ঘুরে এলাম মায়ানমার । ( এক )
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৪:১৮ রাত
চট্টগ্রাম।
বৃহষ্পতি বার রাত এগারটায় হঠাৎ আমার মেজ কুটুম ফোন করল
ঃ দুলাভাই বার্মা যাবেন নাকি ?
উল্লেখ্য আমার মেজ কুটুম গত তিন বছর যাবৎ টেকনাফে দোকান নিয়ে মায়ানমারের সাথে ব্যাবসা করছে ।
ওর এই প্রস্তাবে আমিও উৎফুল্ল হয়ে গেলাম । তারপরও নিজের ব্যাবসার কথা চিন্তা করে আবার মিইয়ে গেলাম । তারপরও বললামঃ কখন যাবে ?
ঃ কালকে শুক্রবার ।
ঃঠিক আছে । কালকে গেলে তোমাকে ফোন করব।
ঃ কালকে গেলে সকালে আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন । এখান থেকে জুম্মার নামায পড়ে রওয়ানা দেব।
ঃআছ্ছা ।
শুক্রবার দিন সাধের ঘুম জলান্জলী দিয়ে সকাল আট টা বাজে উঠে গেলাম । গোসল আর নাস্তা করতে করতে প্রায় নয়টা বেজে গেল । তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হলাম। বাসার সামনে থেকে রিক্সা নিয়ে নিউমার্কেটের মোড়ে গেলাম । সেখান থেকে টেম্পোতে করে নতুন ব্রীজ পৌছলাম।
নতুন ব্রিজ।
এখান থেকে যেতে হবে সাতকানিয়া । । ভাল কোন গাড়ি পাছ্ছিনা । ভাল গাড়ি বলতে এস আলম , সৌদিয়া , শাহ আমিন । এরা অন্য দিন সাতকানিয়া আমিরাবাদের লোকদের জামাই আদর করে গাড়িতে তুলে । শুক্রবার হলে তারা আমাদের ( সাতকানিয়া ও আমিরাবাদি ) চিনেই না । কক্সবাজার যেতে যে সাতকানিয়া, আমিরাবাদ বলে কোন জায়গা আছে ওরা যেন ভুলেই যায় । নতুন ব্রীজ থেকে সাতকানিয়ার স্বাভাবিক ভাড়া ৬০ টাকা । আজ শুক্রবার, তাই ভাড়া ১০০ টাকা । এই হল আমাদের সোনার বাংলাদেশ ।কোন আইন নাই, কানুন নাই । যার যেমন ইছ্ছা ভাড়া বাড়িয়ে ফেলে । প্রশাসন আছে কিন্তু তাদের এই সব দেখার সময় নাই । তারা সরকারের গদি সামলাবে না এই সব দেখবে ?
প্রশাসন এখন ক্ষমতাশীন রাজনীতিকদের সেবক । সাধারন জনগনের সেবা করার সময় কোথায় ?
যাই হোক একটা লোকাল গাড়িতে উঠালাম । এই গাড়িই অন্যান্য দিন লোকাল ভাড়ায় চলে । আজ জাতে উঠেছে, তাই স্পেশাল সার্ভিস হয়েছে। কনট্রাক্টর আর হেলপারের যে ভাব, মনে হয় গাড়ি নয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনের ক্রু ।
গাড়িতে উঠলাম । বসে আছি । গাড়ি এখনও ছাড়েনি আসন পূর্ন করে যাত্রী সব নেওয়া হলে, তারপর বাস ছাড়বে । প্রায় পৌনে এগারটার দিকে বাস ছাড়ল ।
এই সময় মেজ কুটুম ফোন করলঃ কোথায় ?
ঃবাসে ।
ঃ ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছেন?
ঃ নাত ! কেন?
ঃ মায়ানমার যেতে হলে মায়ানমারের পাসপোর্ট বানাতে হবে । তখন ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে ।
আমি কিছুক্ষন চিন্তা করে বললাম অসুবিধা নাই বন্দোবস্ত হবে যাবে ।
এরপর যোগাযোগ বিছ্ছিন্ন করে দিলাম ।
তারপর বাসায় ফোন করলাম । আমার বেগমকে বললামঃ দেখোতো বাসায় আমার ভোটার আইডি কার্ডটা আছে কিনা ?
সে খুজে পেলানা ।
বুঝলাম বাসায় নাই । ছোট ভাইকে ফোন করলাম । বললামঃ আমার দোকানের দেরাজের ভিতর ভোটার আইডি কার্ডটা আছে । তুই ওটা নিয়ে আমার ই-মেইলে পাঠিয়ে দে।
জুম্মার আযানের আধা ঘন্টা আগে কেরানী হাট নামলাম ।
কেরানি হাট।
ওখান হতে সিএনজি করে আনুফকিরের দোকানে নামলাম । ততক্ষনে আযানের সময় হয়ে গেছে । এস্তেনজা ( টয়লেট ) ও অজু করে আনুফকীরের দোকানের মসজিদে জুম্মার নামায আদায় করলাম।
ওখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে আমায় জান্নাতবাসি মায়ের কবর। আহ ! কি মায়া মাখা ছায়া ঢাকা সেই কবর। চারদিকে সুপারী গাছের ঘেরা । সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো শান্ত নিবির পরিবেশে শুয়ে আছে আমার জান্নাতবাসি মা । সেখানে যেয়ে জিয়ারত করলাম ।
জান্নাতবাসি মায়ের কবর জিয়ারত করে সোজা শ্বশুর বাড়ি চলে এলাম। সেখানে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিলাম। শ্বশুর বাড়ির খাওয়াত ! এমন ভূড়ি ভোজনের পর বিশ্রাম না নিয়ে কি পারা যায় ?
তারপর আমি আর মেজ কুটুম বের হয়ে সোজা আমিরাবাদ। ওখানে আছরের নামায পড়ে , টেকনাফের উদ্দেশে বাসে উঠার জন্য বাস কাউন্টারে গেলাম । বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখলাম ভীষন ভীড় । শুক্রবার দিন বিকালে সবাই ফেরার জন্য হুড়োহুড়ি করছে । কারন শনিবার সকাল থেকে কর্মক্ষেত্র যেতে হবে । আমার মেজ কুটুম বহু কষ্টে সৌদিয়া বাসের দুটি টিকিট যোগাড় করল । আমরা মাগরীবের আগে আগে গাড়িতে উঠলাম ।
গাড়ি চলতে লাগল টেকনাফ লিংক রোডের উদ্দেশে । গাড়ি যখন চকোরিয়ার কাছাকাছি তখন মাগরীবের নামাযের সময় গেল। ভাবলাম নামযের জন্য গাড়ী দাড়াবে তাই একটু আপেক্ষা করলাম । নাহ ! গাড়ি থামল না । তখন সিটের উপর নামায পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । মেজ কুটুমকে বললাম তুমি উঠে দাড়াও আমি নামাযটা পড়ে নিই । ও উঠে দাড়ালে আমি নামায পড়ে নিলাম । আমার নামায পড়া দেখে ড্রাইভার মেজ কুটুমকে বললঃ আপনারা নামায পড়বেন বললেন না কেন ? বললেইত আমি গাড়ি থামাতাম।
ও কোন উত্তর দিল না ।
আমি নামায পড়ার পর মেজ কুটুম পড়ল।
ভাবতে অবাক লাগে !! বাংলাদেশ ৮০% মুসলমানের দেশ। সেই দেশে একটি বাসের চল্লিশ জন হতে পাচচল্লিশ জন মানুষের মধ্যে আমরা মাত্র দুইজন মানুষ নামায পড়লাম । তাহলে আর সবাই কি বিধর্মী...........। এই যদি হয় অবস্থা ! তবে এই দেশে নাস্তিকদের আস্ফালন বাড়বে না কেন ?
এশার নামাযের আগে আমরা কক্সবাজার হতে অনেকটা আগে লিংক রোডে নামলাম । ওখানে নেমে একটা হোটেলে ঢুকে মুখ-হাত ধুয়ে নিলাম । তারপর ভূনা গরুর গোশত আর ছেকা ( কম তেলে ভাজা ) পরাটা দিয়ে নাস্তা করলাম । খাওয়া দাওয়ার পর টেকনাফগামী গাড়িতে উঠলাম । প্রায় রাত সাড়ে দশটার দিকে টেকনাফ পৌছলাম .......।
চলবে।
বিষয়: বিবিধ
২৫৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন