২০১৪-১৫ সালের আমার সবচে' বড় দুটি প্রজেক্ট আল্লাহ তুমি কবুল কর
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০৯:৩৮ সকাল
ঈদ মোবারাক। সকল বন্ধু বান্ধব, সুহৃদ, পাঠক, ফেইসবুক ফ্যান সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা এবং মুবারাকবাদ। পবিত্র ঈদুল আযহা এবং পবিত্র হজ্জ উপলক্ষ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদের সকলের গুনাহ মাফ করে দিন।
আজ কিছু আংশিক সুসংবাদ না দিলে আমার মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। আসলে গত রাত থেকে আমি কিছুটা উচ্চ রক্তচাপে যাচ্ছিলাম।
আজ থেকে ১১ দিন আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমি "কিছু কথা, কিছু আবেগ" শিরোনামে ছোট্র কিছু কথা পোস্ট করেছিলাম। গত বছর ২০১৪ সালে আমি দু'টি বড় ধরনের প্রযেক্টে হাত দেই। ডিসেম্বরে বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশক কোম্পানী "Taylor & Francis Group" এর সাথে আমার একটি বই লেখার চুক্তি সাক্ষরিত হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। বইয়ের প্রস্তাবিত শিরোনাম ছিল “Software Quality, Information Security and Audit” আমার এই বই লেখার প্রেক্ষাপট এবং প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কথা হলো, ২০০৩ সালে সফটওয়্যার ম্যানেজম্যান্ট এর উপর মাস্টার্স করতে গিয়ে আমি একজন অসম্ভভ ভাল এবং অধ্যাপক পাই, যিনি বর্তমানে যুক্তুরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিরিটির একজন উপদেষ্টা। যিনি আমাদেরকে ক্লাসে Institute of Electrical and Electronics Engineers বা সংক্ষেপে IEEE এবং International Organization for Standardization বা সংক্ষেপে ISO এর যতগুলো রুলস রেগুলেশন বা আইনকানুন আছে তার উপর যথাসম্ভব ধারনা দিয়েছিলেন। সেই ১২ বছর আগে এই মহামুল্যবান সফটওয়্যার রুলস রেগুলেশনগুলোর গুরুত্ব ভালভাবে না বুঝলেও গত ৫-৬ বছরে সফটওয়্যারে কাজ করতে গিয়ে অনেককিছু বোধগম্য হয়।
গতবছর ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এলমনাই এসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে আমার সেই অধ্যাপক ড্যান সু'মেকারের সাথে দেখা। অনেক আলাপচারিতার পর বললাম, প্রফেসর, তুমি ১২ বছর আগে এত ভাল ভাল জিনিসগুলো পড়িয়েছো সে সময় ভাল ভাবে বুঝিনি। আজ ৫-৬ বছর ধরে কাজ করে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। তোমাকে ধন্যবাদ। আর তোমাকে একটা কথা বলি, আমার লেখালেখির একটু অভ্যাস আছে। তুমি যা পড়িয়েছো এবং ৫-৬ বছর কাজ করে যা শিখেছি তার উপর আমি কিছু একটা লিখতে চাই এব্যাপারে তোমার পরামর্শ কি?
প্রফেসর ড্যান সু'মেকার বললো, হেই.. তুমি তো ভাল কথাই বলছো, আমি তো তোমাকেই খুজঁছি। তুমি কি সত্যি সত্যিই পারবে? আমি বললাম, দেখ প্রফেসর ইংরেজী আমার নিজের ভাষা নয়, সেটাই সমস্যা। আমার ভাষা বাংলায় হলে তোমাকে দেখিয়ে দিতাম। সু মেকার বললেন, তোমার কাছে যদি ভাল আইডিয়া থাকে, তোমার লেখার থিম যদি ভাল হয় তাহলে ইংরেজী কোন ব্যাপারনা, পাবলিশারের সম্পাদকরাই তা ঠিক করে নেবে। তুমি শুধু ভাল একটা থিম ঠিক করো। প্রফেসর সু মেকার আরো বললেন, এক কাজ কর। আজ বাসায় গিয়েই তুই আমাকে একটা ইমেইল ছাড়বি ফ্রেস ই-মেইল ছাড়বি। দেখিস আগে তোর সাথে আমার যে সব ই-মেইল যোগাযোগ হয়েছে সেগুলোর রিপ্লাই নয়।
আমার ইমেইলের পর পাবলিশারের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি প্রশ্নমালা পাই, আমি কে, তারা কেন আমার বই প্রকাশ করবে, আমার কি যোগ্যাতা আছে, বাজারে এ ধরনের আর কি কি ধরনের বই আছে, সে সব বই থেকে আমার বইয়ের পার্থক্যটা কোথায়। একজন পাঠক আমার বই কিনবে কেন। কোন ধরনের পাঠকের উদ্দেশ্যে আমার এই বই।বই প্রকাশিত হলে কাদের সাথে প্রতিযোগীতা হতে পারে এভাবে প্রায় ৩০টি প্রশ্ন।
সে যাক পরিশেষে গত ডিসেম্বরে আমাদের চুড়ান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। যদি সবকিছ ঠিক ঠাক মত হয়, আশা করি আগামি বছর ২০১৬ সালের ফ্রেব্রুয়ারী নাগাদ এই বই প্রকাশিত হবে বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। বই প্রকাশিত হলে এই বই আমাজন, বার্ন এন্ড নোবেল সহ সকল বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় যে বড় প্রজেক্টের কথা আগেও বলিনি। আসলে সে সংবাদটাই গতরাতে আমার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
গত সেই একই নভেম্বরে (২০১৪) আমার ৩ সপ্তাহ ছুটির দু সপ্তাহ আমি কাটিয়ে দেই ট্রিপল আইটি বা ইন্টারন্যাশনাশ ইনস্টিউট অফ ইসলামিক থট এর লা্ইব্রেরীতে পড়াশোনায়। ডঃ জামাল বারজিঞ্জি আমার জীবনে পাওয়া গুটি কয়েক অসম্ভব ভাল মানুষদের একজন। ১৯৯৩ সালে মালয়েশীয়াস্থ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিসিটিতে ট্রিপল আইটি আয়োজিত এক স্টুডেন্ট সেমিনারে আমি "তাজদিদ ইন ইসলামিক থট" এই টপিকের উপর পেপার প্রেজেন্ট করি। আমার সেদিনকার মুল আলোচনা ছিল মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদীর ইসলামী রেনেঁসা আন্দোলন, জামাল উদ্দিন আফগানী, রশিদ রেদা, মুফতি আবদুহু সহ সমসায়িক সংস্কারকদের চিন্তার উপর। সে সময় আমার ইংরেজীর দখল এখনকার চেয়ে অনেক অনেক দুর্বল ছিল। সেদিনকার সে সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় কিছু ছাত্র আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছিল। সেদিন ডঃ জামাল বারজিঞ্জি আমার পক্ষ নেন। এবং আমার সাহসিকতা এবং আইডিয়াকে ধন্যবাদ জানায় এবং আমার পক্ষ হয়ে বলেন যে, দেখ তার ভাষাগত দুর্বলতার কারণে সে হয়তো ভালভাবে প্রকাশ করতে পারছে না । সেদিন থেকে ডঃ জামাল বারজিঞ্জি আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
গত নভেম্বরে আমাকে লাইব্রেরীতে পড়ে থাকতে দেখে একদিন ডেকে নিলেন। কিছু প্রশ্ন করে একটি বই দিলেন আরবী বই বইটির শিরোনাম হলো "আল তাজদীদ আল উসুলী"। বইটি দিয়ে আমাকে বললেন বইটি ভালভাবে পড়বে, বুঝতে অসুবিধা হলে আমাকে বলবে, এক সপ্তাহ পর তোমার পরীক্ষা নেব।
এক সপ্তাহ পর একদিন ট্রিপল আইটি অফিসেই লাঞ্চের সময় তাঁর সাথে খেতে ডাকলেন, তাঁর সাথে আরো ছিলেন ডঃ হিশাম আল তালিব, ডঃ আবু বকর সিন্দি, ডঃ ইকবাল ইউনুস প্রমুখ। সবার সামনে বললেন, "মাহফুজ, তোমার পরীক্ষা নেব বলেছিলাম না, আজ তোমার পরীক্ষা" সকল প্রশ্ন আরবীতে করা হবে এবং তুমি আরবীতেই জবাব দিতে হবে। তারপর আরবীতেই বললেন, বল, তোমাকে যে বইটি দিলাম গত সপ্তাহে কি বুঝেছ, সামারি বল।
আমি তো পুরো থতমত খেয়ে গেলাম, আজ এভাবে প্রশ্ন করবে ভাবিনি, তাছাড়া আরবী বলিনা অনেকদিন বা বছরই হয়ে গেল। তারপরও খাওয়ার টেবিলে সবার সামনে নার্ভাস অবস্থাতেই যা পারলাম উত্তর দিলাম।
আমার উত্তরের পর কথাবার্তার মাঝেই বললেন, তুমি পি.এই.ডি করনি কেন। আমি আবারো থতমত খেলাম। বললাম, আসলেই আজকের যুগটা কম্পিউটারের যুগ তাই সফট্ওয়্যার ম্যনেজমেন্টে আবার মাস্টার্স করলাম। আর তাতে পি.এইচ.ডি করার মত সাহস আমার নাই। ডঃ জামাল বললেন, শরীয়া আর তাজদীদের উপর পড়াশোনা করেছ শরীয়া আইনের উপরই তো পি.এইচ.ডি করতে পারো। তুমি এ ব্যাপারে চিন্তা করো, কোন সহযোগীতা দরকার হলে বলবে।
ডঃ জামাল বারজিঞ্জির উৎসাহ অনুযায়ী আমার সফটওয়্যার বইয়ের ড্রাফট তৈরির পাশাপাশি যোগাযোগ করতে থাকি এবং সম্ভাবনাময় টপিকগুলের উপর স্টাডি করতে থাকি। উল্লেখ্য আজ থেকে ১৯ বছর আগে মালয়েশীয়াতে আমার মাস্টার্স থিসিস ছিল শরীয়া আইনের বাস্তবায়ন এর উপর।
গতরাত প্রায় ৩টায় জেগে যাই বাথরুমে গিয়ে অজু করে এসে তারপর আই প্যাডে একনজর ইমেইলের দিকে চোখ বুলাই। সুবহানাল্লাহ, একটা ই-মেইল দেখে আমার পিলে চমকে উঠে। বিস্তারিত লেখার মত সময় এখনো হয়ে উঠেনি। তবে, বর্তমান বিশ্বের সবচে' আলোচিত এবং বিতর্কিত সেই শরীয়া আইনের উপর যে রিসার্চ করার যে চিন্তা করেছিলাম তার সম্ভাবনার দ্বার খুলছে বলে মনে হচ্ছে। লংকা বহুত দুর হায়। এখনো সুনির্দিষ্ট বলার মত কিছু হয়নি বলে পাঠকের কাছে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে, গত রাতের ই-মেইল আমার গতরাতের ঘুম কেড়ে নেয়। আজ সারাদিন একটা উত্তেজনায় কাটে। আমার বয়স, আমার যোগ্যতা সার্বিকভাবে এটা কি সম্ভব? আমার বয়স হয়েছে। তাছাড়া আমি এখন ভিন্ন জগতের মানুষ। সেই ২০ বছর আগের পড়াশোনার পর, তারপর সাংবাদিকতা করলাম, রাজনীতি করলাম, কম্পিউটার জগতে ঢুকলাম।
আমার কি সব এখন মনে আছে। তাছাড়া স্মরণ শক্তিও আগের মত নাই।
আমি এজন্য আমার সেই আজ তিরিশ বছরের পুরনো বন্ধু ডঃ ইউসুফ আলী ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমার ২৪ বছরের গুরু শ্রদ্ধাভাজন ডঃ জামাল বারজিঞ্জি, আমার ২০ বছর আগের মাস্টাস থিসিস সুপারভাইজার প্রফেসর ডঃ ইবরাহীম মোহাম্মদ যাইন, পরম শ্রদ্ধাভাজন ডঃ ইকবাল ইউনুস, একান্ত বন্ধুবর ডঃ আবুল কালাম আযাদ সহ সকলকে ধন্যবাদ। দীর্ঘ ২০-২৫ বছর যাবত আপনারা আমার উপর যে আস্থা রেখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী। আমি জানি না, আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। আল্লাহ পাক যদি কল্যানকর মনে করেন তাহলে আমাকে যেন সাহায্য করেন। সকলের দোয়া প্রার্থী।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রফেসর ড্যান সু'মেকারের বলা তুমি থেকে পরক্ষনে তুই শব্দটা কেমন যেন খাপ ছাড়া মনে হল।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
আপনা মন্তব্যের সাথে একমত, তুই তুমি দুটোরই ব্যবহার লেখার ছন্দ নষ্ট করেছে। সবচে বড় কথা হলো আপনি শুনে খুশী হবেন, যে কোন প্রফেশনাল লেখায় যেমন ভাল মানের বই বা থিসিস জাতীয় লেখায় এ ধরনের ইন কনসিসটেন্সি অর্থাৎ একই প্রেক্ষাপটে একবার তুই, আবার আপনি বা তুমি ভালভাবে দেখা হয় না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
ঈদ মোবারক!!
আমার তো শুনেই আনন্দ লাগছে!!
[যদিও মক্কার দুর্ঘটনা নিয়ে অত্যন্ত ব্যথিত!]
আপনার সাফল্য এবং আল্লাহতায়ালার দরবারে কবুলিয়াতের দোয়া করছি!!
আপনার প্রথম বইটির সম্পর্কে ব্যাক্তিগত ইন্টারেস্ট আছে। আমি নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও সফট সুইচ অপারেশন সংক্রান্ত ব্যাবসায় জড়িত। তবে দ্বিতিয়টি উম্মাহর কল্যানে বিশেষ জরুরি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন