কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা ?? !! কিছু দুঃখ বেদনার কথা
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:০১:৪১ রাত
কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা ?? !!
কিছু দুঃখ বেদনার কথা ঃ
কোথা থেকে শুরু করবো জানি না। শুরু করলে কথা শেষ করা যায় না, সময় শেষ হয়ে যায়। এজন্য অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নাহ লিখবো না। কেন লিখবো, কার কাছে লিখবো?! থাক, এর চেয়ে ভাল, নিজের শরীরের একটু যত্ন নেই, মেয়েটাকে একটু দেখি, ছেলেটার একটু খোঁজ নিই।
এবার হজ্জের সময় মিনার দুর্ঘটনার পর, ইরান-সেীদি ইস্যুটি আবার বেশ চাঙ্গা হলো, বেশ কয়েকটি লেখা পড়লাম। অনেকগুলো লেখার উপর একটু চোখ বুলিয়েই রেখে দিলাম। স্বভাবতই সেীদি সমর্থক, সালাফী বা কারো কারো দৃষ্টিতে ওহাবী লেখকদের লেখায় দেখলাম, শিয়াদের চেীদ্দ দুগুনে আটাশ গোষ্ঠি উদ্ধার করতে, অপরদিকে সেীদি রাজপুত্রের গুনগান গাওয়া লেখাও পড়লাম। অপরদিকে শিয়া সমর্থক বা বাংলাদেশে সুন্নী বা বেদাতী, কিংবা কাদেরীয়া সমর্থক লেখকের লেখাও পড়েছি যেখানে সেীদি-ওহাবীদের সেই চেীদ্দ- আটাশ কিংবা আটাশ দুগুনে ছাপান্ন গোষ্ঠি উদ্ধার করতে দেখেছি। আপনি যদি শুধু সেীদি সমর্থক লেখকের লেখা পড়েন তাহলে ইরানী বা শিয়াদের চে'য়ে খারাপ আর কোন প্রাণী পৃথিবীতে নাই। তেমনিভাবে আপনি যদি শুধু ইরানী সমর্থক লেখকের লেখা পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন সেীদিদের মত জানোয়ার পৃথিবীতে নাই।
আজকের ফেইসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রচুর পোস্ট দেখি, অনেক খুচরা কিছু পড়তে হয়, দেখতে হয় অনেক গার্বেজ। মাঝে মধ্যে এমন অনেক পোস্টিং দেখি, দেখলে বমি আসার ভাব হয়, গায়ে জ্বর ধরে। ভাবি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা।
না, না, শেখ হাসিনার ফালুকে নিয়ে সাম্প্রতিক উক্তি বা পুরস্কারের সোনা চুরি, কম্বল চুরির কথা বলছিনা, পলিটিক্যাল কথা বাদ। সে কথা আরেক আপদ।
আমি আমাদের ইসলামদরদী জনতার কথা বলছি যারা আপনাকে আজই টিকেট কেটে বেহেশতে পাঠিয়ে দেবেন তাদের কথা বলছি।
কার কাছে কোনটা শিরক, কোনটা কোনটা হারাম, কোনটা ইসলাম বিরোধী, কে কে জাহান্নামের দিকে চলে যাচ্ছেন, এসব আলামত দেখে।
কোন ব্যাক্তি বা গ্রুপের নাম নেয়া দুঃসাহস দেখিয়ে বিপদ টেনে আনতে চাইনা। কারণ সব গ্রুপই ভাসুর, বাংলাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতিতে ভাসুরের নাম নেয়া আয়েব। তাছাড়া কার নাম নিয়ে নিজের উপর বিপদ টেনে আনা।
আমি নিশ্চিত নই, আমার কথাটা সকলেই বুঝে আসবে কিনা। বিশেষ করি, আপনি যদি যে কোন একটা গ্রুপের সদস্য হন, সেই গ্রুপের দেয়া তথ্যই আহার বিহার করেন, ফেইসবুকে যদি আপনার গ্রুপের ভাইরাই আপনার ফেইসবুক দোস্ত হয়, তাহলে তো আপনি সেই গ্রুপের সুসংবাদে আহলাদিত হবেন, দুঃখে ভারাক্রান্ত হবেন। আপনার দৃষ্টিতে আপনার গ্রুপটাই একমাত্র সঠিক পথে আছে, বাকিরা সবাই গোমরাহ, পথভ্রষ্ঠ, বুর্জুয়া, টেরোরিস্ট, মেীলবাদী, জামায়াত-শিবির, নাস্তিক, ওহাবী, শিয়া বা এরকম একটা কিছু।
আমার মত যারা এতিম, যাদের কোন দল নাই, কোন গ্রুপ নাই, কারো কাছে দাসখত নাই, বিবেক বিকানো নাই, বিপদটা শুধু তাদেরই। মনের দুঃখ কার কাছে বলবেন? অাপনাকে একটা পক্ষ নিতেই হবে, সেীদিতে হাজী মরেছে, আপনাকে হয়তো সেীদিকে গালি দিতে হবে, নয়তো ইরানকে। আপনার ভিন্ন চিন্তাকে কেউ তা্ত্বিক আঁতেল পেচানী চিত্রায়িত করে, কিংবা অন্য গ্রুপের এজেন্ট আখ্যায়িত করে ইতি টানবে।
অনেকেই জানেন, আগেও একটু আধটু লিখেছি। আমি জন্ম নিয়েছি গভীর দেওবন্দী পরিবারে, শিশুকাল, শিক্ষা এবং জীবনে প্রায় অর্ধেক কেটেছে এই দেওবন্দী, জামায়াতী, ওহাবী, সুন্নী দ্বান্ধিক প্রেক্ষাপটে। তার উপর মাদ্রাসা পড়ুয়া মেীলুভীর সময় কেটেছে রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর, কাজী সাহেবের মাসুদ রানা, রবীন্দ্র, শরৎ, বঙ্কিম সাহিত্য, ডায়ালেকটিক মেটেরিয়ালিজম পড়ে।
অপর দিকে জামায়াত বিরোধী মিঃ মওদুদীর নতুন ইসলাম, ইজহারে হাক্কিকাত জাতীয় বইও আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না।
আমি বাবার কাছে শিশুকাল থেকে আদরের হয়েও বিরাগভাজন হয়েছি ভিন্ন চিন্তার কারণে, যদি আমার বাবা, বাবা হয়েও অনেক কিছু জানা বুঝার পরও আমার বিবেকের উপর অনধিকার চর্চা করেনি নি, বরং "এটাতো তোমার ব্যাপার, তুমিই ভাল বুঝ" এ জাতীয় কথা বলে কথার ইতি টানতেন।
বাবার পর যাদের সাথে অনেক অনেকদিন চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতাম, চলনে বলনে, আসনে বসনে যাদের সাথে সময় কাটালাম, বাবাকে ডিঙিয়ে যাদেরকে বন্ধু করেছি, সময়ের প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র চিন্তার ব্যতিক্রমের কারণে, শুধুমাত্র ভিন্নভাবে ভাবার অপরাধে অনেক বন্ধু হারিয়েছি, অনেকের বিরাগ ভাজন হয়েছি। যদিও সে জন্য আমার মধ্যে সামান্যতম হারানোর বেদনা নাই। আমার জবাবদিহীতা কোন মানুষের কাছে নয়।
গতরাতে প্রায় ২টার সময় ঘুমিয়েছি। একটা ভিডিও দেখছিলাম নাবিল কোরাইশি নামক অপেক্ষাকৃত যুবকের বক্তৃতার ভিডিও দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম। শুতে যাওয়ার সময় বুকটা খুব ভারি হয়ে গিয়েছিল, দু'একবার ভাবছিলাম বুকে ব্যাথা করে কিনা, কিংবা হার্ট এটার্ক করি কিনা। হার্ট এটার্কের বিষয়টাও বাড়িয়ে বলছিনা, আমার বয়সী অনেকেই হার্ট এটাক করেছেন অনেক আগের। আমারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সুতরাং হার্ট এটার্ক করাটা একেবারে অসম্ভব নয়। হার্টে এ রকম কখনো প্রেসার অনুভব করলে আমি তখন আল্লাহর নাম বা কোন শর্ট কার্ট দোয়া পড়ি, তখন প্রেসারটা কমে। কাল রাতেও তাই করলাম।
নাবিল একজন পাকিস্তানী আমেরিকান, ছেলেবেলায়ই আমেরিকায় চলে আসে। জন্ম হয়েছে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী পরিবারে। বর্তমানে মুসলাম থেকে খৃষ্টান হয়েছে, এবং কেন ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টান হলো তার বিবরণ জানি না। নাবিলকে সমর্থন দিচ্ছে বাইওলা (বাইবেল ইনস্টিউট অফ লস এঞ্জেলস) নামে লস এঞ্জেলসের একটি প্রতিষ্ঠান। বাইওলা প্রতিষ্ঠা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন খৃষ্টান ব্যাবসায়ী।
নাবিল সর্ম্পকে জানলাম গতকালই, তাই জীবন বৃত্তান্ত বিস্তারিত জানার সুযোগ আমার হয়নি। কিভাবে কোন প্রেক্ষাপটে খৃষ্টান হয়েছে তা ভালভাবে বুঝার সুযোগ হয়নি।
নাবিলের পড়াশোনা খুবই ভাল, বাইবেলের উপর যেমন পন্ডিত তেমনিভাবে কোরআনের উপরও তার দখল ভাল, আরবী ভাষাও জানে, আরবী শব্দের উচ্চারণ শুনে মনে হলো নাবিল আরবী ভাষার তাজবীদ এবং মাখরাজের উপরও তার দখল ভাল। তার আলোচনার প্রেক্ষাপটে, কোরআন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নাসেখ মানচুখ শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে আরবী খা বা খ উচ্চারণ এবং কয়েক স্থানে তার ক্বাফ এবং জ এবং য জাতীয় শব্দ সমূহের উচ্চারণসমূহ শুনেই আমি নিশ্চিত নাবিল শুধুমাত্র আরবী ভাষাই রপ্ত করেনি, সাথে সাথে তাজবীদ মাখরাজও রপ্ত করেছে।
আমি আমার অনেক লেখায়ই আমার বাবার কথা আনি, এবং আমার মাদ্রাসার কথা আনি, কারণ আমার বাবা আমাদরে ৬ ভাই সবাইকে অনেকটা জোর করেই মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আমি যদি মাদ্রাসায় না পড়তাম, কোরআন হাদীস নিজে না বুঝতাম, তাহলে নাবিলের আলোচনা শুনে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারতাম।
নাবিলের আলোচনা যদিও পক্ষপাতদুষ্ট, একচোখে দেখা তবু নাবিলের পড়াশোনা দেখে আমি তাজ্জব বনেছি। ভাবছি, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?
নাবিল সম্পর্কে আমার সামান্যতম মাথা ব্যথা থাকতোনা বা নাই। প্রথমত নাবিল নিজেকে সাবেক মুসলিম দাবী করলেও, নাবিল নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি একজন কাদিয়ানী। সকল মুসলমান বা সচেতন অমুসলমানরা জানেন যে, কাদিয়ানীদেরকে সাধারণ মুসলমানরা মুসলমানভুক্ত মনে করেন না। আর দ্বিতীয়ত নাবিলের শিক্ষাটা একদেশ দর্শী এবং একপেশে। প্রসঙ্গত আরেকটা বিষয় বলা দরকার, গত সপ্তাহে আমাদের স্থানীয় লাইব্রেরী থেকে আমি দুটি অডিও বই ধার করে আনি। অডিও বই হলো মুলত বই পড়ার পরিবর্তে আপনি শুনবেন। লেখকের নিজের কন্ঠে পড়া বই রেকর্ড করে রাখা হয়, পাঠক বা শ্রোতা সে বই শোনেন। যে দুটি বই আমি ধার করি, একটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলার উপর অপরটি ছিল বিশ্ববিখ্যাত লেখিকা ক্যারেন আর্মস্ট্রং লিখিত মহানবী মুহম্মদ সাঃ এর জীবনী "দ্যা লাইফ অফ মুহাম্মাদ"। ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর লেখার প্রচন্ড ভক্ত। আমার জীবনে যে কয়েকজন লেখক বা লেখিকার লেখা আমাকে প্রচন্ডভাবে ইমপ্রেস্ড করেছে ক্যারেন আর্মস্ট্রং তাদের অন্যতম। যারঁ জ্ঞান অনেক গভীরে। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছিলেন।ক্যারেন আর্মস্ট্রং ছিলেন একজন খ্রীস্টান নান, বা সিস্টার। (সিস্টার অফ দ্যা হলি চাইল্ড জিসাস) পরবর্তীতে তিনি তাঁর সে পরিচয় ত্যাগ করেন। আরো মজার ব্যপার হলো, ক্যারেন আর্মস্ট্রং পি.এইচ.ডি বা ডি. ফিল করেছিলেন, এবং রিসার্চ টপিক বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ অনুমোদনও করেছিল কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত তাঁকে পি.এইচ.ডি দেয়া হয়নি এই অভিযোগে যে, তাঁর টপিক গ্রহনযোগ্য নয়।
সে যাক, যা বলেছিলাম নাবিল বা এ জাতীয়দেরকে নিয়ে আমার মাথা ব্যথার কোন কারণ নেই বা থাকতো না। নাবিল কিংবা আইয়ান হারসির মত অনেকেই পশ্চিমা মিশনারীদের হালুয়ার কাছে অনেকেই জেনে হোক কিংবা না জেনে হোক বিকিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, আমরা আসলে কোথায দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের পরিচয়টা আসলে কি?
আমরা কি শীয়া না সুন্নী, আমরা কি ওহাবী না লা মোজহাবী, দেওবন্দী না জামায়াতী, ক্কেয়ামী না বে ক্কেয়ামী, দোয়াল্লিন পড়ি না যোয়াল্লিন পড়ি। আমরা কি সুফি নাকি তাহরীকি। সালাফি দাঁড়ি রাখি নাকি তাহরীকি (যারা ইসলামী আন্দোলনে বিশ্বাস করেন, আরবীতে তাদেরকে এক শব্দে তাহরীকি বলা হয়ে থাকে।)
পরিচয় জানি বা না জানি। আমরা যে কোরঅান এবং হাদীসের কথা বলি আসলে আমরা কতটুকু জানি এই কোরআন এবং হাদীস। কতটুকু বুঝি?
আজকের বিশ্বে যা হচ্ছে, যা চলছে, তার কতটুকু আমরা জানি, যা জানি, তার পেছনের কার্যকারণ, পেছনের কলকাঠি কতটুকু জানি। আমি যা বিশ্বাস করি, আমি যা জানি বলে মনে করি তা আসলে কতটুকু জানি, কতটুকু বুঝি, আমার বুঝাটা কতটুকু সঠিক?
আমার সবচে' ভয় হয় আমাদের পরষ্পরের বিরোধীতা দেখে, আক্রোশ দেখে, একে অপরকে জাহান্নামে পাঠানো প্রতিযোগীতা দেখে। সত্যিই আমি শংকিত! আমাকে যারা চেনেন, তারা অনেকেই আমাকে লিবারেল মনে করেন। সত্যিই আমি টেক ইট ইজি কনসেপ্ট এর মানুষ। অন্য অর্থে বলতে গেলে, আমার ভাষায় বা আমার মত কারে কারো ভাষায়, আমি কট্ররপন্থী নই। কিংবা, এই ব্যপারগুলো সত্যি সত্যিই আমাকে খুব পীড়া দেয়। জঘন্যভাবে ভাবিয়ে তোলা। একদিকে মুর্খতা দেখে অপরদিকে একে অপরের প্রতি যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে। কোথায় দাঁড়িয়ে আমি আমরা?!
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন