অমুসলিমের ইসলাম বিদ্বেষ এবং ইসলামের উদারতা

লিখেছেন লিখেছেন অচেনা রাজ্যের রাজা ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৮:০৭ সন্ধ্যা

ইসলাম কিভাবে সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছিল অমুসলিমদের সাথে এর সম্পর্কে লিখতে গেলে কালি শেষ হয়ে যাবে, পোষ্টে পোষ্টে গোটা সামু ভেসে যাবে কিন্তু কথা রয়ে যাবে। ইসলাম একদিকে স্বীয় মুসলিম গোত্র দ্বারা কটূক্তির স্বীকার হচ্ছে অন্যদিকে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে অমুসলিমরাও প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ করে যাচ্ছে ইসলামকে। অমুসলিম ভাইদের ইসলাম বিদ্বেষের কারণ তারা কিছু নামধারী মুসলমানদের দেখে ভাবে ইসলাম তাদের মুল্য দেয় না, ইসলাম তাদের অস্বীকার করে, ইসলাম তাদের ন্যায্য বিচার করে না। মুসলমানরা খারাপ কাজ করছে তাহলে তাদের ধর্ম কি শিক্ষা দেয়।

অমুসলিম ভাইয়েরা কোন ব্যক্তি মুসলমানকে দেখে যদি আপনি ইসলামকে যাচাই করতে যান তাহলে আপনি হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় গাধা। কিছু অজ্ঞ মুসলমানরা আপনাদের বিশ্বাসে যদি আঘাত হানে, আপনার দেবদেবীদের নিয়ে ঠাট্টা করে তাহলে সেটা ঐ ব্যক্তির সমস্যা এবং এর দায়ভার সব ঐ ব্যক্তির, ইসলামের নয়।

কু'রআন আমাদের শিক্ষা দেয় আমরা যেন অন্য ধর্মের দেবদেবী এবং তাদের বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা মশকরা কিংবা গালি-গালাজ না করি। কেননা, প্রত্যেক ধর্মের মানুষই তাদের নিজেদের ধর্ম এবং বেছে নেওয়া পথকে নিজের জন্যে শোভন মনে করে। আমরা যদি তাদের ধর্ম এবং ইলাহ নিয়ে গালি-গালাজ করি তবে, তারাও হয়ত নিজেদের শিরক থেকে আরেকটু অগ্রসর হয়ে আমাদের একমাত্র ইলাহ সর্বশক্তিমান আল্লাহকে নিয়ে গালি-গালাজ করবে। অন্যের ইলাহের প্রতি আমাদের গালি-গালাজ মূলত পরোক্ষভাবে আল্লাহকে গালি দেয়ার কারনে পরিণত হবে এবং এ গালির জন্য মূলত আমরা নিজেরাই দায়ী হব। তাই আমাদেরকে এমন আচরন থেকে বিরত থাকার জন্য কু'রআনে সূরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'আলা বলেছেন-

"আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না৷ কেননা, এরা শিরক থেকে আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত যেন আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে৷ তো এভাবে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের কার্যক্রমকে সুশোভন করে দিয়েছি৷ তারপর তাদের ফিরে আসতে হবে তাদের রবের দিকে৷ তখন তিনি তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদেরকে জানিয়ে দেবেন৷"

অমুসলিম ব্রাদার ইসলাম আপনাকে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছে একটু কষ্ট করে আপনার মুল্যবান সময়টুকু খরচ করে ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন তাহলেই আপনার সব ভ্রান্ত ধারণা মিটে যাবে।

একটা ছোট্ট ঘটনা উদাহরণ হিসেবে বলি তাহলে আরো ক্লিয়ার হবে।

খলীফা (নেতা, শাসক) হযরত আলী (রা) এর সময়কার ঘটনা। হযরত আলী (রা) তখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলীফা। শুরাইক একজন দেশের কাজী বা প্রধান বিচারপতি। হযরত আলী (রা) এর একটি ঢাল (সমরাস্ত্র) হারিয়ে যায় এবং এক ইহুদী জিম্মি সেটি কুড়িয়ে পায়। হযরত আলী (রা) সেটা ইহুদীকে ফেরত দিতে বললে সে সেটা ফেরত দিতে অস্বীকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আলী (রা) বিচারকের কাছে বিচার দেন সেই ইহুদীর নামে। শুরাইক বা প্রধান বিচারপতি তখন হযরত আলী (রা) এবং ইহুদী দুজনকেই ডেকে পাঠান। এরপর তাদেরকে শুরু করা হয় জেরা।

বিচারক শুরাইক ইহুদিকে বললেন, এই ঢালটা কি আপনার ?

ইহুদীঃ ঢালটা যে আমার তার প্রমান হচ্ছে ঢালটা আমার হাতে।

বিচারক শুরাইক আলী (রা) কেঃ আপনার কি কোন সাক্ষী আছে যাতে প্রমানিত হয় ঢালটি আপনার ?

আলী (রা): হ্যা আছে। আমার ছেলে হাসান (রা) এবং পরিচারক কানবার।

বিচারক শুরাইকঃ আপনার পরিচারক কানবার এর সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য কিন্তু আপনার ছেলে হাসান (রা) এর সাক্ষী গ্রহনযোগ্য নয়।

আলী (রা) তখন বললেন: আপনি কি এই হাদিস শোনেননি যে হাসান এবং হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? এরপরেও তার সাক্ষী গ্রহনযোগ্য নয় ?

বিচারক শুরাইক : হ্যা শুনেছি তবে পিতার ক্ষেত্রে পুত্রের সাক্ষ্য আমি গ্রহনযোগ্য মনে করি না তাই এই রায় আমি ইহুদীর পক্ষে দিলাম।

আলী (রা): আমি এই বিচার মেনে নিলাম।

আলী (রা) বিচার মেনে নেবার পর ঢালটি ইহুদিকে দিয়ে দেয়া হয়। ইহুদি এতে এত আশ্চর্য এবং মুগ্ধ হন যে উনি স্বীকার করেন যে ঢালটি আলি (রা) এর এবং ঢালটি ফেরত দিয়ে দেন। এরপর বলেন- আপনার দ্বীন-ধর্ম সত্য। মুসলমানদের বিচারক রায় দেন বর্তমানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি এদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আর তিনি বিনা তর্কে মাথা নত করে সেটা মেনে নেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল এবং তখনি ইহুদি ইসলাম গ্রহন করলেন। সুবহান'আল্লাহ। ইহুদীর এভাবে ইসলাম গ্রহন করায় আলী (রা) এতো খুশী হলেন যে তিনি তাকে ঢালটা উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন।

বিষয়: বিবিধ

১১০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File