কি জঘন্য এক ম্যাসাকার ঃ হায় আফসোস

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০৫:১১ রাত

কি জঘন্য এক ম্যাসাকার ঃ হায় আফসোস

হাসবো না কাঁদবো? নাকি বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে ধুকে ধুকে মরবো। নাকি ভাববো, যা হবার তাই হচ্ছে, পৃথিবীটা এমনই, আজ আমার কাল তোমার।

বর্তমানে পৃথিবীতে যা চলছে তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। হ্যাঁ, মুসলমানদের যে অবস্থা চলছে সেটার কথা বলছি। তবে, প্রশ্ন হলো আসলে মুসলমানদের কোন কথার বলছি? আর কোন কথাই বা বলবো। মুসলমানরা নির্যাতিত ? নিপীড়িত? নিষ্পেষিত? মুসলমানদের রক্ত ঝরার কথা? সেটাই বলতে চেয়েছিলাম, তবে তার আগে একটু অন্য কথা বলা দরকার। যেটা বলা যায়, কেন হচ্ছে এমন?

অনেকগুলো বিষয় আনলে ভাল হতো, আমার যতগুলো বিষয়গুলো আলোচনার দরকার মনে করছি সবগুলো আলোচনা করতে গেলে নিঃসন্দেহে সেটা একটা পি.এইচ.ডি থিসিস বা বড় আকারের বই হয়ে যাবে। কোথা থেকে শুরু করবো এটা কঠিন হলেও শুরু করি এক খান থেকে।

তবে সমস্যা আরেকটা, আপনি আমার দল/মত এর পক্ষে কথা বললে আমার বাপের বাপ, আর আমার দল/মতে বাইরে কথা বললে শালার শালা তথ্য শালা। শালাকে যদিও বাংলায় রাগের সময় গালি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়ে আসছে কিন্তু আমরা সবাই জানি এই শব্দটা সম্ভবত বাংলা ভাষায়, মানব জীবনের সবচে মধুরতম সম্পর্কের বন্ধন এর দাবীদার। এ শব্দটাকে কোন কুলক্ষন কখন যে গালি হিসেবে ব্যবহার করেছে।

যাক, সাম্প্রতিক কথা দিয়েই শুরু করি, যদিও ব্যাপারটা তেমন গুরুতর কিছু নয় যে যেটা নিয়ে কিছু লিখতে হবে, তবে ভাত রান্না করতে গেলে রান্না হয়েছে কিনা তা একটা ভাত টিপে স্যাম্পল দেখে বুঝা যায় তেমনিভাবে ছোটখাট ঘটনাগুলি সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ বুঝা যায়।

সাম্প্রতিক ঘটনাটা হলো, আমাদের এক বন্ধু ফরিদ আহমদ রেজা ভাই এবং তাঁর সর্বোপরী বন্ধুবর্গ। ফরিদ রেজা ভাইকে যদি চেনেন তাহলে ভাল আপনি সহজে বুঝবেন, আর না চিনলে, ইচ্ছা হলে দয়া করে চিনে নেবেন। দুঃখিত সে ইতিহাস আমি টানতে পারবো না।

আজ সকালে ফেইসবুকের মাধ্যমে ফরিদ ভাই অভিযোগ করেছেন। কিছু মুর্খ এবং বেয়াদব তাঁর ফেইসবুকে, তাঁর অনাকাংখিত, অযাচিতভাবে লিখেন। তাদের নিয়ে তিনি বিরক্ত এবং কিভাবে ছাটাই করবেন সেটা ভাবছেন।

আগেই বলেছি ফরিদ ভাইকে আপনি যদি চেনেন তবে বুঝতে সুবিধা হবে, আর না বুঝলে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে লাগতে পারে। ফরিদ ভায়ের ফেইসবুকে কে কি লিখেছে সেটা আমি জানি না। তবে এখানে মূল কথা হলো অন্যের সীমানায় (ফেইসবুক ওয়াল বা মেসেজে) এ ব্যাক্তির অনাহুত, অনাকাংখিত বিষয়ে লেখা অনধিকার চর্চা, অন্যায়, অভদ্রতা এবং অনৈসলামিক। যার যা ইচ্ছা তিনি তার নিজের সীমানায় লিখতে পারেন, তাঁর পাঠকরা সেটা বিবেচনা করবে। অন্যের দেয়ালে অনাকাংখিত বিষয়ে লেখা অভদ্রতা এবং নিন্ম মানের পরিচায়ক।

এবার আসি দ্বিতীয় কথায়, লন্ডন থেকে মু.ই নামক এক ব্যাক্তি ভি.ডিও ছাড়েন। লোকটার নাম নিতে মনে বাধলো তাই সংক্ষেপিত অক্ষর ব্যাবহার করলাম। সে এক চীজ, অনেকে জানেন, একদিন ভদ্রলোকের এক ভি.ডিওতে কিছু গালি শুনলাম। ওয়াও, কান থ্যাতা হওয়ার মত গালি। আমি একসময় ইলেকশন করতে গিয়ে আমেরিকার আউল ফাউল লোকদের সাথে চলতে হয়েছে, তাতে গালি কত প্রকার এবং কি কি হতে পারে প্রায় সব আমার শোনা আছে। অন্য অর্থে যত শক্ত গালিই হোক তাও আমার কাছে নতুন নয়, তবে লন্ডন থেকে মু.ই নামে এই চীজের গালি শুনে আমার আক্কেল সত্যিই গুড়ুম হয়ে গেল। সর্বনাশ, কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা। তিনি কিন্তু মাঝে মধ্যে কোরঅানের আয়াতও উদ্ধৃত করেন, মুখে সুন্নতী (?) দাঁড়িও আছে। ছি ছি।

এবার আসি তৃতীয় কথায়, কিছু দিন আগে কি এক মাদানী নামের এক আল্লামা হুজুর ভদ্রলোকের দু একটা ভি.ডিও ক্লিপ দেখে আমার সময় নষ্ট করা হয়েছিল। নষ্ট কেন করলাম? ভদ্রলোকের লম্বা দাঁড়ি আর আলখেল্লা দেখে হাজার হাজার নিরীহ ধর্ম প্রেমীকদের মত আমিও বোকা বনেছিলাম। তথাকথিত এসব মাদানীদের, তথাকথিত ওয়াজ নসিহতের বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষেপে এতটুকুই বলি আমাদের তথাকথিত হুজুরানে কেরামেরা একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন যেভাবে নেংটা হয়ে বক্তব্য রাখেন তাতে কান ঝালাপাল হয়ে যায়। সর্বনাশ সর্বনাশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা!!

এভাবে প্রতিনিয়ত্ই আমরা আধুনিক প্রযুক্তির করুনায় অনেক লেখা, ভিডিও দেখি, অনেক বস্তাপচা, গাঁজাখুরি গাবের্জ দেখি এবং শুনি। কষ্টের বিষয় হলো এর অনেকগুলো ধর্মের নামধারী, লেবাসধারীদের মুখ থেকে শুনি, এবং অনেক সময়ই পরষ্পরের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে দেখেছিল তাবলীগ জামাতের বিরোদ্ধে কিছু আলেমের বক্তব্য। আমি ঐ আলেমদেরকে শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই, অন্য সব কথা বাদ দেন, আপনি বা আপনাদের যাদেরই প্রবক্তা হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে বলছেন, আপনি যে গ্রুপেরই প্রবক্তা হোন না কেন, আপনার গ্রুপের বিরুদ্ধেও এভাবে হয়েছে, এখনো হচ্ছে, আমি জানি ভবিষ্যতেও হবে, কারণ আহমকদের মুখ কখনো বন্ধ থাকে না। তবে আপনিও আপনাকে আহমকের কাতারে নিয়ে যাচ্ছেন না কি?

বেশী কিছুর দরকার নাই, তেমন কোন তাত্বিক আলোচনার দরকার নাই, আমি শুধু কযেকজন ব্যাক্তি বা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম নেব, এদের কারো প্রতিই আমার অহেতুক অনুরাগ বা বিরাগ নাই, এবং প্রত্যেকেরই অবদান আমি যতটুকু জানি ততটুকু মূল্যায়ন করি এবং মুল্যায়নকে প্রয়োজন মনে করি।

আমাদের দেশে জামায়াতী, দেওবন্দী, বেদাতী, সুন্নী, সুফী, ওহাবী, লা মোজহাবী, শর্ষীনা, চর মোনাই, ফুলতলী, উজানী এভাবে হাজার না হলেও কয়েক শত পন্থী রয়েছে, তাদের একের জনের তথাকথিত আওয়াজ নসিহত (তথাকথিত ওয়াজকে বিরক্ত হয়েই আওয়াজ লিখলাম, সরি নিরীহ ধর্মপ্রাণ ভাইদেরকে আহত করা আমার উদ্দ্যেশ্য নাই)।

তথাকথিত এই মুলভীদের আওয়াজ শুনলে মাঝে মধ্যে হাসি কান্না ব্যাথা সবই লাগে।

তাহলে আজ আর নয়, ফিরে আসি প্রথম কথায় যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম। মুসলমানদের দুরবস্থার কথা। তবে কোন দুরবস্থার কথা। কথাটা ভালভাবে চিন্তা করা এবং বুঝার জন্য আবারো প্রশ্ন করি, মুসলমানদের কোন দুরবস্থার কথা বলতে চাইছেন? মুসলমানরা নির্যাতিত ? নিপীড়িত? নিষ্পেষিত? মুসলমানদের রক্ত ঝরার কথা? কিন্তু কারণ কি, ইহুদী, নাসারা, কাফির, মুশরিকদের দিকে আঙ্গুল উঠাবেন। তার আগের আয়নায় নিজের চেহারাটা একটু দেখে নিলে ভাল হয়।

এটা নিঃসন্দেহে মুল্যবোধের অবক্ষয়, এটাকে কোনভাবেই ইসলাম বলা যায় না। আপনি যে মত, পথ, যে তরীকা, সিলসিলা, যে আদর্শ কিংবা আক্কীদাই পোষন করেন না কেন, এটাকে ইসলাম বলতে পারবে না। কোরআনের একটা আয়াত বা একটা হাদীস যেটা পুর্বাপর কোন পেক্ষাপট, শানে নুঝুল না জেনে, আরবী ভাষার শব্দের অর্থের পার্থক্য না জেনে, বালাগাত, ফাসাহাত বা আরবী গ্রামার না বুঝে কোরআন মজীদ থেকে একটা আয়াত তুলে এনে ফতোয়া জারি করে দিবেন, আর নিজেকে সেরা পরহেজগার, দ্বীনদার আর অন্যদেরকে গোমরাহ, জাহান্নামী বলে চিৎকার করবেন এসব ফাজলামী আর ইসলাম নিয়ে ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।

দুঃখিত, আমি আজ শেষ কথাটা একটু কঠিনভাবে কথাটা বলতে চাই, এবং পবিত্র কোরআনে দুটি আয়াত দিয়েই সেটা বলতে চাই এবং কথা শেষ করতে চাই, পবিত্র কোরআনের সুরা আল রা'দ এর ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, "নিঃসন্দেহে (এতে কো সন্দেহ নাই যে,) আল্লাহ পাক কোন (ব্যাক্তি বা) জাতির (ভাগ্য বা) অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষন না সে ব্যাক্তি বা জাতি নিজেরা নিজেদের ভেতর থেকে, নিজদের নফস থেকে, আত্না থেকে (ভাগ্য বা) অবস্থার পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হন।" (সুরা রা'দ ১১)

পবিত্র কোরআনের অপর আয়াতটি হলো সুরা রুমের ৪১ নং আয়াত, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, "আকার যমীন এবং সাগরে সবখানে ফিতনা ফাসাদ প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, যেটা মানুষ আসলে নিজের কৃতকর্ম দিয়ে আয় করেছে, সুতরাং তারা সেটার পরিণাম ভুগবে এবং বুঝবে তারা অন্যদের প্রতি কি করেছে।" (আল কোরআন সুরা আল রুম ৪১)

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358673
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:১২
শেখের পোলা লিখেছেন : রোগটাতো চিনলেন কিন্তু ঔষধ কি তাতো বললেন না৷ অবশ্য আকারে ইঙ্গীতে কিছু বলেছেন৷ আপাততঃ তাতেই হবে৷ বিষয়টা হচ্ছে 'হামচূনী দীগার নিস্ত' মনোভাব যা আমাদের মাছে জেঁকে বসেছে৷ আল্লাহ আমাদের বুঝ দিক৷ ধন্যবাদ৷
358678
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:৩০
আবু মাহফুজ লিখেছেন : রোগের ঔষধটা কি সত্যি বলবো। বেশী লম্বা কথায় যাব না। আমি এসব কথা বললে, আমার বন্ধুদের কেউ কেউ বলেন আমি নাকি সুফীবাদের কথা বলছি। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, আমি সুফী পন্থীও নই সুফী পরিপন্থিও নই। তবে ইসলামে আত্নশুদ্ধির কথা আছে। ইসলামের সঠিক পদ্ধতিতে যদি আত্নসুদ্ধি হয়ে যায় সেই সুফীবাদে আমার আপত্তি নাই। আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে, প্রত্যেকে নিজের আত্ন শুদ্ধির দিকে নজর দেয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে ফিকর এর কথা জোর করে বলা হয়েছে। চিন্তা করতে বলা হয়েছে। প্রত্যেকে নিজদের ক্ষমতা, স্ট্যাটাস, স্ট্রেংথ এর চেয়ে আন্তরিকতা, পরষ্পর ভালবাসা, ক্ষমার দিকে নজর দেয়া উচিত। আমরা যখন নামাজ পড়ি, প্রতিদিন কোন এক ওয়াক্ত নামাজের পর কয়েক মিনিট চিন্তা করা দরকার, কারো যদি তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস থাকে একান্ত একাকী, একান্ত নিরবে খোদার সাথে মিলিত হওয়া দরকার। বাহ্যিক দ্বীনদারির চেয়ে অন্তরের দ্বীনদারির আরো ভালোভাবে দেখা দরকার। আমি সত্যি মনে করি, আমাদের আন্তরিক দ্বীনদারির ঘাটতি আছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File