কেউ কি একবার ভেবেছে কেন এই লোকগুলি অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ?
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৮:১৬ রাত
সিরিয়ার একটি শহরের নাম রাকা। সেখান থেকে খলিফা হারুনুর-রশিদের নিকট চিঠি আসলো। চিঠিতে লেখা ছিল: শহরের বিচারক এক মাস যাবত অসুস্থ,বিচার কাজ স্থবির হয়ে আছে । খলিফা যেন দ্রুত ব্যবস্থা করেন । খলিফা চিঠির জবাব পাঠালেন । আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক আসবেন । এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক এসে যোগ দিলেন ।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে । স্থানীয় প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামী হিসেবে দরবারে হাজির করলেন । তার অপরাধ ছিল তিনি শহরের এক রেস্তারাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পরেন ।
বিচারক: আপনি চুরি করেছেন?
- জ্বি ।
- আপনি কি জানেন চুরি করা কতো বড় অপরাধ ও পাপ ?
- জ্বি ।
- জেনেও কেন চুরি করলেন ?
- কারণ আমি গত এক সপ্তাহ যাবত অভুক্ত ছিলাম । আমার সাথে এতিম দু'নাতিও না খেয়ে ছিল । ওদের ক্ষুদারত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে পারিনি তাই চুরি করেছি। আমার আর এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না হুজুর ।
বিচারক এবার পুরো দরবারে চোখবুলালেন। বললেন কাল যেন নগর, খাদ্য,শরিয়া, পুলিশ প্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিগন সবাই উপস্থিত থাকেন ।তখন এর রায় দেওয়া হবে ।
পরদিন সকালে সবাই হাজির হলেন । বিচারক ও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণা করলেন-“ বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো। বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ঐ বৃদ্ধা মহিলার পাশাপাশি দাঁড়ালেন ।
বিচারক বললেন যে নগরে একজন ক্ষুধার্তবৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে । আমি যেহেতু তাঁর অধীনে চাকরি করি তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হউক । আর এটাই হলো বিচারকের আদেশ । আদেশ যেন পালন করা হয় এবং বিচারক হিসাবে আমার উপর চাবুক মারতে যেন কোনো রকম করুণা বা দয়া দেখানো না হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন । দুই হাতে পর পর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতের ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে । ঐ অবস্থায় বিচারক পকেট থেকে একটি রুমাল বের করলেন । কেউ একজন বিচারকের হাত বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে বিচারক নিষেধ করেন। এরপর বিচারক বললেন “ যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্য গুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাব গ্রস্হ মহিলার ভরন-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারা ও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমান ভাবে তাদেরকে মারা হোক ।“
এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের উপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন । তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন “যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী । তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।“
এবার মোট ৫০০দিনার রৌপ্য মুদ্রাথেকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বললেন “ এগুলো আপনার ভরণপোষণের জন্য । আর আগামী মাসে আপনি খলিফা হারুনুর রশিদের দরবারে আসবেন । খলিফা হারুনুর রশিদ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী । “
একমাস পরে বৃদ্ধা খলীফার দরবারে গিয়ে দেখেন ; খলীফার আসনে বসা লোকটিকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে । মহিলা ভয়ে ভয়ে খলীফার আসনের দিকে এগিয়ে যান। কাছে গিয়েবুঝতে পারেন লোকটি সেদিনের সেই বিচারক। খলীফা চেয়ার থেকে নেমেএসে বললেন ---আপনাকে ও আপনার এতিম দু'নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসেবে ক্ষমা চেয়েছিলাম । আজ দরবারে ডেকে এনেছি প্রজা অধিকারসমুন্নত করতে না পারা অধম এই খলীফাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য ।আপনি দয়াকরে আমাকে ক্ষমা করুন ।
আমাদের দেশের একটি ঘটনা ।
উপরের ছবির মূল ক্যাপশন: “আড়াইহাজার থানায় গিয়ে স্বামী রনির লাশ দেখে অচেতন হয়ে পড়েন নাজমা বেগম। এ সময় মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়ে সাদিয়া। আড়াইহাজারের পুরিন্দা বাজারে গতকাল ভোরে গণপিটুনিতে নিহত হন রনিসহ আটজন-- প্রথম আলো”
বেকার লোকজন চাল চুরি করতে এসে গণহারে লাশ হচ্ছেন। ৭৬ হাজার কোটি টাকা যারা ডাকাতি** করে দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন তাদের টিকিও কেউ ছুতে পারে না । সরকার , প্রশাসন , ডাকাত ডাকাত বলে পিটিয়ে মারা সেই অতি উৎসাহী জনগণ কেউ কি একবার ভেবেছে কেন এই লোকগুলি অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ?
বিষয়: বিবিধ
২৯৬৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সহমত ।
রনি ও তার দলবল তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ট্রাক ভাড়া করে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ২০-৩০ জন লোক (ডাকাত)নিয়ে যায় আড়াই হাজার থানার চালের আঁড়তে চাল লুট করতে ।
শুধুমাত্র ক্ষুধার জন্য হলে ১৫০ বস্তা লুট করতো না ।
এলাকাবাসীরা এহেন ব্যাপারে আগে থেকেই ক্ষাপ্পা ছিল , কারণ কয়েকদিন আগে এরকম ট্রাকে করে এসে চাল লুটের ঘটনা ঘটেছিল । প্রশাসনকে জানালেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নিজেদের ব্যর্থ হিসেবে প্রমান করেছে।
তাই হতাশ জনগন নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে ।
পুলিশ একটা কাজ খুব ভাল করেছে , তারা আড়াই হাজারের হাজার খানেক লোকের (অজ্ঞাত) বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
আর যারা ৬০ হাজার + কোটি টাকা লুট করেছে তাদের নাম প্রকাশ করলে দেশের বিপদ হবে । তাই দেশবাসীর উচিত হবে ব্যাপারটা হজম করে ফেলা ।
কারণ যেখানে ৪০০০ কোটি টাকা কিছুই না , সেখানে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা সামান্য টাকাই । এই সামান্য টাকা নিয়ে গাঁই গুঁই করলে উনারা মন খারাপ করতে পারেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন