আমেরিকায় এবারকার তুষারপাত
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৮:১৭ সকাল
নীল নবঘনে, আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে,
ওগো আজ তোরা যাসতে গো তোরা, যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাংলাদেশের ঘন বর্ষার দিনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা মেনে ঘন বরষার দিনে কেউ হয়তো বাইরে যায়, কেউ আবার যায় না। বরষা বৃষ্টির কারণে বাইরে যাইনি এমন কোনদিন আমার জীবনে হয়েছে বলে মনে পড়েনা। বাংলাদেশে বৃষ্টিতে ভেজা ছিল আমার শখগুলোর মধ্যে একটা। শখে বা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কতবার যে বৃষ্টিতে ভিজেছি তার শেষ নাই। ঝড়, রোদ বৃষ্টি কোনদিন মানিনি।
শুধু ঝড় বৃষ্টি কেন, আমেরিকায় গত ২০ বছরে, প্রায় ১৭ বছর কাটিয়েছি মিশিগানে, কানাডা সীমান্তের শহর যেখানে তুষারপাত, বরফ সে যেন এক পান্তাভাত। মিশিগানে ঘরের চাল থেকে পানি পড়তে পড়তে বরফ হয়ে যায়, এবং বেশীর ভাগ বাড়ীর ছাদের চার পাশে বরফ ঝালর লটকে থাকে। সেই মিশিগানেও কোনদিন তুষারপাতের দিন ঘরে বসে থাকিনি।
সেই ২০০৬ সালের কথা, সেই কোন একদিন তুষারপাতের দিনে ডেট্রয়েট থেকে প্রায় ৭০ মাইল দুরে আমার পত্রিকা আনতে গিয়েছিলাম শহরতলীর অনেকটা গ্রামে, আর সেদিন পড়েছিলাম দুর্ঘটনায়, আর ইসুজু জীপ ৪-৫ গড়ােনো সোজা গিয়ে পড়লো রাস্তার নীচে খাদে। গাড়ীতে আমি শুধু একা। গাড়ীটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, কিন্তু বিধাতার কি অপার মেহেরবানী আমার গায়ে একটি আচড়ও লাগেনি। হ্যাঁ, সত্যি সত্যি আঁতকে উঠার মত। রাস্তার উপর থেকে ৪-৫ গড়াগড়ি দিয়ে আমার গাড়ীটি ঠিক খাদে গিয়ে পড়েছে। সে দুর্ঘটনার পর পায় ৩ মাস আমার গাড়ী চালাতে প্রচন্ড ভয় হতো।
সে যাক, তারপর ও কোনদিন তুষারপাত আমাকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারেনি।
কিন্তু না, পরিশেষে রবি ঠাকুরের সেই মানাই যেন মানতে হলো। আজকের তুষারপাত আসলেই নতুন কিছু। গত কয়েকদিন থেকে রেডিও টি.ভিতে সতর্ক করা হচ্ছিল। ভার্জিনিয়া-মেরিল্যান্ড-ওয়াশিংটন ডি.সি, এমনকি পেনসেলভানিয়াসহ অনেক রাজ্যই স্টেইট ইমাজেন্সী ঘোষনা করে।
২০১৩ সালে আমি মিশিগান থেকে ওয়াশিংটন ডি.সি উপকন্ঠে চলে আসি। ওয়াশিংটন ডি.সি ভেীগলিকভাবে মিশিগান থেকে অপেক্ষাকৃতভাবে দক্ষিণাঞ্চলে, সেহেতু, শীত, বরফ এবং তুষারপাত মিশিগানের তুলনায় কমই থাকে। আবহাওয়া তাপমাত্রাও মিশিগানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উঞ্চ। কিন্তু না, এবারের তুষারপাত ব্যাতিক্রম।
এখানে আজ প্রচন্ড তুষাপাত হয়েছে । প্রচন্ড মানে, এত বেশী আমার আমেরিকার এই ২০ বছরের দেখিনি। ভয়েস অফ আমেরিকা কিছু ভিডিও দেখিয়েছে। আমাদের বাসার সামনেই প্রায় এক বুক বরফ জমেছে।
তিনবার বাসা থেকে বেরিয়ে বরফ পরিস্কার করলাম। প্রথমবার বেরিয়ে দেখি বরফে দরোজা আটকে গেছে। অর্থাৎ দরোজার সামনেই এত বরফ জমেছে যে দরোজা খোলা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প পথে বের হয়ে শাবল দিয়ে দরোজার সামনে এবং হাটার ব্যাবস্থা করে পরিস্কার করেই হাফিঁয়ে উঠলাম। তারপর বাসায় এসে ৪-৫ ঘন্টা পর আবার অনেকটা তথৈবচ। তাই আবার সে দরোজার সামেনে এবং হাটার রাস্তা পরিষ্কার করলাম।
মাঝখানে একবার আমার (১৯ মাস বয়সী) কন্যাটাকে বাইরে নিয়ে গেলাম তুষারপাতের স্বাধ আস্বাধনের জন্য। ভালই লাগল মনে হলো।
বরফ পরিষ্কার করাও চাট্রিখানি কথা না। মাটি কাটার মত, বা তার চেয়ে কঠিন। মাটি কাটার চেয়ে কঠিন এ জন্য, মাটি কাটতে তো গায়ে সামান্য কাপড় থাকলেই চলে। বরফ কাটতে গায়ে জাম্বুল জ্যাকেট, মাথায় হ্যাট, হাত মোজা, পায়ে বুট সব লাগিয়ে তারপর বরফের উপর কোদালের কোপ মারতে হয়। তার উপর নাক মুখ দিয়ে ঠান্ডা ঢুকে।
যাদের হার্ট দুর্বল তাদের বরফ কাটা ঠিক নয়। প্রতি বছরই বরফের দেশগুলোতে মানুষ বরফ পরিষ্কার করতে গিয়ে হার্ট এ্টার্ক করে মারা পড়ে। আজকেই কিছুক্ষণ আগের সংবাদ পড়লাম, নিউ ইয়র্কে ৩ জন মারা পড়েছে। এই মাত্র ভয়েস অফ আমেরিকার ফেইসবুক সংবাদে দেখলাম এই তুষারপাতে কয়েকটা স্টেইটে ১২ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। কত গাড়ী যে রাস্তায় আটকে পড়েছে তার কোন সীমা নাই, তেমনি হয়তো অসংখ্য গাড়ী হয়েছে এক্সিডেন্টের শিকার।
আজ সারাদিন আমি বাসায়। আজ কেন গতকাল বিকেল ৪টা থেকে বাসায় বন্ধি। এই মাত্র চুতর্থবার গিয়ে বরফ কেটে আসলাম। মূল সড়কে গিয়ে দেখি এক হাটু বরফ এখনো পড়ে আছে, যদিও এর মধ্যে হয়তোবা কয়েকবার রাস্তার বরফ কাটা হয়ে গেছে। আমার গাড়ীর কাছে গিয়ে ভাবলাম গাড়ীটা পরিষ্কার করা যায় কিনা, কিন্তু দেখি বেচার গাড়িখানা বরফের নীচে ডুবে আছে। শুধু আমার গাড়ি কেন। আমার গাড়ীটার তো চেহারা খানা দেখা যায়। যে গাড়ীগুলো একটু ছোট সেগুলো তো একেবারে নিমজ্জিত।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তুষারবন্দি থাকার অনেক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পড়েছি। আপনাদের লিখা পড়ে মনে হচ্ছে ফ্যাকট ইজ স্ট্রেঞ্জার দেন ফিকশন!!
আমার তো শুনেই শীতে গা শিরশির করছে!!
[বেজায় শীতকাতুরে মানুষ আমি]
দোয়া করি- ভালই ভালই স্বাভাবিকতা ফিরুক
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন