প্রিয় শাজাহান পরলোকে

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তকথা ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:৫৬:০৫ রাত

১৬

জানুয়ারিআউলিয়াবাদেএনডিএফের

জনসভা ছিল। প্রচার শুরু

হয়েছিল ৬

জানুয়ারি থেকে। ১২

জানুয়ারি পর্যন্ত

তা নির্বিবাদেই

চলছিল। বড় ভাই লতিফ

সিদ্দিকী মন্ত্রী হয়েই

পাল্টা সভা ডাকেন।

কিছুতেই আমাদের

সভা হতে দেবেন না।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ

স ম আবদুর রব ও মেজর (অব.)

আবদুল মান্নানের

হেলিকপ্টারে যাওয়ার

কথা ছিল।

বিনাভোটেনির্বাচিত

এমপি তার এলাকায়

হেলিকপ্টারও

নামতে দেননি, তাই

তারাযেতেপারেননি।

দেড়-দু'শ লোক

নিয়ে আওয়ামী লীগ

স্লোগান দিয়েছে,

লাঠিখেলা করেছে।

প্রশাসনকে এমন

ন্যক্কারজনকভাবেব্যবহার

করে আমাদের সভার

লোকজনকেবাধাদিয়েছেযাবলার

মতো নয়। তারপরও মূল পথ

ছেড়ে চকের মধ্য

দিয়ে শত শত

হাজারেহাজারেলোক

এসে কৃষক শ্রমিক

জনতা লীগ

এবং এনডিএফের

সভাকে দারুণভাবে সফল

করেছে। এ জন্য

এলাকাবাসীকেকৃতজ্ঞতাও

অভিনন্দন জানিয়েছি।

একজন প্রবীণ

নেতাএবংমন্ত্রীআমাদের

সভা পণ্ড

করতেপাল্টাসভাডাকায়

আওয়ামী লীগের ২-৪ জন

নেতানেত্রীকে ফোন

করেছিলাম। প্রতিকার

করতে পেরেছেন

কিনা জানি না,

তবেতারাকাজটিকেমোটেই

সমর্থন করেননি। তাদের

মধ্যে রাজনৈতিক

শিষ্টাচার

দেখেছি যেটা বড় ভাই

লতিফ সিদ্দিকীর

মধ্যে বিন্দুমাত্র

দেখিনি। বড় ভাই

প্রবীণ মানুষ, তার

কাছেপ্রতিদ্বন্দ্বীরাজনৈতিক

দল, নেতা-

কর্মী রাজনৈতিক আচরণ

পাবে_ এটাই

স্বাভাবিক। কিন্তু কেন

জানি এমপি হওয়ার

আগের লতিফ

সিদ্দিকী আর পরের

লতিফ সিদ্দিকী এক

ছিলেন না।

মন্ত্রী লতিফ

সিদ্দিকী আর

রাজনৈতিক

নেতা লতিফ

সিদ্দিকী কেন যেন

মোটেই এক নন।

মন্ত্রী লতিফ

সিদ্দিকী আইয়ুব-

মোনায়েমের

চেলাদের চেয়েও

খারাপ, অগণতান্ত্রিক।

তাই তার

এবং সরকারের কর্মকাণ্ড

এক কিনা জানার জন্য

আওয়ামী লীগের

সাংগঠনিক সম্পাদক

বাহাউদ্দিন নাছিম,

প্রেসিডিয়াম সদস্য

আমির হোসেন আমু,

মোহাম্মদ নাসিম,

তোফায়েল আহমেদসহ

আরও অনেককেই ফোন

করেছিলাম।

তারা কেউ মাননীয়

মন্ত্রীর কাজের

সঙ্গে একমত পোষণ

করতেপারেননিবাকরেননি।

জনাব নাসিম

এবং তোফায়েল

আহমেদকেধরতেপারিনি।

রেহানার

ছেলেভাগিনাববিকেফোন

করেছিলাম।

রিং হতেই জবাব

এসেছিল, 'মামা কেমন

আছো?' ভালোই আছি।

তোর মাকে দরকার।

শাড়িপেঁৗছাতেহবেআর

কিছু কথা ছিল।

ববি বলেছিল,

'আমি বাইরে।

মা বোধহয়

টুঙ্গিপাড়া গেছে।

মা'র সঙ্গে যোগাযোগ

করেতোমাকেজানাচ্ছি।'

কয়েক ঘণ্টা পর আবার

ফোন করেছিলাম,

সাড়া পাইনি।

পরে রাতের

দিকে ববির ফোন,

'মামা, কিছু মনে কর না।

ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই

তোমার ফোন

ধরতে পারিনি। একটু

আগে মাকে বলেছি।

মার শরীরটা খারাপ।

তবে সকালেই

তোমাকে ফোন করবে।'

রেহানার

ছেলেববিকোলেউঠেছে,

কাঁধে বসেছে, ভদ্রতার

আকালের সময় তার এটুকু

সৌজন্যই যথেষ্ট। বয়স

হয়েছে একটু সম্মান

ছাড়া এখন আর কার

কাছে কি চাই? কিছুই

না।

লেখাটাতৈরিকরেশুয়েপড়েছিলাম।

সকালে চোখ

বুলিয়ে পাঠিয়ে দেব,

যা সাধারণত সব লেখার

ক্ষেত্রেই করি। কিন্তু

তা হলো না। হঠাৎই এক

সহযোদ্ধার মৃত্যু সংবাদ

সব

এলোমেলো করে দিল।

এই তো ৩-৪ দিন

আগে উপমহাদেশের

সাড়াজাগানোনায়িকা৮২

বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ

করেছেন। রমা দত্ত

ওরফে সুচিত্রা সেন

আমাদের পাবনার

মেয়ে। তিনি তার

অভিনয়ের

মাধ্যমেমানুষকেআলোড়িত

করেছিলেন, বিখ্যাত

হয়েছিলেন। শাপমোচন,

হারানো সুর, সবার

উপরে, হাসপাতাল

এসবে তার অভিনয়

দেখে বিমোহিত

হয়েছি।

সুচিত্রা সেনের

মতোসুন্দরীনায়িকাসাদা-

কালোছায়াছবিতেদ্বিতীয়

কেউ ছিলেন না। কিন্তু

এ মৃত্যু সংবাদ আমার

কাছে সুচিত্রা সেনের

মৃত্যুর চেয়েও

হৃদয়বিদারক,

বেদনাদায়ক। সখিপুরের

মোক্তার

আলী চেয়ারম্যানের

ছেলে শওকত মোমেন

শাজাহান ২০

জানুয়ারিসকালেইহলোকের

গেছেমায়াকাটিয়েপরপারেচলে(ইন্নালিল্লাহি...

রাজিউন)। শাজাহান

মাথা থেকে পা পর্যন্ত

ছিল রাজনৈতিক মানুষ।

ভালো হোক খারাপ

হোক সব সময় রাজনীতির

সঙ্গেই লেগে থাকত।

কোনোস্থিরতানাথাকলেযখন

যার সঙ্গে থাকত তার

সঙ্গে ষোলআনাই থাকত।

'৬৯-এর দিকে ময়মনসিংহ

কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়েপড়ার

সময় লতিফ সিদ্দিকীর

কর্মী ছিল। '৭১-এ ছিল

আমার যোদ্ধা।

আমি আওয়ামী লীগ

ছাড়লে '৯৯ থেকে সে-ই

বড় আওয়ামী লীগার

হয়ে যায়।

একজনকেছেড়েআরেকজনের

কাছেগেলেসেকখনোপিছু

ফিরে দেখেনি। বড়

বেশি বর্তমাননির্ভর

ছিল। সেভাবেই এপার

থেকে ওপার গেল।

আমি তার আত্দার

শান্তি কামনা করি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুর

দিকে শওকত মোমেন

শাজাহানকেপেয়েছিলাম।

সব সময় একটু বেশি কিছু

করতে চাইত, তাই যুদ্ধের

সময় ক্ষমতা দেখানোর

কারণেশাস্তিপেয়েছিল।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ

ছাড়েনি। স্বাধীনতার

পর আমার একনিষ্ঠ ভক্ত

অনুরক্ত ছিল। আমি বঙ্গবন্ধু

হত্যার প্রতিবাদ

করলে সে গ্রেফতার

হয়ে কারা নির্যাতন

ভোগ করে।

তারপর যায়

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেখানেছাত্ররাজনীতিনিয়েকয়েকজন

নিহত

হলে পালিয়ে যায়

ভারতের

বর্ধমানে আমার

বাড়িতে। এক-দুই বছর

থেকে প্রেম

করেশিপ্রাকেনিয়েদেশেফেরে।

'৮৬-র নির্বাচনে আমার

মনোনয়ন

মিথ্যে মামলায়

বাতিল করলে শওকত

মোমেন

শাজাহানকেপ্রার্থীহতেবলি।

সে আমার

স্ত্রী নাসরীন

সিদ্দিকীকেপ্রার্থীকরতেঅনেক

চেষ্টা করেও

না পেরে বাধ্য

হয়ে প্রার্থী হয়। ২৭-২৮

হাজার ভোট

পেয়ে সেবার

নির্বাচিত হয়। তার

সংসদের মেয়াদ দেড়

বছরের বেশি ছিল না।

বড় ভাই লতিফ

সিদ্দিকী তখন

জননেতা আবদুর

রাজ্জাকের সঙ্গে কৃষক

শ্রমিক আওয়ামী লীগ

মানে বাকশাল করায়

তার সম্পর্কে এত

ন্যক্কারজনক

কথাবার্তাবলেছেযেটাশুনেঅনেকেই

বিরক্ত হতো। এরপর '৯০-এ

দেশে ফিরে '৯১-এর

ফেব্রুয়ারির

নির্বাচনে অংশ

নিলেপ্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থীপাকিস্তানের

সেবাদাস হুমায়ুন খান

পন্নীর কাছে হাজার

ভোটে হেরে যাই। এ

নিয়েও অনেকের

অভিযোগ ছিল শওকত

মোমেন শাজাহানের

অসংলগ্ন কথাবার্তাই

নাকি পরাজয়ের মূল

কারণ ছিল। হতেও

পারে। কিন্তু

আমি কখনো ভাবিনি।

এর পর আওয়ামী লীগের

সঙ্গে আমার

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

'৯৯ সালে সংসদ

থেকে পদত্যাগ করে ১৫

নভেম্বর উপনির্বাচন

করি। আওয়ামী লীগ

শাজাহানকেপ্রার্থীকরে।

বিএনপির আমলে যেমন

মাগুরায় ভোট চুরির

মহাউৎসব হয়েছিল, ঠিক

তেমনি সখিপুর-

বাসাইলে ভোট

ডাকাতিতে বিশ্ব

রেকর্ড করে। এর পর

গঙ্গা-যমুনার

পানি অনেক

গড়িয়েছে। এলাকায় বহু

কথা উঠেছে। কিন্তু তবু

যোগাযোগ

রাখতেকখনোপিছপাহয়নি।

কত আর হবে ৫-৬ মাস

আগের কথা।

ছেলেজয়কেনিয়েবাসায়

এসে হাজির। স্যার,

মুজিব কলেজ

সরকারি হয়েছে এই

যে তার চিঠি।

যে মুজিব কলেজ

স্বাধীনতার পরপরই

প্রতিষ্ঠা করেছিলাম,

যাতে সব

থেকেবেশিভূমিকারেখেছিলেন

পাহাড়ের বন্ধু হামিদুল

হক বীরপ্রতীক। সেই

কলেজেমন্ত্রীহিসেবেলতিফ

সিদ্দিকীএবংএমপিহিসেবেশওকত

মোমেন শাজাহানের

সংবর্ধনা সভায়

প্রতিষ্ঠাতাহওয়াসত্ত্বেও

যেতে পারিনি।

আমি ভেবেছিলাম,

মায়ের পেটের ভাই

মন্ত্রী হিসেবে আমার

কলেজেযাচ্ছেতাকেসাধুবাদ

জানাই। আমার শুভ

কামনা,

শুভেচ্ছাএবংপ্রশংসাহয়তোতাদের

কাম্য ছিল না, তাই

লতিফ ভাই তার মন্ত্রীর

ক্ষমতা খাটিয়ে পুলিশ

দিয়ে রাস্তা বন্ধ

করেছিলেন।

যেমনটা ভোটারবিহীন

কলঙ্কজনক

নির্বাচনেবিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়

জয়ী হয়ে ১৬ তারিখ

আউলিয়াবাদের

জনসভায় পুলিশ এবং তার

দলের

গুণ্ডাপাণ্ডাদিয়েসভাপণ্ড

করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ

হয়েছেন।

কলেজ সরকারিকরণের

কাগজ

হাতেনিয়েবলেছিলাম,

কই, এ

সরকারিকরণেরপ্রধানমন্ত্রীকেতোতুমি

যে আবেদন জানিয়েছ

সেটাশিক্ষামন্ত্রণালয়েপাঠানোর

চিঠি। মনে হয় তার ১

বা ২ দিন পর ২৮ তারিখ

ময়মনসিংহের

ফুলবাড়ীয়ায় আমার

জনসভা ছিল। সেই দিনই

শাজাহানের

বাবা মোক্তার

আলী চেয়ারম্যানের

মৃত্যুবার্ষিকীর

দাওয়াতে কি করে যেন

রাজিহয়েগিয়েছিলাম।

দলীয়

লোকজনকেশাজাহানের

বাবার

মৃত্যুবার্ষিকীতেযাচ্ছিবলতেই

ফুঁসে উঠেছিল,

না যাওয়া হবে না।

শাজাহানের বাবার

মৃত্যুবার্ষিকীতেযাওয়াহয়নি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত

শাজাহানের মৃত্যু

সংবাদে বুকটা কেন

যেন ভারি হয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধে শওকত

মোমেন শাজাহানের

ভূমিকার কথা ভোলার

মতো নয়। সে বন্দুক

হাতে যুদ্ধ না করলেও

সংগঠন গড়ে তোলায়

যে কজন ব্যাপক

ভূমিকা রেখেছে তার

মধ্যে শওকত মোমেন

শাজাহান অন্যতম।

হামিদুল হক বীরপ্রতীক,

স.ম. আলী আজগর, আবদুল

আউয়াল সিদ্দিকী,

খোরশেদ আলম, আমজাদ

মাস্টার এরা যেমন

বেসামরিক প্রশাসন

এবং সংগঠন

গড়ে তুলেছিল, ইদ্রিস

কমান্ডার, লোকমান

হোসেন, আবদুর গফুর

বীরপ্রতীক, আবদুস সবুর

খান বীরবিক্রম, ফজলুল হক

বীরপ্রতীক,

ব্রিগেডিয়ার ফজলুর

রহমান_ এরা সশস্ত্র যুদ্ধ

তুলতেকাদেরিয়াএবংবাহিনীকেসুশৃঙ্খলভাবেগড়েভূমিকাও

অবদান রেখেছিল।

আবদুস সবুর

চেয়ারম্যানের

ছেলে লুৎফর আর

মোক্তার

আলী চেয়ারম্যানের

ছেলে শাজাহান এক

সময় ছিল হরিহর আত্দা।

এরা দুজন আমার খুবই প্রিয়

ছিল। একজন শেষদিন

পর্যন্ত

আমাকে বুকে লালন

করে কয়েক বছর আগে এ

দুনিয়ার

মায়াকাটিয়েচলেগেছে।

আরেকজন ২০

জানুয়ারি ২০১৪

দুনিয়ার সব ধরাছোঁয়ার

বাইরে চলে গেল।

দয়াময় পরম প্রভু আল্লাহর

কাছেকৃতজ্ঞতাজানাই,

তিনি আমায়

মুক্তিযোদ্ধা শওকত

মোমেন শাজাহানের

জানাজায় শরিক হওয়ার

সুযোগ দিয়েছেন।

আমি তার আত্দার

মাগফিরাত

এবং শোকসন্তপ্ত

পরিবার-পরিজনের

প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন

করছি।

লেখক :

বঙ্গবীর কাদের

সিদ্দিকী বীরউত্তম

বিষয়: বিবিধ

১১৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File