শব্দ মাত্র নয়, এর যোগফল বিয়োগফল দুটো দিকই আছে । অগ্রজরা বন্ধুর আর নামকে বন্দুক বলে থাকে।
শ্যামা রান্না ঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে বাবার আলাপচারিতা শোনে, অত:পর মায়ের কাছে গিয়ে আগত অতিথীটি কে তা জানতে চায়। তখন শ্যামার মা তাকে বাবার বন্ধু ও ব্যবসার আলোচনা বলে ক্ষ্যান্ত দেয় কিন্তু তার আগমনের হেতু---।
অত:পর আহার বিহার শেষ করে, বিশ্রাম নিয়ে পান চিবোতে চিবোতে আন্দাজ দফাদার বিদে হয় ।
শ্যমা তার বান্ধবীদের সাথে যথারীতি ইস্কুলে আসে-যায়। আনন্দ আর হাসিতে পড়াশুনার মধ্য দিয়ে মাস হেঁটে গিয়ে বছর ধরব ধরব করছে, এমন সময় আচানক একদিন তার বাড়ির চেহারা তার চোখে বড্ড অসহ্য লাগে । ঘুম থেকে সে বাড়ির উঠোন মাজা ঘসা ,বাড়ীতে পাড়াপড়শি আর আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতি তাকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ছায়াপথে লণ্ডভণ্ড করে দেয় । হরেক জনের হরেক রকম বাক বিতণ্ডায় শ্যামা রীতিমত ভয় পেয়ে যায়। কেও বলছে জামাই ভালো হবে, কেও বলছে মেয়ের তোর কপাল ভালো । শ্যামা এত্তসব ভাবনা ভাবতে না পেরে ঘরের পেছনের দরজা খুলে তালবেলেম তালুকদার ওরফে কবিরাজ দাদার কাছে দশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
দাদা,দাদা, আমাকে বাঁচাও, আমি বাঁচতে চাই, আমি পড়ালেখা করে বড় হতে চাই, হাঁফাতে হাঁফাতে শ্যামা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ক্ষ্যান্ত হয়। নে বেটি একটু পানি খেয়ে জিরোয়ে নে,ততক্ষণে হাতের জরুরী কাজ মিটিয়ে আসছি বলে কবিরাজ চলে যায়। শ্যামা বসতে বসতে অধৈর্য্য হয়ে যখন বাড়ি ফিরতে যাচ্ছে তখন কবিরাজ এসে হাজির হয় ।
তালবেলেম মোড়ল এলাকায় পরিচিত।সে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে কোন চাকরী বাকরী না করে কখন ডাক্তারী, কখন কবিরাজী কখন ছেলেমেয়ে পড়ায়ে অর্থাৎ সবসময় নিজে পরের কাজকে নিজের মনে করে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে, আর এ কারনে প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর তার আর বিয়ে করার সময় হয়ে উঠেনি । এলাকায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা তাকে খুব বেশি দাম না দিলে ও কেউ অসম্মান করে না । অপ্রয়োজনীয় কোন কথা সে কারো সাথে বলে না আর কখনইবা সে খোশ গল্পে মাতবে,এ সময় তার হাতে থাকে না,তাইত তার দেখা পাবার সুজোগ সবার হয়ে না,আবার একবার দেখা পেলে কাউকে সে খালি হাতে ফেরায় না।
কি রে দাদী, তোকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন ? আরে দাদী-চিন্তার কোন কারন নেই তোর, আমি যতদিন বেঁচে আছি অত চিন্তা করিস কেন ? তখস বাঁচাও বাঁচাও বলছিলি কেন রে দাদী, তোর কে কি করেছে? আমাকে খুলে বল দাদী, নইলে ত না জানলে পরে তোর জন্য কিছু করতে পারব না ।শ্যামা সব খুলে বলার পর হাসি মুখে কবিরাজ তাকে বাড়ি যেতে বললে শ্যামার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় । শ্যামা আর দ্বিতীয় কোন কথা ব্যয় না করে বাড়ির দিকে রওয়ানা করে । পেছন থেকে কবিরাজ শ্যামাকে দাঁড়াতে বললে শ্যামা না দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধতা নিয়ে যেভাবে যাচ্ছিল সেভাবে যেতে থাকে, থখন কবিরাজ পেছন থেকে গিয়ে শ্যামার হাত ধরে দাঁড় করায়ে কতক প্রশ্ন করে ।
কবিরাজ : দাদী, তোর কাছে তোর বাবা-মা অনুমতি নিয়েছে ?
শ্যামা : না
কবিরাজ : দাদী, তোর পড়ালেখা করালে কী তুমি বিয়ে করবে ?
শ্যামা : দাদী,আমার ত বিয়ের বয়স হই নি, আর আমি পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে করব না ।
কবিরাজ : দেখ, যেখানে রাতে বাতি জ্বলে না,সেখানে কি দিনের আলো ভাল নয়?
শ্যামা : দাদা, রাজী হতে পারি, তবে আমি মা হবো কিন্তু পড়ালেখা শেষ হবার পর ।
কবিরাজ : এ দাদী, ছেলে কি করে ?
শ্যামা : চাচা, আমি জানি না ।
কবিরাজ : যা দাদী,বাড়িত যা, চিন্তু ছাড়, দেখি তোর জন্য কি করতে পারি ।তবে শোন, নিধি আমার যা করে তা ভালোর জন্যই করে,আর আমাদের কপালে যা জোটে তা আমাদেরি কিন্তু কামাই করা।
শ্যামা বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেখতে পেল, কোন বাড়িতে কেউ মারা গেলে যে অবস্থা যে অবস্থা হয় ঠিক সেই অবস্থা। সমালোচনা ঘেণ্নার ঢেউয়ে পূর্বপুরুষদের আগেরপুরুষও জিন্দা হওয়ার উপক্রম। সবাই এক দাড়িতে এসে দাঁড়িয়েছে যে, শ্যামা কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। রোদ্দুরময় দিনের মধ্যাহ্নভাগে আচানক বাজ পড়ার মত শ্যামাকে দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করে ছি: ছি: করতে লাগল, অন্যদিকে সাবুরালি ঘটক ছি: ছি: করতে করতে বাটি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল ।
সবুজ মিয়াকে এক ঘরে করে রাখা উচিত । এক বান্দরের হাড় মার্কা মেয়ে জন্ম দিয়েছে, যে মেয়ে তার বাপের কথা শুনে না, আমাদের ছেলেকে সে মেয়ের সাথে বিয়ে দেব না,দিলে ভালো হবে না, ঘরের চৌকাঠে ঘুন পোকা ধরবে ।
ঘটক ছেলের বাড়িতে পৌছে বরের বাপকে সব কিছু খুলে বলে । মক্কেল ঘরামী শোনা মাত্রই বলে দিল ‘আমরা বিয়ে করতে যাব না, ছেলে আমার কি হাওয়ায় জন্মে হাওয়ায় বেড়ে উঠেছে?’ তুই যা ঘটক বেটা,এক্ষুণি একটা সুন্দরী মাইয়া চাই,আজই ছেলেকে বিয়ে করাব । ছেলেকে বলে দিলো ‘ এ মেয়ের চাইতে আরো ভালো মেয়ের সাথে তোমার আজই বিয়ে দেব,নাইলে আমার নাম মক্কেল ঘরামী না’ । সব কিছু শোনার পর ছেলে ঘটককে বলল ‘মেয়ে এখন কোথায়’?
সাবুরালি- ‘শ্যামা বাড়িতে’।
ছেলে: আচ্ছা চাচা,ও কখন বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে গেছিল ?
সাবুরালী : সকালে, ঘুম থেকে জাগার পর, তখন সকাল ৭ কি ৮ টা হবে হয়ত ।
ছেলে : ফিরে যখন আসল তখন কটা বাজে ?
ঘটক : সকাল ৯ টা কি ১০ টা হবে হয়তবা ।
ছেলে : আচ্ছা চাচা, এই সময়টা কোথায় যে ছিল, তা কি জেনেছেন ?
ঘটক : না ।
ছেলে : বাবা, আমি ত মেয়ের কোন দোষ দেখছি না, তাহলে কেন তাকে শাস্তি দেব ?
ছেলে ঘটককে কিছু কড়ির লোভ দেখিয়ে তার বাবাকে গোপন রেখে মেয়ের সাথে সাক্ষাত করে । বিয়েতে মত আছে কি না ছেলে তা জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে না বলে জানায়। কেন না একথা জানতে চাইলে পড়ালেখা হবে না আর সে লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে করবে না বলে জানায় । ছেলে মেয়েকে পড়ালেখার সামগ্রিক নিশ্চয়তা দিলে মেয়ে বিয়েতে রাজী হয় ।
মাটি ভাঙলে পরে ধুলো হয়, অনিলের আঘাত পেলে বায়বীয়ে মিশে ভেসে ভেসে এসে মানুষেরি গায়ে জড়ায়, ঝাড়লে বা ধুলে কোন না কোন ঠিকানা ফিরে পায় । অনিল যতটুকু তাকে বিভ্রান্তি করে, বৃষ্টি তাকে আবার তার আকার দেয় ।
যথাসময়ে বিয়ের জন্য ছেলে পক্ষ কন্যা পক্ষের বাটীতে এসে পৌছাল ।দেখতে পেল বিয়ে বাড়ীতে শ্মশানের নিরবতা,যেমনটা ঝড়ের পরে হয় । সাবুরালী বাড়িতে কেউ আছে কিনা অভিবাদনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করে উত্তরের অপেক্ষায় প্রতীক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকে । কিয়ৎকাল পরে সবুজ মিয়া কালো মলিন মুখে ঘর খেকে বের হয়ে আসে।
সাবুরালী : ব্যাপার কি সবুজ মিয়া ! তোমার মেয়ের বিয়ে অথচ তোমার বাড়ীতে কোন বন্দোবস্ত নেই কেন ? সবুজ মিয়া অপ্রস্তুত হয়ে মুখ কাচুমাচু করতে লাগল ।এমন সময় ছেলে আর ছেলের বাপ পৌঁছে গেল। মক্কেল ঘরাম সবুজ মিয়াকে বলল-দোস্ত,একজন কাজী ডেকে আস, আর কোন বন্দোবস্ত করা লাগবে না। সবুজ মিয়া লজ্জা পেয়ে বলল, কি যে বল দোস্ত, তা কি করে হয়, একটু ত আয়োজন করতে হবে,আগে তো তুমি আমার দোস্ত ছিলে,এখন থেকে যে বেহাই হতে যাচ্ছ, সময় একটু ত চাই-ই চাই ।
কোত্থেকে তজবি টিপতে টিপতে কবিরাজ শ্যামাদের বাড়ীতে এসে হাজির হল ।কি গো সবুজ মিয়া, গেলা কই ?
ওরে শ্যামা তোরা সব গেলি কই ? আয় দাদী এদিকে আয়, আমি তো ব্যস্ত মানুষ,তোরা তো জানিস,জলদি-জলদি আয় । ওরে শ্যামা তোদের বাড়িতে কি কোন লোক নেই, তা মেহমান এসেছে বলে মনে হচ্ছে ? এমন সময় ঘর থেকে সাবুরালী বের হয়ে এসে সালাম বিনিময় করল ।
কবিরাজ : কি ব্যাপার সাবুরালী, কেমন আছ বাবা ?
সাবুরালী : জি চাচা, আপনাদের দোয়ায় বেশ আছি।
কবিরাজ : তা বাবা তোমার সাথে মেহমান এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
সাবুরালী : জি চাচা, আপনি জানেন না, আজ ত মিয়ার বেটির বিয়ে।
কবিরাজ : না তো বেটা, আমাকে তো কেউ বলেনি।
কবিরাজ : শ্যামা, ওই শ্যামা, আয় দাদা এদিকে আয়, তোর বিয়া আর আমাকে তোরা একবারও বলার কেউ প্রয়োজন মনে করলি না। আমাকে তোরা এমনভাবে পর করে দিলি ?
শ্যামা লাজে লাল হয়ে নত মুখে সালাম দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসল ।
কবিরাজ: দাদা, তোর বাপে কই গেল ?
বাড়ী নেই বলে শ্যামা কবিরাজকে বসার জন্য বিছানা পেতে দিয়ে বসতে বলল ।
কবিরাজ সাবুরালীকে ডেকে ছেলে আর ছেলের বাপকে আসতে বললে তারা সালাম দিয়ে কাছে এসে বসলে পরে কবিরাজ তার স্বভাবশুলভে কথা বলতে আরম্ভ করল। - দেখ বাবারা, অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কাজ নিশ্চয় করা ঠিক নয়, নিশ্চয় তা জানো । তা তোমরা কি আমার দাদীর কাছে শুনেছিলে, সে বিয়েতে রাজী আছে কি না? ছেলে ছেলের বাপ কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে ।
শ্যামা : কি রে দাদী , তোর কি এ বিয়েতে মত আছে ?
শ্যামা : দাদা, আমাকে পড়ালেখা করার সুজোগ দিলে আমি রাজী।
কবিরাজ : হ্যা রে দাদী, তুই আমাকে একা করে দিয়ে বিয়া করবি,আমার কথা একবারও ভাবলি না ? ঠিক আছে । কি ছেলে, তুমি কি আমার দাদীকে পড়ালেখা করাতে পারবে, সে সামর্থ মন মানসিকতা তোমার আছে ? না থাকলে বলতে পার ।
চেলে : জি দাদা, আমি তার পড়ালেখার ব্যয়ভার সহ সমস্ত শর্তে রাজী আছি ।
কবিরাজ : কি মক্কেল ঘরামী , তুমি চুপ কেন ? তোমার মত কি ?
মক্কেল ঘরামী : বাবা, আমি আর কি বলব, ছেলে মেয়েকে যখন পড়ালেখা করাবে তখন আমার কি বলার থাকে ।
দেখ বেটারা, তোমাদের জানতে গেলে পড়া লাগবে । পড়া কখনো বিফলে যায় না।বিদ্বার্জন একটা আলো । সে যখন মা হবে তখন তার ছেলে মেয়েকে আলোর পথ দেখাতে পারবে । যদি তোমরা টাকা গুনতে চাও তাহলে অংকের অক্ষর জানা লাগবে ,টাকা চেনা লাগবে,টাকাটা কত টাকা তাও জানতে বলতে গুনতে গেলে তো তোমাকে অংক জানা লাগবে,তাই পড়ালেখা জানা থাকলে কোন সমস্যায় পড়বে না । তা তোমরা যখন রাজী আছ তখন আমার বলার কিচ্ছু থাকে না । তোমাদের মঙ্গল হোক ।
বিষয়: সাহিত্য
২৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন