আমি ফাইস্যা গেছি মাইনকা চিপায়। ( বিয়ে )
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ০৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:০৫:৩৭ সন্ধ্যা
বিডি টুডে ব্লগে "বিয়ে" নিয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজন করার পোষ্ট দেখতে পেয়ে আমার গায়ক হায়দারের গানটা মনে পড়ে গেল।
আমি ফাইস্যা গেছি, ফাইস্যা গেছি মাইনকার চিপায়,
আমারি দিলে চোট বোজে না কোন হালায়।
( মডু ভাই আপনে মাইন্ড কইরেন না আমি আপনারে হালা কই নাই । )
এই হালা কথাটা নিয়ে ঢাকাইয়া কুট্টিদের একটা কৌতুক মনে পড়ে গেল।
দুই ভাই তাদের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোথাও যাছ্ছিল । মা বৃদ্ধা তাই আস্তে হাটার দরুন বার বার পিছিয়ে পড়ছিল । ছেলেদের বার বার দাড়িয়ে একটু পর পর মা জন্য অপেক্ষা করতে হছ্ছিল । এতে ছোট ভাই বিরক্ত হয়ে বড় ভাইকে বললঃ মা হালায় এত আস্তে হাটবার লাগছে কেলা ?
ছোট ভাই মাকে হালা বলায় বড় ভাই রেগে গেল ঃ এই বেয়াদব তুই মা হালারে মা হালা কইলি ক্যাঁ ? মা হালায় আমাগো মুরুব্বি হালায় না ।
যাই হোক মুল কথায় আসি "বিয়ে" নিয়ে পোস্ট দিতে হবে । কিন্তু ভাবছি কি দেব ? কারন "বিয়ে" করার এত বছর পরও আজো বুজতে পারছি না বিয়ে করাটা ঠীক হয়েছে না ভুল হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় পুর্বের উড়নচন্ডি জীবনটা বিয়ে করে আজ থিতু হয়েছে , আবার মনে আহ ! বিয়ের আগে কি সুখের জীবন ছিল যেন গলায় দড়ি ছাড়া গরু । যখন যেখানে ইছ্ছা মনে যা ইছ্ছা করা যেত এখন যেন মুজীব পরদেশীর সেই গানের মত মা আমি বন্দী কারাগারে ।
এখানে আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল । সে বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী । ও আমার অনেক আগেই বিয়ে করেছিল । একরাতে আমি ওদের বাসায় ছিলাম । তখন রাত তিনটা হঠাৎ ও আমাকে ঘুম হতে ডেকে তুলল । আমি বললামঃ কি ব্যাপার এত রাতে ?
ও বললঃ মেডিক্যালের সামনে যেতে হবে ?
ঃকেন ?
ঃ তোর ভাবীর পেটে ব্যাথা। ঔষধ আনতে হবে ।
আমি আর কিছু না বলে কাপড় পড়ে ওর সাথে বের হয়ে গেলাম ।
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে ও বার বার বলছিল আর করবি বিয়া ? আর করবি বিয়া ? আর করবি বিয়া ?
আমি ওর কথা শুনে আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । কারন ও বার বার যে কথা বলছে তা কোন বিবাহিত লোককে বলছে, কিন্তু এখানে আমরা মাত্র দুইজন । তার উপর আমি অবিবাহিত তাই ও কাকে বলছে এটা প্রশ্ন করতেই ও বললঃ চুপ কর শালা আমি আমাকেই বলছি । দেখছতাসনা এই শীতের রাইতে ঘুমের তেরটা বাজাইয়া বউয়ের ঔষধ আনার লাইগা দোকানে যাইতে হইতাছে ।
এই হছ্ছে বিবাহিত মানুষের শৃংখলিত জীবন। এমন এক অবস্থা ঠিক যেন দিল্লিকা লাড্ডু খাইলেও পস্তাইতে হয় না খাইলেও পস্তাইতে হয় । তাই এখানে বিবাহিতরা বলে না খাইয়াই পস্তানো ভাল আর অবিবাহিতরা পস্তাইলে খাইয়াই পস্তামু ।
এক মৃত্যু পথযাত্রী পিতা মৃত্যু শয্যায় তার সব সন্তানকে ডাকল । সব সন্তান এল । পিতা সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বললঃ দেখ আমি মৃত্যু পথ যাত্রী । আর কিছুক্ষন পরে তোমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নেব। তোমাদের উদ্দেশে আমার শেষ অছিয়ত করার জন্য তোমাদের ডেকেছি । আমার বাবাও আমাকে এই অছিয়ত করেছিলেন। উনাকেও উনার বাবা করেছিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী পিতার শেষ আছিয়ত শোনার জন্য সন্তানরা সবাই বাবার আরো কাছাকাছি হল। বাবা বললঃ আমার বাবা আমাকে বলেছিলঃ বাবা জীবনে যাই করিস না কেন কখনও বিয়ে করিস না । তাই আমিও তোমাদের বলছি জীবনে যাই কর কখনও বিয়ে কর না ।
বাবার শেষ অছিয়ত শুনে সন্তানরা সবাই সমস্বরে বললঃ ঠিক আছে বাবা আমরাও মৃত্যুর সময় আমাদের সন্তানদের এই অছিয়তই করে যাব।
আমার পিঠাপিঠি ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল ২০০৫ সালে । আমরা চট্টগ্রাম শহরে থাকি । ওর শ্বশুর বাড়ি সাতকানিয়া । বউ আনতে আমাদের সাতকানিয়া যেতে হবে । ওখানকার বিখ্যাত "মনটানা" ক্লাবে বিয়ে হবে। বর যাত্রী ছিল প্রায় সাড়ে তিনশত । বেশির ভাগই গ্রামের আত্মিয় স্বজন ওরা ওখান থেকে বিয়ের ক্লাবে যাবে। শহর থেকে দেড়শর মত বর যাত্রী যাবে. তাই আমরা একটা বাস , দুইটা মাইক্রো ও দুইটা কার নিয়ে শুক্রুবার দিন সকাল এগারটায় রওয়ানা দিলাম । আমরা যখন নতুন ব্রিজের পর ক্রসীং পার হছ্ছিলাম তখন জুমার নামাযের সময় হল । রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে আমরা বরযাত্রী সবাই নামায পড়ে নিলাম । নামায পড়ার যখন গাড়ি ছাড়ল তখন দেখলাম আমাদের বড় যাত্রীর গাড়ির সংখ্যা আরও কয়েকটা বেড়ে গেছে । আমরা ভাবলাম হয়ত অন্য কোন বিয়ের বর যাত্রীও আমাদের সাথে আপাতত মিশে গেছে পরে হয়ত আলাদা হয়ে যাবে । কিন্তু আমরা দেখলাম ওরা আমাদের থেকে আলাদাত হলই না, বরং আমাদের সাথেই আমাদের ক্লাবে গাড়ি নিয়ে ঢুকল । গাড়ি গুলো বিয়ের ক্লাবে ঢোকার পর অচেনা বর যাত্রীরা বের হয়ে খাওয়ার টেবিলের দিকে না যেয়ে ক্লাব থেকে বের হয়ে গেল । আমরা ব্যাপারটা দেখে অবাক হলেও বিয়ের ঝামেলায় পরক্ষনেই ভুলে গেলাম । বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান শেষ করে শহরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল।
পরদিন সকালে পেপার হাতে নিয়ে দেখি গতকাল সাতকানিয়ার দুধর্ষ সন্ত্রাসী আহম্মদ প্রকাশ আহম্মইদ্দা র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত । বিস্তারিত পড়ে অবাক হয়ে গেলাম। কারন র্যাবের সদস্যরা আমাদের বিয়ের গাড়ি বহরের সাথে বরযাত্রীর বেশে সাতকানিয়া প্রবেশ করেছিল।
তখন বুঝতে পারলাম আমাদের সাথে আসা সেই রহস্যময় যাত্রীরা ছিলেন র্যাবের সদস্য । উনারা এই অপারেশন করার জন্য আমদের অজান্তেই আমাদের বিয়ের ব্যাপারে যাবতীয় খোজ খবর নিয়েছেন অনেক আগে থেকে । আমি তখন ভাবলাম গতকাল এই দিনে একজন নারী তার জীবন সংগীর সাথে নতুন জীবন শুরু করেছে আবার এই বিয়ের আড়ালে আরেক নারী তার জীবন সংগীকে হারিয়ে বিধবা হল । কি বিচিত্র এই পৃথিবী !!
প্রায় চৌত্রিশ বছর আগের কথা । আমার বড় বোনের বিয়ে হয়েছিল গ্রামে । শীতের রাতে এশার নামাযের পর বউকে নিয়ে বরযাত্রী রওয়ানা হল। সাথে আমরা ছোট দুই ভাই ও অন্যান্য বরযাত্রীরা হেটে হেটে ধান ক্ষেতের আইল বেয়ে বেয়ে শিশির ভেঁজা ঘাস পায়ে ডলে হেটে চলছি । সামনে আমার বোন লাল বেনারসী শাড়িতে মোড়ানো নববধু হয়ে পালকিতে চড়ে যাছ্ছে ।
পালকির বেহারা চারজন স্থানিয় ভাষায় কি একটা সুর করে গাইছিল, এত বছর পর এখন আর মনে নাই । ঘোলা চাঁদের জোসনায় ভাসা কুয়াশা ঢাকা হিমেল রাতে অচেনা ফুলের ঘ্রানের সাথে ধান গাছের সুবাস । সাথে বিয়ের বাতি হয়ে জ্বলছিল হাজারো জোনাকি পোকা । রাত জাগা অজানা পাখির ডাক আর শিয়ালের হাক্কা হুয়া সানাইয়ের সুরে কত সুন্দর ছিল সেই স্বপ্নের মত রাতটি । আজও মনে হয় এইত সেদিন ।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৩৭৯৫ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর এখন বিয়ের পরে কথা উপদেশ শুনতে হয়--থাক সেই কথা বলে কাউকে কষ্ট দিতে চাই না।
রাহ'বার অনেক নিষ্টূর আবিয়াত্তা আমিও কিন্তু বিয়া করার ইচ্চাও ফুরুত কইরা উড়াল মারছে আপনার পোস্ট পড়ে
ভাবিকি ব্লগ পড়ে? না পড়লে ভাবির মোবাইল নাম্বার দেন, কইয়া দিমু সব
এই পৃথিবী কারো সাথে খুবই নিষ্ঠুর আচরণ করে আবার কারো সাথে খুব ভাল আচরণ করে। এই ভাল মন্দের পার্থক্যের মধ্যেই মানুষের মধ্যে কেউ কেউ খুজে বেড়ায় পার্থিব জীবনের স্বার্থকতা। পার্থিব নগদ লাভের আশায় অথবা অদুর্দশিতাপূর্ণ কলা কৌশলের কারণে নিজের শেখড়কেই উপড়ে ফেলে। এজন্য ন্যায় বিচার করার জন্য প্রয়োজন নিরাবেগ বিবেগবোধ এবং ঐশী বিধানের প্রতি আত্মসমর্পন।
পার্থিব নগদ লাভের আশায় অথবা অদুরদর্শিতার পূর্ণ কলা কৌশলের কারণে নিজের শেখড়কেই উপড়ে ফেলে। এজন্য ন্যায় বিচার করার জন্য প্রয়োজন নিরাবেগ বিবেকবোধ এবং ঐশী বিধানের প্রতি আত্মসমর্পন।
আমার অবশ্য সঠিক জানা নেই আহম্মদ বিবাহীত ছিল কিনা। আপনার বাড়ি কি সাতকানিয়া । আমার নিজের বাড়ি ঢাকা হলেও নানার বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি সাতকানিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন