শরীয়া আইনের ভুমিকা ২
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৫:০৩ সকাল
শরীয়া আইনের ভুমিকা ২
শরীয়া আইনের ভুমিকা ১ এর আলোচনায় ৫টি 'ম', এম বা মীম এর কথা বলেছিলাম। আজ প্রথম মীম বা ম এর উপর কিঞ্চিত একটি ক্ষুদ্র অংশ আলোচনার চেষ্টা করবো। সেটা হলো প্রথম মীম মাসাদির বা ইসলামী আইনের উৎসের ক্ষুদ্র একটি অংশ আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
মাসাদির বা উৎস ঃ ইসলামী আইনের উৎস প্রাথমিকভাবে ৪টি। যারা ইসলামী আইন শাস্ত্রের উপর সামান্যতমও লেখাপড়া করেছেন তাঁরা হয়তো মুখস্তই বলে দিতে পারবেন, যে ইসলামী আইনের উৎস ৪টি (১) কোরআন (২) হাদীস (৩) ইজমা (৪) ক্কিয়াস
ইসলামী আইনের সর্ব প্রথম এবং সর্ব প্রধান উৎস এই কোরআন নিয়েই আজ আলোচনা করবো।
পবিত্র কোরআনকে ইসলামী আইনের প্রথম এবং প্রধান উৎস হিসেবে গ্রহন করার ক্ষেত্রে আরো কিছু শর্ত জুড়ে যায়। ইসলামী আইন বিশারদ বা ফকীহ গন দুটো শর্তকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন একটি হলো আসবাব আন নুযূল বা শানে নুযূল আর দ্বিতীয় হলো নাসেখ আর মানসুখ। ইসলামী আইন বিশারদরা যদিও শানে নুযুল বা কোরআনের কোন আয়াত কোন প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে সেটার বিবেচনা, আর নাসেখ মানসুখ হলো, কোরআনের কোন কোন আয়াতের হুকুম অন্য আয়াত দিয়ে সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে। তবে তাফসীর বিশারদদের মত বা সার্বিকভাবে কোরআন বুঝার ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়গুলোকে অবশ্যম্ভাবী করা হয়েছে সে গুলো হলো নাহু বা আরবী ভাষার ব্যাকরণ, সরফ বা শব্দ বাক্য বিন্যাস, বালাগাত বা আরবী ভাষার গভীর তত্ব জানা অপরিহার্য।
কয়েকটি উদাহরণ দিলেই কথাটা হয়তো আরেকটু স্পষ্ট হবে বা এর গুরুত্ব বুঝা যাবে।
পৃথিবীর সকল ভাষারই নিজস্ব কিছু ধরণ বা স্টাইল থাকে যেগুলো শাব্দিক বা আভিধানিক অনুবাদ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে আরবী ভাষাটাও আরো গভীর এবং আরো জটিল।
কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলা যাক।
গত ঈদুল আযহা রাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম ভয়েস অফ আমেরিকার সাংবাদিক আমার একান্ত বন্ধুবর সেলিম হোসেন বা ফকির সেলিমের বাসায়, সে রাতে ভয়েস অফ আমেরিকার অন্যন্য আরো কিছু সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন মান্যবর মুরুব্বী আনিস আহমদ। আনিস আহমদ বেস রসিক, সে রাতে অনেক গল্প এবং কেীতুকের মাঝে আনিস আহমদ একটি বাস্তব অথচ মজার ঘটনা বলেন। তিনি লন্ডনে বাংলা পড়াতেন, বলে নেয়া দরকার শ্রদ্ধেয় আনিস আহমদ দেখতে বেঁটে। একদিন কোন এক অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্য শেষে অনেকে এসেই প্রশংসা করেন বা প্রশ্ন করেন, এক মহিলা এসে তাঁর বক্তব্য ভাল হয়েছে এবং এত ভাল হয়েছে সেটা বলতে গিয়ে মহিলার লন্ডনে বড় হওয়ার মেয়ের কথা বললেন যারা সাধারণত আধা বাংলা জানে। মেয়েটি বললো, "মা, মা, ঐ ছোট লোকটি না, খুব ভাল কথা বলেছে।"। আমরা বুঝতেই পারছি মেয়েটি বুঝাতে চেয়েছে বেঁটে।
ইংরেজী ভাষার একটা উদাহরণ দেয়া দেই, আমি যখন প্রথম আমেরিকায় আসি, তখন নিউ ইয়র্কে ছোট খাট একটা স্কুলের মত ছিল সেখানে ছোট ছোট মেয়েদেরকে পড়াতাম। একদিন আিমি এক ছাত্রকে রাগ করেছিলাম, তাতে অন্য এক ছাত্র আমাকে বললো, টিচার, হোয়াই আর ইউ মেড। আমরা বৃটিশ ইংরেজীতে ডিকশেনারীতে পড়েছি মেড অর্থ হলো পাগল। ঐ ছাত্রটির কথায় আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আমি চিন্তা করতে লাগলাম, আমি কোন পাগলামি টাগলামি করলাম না তো।
আরেকদিন, আমি দেরিতে এসেছিলাম। এসময় একজন অভিভাবক আমার সাথে দেখা করতে এসে ফেরত যায়। আমি যখন আমি তখন এক ছাত্রী আমাকে বলতে টিচার, অমুকের বাবা এসে ফেরত গেছে এখন সে তোমার উপর "মেড"। তখন আমি এই মেড শব্দের মর্মার্থ বুঝার চেষ্টা করে বুঝলাম আমেরিকার ইংরেজীতে মেড বলা হয় রাগ করা, বকুনী দেয়া বা অভিমান করাকে, এই মেড অর্থ পাগলামি নয়।
এভাবে অনেকগুলো উদাহরণ টানা যাবে যে, ডিকশনারী দেখে কোন ভাষা শিখে সে ভাষা প্রয়োগ করতে যাওয়া অনেক সময় ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
পবিত্র কোরআনের ক্ষেত্রে কয়েকটি উদাহরণ আনি। আমরা নামাজ পড়ার আগে অজু করি। অজু করতে গিয়ে আমরা অনেকগুলো সুন্নত পালন করলেও আমরা জানি অজুতে ৪টি ফরজ (১) চেহারা ধোয়া (২) হাত ধোয়া (৩) মাথা মাসেহ করা (৪) এবং পা ধোয়া।
আচ্ছা আমি যদি বলি, আপনি পা ধোয়ার কথা কোথায় পেয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তো বলা হয়েছে পা মাসেহ করার কথা। আমি জানি আমার পিঠের চামড়া তো থাকবেই না, এবং একটা হুলস্থুল লংকা কান্ড ঘটে যাবে। কিন্তু আপনারা যারা কথায় কথায় না বুঝে কোরআন হাদীস না বুঝে আয়াত একটা সামনে এনেই ফতোয়া জারি করে দেন আর বলেন আল্লাহ পাক কোরাানে বলেছেন, আসুন আপনার সাথে একটু কথা বলি।
পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদা ৫ নং সুরার ৬ নং আয়াত আপনি যদি শব্দে শব্দে অনুবাদ করেন দেখবেন এখানে বলা হয়েছে যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াবে, তখন তোমাদের চেহারা ধেীত কর এবং হাত। এবং মাসেহ কর তোমাদের মাথা এবং তোমাদের পা টাখনু পর্যন্ত্য।
খবরদার, আমার এ অনুবাদ নিয়ে ভুল বুঝার অবকাশ নাই, আমি একটি উদাহরণ দিলাম মাত্র। এই আয়াতে মুলত শুধু একই যবর জের এর তফাত। আমরা পড়ি ওয়া আরজুলাকুম। এই আরজুলাকুম পড়ার কারণেই আরবী গ্রামার অনুযায়ী পায়ের আতফ হয়ে পড়েছে ধোয়ার উপর। আপনি যদি ভুলে আরজুলেকুম পড়েন, তাহলে কিন্তু আপনি পা মাসেহ করা ফরজ পড়ছেন। এই আয়াতের সাথে নাহু সরফ এবং ফিকাহ জড়িত। সুরা মায়েদার আরেকটি আয়াত ১০১ নং আয়াত। এ আয়াতে দুটি শব্দ শুধুমাত্র একটু মাত্র পড়ার স্টাইলের হের ফের। শব্দদ্বয় হলো, "তুবদা লাকুম" এটাকে যদি "তুবদালা কুম", অর্থের বিরাট হের ফের হয়ে যাবে। এই আয়াতের পার্থক্য এতই সু্ক্ষ্ণ যে, ভাল আলেম ছাড়া এই পার্থক্য কেউ বুঝবে না।
তেমনিভাবে সুরা বাক্বারার ২২৮ নং আয়াতের শুধুমাত্র "ক্কুরু" এমন একটি শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী সহ ইমামদের মধ্যে বিশাল আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে। এবং ইমামগন এত সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় এনেছেন যা দেখলে এবং পড়লে মাথা ঘুরে যায়।
সে যাক, স্বভাবতই এটা একটা লম্বা আলোচনা, আজকে শুধু এ বিষয়টার সামান্য করা গেল যে, স্বভাবতই কোরআন হলো ইসলামী আইনের প্রথম এবং প্রধানতম উৎস। কিন্তু এই কোরআনকে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহন করার জন্য এ ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান দরকার। পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ছাড়া যেখানে সেখানে কোরআনের আয়াত পেশ করা এবং ফতোয়াবাজী করা শুধু গুনাহ বা অন্যায়ই নয় এটা ভয়ানক।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো নই, তবে আপনার এ সিরিজে উপকৃত হবার ব্যাপারে আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ
জাযাকাল্লাহ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন