***‘নূর একটি বার্তা’***

লিখেছেন লিখেছেন জাইদী রেজা ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৩২:২৪ সকাল





সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন (১৪) হত্যাকাণ্ডে দেশে-বিদেশে আলোড়ন তোলার পেছনে ছিল একটিই কারণ। ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্র। এই ভিডিও চিত্র ধারণ করেছিলেন ঘটনাস্থল কুমারগাঁও বাসস্টেশনের পাশের একটি দোকানের ব্যবসায়ী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০)।

গতকাল রোববার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায়ে নূর আহমদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, ভিডিও চিত্র ধারণকারীর অসংলগ্ন কথাবার্তা, হাসি–ঠাট্টা নির্মম তামাশা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ভিডিও চিত্র ধারণকারী খুনের প্ররোচনাকারী হিসেবে বিবেচিত। এ কারণে তাঁকে ৩০২/১০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ঢাকায় বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছিল। ছবিটি যিনি তুলেছিলেন, তিনি খুনিদের প্রকাশ করার জন্য এটি করেছিলেন। রাজন হত্যার ভিডিও চিত্র ধারণকারীর কোনো সৎ উদ্দেশ্য ছিল না।

রায়ে মামলার প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড, তিনজনের সাত বছর, দুজনের এক বছর করে কারাদণ্ড এবং তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়।

কুমারগাঁও বাসস্টেশন লাগোয়া বিপণিবিতানে গাড়ি মেরামত করার একটি দোকান রয়েছে নূর আহমদের। বাড়ি তাঁর জালালাবাদ থানা এলাকার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের জাঙ্গাইল গ্রামে। ৮ জুলাই ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন নূর। কিন্তু ভিডিও চিত্রের খণ্ড খণ্ড কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনাস্থল কুমারগাঁও থেকে রাজনের বাড়ি বাদেয়ালি গ্রামে পর্যন্ত এসব ভিডিও চিত্র মুঠোফোনে ছড়িয়েছিল। ১০ জুলাই নূরের তোলা মুঠোফোনের ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্র প্রথম আলোর সিলেট কার্যালয়ে পৌঁছায়। সত্যতা যাচাইয়ে ওই দিন রাজনের গ্রামে গিয়েও দেখা গেছে, ওই ভিডিও চিত্র থেকে রাজন হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে পোস্টার হয়েছে। এই ভিডিও চিত্র নিয়ে ১২ জুলাই প্রথম আলোয় ‘নির্মম পৈশাচিক!’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। পরে ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১৬ জুলাই রাত নয়টায় নূরের বাবা নিজামউদ্দিন ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

নূর আহমদ ভিডিও চিত্র ধারণ করার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কিন্তু ভিডিও চিত্র ধারণ করে আত্মগোপন করেছিলেন কেন—এ বিষয়ে নূর জানিয়েছিলেন, প্রধান আসামি কামরুল ফেসবুকে দেওয়ার জন্য ভিডিও ধারণ করতে বলায় তিনি এ কাজ করেছিলেন। রাজন মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি এক দিন পরে জেনেছেন।

গতকাল রায় ঘোষণার সময় নূরের পরিবারের সদস্যরাও আদালত এলাকায় ছিলেন। নূরের এক নিকটাত্মীয় প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘নূর না থাকলে কি ঘটনা প্রকাশ পাইত? তাঁর ভিডিও না থাকলে বিচার দূরের কথা, এত দ্রুত আসামিই শনাক্ত অইত না। এত বড় সাজা আমাদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে।’

রাজনের পরিবারের নিযুক্ত আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন,

এখন তো প্রযুক্তির সহজলভ্য এক যুগ, মানুষের হাতের কাছেই থাকে। এ রকম ঘটনায় নির্মম তামাশা না করে প্রতিকারে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে এ দণ্ড একটি বার্তা। এককথায় বলতে গেলে, রাজন হত্যা–পরবর্তী ঘটনায় নূর একটি বার্তা হয়ে থাকল। এ থেকে শেখারও আছে।


বিষয়: বিবিধ

১০০৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349034
০৯ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আরো কম সাজা প্রাপ্য ছিল। কারন সে বাধা না দিলেও অংশ নেয়নি। ভিয়েতনামের বিখ্যাত গায়ে আগুন ধরিয়ে সন্যাসির আত্মহত্যার ছবি তুলেছিলেন যে সাংবাদিক তিনি বলেছিলেন চাইলে হয়তো তিনি মানুষটিকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু দুনিয়ার বুকে ভিয়ৈতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ ছড়ানর জন্য এই ছবিটার প্রয়োজন ছিল।
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:২২
289702
জাইদী রেজা লিখেছেন : ভিয়েতনামের বিখ্যাত গায়ে আগুন ধরিয়ে সন্যাসির আত্মহত্যার ছবি তুলেছিলেন যে সাংবাদিক তিনি বলেছিলেন চাইলে হয়তো তিনি মানুষটিকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু দুনিয়ার বুকে ভিয়ৈতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ ছড়ানর জন্য এই ছবিটার প্রয়োজন ছিল।
অনেক ধন্যবাদ।
349042
০৯ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৫
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : এ ধরনের ঘটনা অহরহ এ দেশে ঘটছে আজ রাজন রাকিবের জন্য জনগন রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন করে সরকারকে বির্ব্রত করে বিচায় আদায় করেছে...এভাবে আন্দোলন করেই যদি বিচার আদায় করতে হয় তাইলে রাস্তা ছেরে জনগনকে আর ঘরে ফেরা হবে না...দেশ এই জন্য স্বাধীন হয়নী আইনশ্রীংখলা বাহিনী এজন্য ঘটন হয়নি যে তাহারা পয়সার বিনিময়ে খুনিকে খুরমা খেজুর খেতে পাঠিয়ে দিবে...এখন শতশত নির্মম ঘটনা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটছে কিন্তু পুলিশের কাছে গিয়েও এর কোনই প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা...পুলিশের জন্মই যেন হয়েছে মানুষকে হয়রানি করার জন্য এবং রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেট দিয়ে ঘুষ আদায় করার জন্য...আর এর জন্য প্রধান দায়ী সব সময়কার ক্ষমতাসীন দল।
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
289703
জাইদী রেজা লিখেছেন : পুলিশের জন্মই যেন হয়েছে মানুষকে হয়রানি করার জন্য ।

স্বাগতম
349061
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৫
বেআক্কেল লিখেছেন : এই ব্যক্তির শাস্তিই প্রাপ্য, আদালত সঠিক সিন্ধান্ত দিয়াছে। এই ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল শাস্তি করার ছবি তুলবে, অন্যায়ের ছবি নয়। তাই এটি হত্যাকারীর পক্ষে গিয়াছে। ইসলামী আইনে তো উপস্থিত সবারই মৃত্যু দন্ড হবার কথা। যদি না সে ঘটনার প্রতিবাদকারী না হয়। এই ব্যক্তি ঘটনার প্রতিবাদ করে নাই, তাই সে সাহায্যকারী ও দোষী। হইতে পারে তার তোলা ছবিটি ন্যায় বিচারে সহজ হইয়াছে কিন্তু কোন বিচার ছাড়াই তো দেশ চলছে বহুদিন ধইরা। বিচার থাকিলে তো, রাজনকে মরিতে হইত না।
349070
০৯ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৭
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : ভালো লাগলো
349073
০৯ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫০
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ভালো হয়েছে। অন্যয়কে সাহায্য করাও অন্যায়।
349095
০৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১১
শেখের পোলা লিখেছেন : রাজনের হত্যাকারীদের সাজা হওয়ার পিছনে নূরের অবদান স্বীকার করতেই হবে৷ নয়ত অনেক খুনের মত এটাও হারিয়ে যেত৷ তার যাবজ্জীবন নাহয়ে কিছু কম আশা করিনি৷ অবশ্য খুনিদের সহযোগী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে৷ ভাল হত যদি লুকিয়ে নাথেকে ভিডিওটি থানায় জমাদিত৷ হয়ত সেও ভাবিনি যে অবিচারের দেশে এ ঘটনা এতটাই এগুবে৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File