দিনে দিনে বারিয়েছো দেনা

লিখেছেন লিখেছেন টোকাই বাবু ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:০৯:২৪ বিকাল

সন্তান সবসময়ই তার বাবা-মার কাছে অতীব আদরের হয় Love Struck Love Struck Love Struck । আমার বাবা-মাও তার ব্যাতিক্রম নই। সন্তান যখন খুবই ছোট থাকে তখন বাবা-মা একটু বেশীই আদর করে তার সন্তানকে বাবা/মা বলে ডাকে। ঠিক আবার বিপরীতপক্ষে সেই বাবা-মাই যখন বার্ধ্যকে উপনীত হয় তখন তার স্নেহের সন্তানরা দুষ্টুমীর ছলে বাবা-মাকে তাদের সন্তান/বাবু বলে ডাকে।

সেই ছোট সময় থেকেই তোমরা আমাকে আদর যত্নে বড়ো করেছো। আজ আর আমাকে হাত ধরে হাটতে হয় না। খাবারের জন্য কান্না করতে হয় না। বাবা তোমার কাদে চড়ে ডাক্তার দেখাতে যেতে হয় না। আমার বাবা-বাবা আমার বন্ধু। আমি ক্লাস ৮এ পড়াশোনা করা পর্যন্ত তুমিই ছিলে আমার একমাত্র বেস্ট ফেন্ড।

মনে পড়ে সেই শৈশবের কথা। আমি আর তুমি একসাথে স্কুলে যেতাম (বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন)। দু'জনে একসাথে ফজরের নামায শেষে এসই যার যার কাজ শুরু করা। আমার পড়াশুনা শেষে একসাথে নদীতে গিয়ে গোসল করা, তারপর বাসায এসে জল চকীতে বসে খাওয়া শেষ করে স্কুলের দিকে রওয়ানা হওয়া। আমার প্রাইমেরী স্কুলের ক্লাস শেষ হলেও সেই বিকাল ৪টা পর্যন্ত তোমার জন্যে শিক্ষদের রুমে অপেক্ষা করা। খুব কম সময়ই তোমকে ছেড়ে একা একা চলে আসতাম। এভাবেই প্রাইমেরী শেষ। এবার তুমিই আমার শিক্ষক হলে। সেই আগের মতোই স্কুলে যাওয়া-আসা।

বাবা আমার আজো দু'টি দিনের কথা মনে পড়ে। আমি যখন ক্লাস ৪এ তুমি আমাকে একদিন খুবই মেরেছিলে। বর্ষা মাসে নদীর ধারে মুড়ি খেতে খেতে হাটছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই কাদা মাটিতে ডেবে যাই। তুমি দুর থেকে আমায় দেখেছিলে। তারপর কাছে ডেকে নিয়েই ইচ্ছামতো আখের খন্ড দিয়ে মেরেছিলে। নদীর ওপার থেকে একজন নৌকা নিয়ে এসে তোমাকে থামায়। সেদিন তুমি না খেয়ে ছিলে আমি কিন্তু ঠিকই স্বার্থপরের মতো খেয়ে নিয়েছিলাম। আর একদিন যখন আমি ক্লাস ৯এ পড়ি। বৃহষ্পতিবার হলেই আমাদের গল্পের বই পড়াতে। সেদিন তুমি বই নিয়ে না যেতে বলার কারণে আমরা ক্লাসের কেউ বই নিয়ে যাই নি। ক্লাসে এসেই গল্পের বই আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সবার উত্তর ছিলো: স্যার শেষ ক্লাসেতো আপনি বই নিয়ে আসতে বলেননি। বলামাত্রই যারা যার বই না নিয়ে আসছে তাদের সবাইকে দাড় করানো হলো। ক্লাসের সবাই দাড়িয়ে গেলো। স্যার পিয়নকে ডেকে বেত আনতে বললেন। আমার অবস্থানটা ছিলো সবার সামনের বেন্চে একদম প্রথম। তুমি পেছনের সারির সবশেষ ব্যাক্তি থেকে মারা শুরু করলা। সবার জণ্যে একটা করে বরাদ্দ ছিলো। সবশেষে এবার আমার পালা। এখানে এসই শুরু হলো এক টানা, আমি শুয়ে পড়েছিলাম তাও তুমি আমায় মারছিলে। সব শিক্ষকরা দরজার সামনে এসে দাড়ালেও কেউ বাবাকে থামানোর দু:সাহস করলো না। হ্যাঢ স্যার (প্রধান শিক্ষক) শুনা মাত্রই দৈাড়ে এসে একটানে বাবাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে,কুলে করে নিয়ে উনার চেয়ারে বসান। পরে বাসা থেকে ভাইয়ারা এসে আমায় নিয়ে যায়। আর বাবার যা হবার-খাওয়া বন্ধ। দু'দিন পরে আমার অনেক রিকোয়েস্টে তুমি খেলে।

আজ আর তুমি মারো না। আমি বাসায় গেলে অস্থির হয়ে যাও আমি কি খাবো তা নিয়ে। আমার নিয়মিত একটা রুটিন ওয়ার্ক ভোরে বাসায় কল দিয়ে কথা বলা। মার সাথে অনেক্ষণ কথা বলি কিন্তু বাবার কাছে ফোনটা গেলেই কথা শেষ। আব্বা কেমন আছো, কি করো, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো ব্যাস শেষ। এখন বাবা আমায় ফোন দেয়।

এখনও বাসায় গেলে বাবার আগে আমি কখনোই উঠতে পারি না। নামাযর জন্য তোমার কাছ থেকে ডাক পাই। এইতো কাল যখন বাসায় যাওয়া হলো, পথিমধ্যে গাড়ী থেকে মাকে ফোন করে জানালাম আমি আসতেছি আর একটু পরেই তুমি ফোন দিয়ে পরামর্শ দিলে। তোমার পরামর্শ শুনে মনে হলো-তুমি আমাকে এখনো সেই ছোট্র খুকাটাই ভাবো। বাসায় ফিরামাত্রই বিদ্যুৎ চলে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে নামাযে দাড়ালে তুমি চার্জার ফ্যানটা ছেড়ে আমার দিকে দিকে ধুরিয়ে দিলে অথচ তুমি নিজে তখনও হাতাপাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছিলে। ঠান্ডা হিমেল বাতাস অনুভব করা মাত্রই মনের অজান্তেই নিজের দু'চোখ বেয়ে নেমে আসল পানি। অজোর দাড়ায় পড়তে থাকলো। নামায শেষে প্রবাহের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। আর মনে হলো-আমি কি পারবো তোমাদের প্রত্যাশা পুরণ করতে??? আমি যে আরো বেশী রৃনী হয়ে গেলাম তোমর কাছে।

বিষয়: বিবিধ

১৫০৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

215514
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
ইমরান ভাই লিখেছেন : রাব্বির হাম হুমা কামা রব্বাইয়‍্যাসি সগির।
এ ছারা আর কোন ভাষা নাই আমার।
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
163816
টোকাই বাবু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইর Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying
215550
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
আফরা লিখেছেন : বাবা মার প্রত্যাশা পুরনের চেষ্টা করেন ।বাবা মা তাদের অবদানের জন্য কখনো সন্তানকে রৃনী করে রাখে না ।
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
163817
টোকাই বাবু লিখেছেন : হুম....তারাতো রাখেন না কিন্তু আমি যে .............
215707
০১ মে ২০১৪ রাত ০৩:৩৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৭:১৪
163978
টোকাই বাবু লিখেছেন : ভাই প্যারিসের কমন মন্তব্য (আমার ক্ষেত্রে)। ফাকিবাজী করে
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৮:০১
163989
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : Waiting Waiting Waiting
215748
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৬:৫৯
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : এই ঋণ কখোনোই শোধ করা সম্ভব নয়!
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৭:১৫
163979
টোকাই বাবু লিখেছেন : হুম . . .ঠিক তাই আপুনি
231928
০৭ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৬
সত্যবাদী ব্লগার লিখেছেন :

এভাবে লালন পালন করেছে তোমাকে টোকাই বাব্বু Cook Cook Cook

০৮ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৯
178860
টোকাই বাবু লিখেছেন : Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated Frustrated
আর তুমাকে :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking :Thinking
232195
০৮ জুন ২০১৪ সকাল ১০:২০
সত্যবাদী ব্লগার লিখেছেন : খুশি হননি ??
১৫ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
181808
টোকাই বাবু লিখেছেন : হু,ম ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking ;Winking

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File