নব বর্ষের শুভেচ্ছা
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০২ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৫:৪১:৫০ সকাল
নব বর্ষ নিয়ে সঠিক ইসলামী দৃষ্টিভঙি কি তা নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নাই, তবে একটি বছরের প্রস্থান এবং আরেকটি বছরের আগমন নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। পবিত্র কোরআনে একটি সুরা আছে সুরা 'আল আসর' কোরআনের সুরার ক্রমধারা অনুসারে ১০৩ নং সুরা। ছোট্র একটি সুরা অনেকেই মুখস্ত পারেন।
হাদীস শরীফে এসেছে সাহাবীরা পরস্পর দেখা হলে সুরা আসর পড়ে শুনাতেন। কোন একজন মুফাসসির সাহাবী (সম্ভবত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস) বলেছেন আল্লাহ পাক যদি শুধু সুরা আসর নাঝিল করতেন তাহলেই মানব জাতীর হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী বলেছেন, আমি যখন প্রচন্ড গরমের দিনে বাজারে বরফ বিক্রেতাকে চিৎকার করে এই বলে বরফ বিক্রয় করতে দেখি "দয়া কর সেই ব্যাক্তির প্রতি যার মুলধন শেষ হয়ে যাচ্ছে" আমি তখন সুরা আসর এর মর্ম এবং অর্থ বুঝতে পারি।
এই বছর আমার কাছে হঠাৎ মনে হলো নব বর্ষ উপলক্ষ্যেই সুরা আল আসরের মর্ম নিহিত রয়েছে।
কি রয়েছে ছোট্র এই সুরাটিতে আর নব বর্ষের সাথে সম্পর্কটাই কোথায়। এই প্রথম আয়াতটি একটি মাত্র শব্দের, "ওয়াল আসর" বাংলা বা অন্য ভাষায় দুটি মনে হলেও আরবীতে এখানে একটি শব্দ, ওয়াও যেটা রয়েছে এটাকে ওয়ায়ে ক্কসমিয়া বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের ওয়ায়ে ক্কসমিয়া ব্যবহার খুব সিরিয়াস ব্যাপারগুলো নিয়েই এসেছে। এখানে আল্লাহ পাক আসর বা সময়ের ক্কসম করেছেন। বাংলাদেশে বা যে কোন দেশেই পরীক্ষা দিতে গেলে একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টা পর একটা ঘন্টা বাজানো হয় বা হতো। এসময় পরীক্ষার্থীরা একেকটা ঘন্টার শব্দ শোনার পর পরীক্ষার হলে বসে থাকা প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছে প্রতিটি ঘন্টার শব্দ যেন তার কলিজার উপর মারা ধপাস করে হাতুড়ীর আঘাত, অনেক সময় ঘন্টার শব্দের সময় কোন কোন পরীক্ষার্থীর মুখ দিয়ে সময় চলে যাচ্ছে এমন হতাশার শি শি শব্দও শোনা যায়, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী তাফহীমুল কোরআনে "ওয়াল আসর" আয়াতের ব্যখ্যায় পরীক্ষার হলের এই ঘন্টার তুলনা করেছেন।
একটি বছরের নিমজ্জন এবং আরেকটি বছরের আগমন আমার কাছে সেভাবেই মনে হচ্ছে। ধপাশ করে ২০১৭ সালে ঘন্টা বেজে উঠলো, চলে গেল আরেকটি বছর।
হ্যাঁ, সুরা আল আসর এর পরবর্তী আয়াতের দিকে নজর দিলে আমরা তাই দেখি। সময়ের ব্যাপারে ক্কসমের শব্দ, ওয়াল আসর, বলার পর আল্লাহ পাক বলছেন, 'পৃথিবীর সকল মানুষ, হারিয়ে ফেলছে (জীবন), এখানে অবশ্য অনেক অনুবাদক খুসরান শব্দকে ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে নিমজ্জিত অর্থে লিখেছেন। ইংরেজীতে অনেক অনুবাদক খুসরান শব্দকে 'ইন লস' লিখেছেন। আমি খুসরানকে খোয়ানো বা হারানো অর্থে বেশী যুক্তিযুক্ত মনে করি। উক্ত আয়াতে "আল ইনসান" ব্যাবহার করা হয়েছে যেখানে "আল" কে আলিফ লামে ইস্তেগরাক্কী" বলা হয়েছে যার অর্থ সকল মানুষ।
তারপর পরবর্তী আয়াত কয়টির দিকে তাকালে দেখা যায় যে, যা মুল কথা হলো, যারা সময়কে সঠিকভাবে ব্যাবহার করেছে, হক্ক, ন্যায় বা সত্যের কাজে প্রতিযোগতীমূলকভাবে ব্যাবহার করেছে, এবং প্রতিকূল পরিবেশে ধৈয্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে তারা ছাড়া সকল মানুষ সময়টা খুইয়েছে।
সুরা আল আসরের প্রেক্ষাপট নিয়ে বলতে চাই, চলে গেল আরেকটি বছর, ২০১৭ সাল, এইতো সেদিনই তো এলো, ফুড়ুৎ করেই চলে গেল। এই তো সেদিনই তো ২০১৬, ২০১৫, ২০১৪ এসেছিল।
আমার যতদুর মনে পড়ে বছর সর্ম্পকে আমার সামান্য জ্ঞান হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বাংলাদেশে পাঁচ পয়সা আর পঁচিশ পয়সার নতুন মুদ্রা বের হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। হ্যাঁ, পাঁচ পয়সা আর পঁচিশ পয়সা, আমি জানি আজকের তরুনরা পাঁচ পয়সা কাকে বলে হয়তো চিনবেও না। ১৯৭৩ সাল, আমি তখন শৈশবে। চলে গেল কত বছর। একে একে অনেক বছরের অনেকগুলো নব বর্ষই তো দেখেছি এবং দেখি আমরা তারপর চলে যায়। আজ ২০১৮ সাল শুরু হলো, চোখটা বন্ধ করুন আবার খুলুন চলে যাবে এই একটি বছরও, কিন্তু কি কাজে লাগাবো আমার এই একটি বছর।
২০১৮ সাল সকলের জীবনের ভাল কাজের সুচনা হোক। সবাই প্রতিটি মুহুর্তের যেন সদ্ব্যবহার করতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সেই তেীফিক দিন। আমিন। সেটাই আমার নব বর্ষের কামনা।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন