ওয়ালমার্টের পরে গ্যাপ অভিযান বাংলাদেশী সুমি-কল্পনার
লিখেছেন লিখেছেন ভন্ড বাবা ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৩৯:৫৬ দুপুর
যুক্তরাষ্ট্রে অভিযান চলছেই সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তারের। সাহসী দুই বাংলাদেশি তরুণী এদেশের বাঘা বাঘা কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিদের সামনে হাজির হয়ে জানাচ্ছেন, যাদের হাতে বানানো কাপড় তারা চড়া দামে বিক্রি করে মুনাফা করছে তারা আসলে কতটা কষ্টে আছে। তারা কারখানায় নিরাপত্তাহীনতায় কাজ করে, কাজের পরিবেশ নেই, এমনকি নেই জীবনের নিরাপত্তাও।
পক্ষকালেরও বেশিসময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সুমি ও কল্পনা। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছেন, আরকানসায় ওয়ালমার্টের হেডকোয়ার্টার্সে গিয়ে রীতিমতো ভড়কে দিয়েছেন বিশ্বসেরা এই খুচরা পোশাক বিক্রেতা কোম্পানিটির কর্তা ব্যক্তিদের। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম ইয়াটস্কো সুমিদের দেখে দ্রুত সটকে পড়েন। দরজায় তাদের দেখে দ্রুত মুখ লুকান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আরনে সরেনসেন। ওয়ালমার্টের পর এবার সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তার যাচ্ছেন গ্যাপ’র সদর দপ্তরে।
পৃথিবীর অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সুমি ও কল্পনার এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এন্ড ডেথ ট্র্যাপস ট্যুর’ তারই অংশ হিসেবে গ্যাপের কার্যালয়ে যাচ্ছেন তারা। এটিও বাংলাদেশের শ্রমিকদের বানানো পোশাক বিশ্বজুড়ে বিক্রি করে বিলিয়ন ডলারের মুনাফা কুড়োচ্ছে। এ সপ্তাহেই গ্যাপ’র সদরদপ্তরের কড়া নাড়বেন সুমি ও কল্পনা। তারা হাতে নিয়ে যাবেন একটি চিঠি। যাতে এরই মধ্যে সই করেছেন হাজার হাজার শ্রমঅধিকার কর্মী-সমর্থক।
সামঅবআস নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি শ্রমিক অধিকার সংগঠন সুমি ও কল্পনাকে এই অভিযানে সহযোগিতা করছেন। সংগঠনটির কর্মকর্তা রব ওহল বাংলানিউজকে বলেন, সুমির গল্প যেই শুনেছে আলোড়িত হয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাক্টরির ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরছেন সুমি। যাতে তার ১১২ জন সহকর্মী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন। সুমি বলেন, সেই রাতে সুপারভাইজার তার পথ রোধ করে বলেছিলেন, কিছুই হয়নি কাজে যাও। কিন্তু সুমি যখন দেখলেন দাউ দাউ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাদের তৈরি পোশাকগুলো। এতে আগুনে দগ্ধ হচ্ছেন সহকর্মীরা তখন তিনি আরও কয়েকজন সহকর্মীর দেখাদেখি সাত তলা ভবনের চারতলা থেকে একটি জানালার কাচ ভেঙে লাফিয়ে পড়েন নিচে। সুমি বলেন, তিনি লাফ দিয়েছিলেন এই ভেবে যে তারা বাবা মা যেন অন্তত তার মৃতদেহটি পান কবর দেওয়ার জন্য।
ওহল রব বাংলানিউজকে বলেন, এমন একটি হৃদয়বিদারক বর্ণনা যে কাউকে আলোড়িত করবে। তিনি বলেন, “আমরা একজনকেও পায়নি এই ঘটনায় সুমির প্রতি সহানুভূতিশীল হননি।”
গ্যাপ’র জন্য তৈরি চিঠিতে জনমত গঠনে সুমি ও কল্পনাকে সহযোগিতা করছেন সামঅবআস’র রব ওহল ও কেটি। তারা তাদের আহ্বানে বলেছেন, “আপনারা সুমির গল্প শুনেছেন, কিভাবে তার ম্যানেজার তাকে আগুনের মধ্যেও কাজ করতে বলেছেন। কিভাবে কেবল নিজের মরদেহটির কবর নিশ্চিত করতে সে চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে। আমরা আশা করি এতে আপনার সহানুভূতি জাগ্রত হবে। যদি হয় তাহলে তাদের চিঠিতে আপনার নামটিও সংযুক্ত করুন। এসব কথা লিখে পাঠানো ই-মেইলে এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষের সাড়া এসেছে।”
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ওয়ালমার্ট একাই নয়, তাজরীনে বানানো হতো গ্যাপ’র পোশাকও। শত শত শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার প্রতি ওয়ালমার্টের মতোই গ্যাপ নির্বাক।
২০০৬ সালের পর থেকে কারখানার আগুনে বাংলাদেশে নিহত হয়েছে ৬শ’রও বেশি পোশাক শ্রমিক। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো এ ব্যাপারে দায়িত্ব না নিলে পরবর্তী ঘটনাটি ঘটে যেতে পারে যে কোনো দিন।
২০১০ সালে গ্যাপ’র জন্য পোশাক সরবরাহকারী একটি বাংলাদেশি কারখানায় আগুন লেগে ২৯ কর্মী নিহত হয়। এসময় গ্যাপ তার বাংলাদেশি সাপ্লায়ারদের জন্য একটি অগ্নি নিরাপত্তা কর্মসূচি নেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলো। কিন্তু সে কথা রাখেনি গ্যাপ।
সুমি ও কল্পনা আরও কয়েকজন সহযোগী নিয়ে স্যান ফ্রান্সিসকোতে গ্যাপ এর সদর দপ্তরে যাচ্ছেন এ সপ্তাহেই। এই অভিযানের আগেই গ্যাপ’র আউটলেট গুলোতে ম্যানেজারদের কাছে চিঠি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এবং ম্যানেজারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেনো তাদের বস কিংবা তাদেরও বসদের কাছে বিষয়টি অবহিত করেন।
গ্যাপ’র কাছে সুমিদের চাওয়া হচ্ছে- কোম্পানিটি যেনো তাদের পোশাকগুলো বানায় যে কর্মীরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। কর্মীরা যাতে কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক পায়, কারখানার দরজাটি যাতে খোলা থাকে এবং নিশ্চয়তা থাকে আরও কিছু জরুরি সুযোগ সুবিধার।
বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করতে কেলভিন ক্লেইন, টমি হিলফিগার ব্র্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশ ফায়ার সেফটি এগ্রিমেন্ট নামে একটি চুক্তিতে সই করেছে। গ্যাপ ওই চুক্তিতে সই না করে বরং নিজস্ব একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ছাড়া আর কারোই কোনো উপকারে আসবে না। সুমি ও কল্পনার গ্যাপ অভিযানের পেছনে এই চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থন আদায়ও একটি প্রধান উদ্দেশ্য হবে।
রব ওহল বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাপ ২০০৯ সালে এ বিষয়ক আলোচনা টেবিলে বসেছিলো কারণ সেমময় একটি বড় ধরনের চাপ তাদের ওপর ছিলো। কিন্তু সুযোগ বুঝেই প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত ফায়ার সেফটি এগ্রিমেন্ট থেকে সরে যায়। কারণ তারা ভেবেছে তাদের ক্রেতাদের এতে কিছু এসে যায় না।
রব বলেন, এখন একটা বিষয় স্পষ্ট আমাদের আবারও একই ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তবেই গ্যাপ ও ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর টনক নড়বে।
চাপ প্রয়োগের পদ্ধতি কি হতে পারে সে প্রশ্নে রব বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনগুলো এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বলেছে, বিভিন্ন দেশে গ্যাপ’র যেসব দোকান রয়েছে, আমরা সেখানে যাবো, ম্যানেজারদের কাছে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাবো। তখন গ্যাপ’র কর্মকর্তার বুঝতে পারবে বিষয়টিকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। সে রাতে আগুনে পুড়ে ও সুমির মতো লাফ দিয়ে পড়ে মারা যায় মোট ১১২ জন শ্রমিক।
এই শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়তেই যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছেন সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তার।
গত ১২ এপ্রিল এমন এক লাখ ৪০ হাজার সমর্থনের সই করা চিঠি নিয়ে একই দাবিতে ওয়ালমার্টে গিয়েছিলেন সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তার।
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন