ইসলামী সংঙ্গীত সম্রাট,আইনুদ্দীন আল আজাদ রহঃ এর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে আমার স্ট্যাটাস।

লিখেছেন লিখেছেন নাইমুল হক ২০ জুন, ২০১৩, ১১:১২:৫০ রাত

।.।১ম পর্ব।.।

১৮/06/13সকাল ছয়টা।ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা

একটি বিলাস বহুল প্রাইভেট কার,রাজশাহী শহর অতিক্রম করে লালপুর অতিক্রম করছে,গাড়ি চলছে দ্রুত বেগে,ড্রাইভ করছেন

মালিক নিজে,আর পাশের ছিটে গভীর ঘুমে মগ্ন ড্রাইভার,পথে জরুরী কিছু কাজ সেরে সন্ধার আগেই খুলনা পৌছতে হবে,সেখানে একটি

একটি প্রগ্রামের মধ্যে মনি এই সাময়িক ড্রায়ভার।ফাকা রোডে শাঁ শাঁ করে চলছে গাড়িটি,সামনে একটি মোড়,সেটা অতিক্রম করতে যেয়ে

হঠাৎ ব্যাক সাইড দিয়ে আসছে একটি খালি বাস,এই অতিথির হয়তো আর খুলনা যাওয়া হলোনা,নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাসের মধ্যে অর্ধেক ঢুকে

গেল ছোট গাড়িটি,পাশে ঘুমন্ত ড্রায়ভার এতক্ষনে একেবারেই ঘুমিয়ে গেল,আর সাময়িক ড্রাইভরত অতিথিকে গাড়ির সামনের অংশ প্রচন্ডভাবে চেপে

ধরে রাখে,ফলে তাঁর শরীরের রক্ত ও পানীয় সব মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়,পা দুটো দুমড়ে মুচড়ে যায়,এ যেন এক মহা বেদনার ইতিহাস।আশে পাশে

কোন বসতি নেয় আছে শুধু ফসলে ভরা ক্ষেত।দীর্ঘক্ষন কেটে যায় এভাবেই,স্টারিংয়ের চাপে জীবন প্রদীপক্ষীন হয়ে আসা অতিথি এই বিপদে উচ্চ

স্বরে পরম বন্ধু,অসোহায়ের সহায় মহা পরাক্রমশালীর নাম জপতে থাকেন।ঠিক তখনই একজন কৃষকের কানে গেল দরদভরা কণ্ঠে ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে

জিকিরের আওয়াজ,আবিষ্কার করলেন এক বিভৎস দুর্ঘটনার,নিজের সবটুকু শক্তি ব্যায় করে মহা ক্ষমতাধর প্রভূর নাম জঁপতে

থাকা এই প্রতিভাবান পুরুষকে নিয়ে সেই কৃষক বিদ্যুৎ গতিতে চলছেন চিকিৎসালয়ে।অপারেষণ থিয়েটারে শায়িত প্যাষন,তাঁকে অজ্ঞান

করতে প্রস্তুতি চলছে,হঠাৎ রোগীর কণ্ঠস্বর,ডাক্তার সাহেব,আমার সময় শেষ,অপারেষনের প্রয়োজন নেই,আর তখনই শুরু হয়ে

গেল অসম্ভব রকম আবেগে আল্লাহ নামের জিকির,এ যেন হারানো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে ভালবাসা প্রকাশের উন্মাদনা,জিকিরের

আওয়াজ ও গতি ক্রমাগত বেড়েই চলছে,এভাবে কিছুক্ষন কলতে থাকে,হঠাৎ গতি কমতে শুরু করলো,ক্ষীন থেকে ক্ষীন হতে লাগলো,একেবারেই আওয়াজহীন

হয়ে গেল।এ যেন এক মহা নিরবতা,এভাবেই এই ধরা ছেড়ে চীর ত্বরে চলে গেলেন,এ দেশের হাজার যুবকের জীবনের মোড়

ঘুরে যাওয়ার ওসিলা,লাখ লাখ ছাত্রদের ফেভারিট ম্যান,কোটি কোটি বাংলাদেশী মুসলমানদের প্রিয় শিল্পী,এ যুগের খালিদ

বিন ওয়ালিদ বাতিলের আতঙ্ক,ইসলামী চিন্তাবিদ,গীতিকার সুরকার ও ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট হযরত মাওঃ মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ রহঃ।

(পরবর্তী পর্বগুলোর আমি প্রত্যক্ষদর্শী)

।.।দ্বিতীয় পর্ব।.।

2010 এর 18ই জুন শুক্রবার,খুব সকালে শিহরণের অফিসে গেলাম,দশটায় ছুটি দিয়ে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছি।১১টায় মোবাইলের

রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল,সঙ্গীত সম্রাটের বাল্য বন্ধু হা: হেদায়েত ফোন দিয়েছে,নাঈম কি হয়েছে শুনেছো?অজানা বিপদের

আশংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো,বললাম কি?তিনি বললেন আইনুদ্দীন মারা গিয়েছে,এই লোকটি একটু রসিক ছিল,ভাবছিলাম

রসিকতা করার আর বিষয় পেলনা এমন একজন মহান ব্যাক্তিকে নিয়ে....।তার পরেই ভাবলাম সত্যে হতেও-তো পারে,সে বললো হ্যাঁ

রাজশাহীতে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম আজাদ ভায়ের বাল্য বন্ধু ও রাজনৈতিক সহচর,শিহরণ সাংস্কৃতিক

পরিষদের সভাপতি শফিক রহমানকে,রিসিভ করেই বললেন ঘটনা সত্য,আমার বুকের ভেতর সাইমুম ঝড় শুরু হয়ে গেল,বুঝতে পারছিলনা

এই মুহূর্তে আমার কি করা দরকার,মনে পড়ে গেল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া শেষ ঘটনা,কালীগঞ্জ গোহাটা মসজিদে ইসলামী আন্দোলনের ইউনিয়ন

প্রতিনিধিদের মিটিং চলছে,আমি শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হলাম,বাহির থেকেই বক্তৃতার আওয়াজ শুনলাম,বক্তৃতা প্রদান করছেন

কলিগঞ্জ আসনে সম্ভব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওঃ আইনুদ্দীন আল আজাদ,উনি খুব রসিক মানুষ ছিলেন,মিটিং শেষে আমি

মুসাফা করলাম,পাশে শফিক ভাই দাড়িয়ে ছিলেন,দুইজনে আমাকে আদুরে বকা দিলেন,একটু হাসাহাসি করলেন,তার পর

পড়াশুনার কথা জিজ্ঞাসা কর বললেন পক্রিক্ষায় এ প্লাস হবেতো?আমি ইনশাল্লাহ বললাম।এর পর বিদায় নিয়ে তিনি

গাড়িতে উঠলেন,নিজেই ড্রাইভ করলেন,মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলে আর রাস্তার দুইধারে নেতা কর্মীরা প্রিয় নেতার শেষ সফর

দেখতে লাগলো অপলোক নয়নে।যাহোক মন চাচ্ছিলো এখনই তাঁর কাছে ছুটে যায় কিন্তু সে অনেক দুরে,জুম্মার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,গোসল

করছি আর হাউমাউ করে কাঁদছি,বুকের মধ্য অসহনীয় কষ্ট হচ্ছিলো।আমাদের বাড়ি থেকে আজাদ ভায়ের বাড়ি বিশ কিলোমিটার দূরে,

নামাজ পড়ে রওনা হলাম,মধুপুর বাজারে নেমে দেখলাম আবু রাইহান সহ কলরবের কিছু শিল্পীরা এসেছে,খুলনার প্রগ্রামে তারাও যাচ্ছিলো,এই

দুর্ঘটনার কথা শুনে ঝিনাইদহে নেমে পড়েছে,সবার দুঃখ ভারাক্রান্ত মন,

কোরিমন গাড়িতে হাজরা-তলা তথা আজাদ ভায়ের গ্রামে উপস্থিত হলাম,অনেক মানুষ কিন্তু সে এখনো আসেনি আসতে রাত হবে

,লালপুরে প্রথম জানাজা শেষে ঝিনাইদহ উজির আলি হাইস্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে,এশার পরপরই বিশাল মাঠ কানায়

কানায় ভরে গেল,জানা গেল তাঁর আসতে রাত দশটা বাজবে,এতক্ষণে কলরবের শিল্পীরা পর্যায়ক্রমে সঙ্গীত পরিবেষণ করছিল,

যেতে হবে খালি হাতে গানটি পরিবেষণ করছিল আবু রাইহান,গানটি শুনে ময়দানের সবাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল,যেন এই

গানটি আজকের দিনের জন্যেই লেখা।রাত দশটা বেজে গেল,এম্বুলেন্সের করুন সুর কানে ভেসে এলো,আমি স্বেচ্ছাসেবকের

দায়িত্বে ছিলাম,দেখলাম একটি কফিন আমাদের দিকে আসছে,সামনে আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার

সেক্রেটারি জেনারেল জনাব বাবলু চাচা,উনি চিৎকার করে করে শুধু বলছেন ''আল্লাহ' আল্লাহ''।শিল্পী আবুল কালাম আজাদ সহ

অনেকেই স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য দিলেন,তনুমধ্যে আইনুদ্দীন আজাদের সব থেকে কাছের মানুষ জনাব মশিয়ার চাচা তার বক্ত্যেব্যে

বললেন''আমার কাছে গত তিনদিনে তিনবার বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন এসেছে তারা জিজ্ঞাসা করেছ আইনুদ্দীন কি মারা গেছে?

অতএব এটা পরিকল্পিত ঘটনা,এর সূত্র বের করে বিচার করতে হবে,মুহূর্তেই হাজার হাজার শোকাহত জনতা বাঘের মত গর্জন দিয়ে উঠলো,

মানুষের কান্নার আওয়াজে ঝিনাইদহ শহর স্তব্ধ হয়ে গেল,উজির আলী স্কুল মাঠের ঘাস গুলো চোখের পানিতে ভিজে গেল।

জানাজার ইমামতি করলেন পীর সাহেব চরমোনাইয়ের খলিফা হযরত মাওঃ অধ্যক্ষ ইউনুচ আহমদ সাহেব দাঃবাঃ।জানাজা শেষে প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য

বিশাল লাইন পড়ে গেল,স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুবাদে আমি কয়েকবার দেখার সুযোগ পেলাম,অনেকেই পাগড়ী বিহীন অবস্থায় আজকেই তাকে প্রথম দেখলো।

জানাজা শেষে সবাই চলে যেতে লাগলো,একটা পিক-আপে জান্নাতের ঐ মেহমানকে তোলা হল,অনেকেই সেটাতে উঠতে চাচ্ছিলো,ঘোষণা হল শিল্পীরা ছাড়া এটাতে কেউ উঠবেনা

,আমি সহ কলরবের শিল্পীরা সেটাকে আরহন করলাম,গাড়ি চলছে সেখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে তাঁর জন্মস্থান হাজরা তলার

উদ্দেশ্যে,পরেরদিন সকাল আটটায় সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে।সেটা আরো বেদনা বিধুর কাহিনী,আগামী পর্বে ইনশাল্লাহ

সেগুলো লেখা হবে।

।.।৩য় পর্ব।.।

১৮ই জুন ২০১০,রাত ১২টা,সারাদেশ একটা ঘুমন্ত নগরী,কিন্তু হাজরা-তলার একটি বাড়িতে কারো চোঁখে ঘুম নেই আছে

বিরতিহীন জল,উঠানে খাটিয়ায় সোয়া আইনুদ্দীন আল আজাদ,চার পাশে লোকের সমাগম।কিছুক্ষনের জন্য সবাইকে দুরে

পাঠিয়ে দেওয়া হল,কাপড় দিয়ে খাটিয়ার চারিদিক ঘিরে দেওয়া হল,ভিতরে প্রবেশ করলেন পর্দানিশী একজন মহিলা,সদ্য

বিধবা হওয়া অল্প বয়সী এই নারীকে তাঁর জীবন সঙ্গীকে কাছ থেকে শেষবার দেখার সুযোগ করে দিতে জন্য এই ব্যবস্থা।রাত

একটা বাজে,কফিনের মধ্যে চা পাতি(চায়ের পাতি)দেওয়া ছিল,সেটা চেঞ্জ করার প্রয়োজন হল,আইনুদ্দীন ভায়ের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি

রুহুল আমীন ভাই,আমি এবং আমার কিছু বন্ধু মিলে জান্নাতি মানুষটিকে অন্য খাটিয়ায় রেখে চা পাতি সাজিয়ে আবার পূর্বের

খাটিয়ায় স্থানান্তর করলাম,আমি পায়ের দিকটা ধরে ছিলাম।আল্লাহর কসম সেদিনের পর থেকে এখনো যখনই চা পাতির গন্ধ

আমার নাকে আসে তখনই বুকটা হুহু করে উঠে,মনে পড়ে যায় সেই রাতের কথা।সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে,কেউ মসজিদে

আর কেউ মেহমান খানায়।শুধু আমরা কিছু বন্ধুরা আর তাঁর পরম আপন জনেরা ছাড়া,সারা রাত পাহারা দিলাম আর প্রান

ভরে প্রিয় নেতাকে দেখেনিলাম।সিদ্ধান্ত হল সকাল আটটায় ঈদগাহ মাঠে জানাজা।কোথায় কবর দেওয়া হবে এব্যাপারে শুরু হল

নানা মত,কেউ বললো চরমোনাই কেউ বললো ঢাকাই আর কেউ বললো ঝিনাইদহ গোরস্থানে,এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে

কলরবকে দায়িত্ব দেওয়া হল,হুমায়ূন কবির শাবিবের নেতৃত্বে বৈঠক চলছে,আজাদ ভায়ের বৃদ্ধ বাবা কেঁদে কেঁদে বললেন

আমার ছেলে বড় হওয়ার পরে ওকে আমি কাছে পেয়েছি খুব কম,ইসলামের খেদমতে সবসময় ব্যস্ত থাকত,এখন আমি আর

ওঁকে দূরে রাখতে দিবনা আমার বাড়ির জমিনেই দাফন করতে হবে,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়া আসার সময় আমি ওঁকে

দেখবো।আজাদ ভায়ের ইচ্ছা ছিল একটা মাদ্রাসা করা সে অনুযায়ী

তাঁর আব্বা বললেন কলরব যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে মাদ্রাসার জমীন আমিই দিব,সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদ্রাসার জন্য প্রদত্ত জমীর পাশেই

তাঁকে দাফন করা হবে।১৯শে জুন সকাল সাড়ে সাতটা,ঈদগাহ মাঠে অসংখ্য মানুষ,এই ঈদগাহের ইমাম খাটিয়ায় শায়িত,আর

শত শত মানুষ পালাক্রমে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ছিল।কাতার সোজা হয়ে গেল,সম্ভবত ঠাকুরগাঁও

থেকে এক মাওঃ সাহেব স্মৃতিচারণ মূলক বক্তৃতায় বলেন,ঝিনাইদহ-বাসী কি হারিয়েছে তা বুঝেনাই,আমার এলাকায় সে

এতটায় জনপ্রিয় যে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে শহরে কান্নার রোল পড়ে গেছে,বক্তব্য রাখলেন আশরাফ-সাহেব,এই সেই আশরাফ

যে আইনুদ্দীন ভাইকে নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা ব্যাপী ষড়যন্ত্রের মুল হোতা,তার অপপ্রচারের ফলে তিনি প্রায় ছয়মাস এলাকাতে

আসা বন্ধ রেখেছিলেন,তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গ্রুপিং তৈরি করে কষ্ট দিয়েছিল এই আশরাফ,এখন তার চোঁখে পানি এতদিন

বুঝেনাই আইনুদ্দীন কে,আজকে বুঝেছে,তার অনুশোচনায় আমরা আরো বিরক্ত হয়ে গেলাম,বক্তব্য দিলেন হযরতের বৃদ্ধ শশুর,ভাই

সহ অনেকে,মসজিদের ইমাম সাহেব তার ভাষণে যখন দুজনের বাল্যকালের সৃতি উল্লেখ করে ভাষণ দিচ্ছিলেন,ময়দানের

তখন ভয়াবহ অবস্থা,হাজার হাজার মানুষের মধ্যে হয়তো একটা লোকও কাঁদতে বাদ ছিলনা,উচ্চস্বরে হাউমাউ করে

কাঁদছে অসংখ্য মানুষ,আমি এর চেয়ে করুণ দৃশ্য আর দেখিনি একটা মানুষ যে এত জনপ্রিয় হতে পারে আর এতো

মানুষের চোঁখের জল আনাতে পারে তা জানতাম-না।

জানাজা হয়ে গেল,কবরের কাছে তাকে নেওয়া হল ভিতরে তিনজন নামলো,তাঁকে নামানো হলো,মাথার বাধনটা খুলে দেওয়া

হল জীবনের শেষ বারের মত জীবনের মাইল ফলককে একবার দেখে নিলাম।ইয়াসিন হায়দারের কোলে ছিল গলিব,প্রতিভাময় প্রজ্জলিত সূর্য , সাহসের সঞ্চালক, প্রমাণভিত্তিক তর্কবাগিশ, সত্য-ন্যায়ের মুহ্যমান পুরুষ,মঞ্চের

বীর অসহায়ের মত সুয়ে থাকা বাবাকে দেখিয়ে বললো তোমার আব্বু কই?ও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো

ঐযে শুয়ে আছে,আবার কান্নার মিছিল শুরু হল,উপস্থিত সবাই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।কবর দেওয়া শেষ হল,

সবাই গন্তব্যের পানে চললো শুধু একা আজাদ ভাই পড়ে রইলো,আমিও ফিরে আসছিলাম তখন বারবার আমার মনে

হচ্ছিল আজাদ ভাই যেন আমাদের পানে চেয়ে তাঁর মায়াবী কণ্ঠে গেয়ে উঠছেন ''তোমাদের ত্বরে আমার একটি

অনুনয়,বাতিলের প্রাসাদ যেন উঁচু নাহি রয়,জালিমের প্রাসাদ যেন উঁচু নাহি রয়''তার আদর্শে

নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আরেকবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।সবাই চলে গেল যারযার

কাজে,পরের দিনই কলরবের নতুন কমিটি গঠন হল,দিন যতই যায় সবার দুঃখ ততই

হ্রাস পায়,কিন্তু একটা মানুষের কান্না আজো কমেনি,গভীর রাতে স্বামীর বিয়োগ ব্যথা তাঁকে নতুন করে

যন্ত্রনা দিতে শুরু করে,সেই তিন বছর আগে তাঁর কান্না শুরু হয়েছে আজো তা থামেনি,হয়তো সারা জীবন

এভাবেই কাটাতে হবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে কবুল করুক।আমি এখনো বাড়ি গেলেই একবার হাজরা তলায় যাওয়ার চেষ্টা করি,

মাদ্রাসা-তু জামিউল উলুম আইনুদ্দীনের পাশে শায়িত আমার প্রিয় মানুষটির কবরের পাশে দাড়িয়ে যখন সূরা ইয়াসিন

পাঠ করি,ঠিক মত পড়তে পারিনা বার শুধু মনে হয় যেন সে কবরের মধ্যে বসে আমাকে আদুরে সুরে ডাকছেন আর সবকিছুর

খবর জিজ্ঞাসা করছেন।

ও আল্লাহ....

তাঁকে মাফ করো,জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করো,তোমার এস্কে তাঁর অন্তরে আগুন জ্বলতো,

তোমার দিদার দিয়ে তাঁর সে আগুন নিভাও।

(বিঃদ্রঃপূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলাম তিন পর্বে শেষ করবো তাই শেষের দিকে অনেক সংক্ষেপ করতে হল।তবে মাঝে মাঝে আমি

আইনুদ্দীন ভাইকে নিয়ে লেখি,তখন ছুটে যাওয়া ঘটনা গুলো লেখার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ)

***নাঈমুল হক***

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File