এক রাতের গল্প ( সত্য ঘটনা)
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ০৬ জুন, ২০১৩, ১০:২৪:৫৯ রাত
ভারত-পাকিস্তান বিভাগের সময় মুসলান হিন্দুর মধ্য যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল তখনকার ঘটনা ।
তৎকালীন ভারতের এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান ধনী ব্যক্তির অতীব রূপসী কন্যা তার এক আত্নীয়ের (খালা/ফুফু) বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। আত্নীয়ের বাড়ী ছিল তাদের বাড়ি থেকে বেশ কয়েক রাস্তা পরে। আত্মিয়র বাড়ি হতে রাতে ফেরার সময় বাড়ির দিকে অর্ধেক রাস্তা আসার পরেই সে দেখতে পেল ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। দাঙ্গা দেখে মেয়েটি দিশেহারা হয়ে গেল । ভীত হয়ে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে চারদিকে তাকাল । পাশেই একটি নির্জন মসজিদ দেখতে পেল। তখন এশার নামায শেষ হয়ে গেছে তাই মসজিদের ভিতর কোন মুসল্লী ছিল না। মেয়েটি দ্রুত মসজিদটিতে প্রবেশ করে মহিলাদের নামযের জায়গায় গিয়ে বসল। সেই দাঙ্গা গভীর রাত পর্যন্ত চলতে লাগল । এদিকে রাত গভীর হছ্ছিল । দাঙ্গাও থামছে না, মেয়েটি বাড়িও ফিরতে পারছে না । এমতবস্থায় সে বুঝতে পারছিল না, কি করবে।
ঐ মসজিদের তত্তাবধায়ক ছিল একজন যুবক। সে যখন রাতে মসজিদ বন্ধ করতে এল, তখন এই রূপসী মেয়েটিকে মসজিদে বসা দেখতে পেল। সে ছিল খুবই মর্যাদা সম্পন্ন যুবক এবং তার মধ্যে আল্লাহর ভয় ছিল প্রবল । তাই সে কি করবে বুঝতে পারছিল না । কেননা এখন কেউ যদি মেয়েটিকে এখানে দেখে তাহলে সে বিপদে পড়ে যাবে। যদিও সে বুঝতে পারছিল কেন মেয়েটি এত রাতে মসজিদে অবস্থান করছে। কিন্তু সেও নিরুপায় । কারন দুষ্টু লোকেরা এখন ওদের দেখতে পেলেই হবে, কাল সকালে মুখরোচক ন্যাক্কারজনক কুৎসা রটাতে এতটুকু দেরী করবে না। আর এ কারনে কোমল হৃদয়ের যুবকটি কঠোর হতে বাধ্য হল । সে ভদ্রভাবে মেয়েটিকে মসজিদ বের হয়ে যেতে বলল।
যুবক বললঃ কেউ যদি আপনাকে এখানে দেখে তবে আমাদের দুজনের জন্যই তা কলঙ্কের এবং সমাজচ্যুতির কারণ হবে।
যুবকটির কঠোর মনোভাব দেখে মেয়েটি তার কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করে বললঃ আমিও জানি আজ কেউ যদি আমাদের দুজনকে এখানে দেখে তাহলে কলংক রটাবে । কিন্তু কি করব বলুন বাইরে যে ভাবে দাঙ্গা চলছে এই অবস্থায় আমি একজন যুবতি মেয়ে বের হলে, দাঙ্গাবাজরা আমার কি অবস্থা করবে তা আপনি না বোঝার কথা নয় । এই সময় আমার জন্য মসজিদের এই নিরাপদ আশ্রয় হতে বের হওয়া ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হবে। আজ যদি আমি আপনার বোন হতাম তাহলে কি আপনি আমাকে এভাবে বাইরে বের হতে বলতেন?
মেয়েটির কাকুতি মিনতি আর অসহায়ত্বের কথা শুনে কোমল হৃদয়ের যুবকটি নিরুপায় হয়ে তাকে মসজিদে থাকতে দিতে রাজি হয়। এরপর সে মসজিদের অপর প্রান্তে বই-খাতা নিয়ে পড়তে বসে যায়। যা সে প্রতিদিনই করে ।
মেয়েটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মসজিদে অবস্থান গ্রহন করলেও নিশ্চিন্ত ভাবে থাকতে পারছে না । কারন সে নিজের রুপ সম্পর্কে জানে তাই এই নির্জন মসজিদে গভীর রাতে একাকি একজন যুবকের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করছে না । যুবক যতই সৎ হোক ওর মত এইরকম সুন্দরী নারী আর নির্জন পরিবেশে কতক্ষণ যুবকটি তার সততা ধরে রাখতে পারবে । শয়তানি ওয়াসওয়াসা আর যৌবনের তাড়না তাকে গ্রাস করলে আজ রাতই হয়ত হবে মেয়েটির জীবনের শেষ রাত। এই সব ভাবনায় মেয়েটি ঘুমাতে পারছিলনা, তাই মসজিদের অপর প্রান্তে মোম জ্বালিয়ে বসা , পাঠরত যুবকটির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে লাগল। নজর রাখতে গিয়ে সে দেখতে পেল এক অদ্ভুত কান্ড। যুবকটি জ্বলন্ত মোমের আগুনের উপরে হাত রাখছিল এবং আগুনের আঁচ অসহ্য না হওয়া পর্যন্ত হাতের তালু সরাচ্ছিল না। হাতের তালু সরিয়ে আবার পড়তে লাগল। আবার কিছুক্ষন পর জ্বলন্ত মোমের আগুনের উপরে হাত রাখছিল এবং আগুনের আঁচ অসহ্য না হওয়া পর্যন্ত হাতের তালু সরাচ্ছিল না। এ কাজটা সে বার বার করছিল । এভাবেই ভোর পর্যন্ত যুবকটি একই আচরন করে চলল।
ফযরের আযানের সময় হল। ছেলেটি বই-খাতা রেখে ফযরের আযান দিল । এরপর মেয়েটিকে বললঃ এখন পরস্থিতি শান্ত হয়ে গেছে তাই মসজিদে কোন মুসল্লী আসার আগেই আপনি বাড়িতে চলে যান ।
মেয়েটি যাওয়ার জন্য উঠে দাড়াল । দাড়িয়ে যুবককে বললঃ আপনাকে একটা প্রশ্ন করব উত্তর দিবেন ?
যুবক উত্তর দিতে রাজী হল।
ঃ আপনাকে দেখলাম সারা রাত পুস্তক পরছিলেন আর কিছুক্ষন পর পর কেন বার বার জ্বলন্ত মোমের উপর হাত দিচ্ছিলেন ? এর কারণ কি আমাকে তা বলতে হবে।
যুবকটি মেয়েটির প্রশ্ন শুনে প্রথমে উত্তর দিতে না চাইলেও, পরে চিন্তা করে দেখল এই প্রশ্নের উত্তর না দিলে মেয়েটি যেতে দেরি করবে। এর মধ্য কেউ যদি চলে আসে তাহলে সমস্যা হবে । তাই বাধ্য হয়ে উত্তর দিতে রাজি হল।
ঃ আমি একজন যুবক। এখন আমার যৌবনের প্রবৃত্তির তাড়না তীব্র। আপনার মত সুন্দরী যুবতি নারী সারারাত আমার সামনে ছিলেন। যার কারনে মাঝে মাঝে আমার কাম ভাবনা তীব্র হয়ে আমার মন ও দেহকে কাবু করে ফেলছিল। যদিও আমি পড়াশোনা করছিলাম তবুও শয়তান আমার নফসকে কুমন্ত্রনা দিছ্ছিল আর আপনার দিকে আমার মনে লোভ সৃষ্টি করছিল। এই কারনে যতবার আমার মনে এই কামনার তীব্র ভাব বেড়ে যাছ্ছিল, ততবার আমি আগুনের উপর হাত রাখছিলাম । তাতে আমার হাত পুড়ে যাচ্ছিল আর পোড়ার ব্যাথা অসহ্য হলে হাত সরিয়ে নিছ্ছিলাম এবং নিজেকে বলছিলাম,হে নফস এই আগুন সহ্য করতে পারছিস না জাহান্নামের আগুন কি করে সহ্য করবি । এই আগুনের তাপত জাহান্নামের আগুনের তাপের কাছে তুচ্ছ।
মেয়েটি মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধায় যুবকের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর যুবককে সালাম করে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল ।
বাড়িতে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ বাবা মাকে সব ঘটনা বলল ।
মেয়েটি পরে একান্তে তার মাকে বলল যে ,সে ঐ মসজিদের তত্তাবধায়ক যুবককে বিয়ে করতে চায়। কারন একমাত্র এরকম আল্লাহ ভীরু লোকই তার স্ত্রীর কাছে সৎ থাকতে পারে। এমন মানুষ যার অন্তরে আল্লাহর এই রকম ভয় আছে সেই পারে তার স্ত্রীর হক পরিপুর্ণ রূপে আদায় করতে।
পরবর্তিতে ঐ দরিদ্র মসজিদ রক্ষক যুবক একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের রুপুসী কন্যাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেল ।
যুবকটি এই মর্যাদা তার চেহারার জন্য পায়নি বরং পেয়েছিল তার উত্তম চরিত্রের জন্য।মৃত্যুর পর একজন মানুষের সবকিছুই ধুলোয় মিশে যায় কিন্তু উত্তম চরিত্রের কথা থাকে যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে আর ইতিহাসের পাতায় পাতায় । উত্তম জ্ঞান মানুষের উপকারে আসে তখনই যখন তাকে কেবল পুস্তকে ধারণ না করে অন্তরেও ধারণ করা হয়।
( এই ঘটনাটি ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ক্বারী মুহাম্মদ কাইয়্যাম রহমতুল্লাহ আলাইহি এক ওয়াজে বর্ননা করেছিলেন । )
বিষয়: বিবিধ
২৪৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন