পর্দার বাস্তব প্রয়োজনঃ আমার দৃষ্টিতে

লিখেছেন লিখেছেন মায়াবতী কন্যা ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫১:৫৩ রাত

রাস্তা দিয়ে যখন যাই অনেক মেয়েদেরকেই দেখি যারা অত্যন্ত আঁটসাঁট পোশাক পরে বের হয়। খুব অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আমি যে রিক্সায় বসে আছি সেই রিকশাওয়ালা পর্যন্ত বার বার তার দিকে তাকাতে তাকাতে যায়। আমার সারা গা তখন রি রি করে ওঠে। কারণ রিকশাওয়ালার চোখের দৃষ্টি আমি দেখেছি। সেই মেয়েটা যদি এই দৃষ্টি দেখত বা দৃষ্টির অর্থ বুঝত কখনোই এরকম ভাবে বের হওয়ার তার রুচি হতোনা। সেই মেয়েগুলো জানেও না নিজেরা ভাল থাকতে পারলেও তারা অন্য একটা মেয়ের ভয়াবহ সর্বনাশের কারণ হচ্ছে।

ফেসবুকে অনেকে "Confessions" পেজ খুলে আর কে কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছিল, মেয়ের হাসি কেমন ছিলো আরো হেন-তেন অনেক কথা শেয়ার করে। বোনেরা এই পেজগুলোতে একটু ঢু মারলেই বুঝতে পারবেন ছেলেরা আপনাদের দৃষ্টির অগোচরে কিভাবে নিজেদের চক্ষু শীতল করে, কোন দৃষ্টিতে আপনাদের দেখে। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি মেয়েরা সাধারণত ছেলেদেরকে এত জঘন্য ভাবে দেখেনা। গল্প- উপন্যাসেও পড়েছি, সুন্দরী মেয়েদের দেখলে নাকি ছেলেদের বুক জ্বালা করে উঠে। অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করে ফেলে! শুধুমাত্র অল্প কিছুক্ষণ চোখের দেখা একটা ছেলের জন্য অনেক কিছু, যেটা মেয়েদের কাছে বেশিরভাগই তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। ছেলেরা খুব সহজেই মেয়েদের প্রেমে পড়ে যায়, যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব রেয়ার। আল্লাহ মেহেরবান! আমি যদি পাঠ্যপুস্তক এর বাইরে কিছু না পড়তাম, আমি জানতেই পারতাম না ছেলেরা আসলে মেয়েদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখে!

আমার যখন ১১-১২ বছর বয়স তখন থেকেই আমি বোরখা পড়ি। বাসা থেকে কি আর এত ছোট মেয়েকে বোরখা কিনে দেয়! কান্নাকাটি করে বোরখা নিয়েছি। বলাই বাহুল্য, পর্দার সম্পূর্ণ অর্থ জেনে পর্দা করা শুরু করিনি। আমাদের ফ্যামিলিতে মেয়ের সংখ্যা কম, ছেলেদের সংখ্যাই বেশি। তাই আমাকে বড় হতে হয়েছে ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। তাই দেখা গেলো, যদিও বোরখা পড়ি কিন্তু ছেলেদের সামনে সঙ্কোচ, অযথাই লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারটা আমার মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। সেটা আমার জন্য ভাল হয়েছিল নাকি খারাপ হয়েছিল আমি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। স্কুল এ পড়ার সময় একই ক্লাস এর ছেলেদের সাথে আমার বেশ আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সে যে স্কুলেই পড়ুকনা কেন, অবলীলায় তুমি করে ডাকতাম! ব্যাপারটা এমন ছিল না যে, ফ্রেন্ডশিপটা খুব ঘনিষ্ঠ বা আমি তাদের সাথে অনেক বেশি আড্ডা মারতাম কিংবা তাদের সাথে অনেক বেশি সময় কাটাতাম। সিমপ্লি কথাবার্তা, কখনো তাদের সাথে ন্যাকামি করে কোন কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না। আমার রব জানেন, আমার চোখে তাদেরকে আমার ভাই এর মতই লাগত। তাদের উপর বড় বোনগিরি ফলিয়ে বিশেষ আত্মতৃপ্তি পেতাম। জন্মসাল, মাস হিসেব করে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টায় থাকতাম আমি আসলে তাদের থেকে বড়! সিগারেট খেয়েছে জানতে পেরে আমাদের বাসার অন্য ফ্ল্যাটে থাকা একজনকে কানে ধরে উঠবস করিয়েছিলাম পর্যন্ত! কিন্তু ক্রমে ক্রমেই আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমি যেমন তাদেরকে নির্দোষ দৃষ্টিতে দেখি, তারা আমাকে সবসময় সেভাবে দেখেনা! আমাকে তারা তাদের অন্য একটা ছেলে বন্ধুর মত মনে করেনা ! কারো কারো চোখে অন্যরকম আলোও দেখতে পাই! খুবই সূক্ষ্ম জিনিস, যেগুলো চোখে ধরা পরার কথা না। সাহিত্যিকরা ঠিকই বলেন, মেয়েদেরকে কোন্ পুরুষ কোন্ দৃষ্টিতে দেখছে সেটা মেয়েরা চট করে ধরে ফেলতে পারে। এমনকি অনেকগুলো ছেলের মাঝেও শুধুমাত্র তাদের চোখের দিকে তাকিয়েই মেয়েরা বুঝে ফেলতে পারে, কোন পুরুষটার কাছে সে নিরাপদ আর কোন পুরুষটার কাছে সে নিরাপদ নয়।

যাই হোক, বুঝতে পারলাম শুধু বোরখা পড়ে নিজেকে নিরাপদে রাখা আর ছেলেদের থেকে ভদ্রতাপূর্ণ দূরত্বে থাকাটাই যথেষ্ট নয়, পর্দার অর্থ আরও ব্যাপক। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন পরস্পর খুব ভাল বন্ধু হয় মেয়েটা সত্যি সত্যি ছেলেটাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু না ভাবলেও ছেলেটার পক্ষে কখনোই সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ থাকা সম্ভব না।

আসলে ছেলেদের প্রকৃতি আর মেয়েদের প্রকৃতির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান! ছেলেদের মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ মেয়েদের ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ এর তুলনায় অত্যন্ত বেশী। ছেলেদের এই প্রকৃতিগত কারনেই আল্লাহ তায়ালা ছেলে আর মেয়ে উভয়কেই দৃষ্টি সংযত করার নির্দেশ দিলেও মেয়েদেরকে আরও বাড়তি কিছু অর্থাৎ হিজাব করার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্ভবত পুরুষদের এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাদেরকে হুর দেবেন। আমরা জানি দুনিয়ায় মানুষ যেসব জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করে জান্নাতে আল্লাহ তাদেরকে তাই দেবেন। আর মেয়েরা পছন্দ করে সৌন্দর্য। আল্লাহ মেয়েদেরকে জান্নাতে অতুলনীয় সৌন্দর্য দান করবেন, কুরআন এবং হাদিসে আমরা সেটার খুব সুন্দর বর্ণনা দেখতে পাই।

বিষয়: বিবিধ

২১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File