এরা নিজেরা ভালো থাকে না, পড়শিদেরও ভালো থাকতে দেয় না
লিখেছেন লিখেছেন জাইদী রেজা ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:২০:১৪ রাত
কোনো রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন সমাপ্তি ও গৃহীত হওয়ার ঘোষণা একান্তই সে রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ নিজস্ব ব্যাপার। এটা ভিন রাষ্ট্রের গ্রহণ করা-না-করার কিছু নেই, বিষয়ও নয়। এরপরও এ নিয়ে ভিন রাষ্ট্রের আপত্তি করার এক উদাহরণ দেখলাম আমরা।
নেপালে গত সাত বছরের মধ্যে দুইবার কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বা সংবিধান সভার নির্বাচন ও সে সভা পরিচালনা শেষে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ নতুন কনস্টিটিউশন বা সংবিধান গৃহীত হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এর ভেতর দিয়ে নেপাল রিপাবলিক জনরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
কিন্তু ভারত প্রকাশ্যেই এর বিরুদ্ধে নিজের আপত্তি ও অসন্তুষ্টি জানিয়েছে।
ভারত শেষ পর্যন্ত নেপালের বিরুদ্ধে অঘোষিতভাবে অবরোধ আরোপ করেছে। ল্যান্ড-লকড নেপাল, পণ্য চলাচলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ভারতের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষত তেল-গ্যাস জ্বালানির সরবরাহের দিক থেকে শতভাগ নির্ভরশীল। এই অবরোধ আরোপ করে ভারত নেপালের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কতটা তা জাহির করছে। নিঃসন্দেহে ভারতের দিক থেকেও এই অবরোধ ছিল সব হারিয়ে মরিয়া শেষ প্রচেষ্টা। যদিও এই প্রচেষ্টার ভাগ্য অনেক আগেই নির্ধারণ হয়েছে। এ কথা ঠিক যে,
অবরোধের প্রথম ৪২ দিনে নেপালের প্রত্যেক নাগরিক তা হাড়ে হাড়ে নিজের জীবনে বুঝেছে যে ভারতের কত শক্তি।তবে ভারতের এই শক্তির ব্যবহার নেপালিদের কাছে অত্যাচারী বা নির্যাতনকারীর শক্তি হিসেবেই হাজির। এরই প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রাপ্তি পুরো নেপালি জনগোষ্ঠীর ভারতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। নেপালের জনগণ আশা করে না যে, ভারত তাদের বসিয়ে খাওয়াবে। আবার এটাও আশা করে না যে, ভারত তাদের স্বাভাবিক জীবন আরো কঠিন কষ্টকর এবং দুর্বিষহ করে তুলবে।
ভারত নেপালকে জ্বালানি সরবরাহ না করে মারবে এই সিদ্ধান্ত খোদ ভারতের জন্যই বিশাল বিপদ হিসেবে হাজির হয়েছে। সরবরাহহীন পরিস্থিতি নেপালকে মরিয়া হয়ে বিকল্পের সন্ধানে নামতে বাধ্য করেছে। গত সপ্তাহ থেকে ভারতের মিডিয়ার মনে পড়েছে যে ট্র্যাডিশনালি নেপালের একমাত্র জ্বালানিদাতা ছিল ভারত, এখন আর নেই। সে জায়গা পূরণে এখন চীন হাজির হয়ে গেছে।
চীন থেকে শুভেচ্ছাস্বরূপ অনুদান হিসেবে দেয়া ১০০০ টন জ্বালানির চালান আসা শুরু হয়ে গেছে গত ১ নভেম্বর থেকে। নেপালের মোট চাহিদার কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নেপাল চীন থেকে আমদানির স্থায়ী চুক্তি করতে চায়। এই অবস্থা দেখে ভারতের মিডিয়ার সুর নরম ও হতাশার। নেপালকে চাপ দিয়ে ধরার অস্ত্র ভোঁতা অকেজো হয়ে এখন উল্টা তা ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করছে। ভারতের ভুল নেপালনীতির কারণে নেপালকে চীনের দিকে নিজেরাই ঠেলে দিয়েছে বলে এখন কোনো কোনো মহল থেকে অভিযোগ ওঠা শুরু হয়ে গেছে।
অথচ ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের অবরোধ আরোপের পর ভারতের সব মিডিয়া ভারতের নেপালনীতির পক্ষে প্রপাগান্ডা শুরু করেছিল।চীন থেকে জ্বালানি এসে পড়ায় এই অবস্থায় প্রতিযোগিতা অনুভব করে এবং দোষ কাটাতে বা হালকা করতে ভারত কিছু কিছু সীমান্তে অবরোধ শিথিল করে তেল ট্যাঙ্কার নেপাল প্রবেশ করতে দেয়া শুরু
কলোনি মাস্টার ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া ও নেপাল সরকারের মধ্যকার চুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়োজনে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। কলোনি মাস্টারের সাথে নেপালের রাজার সর্বশেষ চুক্তিটা স্বাক্ষর হয়েছিল ১৯২৩ সালে যেখানে ওই চুক্তির কার্যকারিতা সমাপ্তির তারিখ উল্লেখ করা ছিল ৩১ জুলাই ১৯৫০। সে কারণেই স্বাধীন ভারতের নেহরু ও নেপালের রানা রাজবংশের রাজার মধ্যে ওই ৩১ জুলাই ১৯৫০ তারিখেই এক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ভারতের সাথে নেপালকে চুক্তি করতে হবেই কেন? আর সেটা আসলে কিসের বা কী বিষয়ক চুক্তি? সংক্ষেপে এর জবাব হলো, পুরনো কাল থেকেই নেপাল এক ল্যান্ড-লকড ভূখণ্ড; অর্থাৎ এ ভূখণ্ড সমুদ্র যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন; নেপালকে অন্য রাষ্ট্রের ভূমি মাড়িয়ে তবে সমুদ্রের নাগাল পেতে হয়। একমাত্র এভাবেই দুনিয়ার তৃতীয় যেকোনো দেশের সাথে নেপালের বৈদেশিক বাণিজ্য বিনিময় সম্ভব করতে পারে।
একালে বশংবদ কারো কাজে লাগে না। আজ দেখা যাচ্ছে নেপালের রাজনৈতিক শক্তি সবাই এক এক করে ভারতকে ছেড়ে চলে গেছে, নেপালে একমাত্র মাধেসি তরাই জনগোষ্ঠীই ভারতের ভরসা।
গত ৬০ বছরে ভারতের কূটনীতি চর্চা হয়েছে নেপালে একটা বশংবদ দল ও নেতা তৈরি করে নেপালকে নিজের অধীনে রেখে নিজের স্বার্থ আদায় করতে হবে মনে করে।
একালে এম্পায়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা মানেই তার দুনিয়ার গতিপ্রকৃতির খবর নেই। বরং এখন এম্পায়ার না হয়েও বহু কিছু ভোগ বা অর্জন করা সম্ভব।বল থাকলেই বড়ভাই সেজে, ক্ষমতা দেখিয়ে এই পথে সব কিছু আদায় করতে হবে বা আদায় হবেই এটা খুব কাজের কথা নয়।
এরা নিজেরা ভালো থাকে না, পড়শিদেরও ভালো থাকতে দেয় না ।
----- গৌতম দাস এর লিখা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ।
বিষয়: বিবিধ
৮৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন