আসহাবে রাসূল

লিখেছেন লিখেছেন টোকাই বাবু ২২ মে, ২০১৪, ১১:৫১:৩৫ রাত

'সাহাবী' শব্দটি আরবি ভাষায় 'সুহবত' শব্দের একটি রুপ। যার অর্থ সাহচর্য। 'আসহাব' শব্দটি 'সাহাবী' শব্দের বহুবচন।

আল্লামা ইবন হাজার (রা.) বলেন, 'ইন্নাস সাহাবিয়্যা মান লাকিয়ান নাবিয়্যা সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মু'মিনান বিহি ওয়া মাতা আলাল ইসলাম'- অর্থাৎ সাহাবী সেই ব্যক্তি যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ঈমান সহকারে তার সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের উপরেই মৃত্যু বরণ করেছেন।

এখানে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে-

১) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান

২) ঈমান থাকা অবস্থায় তার সাথে সাক্ষাৎ

৩) ইসলামের উপর থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

প্রথম শর্তটি দ্বারা এমন লোক সাহাবী বলে গণ্য হবে না, যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছে কিন্তু ঈমান আনেনি। যেমন: আবু জাহল, আবু লাহাবদের মতো কাফেররা। দ্বিতীয় শর্তে এমন ব্যক্তিও সাহাবী হিসেবে স্বীকৃত হবে যিনি নবীজীর সাক্ষাৎ লাভ করেছে কিন্তু অন্ধ বা এজাতীয় সমস্যার জন্য তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যেমন: অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম (রা.)। তৃতীয় শর্তে যারা ঈমান অবস্থায় নবী (সা.) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন কিন্তু পরে মুর্তাদ হয়েছেন। আবার পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করেছেন। পুনরায় ইসলাম গ্রহণের সময় নবী(সা.) এ সাক্ষাৎ না পেলেও। যেমন: হযরত আশয়াস ইবন কায়েস (রা.) যিনি প্রথমে রাসুলের জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেন আবার মুর্তাদ হয়ে যান। ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রা.) সময় পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে যাহাশ আল আসাদী একজন মুর্তাদ। যিনি প্রথমে নবী (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন, ইসলামগ্রহণ করেন কিন্তু হাবশায় হিজরত করার পর খ্রিস্টান হয়ে যায় এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল, রাবীয়া ইবনে উম্যাইয়া এরাও মুর্তাদ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

জ্বীনরাও সাহাবা ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে এমন অনেক জ্বীনের কথাই বলেছেন যারা নবী (সা.) এর কুরআন তেলাওয়াত শুনে ঈমান এনেছিলো। নি:সন্দেহে তারাও অত্যান্ত মর্যাদাবান সাহাবা।

সাহাবীদের মর্যাদা:

হাফেজ ইবন আবদিল বার সাহাবীদরে মর্যাদা সম্পর্কে বলেন- রাসূলুল্লাহর (সা.) সুহবত ও তার সুন্নাতের হেফাজত ও ইশায়াতের দুর্লভ মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা এইসব মহান ব্যক্তির ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। আর এ কারণেই তারা 'খায়রুল কুরুন' ও 'খায়রুল উম্মাতিন' এর মর্যাদায় উন্নিত হয়েছে। কোন কোন সাহাবা তাদের জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ শুনেছেন। এদরেকে আশহারে মুবাশশারা বলে। আশহারে মুবাশশারা ১০জন-

১. হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)

২. হযরত উমর ফারুক (রা.)

৩. হযরত উসমান (রা.)

৪. হযরত আলী (রা.)

৫. হযরত তালহা (রা.)

৬. হযরত যুবাইর (রা.)

৭. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.)

৮. হযরত ছায়াদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)

৯. হযরত ছায়ীদ ইবনে জায়েদ (রা.)

১০.হযরত আবু ওবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.)


তবে মুসলিম পন্ডিতদের অনেকেই সকল সাহাবী জান্নাতী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নবী (সা.) তার সাহাবীদের গালি দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। আর তাই তিনি বলেন- "আল্লাহ, আল্লাহ! আমার পরে তোমরা তাদেরকে সমালোচনা করার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাদরেকে যারা ভালোবাসে আমার মহব্বতের খাতিরেই ভালোবাসে, আর যারা তাদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।"

কুরআনে সাহাবীদরে মর্যাদার কথা সম্পর্কে বলা হয়েছে-

"মুহাম্মদ আল্লাহ রাসূল; তার সহচরগণ, কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের পরষ্পরের প্রতি সহানুভুতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবণত দেখবে। তাদের মুখ মন্ডলে সিজদার চিন্হ থাকবে, তাওরাতে তাদের বর্ণণা এরুপই এবং ইন্জীলেও।" (সূরা আল-ফাতহ্ : ২৯)

"মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্টার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত,যেখানে তার চিরস্থায়ী হবে। এটা মহাকামিয়াবী।" (সূরা আত-তাওবা: ১০০)

এছাড়াও হাশর-৮,৯, আল ফাতহ-১৮, আল ওয়াকিয়াহ-১০, আল আনফাল-৬৪ সহ বিভিন্ন আয়াতে কখনো প্রত্যেক্ষ আবার কখনো পরোক্ষভাবে সাহাবীদরে প্রশংসা করা হয়েছে।


তাদের মর্যাদা নিয়ে অসংখ্য হাদীসও আছে________

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী (সা.) বলেছেন-"আমার উম্মতদের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হচ্ছে আমার যুগের লোকেরা। তারপর তার পরের যুগের লোকেরা, তারপর তার পরের যুগের লোকেরা। তারপর এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে যাদের কসম হবে তাদের সাক্ষ্যের অগ্রগামী। তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়ার আগেই তারা সাক্ষ্য দিবে।"

"তোমরা আমার সাহাবীদরে গালি দিবে না, কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও ব্যায় করো তবুও তাদের যে কোন একজনের 'মুদ' বা তার অর্ধেক পরিমাণ যবের সমতুল্যও হবে না।"

সাঈদ ইবনুল মুসায়িব উমার উবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- "আমার পরে আমার সাহাবীদের পারষ্পরিক মতপার্থক্য সম্পর্কে আমার 'রব' প্রভুর কাছে জানতে চাইলাম। ।অর।রাহ আমার কাছে ওহী পাঠালেন- হে মুহাম্মদ, তোমার সাহাবীরা আমার কাছে আকাশের তারকা সদৃশ। তারকার মতো তারাও একটি থেকে অন্যটি উজ্জলতর। তাদের বির্তকিত বিষয়ের কোন একটিকে যে আকরে থাকবে, আমার কাছে সে হবে হেদায়াতের উপরে।"


সাহাবী চিনবার উপায়:

রিজাল ও হাদীস শাস্ত্রবিদরা এবিষয়ে কিছু মূরলনীতি অনুসরণ করেছেন।

* 'খবরে তাওয়াতুর' অর্থাৎ একজন সম্পর্কে যখন প্রতিটি যুগের অসংখ্য মানুষ সাক্ষ্য বা বর্ণণা দিবে যে তিনি সাহাবী ছিলেন।

** 'খবরে মাশহুর' অর্থাৎ প্রতিটি যুগের প্রচুর সংখ্যক মানুষ সাক্ষ্য দিবে।

*** কোন একজন সাহাবীর বর্ণণা বা সাক্ষ্যর ভিত্তিতে।

**** কোন প্রখ্যাত তাবেঈয়ীর বর্ণনা বা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে।

***** কেউ যদি নিজেই নিজেকে সাহাবী দাবী করে তবে দুটি শর্ত: এক) আদালত বা ন্যায়নিষ্ঠতার গুণ, দুই) 'মুয়াসিরাত' বা সমসামিয়কতা।

ইমাম আবু যারআ আর রাযী,র মতে সাহাবীদের সংখ্যা এক লক্ষের উপরে।

বিষয়: বিবিধ

২২৬৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224886
২৩ মে ২০১৪ রাত ১২:১০
আফরা লিখেছেন : অনেক তথ্য জানতে পারলাম ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৩ মে ২০১৪ সকাল ০৬:০৯
172126
টোকাই বাবু লিখেছেন : হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ঐ ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবাযত্ন করে) জান্নাতে যেতে পারলো না। (মুসলিম শরীফ)
224909
২৩ মে ২০১৪ রাত ০২:২৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
২৩ মে ২০১৪ সকাল ০৬:১৫
172127
টোকাই বাবু লিখেছেন : হযরত আবু হুরাইরা (রা.)থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের জীবানে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম) Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying
225039
২৩ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:০২
ভিশু লিখেছেন : চমৎকার!
খুব ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
২৩ মে ২০১৪ রাত ১০:১৭
172353
টোকাই বাবু লিখেছেন : Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel Angel
225113
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক যত্ন সহকারে লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ Rose
২৩ মে ২০১৪ রাত ১০:১৭
172354
টোকাই বাবু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইর. . . Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File