মেও ধরবে কে?
লিখেছেন লিখেছেন টোকাই বাবু ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:২৩:৪৮ সকাল
বিড়ালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিকার বের করতে ‘ইদুরের স্বার্থ রাক্ষা কমিটি’র জরুরী সভা বসেছে।
‘‘না! এভাবে আর মেনে নেয়া যায় না। নিজেদের অস্তিত্বই আজ বিলীন হওয়ার উপক্রম। বিড়ালের কাছে জাতি ভাইদের প্রতিনিয়ত অসহায় আত্মসমর্পনের একটা প্রতিকার হওয়া চাই। এভাবে চলতে থাকলে একদিন পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে আমরা ডাইনোসরের মত হারিয়ে যাব। ডাইনোসর নিজেদের বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমাদেরকে পারতেই হবে। কি বলেন সভাসদবর্গ?’ থামলেন ‘ইদুরের স্বার্থ রাক্ষা কমিটি’র আহবায়ক মি. চিকা বাবু।
আহবায়কের কথায় সবাই নড়েচড়ে বসলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা এসছেন। যারা জন্ম থেকে গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন তাদের আসতে বেশ কষ্ট হয়েছে। কাঁদা, কাচা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তারা গ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যখন শহরের পাকা পথে উঠেছেন তখনই তাদের সারে বারোটা বেজে গেছে। পাকা রাস্তা, পাথর, ইট, দালান কোঠা খোঁড়তে গিয়ে প্রত্যেকেই নিজেদের মূল্যবান দাঁতগুলো হারিয়ে বসেছেন। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। নিজেদের দাঁতের বিনিময়েও যদি পরবর্তি প্রজন্মের জীবন বাঁচানো যায় তো কম কিসে? ইতিহাসের সোনালী পাতায় তাদের নামটি মুক্তার মত ঝলঝল করবে। তাই কেউ দাতের পরোয়া করেন নি। ঠিক সময়ে এসে সভায় উপস্থিত হয়েছেন।
নিজেদের বাঁচাতে ও বিড়ালদের উচিৎ শিক্ষা দিতে তিন ঘন্টা ব্যাপী চলল সভা। দেহ-মন উজাড় করে সকলেই জ্ঞানগর্ভ পরামর্শ দিলেন। মি. চিকা বাবুর ব্যাক্তিগত সহকারি শ্রী বাতাড়ি শেখড় সেগুলো নোট করলেন। একটি বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হল- বিড়ালদের সাথে কোন আপোষ চলবে না। সভার প্রতিটি সদস্য নিজেদের পূসূরীদের (বিড়ালের পেটে যাওয়া) লম্ব লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরে উত্তেজিত বক্তব্য রাখলেন। সুতরাং বিড়ালদের সাথে কোন সংলাপ তো দূরের কথা তাদেরকে আর এই জগতেই আস্ত রাখা যাবে না।
‘ইদুরের স্বার্থ রাক্ষা কমিটি’র আহবায়ক মি. চিকা বাবুর একটা বিষয় প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি পরামর্শের বাহিরে কোন কাজ করেন না। আজকেউ তার ব্যতিক্রম হল না। সকলের পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি বিড়ালের বিরোদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। যে করেই হোক তাকে এ জগৎ থেকে চির বিদায় জানিয়ে জগৎময় ইদুরে একচ্ছত্র রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রতিটি আয়তাকার ও বর্গাকার ধান-গম খে কে টার্গেট করে সাব কমিটি গঠিত হল। কারণ যার এলাকার সমস্যা তাকেই তার সমাধান করতে হবে। গেছো ইন্দুরদের পক্ষ থেকে পরামর্শ এলো- আমরা এক্ষেত্রে কুকুরের সাহায্য নিতে পারি কি-না? বিলাতি ইদুর তীব্র ভাষায় এর বিরোধীতা করে তার মতামত তুরে ধরল। সে বলল- জনাব সভাসদগণের আক্কেল জ্ঞান আর কবে হবে আমি জনি না। তারা শত্র“র শত্র আমার বন্ধু এই প্রবাদটা মনে রাখলেও- ‘শত্রর বন্ধু যে আমার শত্র“’ এ প্রবাদটি নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন। আমাদের ধরাধাম থেকে নি:শেষ করতে কুকুর-বিড়াল উভয় জাতই সমান ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে আমরা যারা বিলাতি ইদুর তাদের প্রধান শত্র“র তালিকায় দুটি নাম- বিড়াল ও কুকুর।
আরো ঘন্ট দুই আলোচনা চলে সবশেষে এ সিদ্ধান্তে ইপনীত হওয়া গেল যে আমরা নিজেরাই ধরব-মারব। সমস্ত দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দেয়া হল। কেউ ধরবে সামনের পা, কেউ পেছনের পা, কেউ লেজ, কেউ কান, কেউ মাথা, বাকীরা পশম ধরবে। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রাণপণ চেষ্ট চালিয়ে যাবে। শেষের এই পরামর্শটা দিয়েছেন সয়ং আহবায়ক মি. চিকা বাবু। সবাই একবাক্যে তা মেনে নেয়ায় তিনি লেজ আর মোঁচ নেড়ে নেড়ে গর্ব অনুভব করতে লাগলেন।
বিড়ালের বিরুদ্ধে প্রাণভরে, গলা ফাটিয়ে বতৃতা করলেন অনেকে। ফুরফুরে এবং আনন্দঘণ পরিবেশে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন আহবায়ক। তখনও আসন ছেড়ে অনেকে উঠেনি। অনেকে সাথে করে আনা ধান ও গমে শিষ মুখে নিয়ে কূটকূট করে কাটছিলেন। পেছনের এক কোণা থেকে এক ছিচকে ইদুর আকস্মিক চিৎকার মেরে দাঁড়িয়ে গেল। সে অত্যন্ত রাগান্নিত ও উত্তেজিত ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগল। সভায় কাদেরকে ডাকা হয়েছে? এদের মাথায় ধান আর গমের শিষ ছাড়া আর কিছুই নাই। আশপাশের কয়েকজন তাকে থামানোর চেষ্টা করে। সে আরো উত্তেজিত হয়ে বলে- আমাদের এই পাঁচ ঘন্টা সভার পুরো সময়টাই নষ্ট হয়েছে। পাশ থেকে অনেকেই ব্যঙ্গ করে। কেন কেন? কি হয়েছে বলবেন তো? ইত্যাদি প্রশ্নবাণে তাকে জর্জরিত করা হয়। উত্তেজিত ছিচকে ইদুর চিৎকার মেরে মেরেই বলেন- আমরা বিড়ালের কে কোথায় ধরবো, ধরার পর কি কাজ করবো ইত্যাদি সব আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আসল বিষয়টি তো আসেনি। পাশ থেকে স্বরব আক্রমন কি? কি? সেটা কী? ছিচকে ইদুর এবার গম্ভীর কন্ঠে বলেন- যে ডাক শুনে আমাদের করজে পানি শুন্য হয়ে যায়, যে ডাক শুনে আমরা নিজেদের মৃত্যুর প্রহঢ় গুনতে থাকি, যে ডাক শুনরে আমাদের মধ্যে গর্তের গভীর থেকে গভীরে ঢোকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় সেই “মেও” ডাক ধরবে কে?
এবার সবাই নড়েচড়ে বসলেন। সবাই লা-জওয়াব। গভীর চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে সবার চোখে মুখে। কেউ মাথা নিচের দিকে দিয়ে কেউ লেজ নেড়ে ভাবছিলেন। কয়েকজন চিন্তার অতিসহ্যে লেজ চেপে ধরে টয়লেটে গেলেন। একপর্যায়ে অনেকে আহবায়কের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন- মানণীয় আহবায়ক নিজে ‘মও’ ধরবেন। আহবায়ক চেচিয়ে উঠলেন- আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে এই উদ্ভট পরামর্শ দিয়ে ভরা মজলিসকে নাকানি-চুবানি খাওয়ালো তাকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। ছিচকে ইদুর ভূট্রার শিষে মনের সুখে কামড়াচ্ছিল। সে আয়েসী কন্ঠে বলল- আমি তো বহু আগে থেকেই নিজেকে বিড়ালের পেটে অনুভব করতে ভালবেসে আসছি। আপনারা রুই-কাতলাদের যদি মরতে কোন আপত্তি না থাকে তো আমি সামান্য চুনোপুঠির তো কোন আপত্তি থাকা শোভা পায় না। ইতোমধ্যেই হল ঘর খানিকটা খালি হয়ে গিয়েছে। শুটকির মিশ্রন দিয়ে ধান-চাল-গম ও ভূট্রার ঘন্ড দিয়ে লান্স করে অনেকে হাই তুলছিলেন। কয়েকজন ইতোমধ্যে নাক ডাকছেন। সভার এই বেহাল অবস্থা দেখে আহবায়ক সভা মুলতবি ঘোষণা করলেন। পরবর্তি কোন ডেট না ঘোষণা করেই তিনি একান্ত সহকারির লেজে ভর করে প্রস্থান করলেন।
শিক্ষা- কথা বলা ও পরামর্শ দেয়ার লোকের কোন অভাব হয় না। অভাব হয় ‘আসল’ কাজের লোকের অভাব।
(সংগৃহীত ফ্রম ফেবু)
বিষয়: বিবিধ
৩৯৭০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিড়ালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিকার বের করতে ‘ইদুরের স্বার্থ রাক্ষা কমিটি’র জরুরী সভা বসেছে।
‘‘না! এভাবে আর মেনে নেয়া যায় না। নিজেদের অস্তিত্বই আজ বিলীন হওয়ার উপক্রম। বিড়ালের কাছে জাতি ভাইদের প্রতিনিয়ত অসহায় আত্মসমর্পনের একটা প্রতিকার হওয়া চাই। এভাবে চলতে থাকলে একদিন পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে আমরা ডাইনোসরের মত হারিয়ে যাব। ডাইনোসর নিজেদের বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমাদেরকে পারতেই হবে। কি বলেন সভাসদবর্গ?’ থামলেন ‘ইদুরের স্বার্থ রাক্ষা কমিটি’র আহবায়ক মি. চিকা বাবু।
দুষ্টু পোলার ও ভালো লাগছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন