"বিশ্বয়কর ভালবাসা"

লিখেছেন লিখেছেন নাইমুল হক ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৩১:৫৭ রাত

পৃথিবীতে একটা মাত্র মানুষ যে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে সে হল আমাদের জনম দুখী মা,একথার প্রমাণ যুগে যুগে বহু কবি সাহিত্যিক-গন তাদের রচনায় সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।আমি শুধু এতটুকু বলবো আপনি যাকে মনে প্রাণে ভালবাসেন আর সেও আপনাকে নিজের থেকে বেশী ভালবাসে বলে আপনি মনে করেন সে হতে পারে আপনার স্ত্রী বা গার্ল ফ্রেন্ড তাকে আপনি যদি বলেন ''আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি বেশী দিন বাচ-বোনা''তখন আপনার ভালবাসার মানুষটার অনুভূতি হবে এরকম,সে আপনাকে অনেক আদর করে বলবে''তুমি চলে গেলে আমার কি হবে?'' তার মানে আপনি চলে যাওয়াতে তার নিজের ক্ষতিটাকে নিয়েই সে ভাবল আপনাকে নিয়ে নয় আর আপনার মায়ের অনুভূতি হবে এরকম ''চুপ কর মারবো একটা চড় এরকম অলক্ষুনী কথা আর কখনো বলবিনা'' তার মানে আপনার বিরহের কোন কল্পনা করতেও মা নারাজ,এটাই মা।কিছুদিন আগে ফেজ-বুকে একটা ছবি দেখেছিলাম

একটা বাচ্চা যার মথাটা জন্মগত ভাবে একটু বিকৃত এবং টাক,এই বাচ্চাটার মনের কষ্ট লাঘবের জন্য তার মা নিজেই সব সময় মাথা টাক করে থাকে।প্রিয় পাঠক অবৈধ প্রেমের কত গল্প-ইতো ধৈর্য ধরে পড়েন আজকে একটু ধৈর্য ধরে প্রকৃত ভালবাসার মাপকাঠি অবলোকন করুন।পৃথিবীতে যতগুলো ধর্ম,যতগুলো মত আছে সবই মাকে শ্রদ্ধা করতে বলে।আর ইসলাম ধর্মে মায়ের যে অধিকার আর সম্মান দেওয়া হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর,রাসুল সঃ হাদিস শরীফে ইরশাদ করেছেন ''আল জান্নাতা তাহতা আক্বদামীল উম্মাহাত'' অর্থাৎ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।অথচ আমাদের দেশে কিছু মূর্খ ছেলেরা অথবা শিক্ষিত কিন্তু বিবেকের বিবেচনায় মূর্খ সন্তানেরা সেই মাকে কষ্ট দেয় কালনাগিনী মার্কা স্ত্রীকে খুশী করতে,দুঃখে কলিজা ফেটে যায় যখন শুনি বাংলাদেশের সদ্য সম্পদের মালিক হওয়া কিছু বখাটেরা তাদের মাকে ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে,এইতো কিছুদিন আগে আমি বাড়িতে ছিলাম তখন দেখি আমাদের এক প্রতিবেশী বিধবা চাচী আমার মায়ের সাথে কি যেন বলছে আর হাউমাউ করে কাঁদছে,পরে আমার ছোট বোনকে জিজ্ঞাসা করলে সে যা বলল তা শুনতে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না সে বলল ঐ মহিলার বড় ছেলে তাকে লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে,ভাবছি মানুষ এতটা পাষাণ হয় কি করে।আমি আমার এই ছোট্ট হায়াতে মায়ের সাথে বেয়াদবি মূলক যত ঘটনা শুনেছি আর যত ঘটনা দেখেছি সব গুলো কপাল পোড়ার ভয়ংকর পরিণতি হয়েছে।আমিতো মনে করি পৃথিবীতে যার মা বেচে আছে তার কোন চিন্তা নাই সেটা পার্থিব ও হতে পারে পর-কালীনও হতে পারে,কেননা মায়ের দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা গ্যারান্টি দিয়েছেন,আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন তারা জানেন কিছুদিন আগে আমার বাসায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হয়েছিল,আমার পাশের ফ্লাটেও আগুন লেগেছিল,দেখলাম বিভিন্নভাবে সবাই চেষ্টা করছে,আমি প্রথমে খবর নিলাম ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়েছে কিনা দেখলাম ততক্ষণে চারটা ইউনিট চলে এসেছে,অনেকে বড় বড় আলেমের কাছে মোবাইল করে দোয়া করতে বলছে আমি তখন আমার মাকে ফোন স্বাভাবিকভাবে শুধু ঘটনাটি বললাম,দোয়া চাওয়া লাগেনাই মা এমনিতেই দোয়া করা শুরু করেছে,আগুন নিভে গেলে দেখি আমার ফ্লাটের একটি ইটেও আগুন লাগেনাই।আমি জীবনে প্রথম যখন আমার মায়ের কাছে দোয়া চাই সেটা ছিল আজ থেকে আট বছর আগে আমি সৌদি সংস্থা আল ফোরকান ফাউন্ডেশন নিয়ন্ত্রিত হিফজুল কোরআনের একটা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকা আসার সময়,এমনিতেই ছোট ছিলাম তার পরেও জীবনে মায়ের কাছে দোয়া চাওয়ায় অভ্যস্ত নয় কিভাবে বলি আর কি হয় এই ভেবে আমি মাকে বললাম ''মা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি দোয়া করবেন,তখন আমার জনম দুঃখী মা তার সোহাগ মাখা কণ্ঠে বললেন বাবা মায়ের কাছে কি দোয়া চাওয়া লাগে মা এমনিই দোয়া করে যাও আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।এই ঘটনার পরে আমার জীবনের প্রত্যেটকা কঠিন কাজের সময় আগে আমার মায়ের কাছে বলেছি,শুধু সমস্যার কথা বলি দোয়া চাওয়া লাগেনা ওটা এমনিতেই পায়,যার ফলশ্রুতিতে আমার নসীবে সেই হিফজুল কোরআন পরীক্ষায় অবিশ্বাস্য সাফল্য আসে,সারা দেশের মধ্যে ৪র্থ স্থান আর দক্ষিণ বঙ্গে দ্বিতীয় স্থান,নগত অর্থসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছিলাম,আমার মায়ের সেদিনকার খুশীর চেহারা মনে-পড়লে খুশীতে আজো আমর নয়ন ভিজে যায়,সফলতা আমার কিন্তু আমার থেকে অনেক বেশী খুশী আমার মা।ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যারাই জীবনে সম্মানিত হয়েছে,উন্নতি লাভ করেছে সে হোক যে কোন ধর্মের সে তার মায়ের দোয়া আর সন্তুষ্টির মাধ্যমেই পেয়েছে।যাদের মা দুনিয়াতে বেচে আছে অথচ সে হতাশা আর দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন নেতা নেত্রী বা মাজার কবিরাজ ইত্যাদির নিকট দৌড়াদৌড়ি করছে আমি তাদেরকে বলছি আপনারা পথ ভুল করছেন,ঘরে থাকা মাকে খুশী করেন,আপেল কমলা কিনে পীর বাবাকে না দিয়ে মাকে দিন,অসুবিধার কথা মাকে খুলে বলেন নিমিষেই সমাধান হয়ে যাবে।আমি মনে প্রাণে একদল যুবকদেরকে খুজতেছি যারা মায়ের সন্তুষ্টি প্রাপ্ত সন্তান,এদেরকে নিয়ে একটা সংগ্রাম করতে চাই যে সংগ্রামটা মায়ের মনে কষ্ট দেওয়া অভিশপ্ত কুলাঙ্কারদের বিরুদ্ধ,যে সংগ্রামী যুবকেরা পৃথিবীর সবগুলো বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়দেরকে বের করে তা জালিয়ে দিবে আর সে সকল মায়েদেরকে নিজের মায়ের মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করবে।

***নাঈমুল হক***

বিষয়: বিবিধ

১৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File