ভেবেছিলাম লিখব না একটি আত্মহত্যার কাহিনী ।
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:২৫:০৫ রাত
ভেবেছিলাম লিখব না । কিন্তু এই মাত্র রাত আটটা উনচল্লিশ মিনিটে লাশটা যখন খাটিয়ায় করে আমার দোকানের সামনে দিয়ে নিয়ে গেল তখন ভেজা চোখে কি বোর্ডটা টেনে লিখতে শুরু করলাম।
সকালে সাড়ে এগারটায় দোকানে এসে কিছু দোয়া কালাম পড়ে দোকানে বসলাম । কিছুক্ষন পর কম্পিউটারটা চালু করা দৈনিক আজাদী আর আমাদের দেশ পত্রিকা পড়ছিলাম । এই সময় সিএনজি করে আমার এক বন্ধু এল । ও গাড়ি থেকে না নেমেই আমাকে বলল " যাবি ? "
" কোথায় "
" খোকন ভাইয়ের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে । "
আমি আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি কম্পিউটারটা বন্ধ করে সি এন জিতে উঠলাম।
থিতু হয়ে বসে প্রশ্ন করলাম "কি হয়েছিল ? "
" যৌতুক। "
" কেন বিয়ের সময় দেয় নাই ?"
" দেয় নাই মনে হয় । কারন মেয়েটা কয়েকদিন আগে খোকন ভাইকে বলেছিল " বাবা তুমি খাট আর কয়েকটা ছোটখাট ফার্নিচার দিলে আমি ওদের অত্যাচার থেকে বেঁচে যাই ।"
খোকন ভাই তখন বলেছিল " দিব মা দিব ।"
কিন্তু খোকন ভাই বেচারা গরীব সরল-সিধা মানুষ । ডিশের ভাড়া তুলার চাকরি করে । কয় টাকাইবা বেতন পায় । সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা । তারপর মেয়ের বিয়ের সময় ছেলে পক্ষ চালাকি করে স্বর্ণ সব মেয়ে পক্ষের উপর তুলে দিয়েছে সাথে তিনশত বর যাত্রীর আপ্যায়ন । তখন ছেলে পক্ষ বলেছিল আপনারা এই দিলে আমরা আর কিছু চাইব না । কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পরই ছেলে , ছেলের মা-বাবা ও এক অবিবাহিত বোন মিলে শুরু করে অত্যাচার । প্রথমে ল্যাপটপ তারপর খাট ওয়্যারড্রব ও অন্যান্য ফার্নিচার। এই নিয়ে অত্যাচারে মাত্রা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে মেয়েটি একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে তখন ছেলে পক্ষের বাধায় সে সফল হতে পারেনি । এরপর ও ছেলে পক্ষের যৌতুকের জন্য অত্যাচার একটুকুও কমেনি । অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আজ সকালে ২১ বছরের মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর মায়া ছাড়তে বাধ্য হল।
পাঠক একটি মেয়ে যখন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যায় তখন তার চোখে যেমন অজানা এক ভয় থাকে তেমনি থাকে ভবিষ্যত জীবনের রংগীন স্বপ্ন । একটি সুন্দর সংসার হবে । স্বামির ভালবাসায় ঘর জুড়ে আসবে নতুন অতিথি । তার কচি কন্ঠের মা মা ডাকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে তার সুখের ঘর। কিন্তু সব স্বপ্নই যখন ভেংগে চুরমার হয়ে যায় যৌতুকের করাল গ্রাসে তখন সেই অবলা মেয়েটি আশ্রয় খুজে নেয় আত্মহ্যার ছায়া তলে।
যদিও তা আমাদের কারও কাম্য নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৬ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিন।
সত্য বলেছেন।
তারপরও মানুষ তাই করে ।
শুধু হৃদয় নায় জীবনটাও শেষ হয়ে যায়।
যতদিন মানুষের ভিতর দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞান না হবে ।
সহমত।
আমাদের সমাজ যৌতুকের এই অভিষাপ থেকে কখন মুক্তি পাবে জানি না। মানুষ বিয়ে শাদীতে ইসলামী শরীয়াহর হুকুম আহকামকে গুরুত্ব দেয়ার পরিবর্তে তথাকথিত যুগের সাথে তাল মিলানোর ভাওতাবাজীর স্লোগান তুলে যেভাবে পুরাতন সামাজিক রসমের সাথে নিত্য নতুন উদ্ভট ও অযৌ্ক্তিক রীতি রেওয়াজ চালু হয়েছে তাতে সমাজের ধনী ও স্বচ্চল পরিবারের বিলাসীতাপূর্ণ উপহারদীর আদান প্রধানের প্রভাবটা অত্যন্ত নেতিবাচক ও বিকৃতভাবেই পড়েছে সমাজের আর্থিকভাবে পিচিয়ে পড়া হতদরিদ্র মানুষগুলোর উপর। অথচ উপহারাদি দেয়া বা নেয়ার ক্ষেত্রে যে সুন্নাতী রেওয়াজ মুসলিম সমাজে চালু হওয়ার কথা ছিল তা না হয়ে বিলাসীতায় পরিনত হয়েছে। স্বচ্চল ধনী লোকগুলো বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে যে পরিমান অপচয় করে থাকেন তা সম্পূর্ণ সুন্নাতী নিয়মের পরিপন্থী। উপহারাদি দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন বিলাসিতা তেমনি নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিলাসিতাই প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে সামান্যতমও সুন্নাহর অনুকরণ ও অনুসরণ করা হয় না। ধনীদের বিলাসিতা গরীবদের উপর তা যৌতুকের অভিষাপ নিয়েই যেন আবির্ভূত হয়।
আলোচ্য খোকন ভাইয়ের হতভাগা মেয়েটি আজ শাশুরবাড়ীর লোকজনের অত্যাচার যহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। এর পেছনে কি শাশুরালয়ের লোভী লোকগুলোর অত্যাচারই দায়ী? নাকি আরো কোন বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা ও সামাজিক বিপর্যয়ের কথা বিবেচনা করা উচিত?
আমার তো মনে হয় এখানে এককভাবে শাশুরালয়ের লোকজনকে দায়ী করলে এসব সমস্যার মূলে যাওয়া যেমন সম্ভব না তেমনি এর সহজ কোন সমাধানেও আসা সম্ভব না। এখানে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের আত্মশুদ্ধি ও বিবেগের মরিচা ধুর করার ওষধ প্রয়োগ করতে হবে আগে।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের সাথে সহমত।
আমিন।
আপনার শ্লোগানের সাথে সহমত।
আমিন
তারপর ও এসব হচ্ছে - তার মূল কারন আমরা ট্রু টিচিং হতে সরে গিয়ে - দুনিয়াকে বড় বেশী আকড়ে ধরেছি - এবং সেই দুনিয়াকেও ভাল ভাবে জানতে চাইছি না কিংবা পারছি না।
আমরা এমন খবরে কষ্ট পাবো - যেমন করে এক একটা এক্সিডেন্ট এ কষ্ট পাই - কিন্তু এর নিবারন নেই। কারন অনেক পথা মাড়িয়ে আমরা পয়েন্ট অব নো রিটার্নে পৌছে গেছি। আমরা চাইলে শুধু পারি সচেতন হয়ে এর রাশ টেনে ধরতে।
খারাপ লাগলো পড়ে। সহানুভূতি রইলো পরিবারটির প্রতি।
দোয়া করবেন।
ছোট মেয়ে বুঝতে পারেনি।
স হমত।
আমাদের সবার সালাম দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। ধন্যবাদ সিকদার ভাই।
ধন্যবাদ।
আমি যৌতুক কে ঘৃণা করি।
যৌতুক সমাজের অভিশাপ।
সাবাস হারি এইনা আমার ভাই।
ইমরান দাদা
ঐ দিনই এ কথাটি হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিলো উস্তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেই এই যৌতুককে ধিক্কার এবং থুথু জানাই।
আল্লাহ আমাদের যৌতুকের অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন। আমিন
আমিন।
আপনার বক্তব্যর সাথে পরিপূর্ণ সহমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন