আমার বন্ধু সানোয়ার
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ০১:৩০:১৯ রাত
প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে আমার শিক্ষা জীবনে তিনটি দেশে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোট আটটি প্রতিষ্ঠান অতিক্রম করেছি। অবস্থান করেছি অনেক শহরে, ব্যাক্তিগত জীবনে এক্সট্রভেট চরিত্রের হবার কারণে দেশি বিদেশী অগনিত বন্ধুবান্ধব গড়ে তুলেছি। আমার আজীবন চলন্ত এই জীবনে শত বা হাজারো বন্ধু বান্ধবের মাঝেও সানোয়ার জাহান আমার একজন শুধু ঘনিষ্ঠতম নয় একজন বিশেষ বন্ধু। আমি জানিনা, বিশেষ শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো কিনা। তবে সানোয়ার আমার একজন অসাধারণ বন্ধু। প্রতিটি মানুষের কিছু গুন থাকে, আল্লাহ পাক একেক ব্যাক্তিকে একেক গুণ দিয়ে, বিশেষত্ব দিয়ে বৈচিত্রময় জগত করেছেন। সানোয়ারের একটা বড় পরিচয় হলো সানোয়ার একজন সৎ এবং ভাল মানুষ। সানোয়ার বাংলাদেশ সরকারের সরকারী অফিসার। আমার দেশান্তরী জীবনের পর অনেক বন্ধু বান্ধবের মত ছেলেবেলার বন্ধু স্বভাবতই সানোয়ারকেও হারিয়েছিলাম। ২০০৮ সালের কথা বাংলাদেশে বেড়াতে এসে, কোন এক অফিসে এক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেখা পেলাম, কথা প্রসংঙ্গে বললাম আমার এক বন্ধু ছিল কোথায় আছে জানি না। ঐ ইউ এন ও তখনই বললো, আপনি সানোয়ার স্যারের কথা বলছেন। তার নম্বর আমার কাছে আছে। একটু ভড়কে গেলাম। ইউ এন ও ভদ্রলোককে আমার বয়সের কাছাকাছিই মনে হলো, তিনি সানোয়াকে স্যার বলছেন। আরো কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের পর মনে তিনি ঠিক আমার বন্ধু সানোয়ারের কথাই বলছেন। সাথে সাথে ফোন দিলাম, কথা হলো অনেকদিন পর।
সানোয়ারের পরিচয় শুধু সৎ মানুষ নয়, তার আরেকটা পরিচয় যেটা আমার কাছে অনেক বড় সেটা হলো সিম্পলিসিটি। একজন অতি সাধারণ জীবন যাপনকারী সানোয়ার। ২০০৮ সালেই কথা হবার পর সাভারে তার সরকারী বাসায় গিয়েছিলাম, তার বাসার সিম্পলিসিটি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, বুঝলাম আমার বন্ধু সানোয়ার আগের ব্যাক্তিটিই এখনো আছে।
সানোয়ার একজন লেখাপড়া জানা ব্যাক্তি। আমি জানি না, কে কি বুঝেছেন। রবীন্দ্রনাথ নাকি তার কোন পরিচিত ব্যাক্তিকে চারিত্রিক বা পরিচিতি সনদ দিয়েছিলেন শুধু এক লাইনে "আমার অমুক বাংলা জানে" শুধু এতটুকু বলেই। আমি অনেকটা সেভাবেই বলতে চাই আমার বন্ধু সানোয়ার লেখাপড়া জানে। তবে হ্যাঁ, এ বিষয়টাতে আসলেই আমি কট্ররপন্থী। সেটা কিছুটা আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি, মাস্ট্রার ডিগ্রী পাশ, ডাক্ত্রার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় আল্লামা আমার বাবা দেখতাম পাত্তাই দিতেন না। আবার অতি সাধারন কপটতাহীন কিছু ব্যাক্তিকে আব্বা খুব সম্মান করতেন। আমি এটা আমার বাবা থেকে পেযেছি। এব্যাপারে অহংকার করতে দ্বিধা নেই আমার। আমার ভাতিজা হাফেজ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ। ওয়াজ নসিহত ও করে। জালালাইন শরীপ পড়ায় শুনে। দেখা হবার পর ভাতিজাকে প্রথম প্রশ্ন করেছিলাম, ভাতিজা, তোমার অনেক শুনাম শুনলাম তবে তুমি অসুলে ফিকাহ বুঝ? নুরুল আনোয়ার বুঝ? আরো বললাম, ভাতিজা। তুমি যতবড় আল্লামাই হওনা কেন, অসুলে ফিকাহ, অসুলে তাফসীর, অসুলে হাদীস না বুঝলে আমি কোন ব্যাক্তিকে আলেমই মনে করি না। ভাতিজাতো আমার কথা শুনে থতমত। আমার মনে হয়না, আমার ভাতিজা আর কারো কাছ থেকে এমন কথা শুনেছে। সে যাক, ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার এই বকবকি বদ অভ্যাস আমার আছে।
আমার বন্ধু সানোয়ারের হাতের লেখা কি ছিল সে ব্যাখ্য দেয়া কঠিন। তবে এতটুকু বলতে পারি, যে যুগে কম্পিউটার খুব সহজলভ্য ছিলনা, সে সময় তার হাতের লেখা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের একবার ভর্তি গাইড বের করেছিলাম। একবার আমরা সাহিত্য দেয়ালিকা বের করেছিলাম, সানোয়ারের হাতে ডিজাইন দিয়ে। অসাধারন সে ডিজাইন প্রযুক্তির এই যুগে আজো কম্পিউটার ডিজাইনকে হার মানাবে।
আজ এত বছর পর সানোয়ারকে আমার বর্তমান বাসস্থান ওয়াশিংটন ডি.সি তে এবং আমার বাসায় পেয়ে জীবনের একটি দিকে তৃপ্তি এবং প্রাপ্তির সাধ পেয়েছি।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন