ব্লগার ভাই ও বোনেরা চলুন ঘুরে আসি রহস্যময় ছোট দ্বীপ বাল্ট্রায়
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৫:৪৯ সন্ধ্যা
মহান প্রভূ আল্লাহতালা তার বান্দাদের কাছে যেমন নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিজেকে করে রেখেছেন রহস্যময়। তেমনি তিনি তার সৃষ্টি পৃথিবী সৃষ্টির মতোই রহস্যময় করে রেখেছেন এই পৃথিবীর অনেক কিছুই। তার অনেক রহস্যই এখনো রয়ে গেছে অনুন্মোচিত। তাই আমরা অকুন্ঠ চিক্তে বলি আল্লহ সর্বশক্তিমান ।
দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ছোট দ্বীপ বাল্ট্রা। ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি বিশেষ দ্বীপ এটি। মানব বসতি শূন্য একটি দ্বীপ । যা একাধারে বিস্ময়কর ও রহস্যময় । আজও কোনো মীমাংসা হয়নি রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপের । দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপ।
বাল্ট্রা গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ছোট সমতল দ্বীপ। খুব শুষ্ক এবং ছোটখাটো শক্ত ঝোপঝাড় ভতি । একজাতের ফণীমনসা আর পালো সান্টো গাছে পরিপূর্ণ।
এখানে এক সময় ইগুয়ানা নামে এক প্রজাতির সরিসৃপ বসবাস করত এবং পরবর্তীতে তা বিলুপ্ত হয় যায়। বর্তমানে প্রজাতিটি দ্বীপে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এই গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন সরকার। কয়েকটির মধ্যে বাল্ট্রা দ্বীপ ছিল একটি । এরপর থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের এই অদ্ভুত রহস্যের কথা। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বাল্ট্রাতে এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ে না । কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে গিয়ে অন্যপাশে বৃষ্টি পড়ে । বাল্ট্রার অর্ধেক পার হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে আর এক ইঞ্চিও এগোয় না বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি যত প্রবলই হোক এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম
বাল্ট্রা বাদে অন্যান্য প্রতিটি দ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির কিছু পাখি।
কিন্তু বাল্ট্রার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দ্বীপে কোনও উদ্ভিদ, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ নেই। বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি পরের দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার।পানামা খালকে সুরক্ষিত রাখা এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাল্ট্রা দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি।
যেগুলো পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধু দৃষ্টি মেলে দেখে গেছি এসব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভিতরে। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সবসময় উত্তর দিক-নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হল, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পরও কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। দেখা গেছে, বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু তাই নয়, উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইকুয়েডর সরকারের কাছে দ্বীপটি হস্তান্তর করা হয়। দ্বীপটি বর্তমানে ইকুয়েডর সেনাবাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন ঘাঁটির কিছু স্থাপনা এখনও দ্বীপের কিছু কিছু অংশে দেখা যায়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দ্বীপের সিমুর বিমানবন্দরটি সমগ্র গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র বিমানবন্দর ছিল।
বর্তমানে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ দুটি বিমানবন্দর রয়েছে; অন্য বিমানবন্দরটি সান ক্রিস্তোবাল দ্বীপে অবস্থিত। তবে কেবল সিমুর বিমানবন্দরেই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়।
বাল্ট্রা দ্বীপে দু'টি ফেরিঘাট রয়েছে। পর্যটক আকর্ষণ ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ইকুয়েডর সরকার দ্বীপটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেন নি। প্রযুক্তিগত দিক দিকে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা হয়তো একদিন এসব রহস্যের সমাধান মানুষের কাছে তুলে ধরবে। আমরা সেরকম আশা করতেই পারি। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী ।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন