‘চেজ ভল্ট’ (Chase vault) । ( !!! অমিমাংসীত রহস্য !!! )

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ১৪ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:০৮:১০ রাত



দ্বীপ বারবাডোজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেকগুলো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি । এখানে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি । সেই সাথে রয়েছে অদ্ভুত এক ভয়াবহ স্থান। যা বাস্তবে ভৌতিক গল্প বলে মনে হয়। যদিও এই রহস্যময় স্থানের রহস্য আজও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি । তাই সেই স্থানের ঘটনা আজও হয়ে আছে কিংবদন্তী ।

এটি একটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সমাধিক্ষেত্র বা সিমেট্রির এক জায়গা। ব্রিজটাউন থেকে প্রায় সাত মাইল দূরে অবস্থিত। যা ‘চেজ ভল্ট’ (Chase vault) নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।



"চেজ ভল্ট" নামে বিশাল এই ভল্ট বা কফিন রাখার জায়গা হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, চেজ পরিবার ও তাদের বন্ধুদের জন্য।

১৮০৭ সালের জুলাই মাসে থমাসিনা গডডার্ড মারা যায় । তখন থমাসিনা গডডার্ডের মৃতদেহ একটি কফিনে ঢুকিয়ে এই ভল্টে রেখে দেয়া হয়। এর কয়েক বছর পরেই দুই বছর বয়সের ছোট মেয়ে মেরি অ্যান চেজকে এই ভল্টে কফিনে করে সমাহিত করা হয়।

১৮১২ সালের ৬ জুলাই মেরির বড় বোন ডকরাস চেজ মারা যায়, তাকেও ভল্টে সমাহিত হয়। অনেকে মনে করেন ডকরাস চেজ আত্মহত্যা করে ছিল । এর কিছুদিন পরেই মেরি আর ডকরাসের বাবা থমাস চেজও মারা যায়। সে ছিল বারবাডোজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি।

ভৌতিক ঘটনাটা প্রকাশ পেল তখনি, যখন থমাসকে সমাহিত করার জন্য সেই বিশেষ ভল্ট খোলা হলো । সেখানে শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে আগত সবাই অবাক হয়ে দেখল সাজিয়ে রাখা কফিন গুলি কে বা কারা এলোমেলো করে রেখেছে।



কফিনগুলো ভল্টের ভেতরে যেভাবে রাখা ছিল , সেগুলো কোনটিই সেই ভাবে নেই! তখন সবাই ধারনা করল কোন ডাকাত বা চোরের দল ভল্টে মূল্যবান কিছু আছে ভেবে লুট করার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল আর খোঁজাখুঁজির সময় কফিনগুলো এলোমেলো করে গেছে।

কিন্ত সমস্যা হল চেজ ভল্টের ছিল একটি মাত্র প্রবেশদ্বার ।



যা বিরাট এক পাথরের স্ল্যাব দিয়ে বন্ধ থাকে। পাথরের ঐ স্ল্যাবটি এতোটাই ভারী ছিল যে সেটি সরাতে হলে প্রচুর লোকবল লাগবে ।

যাই হোক তখন সবাই মিলে সরে যাওয়া কফিনগুলোকে আবার জায়গা মতো রেখে দিল। থমাসের কফিন রাখার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে ভল্টের মুখ আবার আগের মতো বন্ধ করে দেয়া হলো।

১৮১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ১১ বছর বয়স্ক চার্লস ব্রিউস্টার এমিস মারা গেল । ওকে সমাহিত করার জন্য ভল্ট খোলা হলো । ভল্ট খোলার পর দেখা গেল সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । কফিন গুলোকে আবার কে বা কারা যেন স্বস্থান হতে তুলে, দূরে ছুড়ে ফেলেছে। থমাসের কফিনটির ওজন ছিল ২৪০ পাউন্ড। সেটাকেও তার পূর্বের অবস্থান থেকে অনেক দুরে পাওয়া গেল। এত ভারি কফিন কিভাবে দুরে ছুড়ে ফেলা হল ? !

এবারও সবাই হতবাক হয়ে গেল ! উপস্থিত লোকজন সবাই একজন আরেকজনের সাথে আলাপ করেও কোন সদুত্তর বের করতে পারল না। পুলিশ এল তারাও তদন্ত করে কিছুই পেল না। এমতবস্থায় আবার সবাই কফিনগুলোকে যথাস্থানে ঠিক করে রাখল।

এই ঘটনার ঠিক ৫২ দিন পর স্যামুয়েল ব্রিউস্টার মারা গেল । স্যামুয়েল ব্রিউস্টারকে সমাহিত করার জন্য ভল্ট খোলা হলো। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার সামনে পাথরের স্ল্যাব খুলে ভল্টের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা হলো। আবারও সেই অবাক করা ঘটনা ! সেই কফিনগুলো তাদের নিজেদের জায়গায় নাই । সব এলোমেলো হয়ে আছে । এছাড়া ভল্টে রাখা সর্বপ্রথম সদস্যা মিসেস থমাসিনা গডডার্ডের কাঠের কফিনটি পাওয়া গেল ভাংগাচোরা অবস্থায়। বেশ কয়েকজন তদন্তকারী ভল্টের ভেতরের জায়গা ও কফিনগুলো পরীক্ষা করে দেখল। অস্বাভাবিক কিছুই পাওয়া গেল না।

ব্যাপারটি তৎকালীন আমলে টক আব দ্যা টাউনে পরিনিত হল ।



সাজিয়ে রাখা ভারি কফিন গুলো কিভাবে নিজেদের স্বস্থান থেকে নড়ে যায়, এই রহস্যের কোন কূল কিনারাই করা গেল না ।

১৮১৯ সালের ১৭ জুলাই আবার ভল্ট খোলা হলো । এবারও কফিনগুলোকে এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া গেল। শুধুমাত্র মিসেস থমাসিনার ভগ্নপ্রায় কফিনটি ছিল স্বস্থানে।

দ্বীপের গভর্নর লর্ড কম্বারমেয়ারের নির্দেশে তদন্ত শুরু হলো। কফিনগুলোকে আবার সঠিক জায়গায় রাখা হলো। এরপর ভল্টের মেঝেতে বালি ছড়িয়ে দেয়া হলো। কে বা কারা কফিনগুলো এলোমেলো করছে তাদের পায়ের ছাপ নেয়ার জন্য।

১৮২০ সালের ১৮ এপ্রিল। ভল্ট খোলা হলো। এবার দেখা গেলো, কফিনগুলো জায়গা থেকে শুধু নড়েই যায় নি, বেশ কয়েকটি কফিন পুরো উলটে ফেলা হয়েছে।! অবাক করা ব্যাপার হলো, মেঝেতে যে বালি ফেলা হয়েছিল, তাতে কোন পায়ের ছাপ নেই!

এরপর সবাই ভয় পেয়ে গেল । কফিনগুলো দ্রুত সরিয়ে অন্যত্র সমাধিস্থ করা হলো। এরপর থেকে গত ২০০ বছর ধরে এই ভল্টটিতে কোন শবদেহ সমাধিস্থ করা হয়নি।

আজও ভল্টটি খোলা ও অব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। যা পৃথিবীর অনেক আমিমাংসীত রহস্য গুলোর মধ্যে একটি ।

বিষয়: বিবিধ

২২৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File