ফেরআউনদের কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৩৩:৩২ রাত
বাংলাদেশের রাজনীতি আমি ফলো করিনা অনেকদিন থেকে। মাথাও খুব একটা ঘামাইনা। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেল হবার সংবাদ আসলে ইয়াহু নিউজে দেখেছি।
আমার অফিসে একটা বাঙালী মেয়ে কাজ করে। মেয়েটা আওয়ামী লীগ করে বা সমর্থন করে। যেদিন খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে ঠিক সেদিন মেয়েটার সাথে দেখা হবার পর আমাকে বললো, কি ভাই মন খারাপ কেনো, খালাম্মার জন্য খারাপ লাগছে? আমি প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি, প্রথমে আমি মনে করেছিলাম সে হয়তো সে বলতে চাইছে আমার বউয়ের জন্য মন খারাপ কিনা। তারপর সে নিজেই বললো তার নাকি আসলে খারাপ লাগছে খালেদা জিয়ার জন্য। আমি যখন বুঝলাম সে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কথাই বলছে, তখন আমি একটু বিরক্ত হলাম। বিরক্ত হলাম এজন্য, প্রথমত বাংলাদেশের রাজনীতি এত পঁচেছে যে এটার সাথে নিজেকে জড়ানো বা কথা বলাও বিরক্তিকর। তাছাড়া আমি জানি সে আওয়ামী লীগ করে বা সমর্থন করে। আর আওয়ামী লীগারদের সামনে অন্যায়ের বিরোধীতা করলে, সমালোচনা করলে আপনাকে উল্টা একটা দল বা গ্রপের সাথে জড়িয়ে দেবে। ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন আপনি হয়তো নাস্তিক কিংবা রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী। মেয়েটের মন্ত্যব্যের জবাবে শুধু এতটুকুই বললাম, 'এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই, এটাই রাজনীতি। একদিন ক্ষমতায়, আরেকদিন জেলে। মেয়েটাকে আরো বললাম, বি.এন.পি জামায়াত যখন ক্ষমতায়, আমি যেহেতু সারা জীবনই একটু কেয়ারলেস টাইপের, সে সময় এক জামায়াতী আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য বলতে চাইছিল আমরা এখন ক্ষমতায়, আমাদের দুজন নামকরা মন্ত্রী আছে, মানুষ আমাদেরকে সমীহ করে চলে, আমি তখন সেই জামায়াতী বন্ধুকে বলেছিলাম 'আজ ক্ষমতায়, কাল যে আবার জেলে যাবেন না তার নিশ্চয়তা দিতে পারবেন?'। মেয়েটাকে বললাম, তোমরা যাই মনে করো, আমরা আমাদের বিবেককে বিকিয়ে দেইনি কোন দল, ব্যাক্তি বা একক দর্শনের কাছে ।
খালেদা জিয়ার জেল নিয়ে শেখ হাসিনার একটা মন্তব্য শুনলাম, "কোথায় তিনি আজ"। কথাটা শুনে একটু হাসি আসলো।
আমরা যখন ছোট ছিলাম, একটা কথা প্রচলিত ছিল, এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, এক রাতে সব শেষ।
হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু নামক এই শেখ মুজিবুর রহমান অনেক ক্ষমতাধর ছিলেন, ফরাসী সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাসি এবং বৃটিশ সাংবাদিক এন্থনি ম্যাসকারেনহাস সহ অনেক নামকরা সাংবাদিকের মতে মুজিবের ভক্তদের অনেকে তাঁর পায়ে ধরে চুমু খেত।
তবে বঙ্গবন্ধু নামক প্রচন্ড শক্তিধর এই শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর ইন্নালিল্লাহ পড়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুজিবকে সপরিবারে হত্যার পর, আওয়ামী লীগই ক্ষমতা নেয়, শেখ মুজিবেরই সহচর, শেখ মুজিবেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রি দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগেরই নেতা খন্দকার মোশতাকই রাষ্ট্রপ্রধান হন। আজকের লম্বা লম্বা চাপাবাজ, দালাদ তোষামোদকারী, এই তোফায়েল, আমু, রাজ্জাকরাই ক্ষমতার উপকন্ঠে থাকে, কেউ প্রতিবাদ করেনি। আজকের গোয়েবলস শেখ হাসিনার পা চাটা গোলাম হাসানুল হক ইনু সেদিন ট্র্যাংক এর উপর উঠে উল্লাশ করেছিল, আর নব্য ফেরআউনের আরেক ডান হাত মতিয়া চেীধুরী তখন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি থাকাকালীন শেখ মুজিবের গায়ের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর ঘোষনা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগেরই মুল অংশের সভাপতি (বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছিল, আমরা ব্যাকেটে দেখতাম আওয়ামী লীগ (মালেক) আওয়ামী লীগ (মিজান)। আওয়ামী লীগ মূল অংশের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল মুজিবের মৃত্যুর পর মন্ত্যব্য করেছিল যে, একজন ফেরআউনের মৃ্ত্যু হয়েছে।
মালাউন আর ভাদানীদের কৃপায় শেখ হাসিনা আজ নতুন ফেরআউন, অসম্ভব ক্ষমতাধর, দালালরা তার চার পাশে ঘুর ঘুর। শেখ হাসিনা অতীতকে ভুলে গেছে, কোন ফেরআউনই থাকেনি। ৭৪ সালের সেই ফেরআউন সিরাজ শিকদারকে হত্যা করে সংসদে দম্ভ করে বলেছিল 'কোথায় আজ সিরাজ শিকদার', ৭৫ সালের পর বাংলাদেশের জনগন বলেছিল কোথায় সে ফেরআউন।
লুচ্চা এরশাদ, এই হারামজাদার বিশ্বাঘাতকতা আর দালালীর কারনে দেশের রাজনীতিটাই পচেছে। লুচ্চাটা বলছে, বি.এন.পি নাকি এখন কফিনে। লুচ্চামী আর ভাদানীদের পাচা চুষে যারা রাজনীতি করে আর কথা বলে তাদের কথা শুনলে ঘৃনা ধরে, গা ঘিন ঘিন করে।
বাংলাদেশের রাজনীতি বা আর্থ সামাজিক দিক কোন দিকে যাবে এটা বলা একটু সময়ের ব্যাপার। বি.এন.পি'র কি হবে সেটাও বলা কঠিন। তবে স্বভাবতই সবাই বুঝে বি.এন.পি যদি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু করতে চায় তাহলে বি.এন.পি তাদের দলের ভিতরকা জঞ্জাল দুর করতে হবে। সে যাক, বি.এন.পি বা জামায়াত নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই। আমি শুধু এটাই বলতে চাই দম্ভ অহংকার চির দিন থাকবে না।
থাকেনি কোনদিন। এরশাদের মত চরিত্রহীন বদমাইশরা আবার ফিরে এসেছে মীর জাফর, মীর মদনদের মত বিদেশী প্রভুদের পা চাটার কারণেই, সময়ে সেটাও যাবে একদিন। বি.এন.পি কি হবে জানি না। তবে বিদেশী প্রভুদের গোলামী মানবেনা এদেশের জনগন কোনদিন। ভাদানী দালাল মালাউনদের প্রতি ঘৃণা থাকবেই, এবং বাড়বে।
আমার আশে পাশে অনেক আওয়ামী লীগার আছে, কারো কারো সাথে সখ্যতাও আছে। মানবিক বান্ধব্যও আছে, বলতে দ্বিধা নাই অনেকের মানবিক গুনও খুবই ভাল। তবে আমি অনেকবার আমার আশে পাশের অনেক আওয়ামী লীগারকে বলেছি। ব্যাক্তি হিসেবে অনেককেই আমি সম্মান করি, তবে বর্তমান ফেরাআউনের দম্ভ অহংকার আর অপকর্মকে যারা চোখ বন্ধ করে মেনে নিচ্ছে তাদের মানবিকতা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে, তাদের ঈমান নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। অনেককেই বলেছে, কারো কারো সাথে যদি হাত মিলাই তারপর আমার গা ঘিন ঘিন করে এবং আমি হাত ধুই।
আমি যখন ফেরাআউনদের সমালোচনা করি তখন যাদের গায়ে লাগে তারা আমাকে জামাতী বলে, রগ কাটা, রাজাকার বলে, পাকিস্তানে চলে যেতে বলে। আমার মনে হয়ে সময় এসেছে রুখে দাড়ানোর, ফেরআউনদের প্রতিবাদ করলে কেউ যদি আমাকে রাজাকার বলে সে রাজাকার হতে আমার কোন সমস্যা নাই, কেউ যদি আমাকে পাকিস্তান যেতে বলে আমি বলবো তুই মালাউন তুই ভারত যা।
বিষয়: বিবিধ
১০৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন