আসুন একটু ভাবি

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৬:০২ সকাল

আসুন একটু ভাবি

অনেকদিন লিখিনা, কেন লিখিনা, তার কৈফিয়ত হিসেবে কয়েকবার কয়েক লাইন লিখেছিলাম যে, লেখা আসে না। একবার লেখকের মৃত্যু এই শিরোনামে কয়েক কলম লিখেছিলাম।

মনের মধ্যে দীর্ঘদিন একগাদা ব্যাথা, বেদনা লুকিয়ে ছিল। আমার ভেতরে যে লেখক ছিল সে লেখকের মৃত্যু হয়েছিল।

আমি একজন গুনাহগার মানুষ। এটা কোন আমার সাধারণ শালিনতা বা ভদ্রতাবোধ নয়। আমি জানি আমি গুনাহগার। তবে জানি না, হয়তো জীবনে কোন কাজে আল্লাহর কোন রহমত পেয়েছিলাম অথবা মা বাবা বা কোন মুরুব্বীর দোয়া পেয়েছিলাম। আমার বাবা একবার বলেছিলেন তিনি আমার জন্য রওজা পাকে গিয়ে দোয়া করেছেন।

সে যাক, আমার উপর আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত হলে, জীবনের যে কোন কঠিন মুহুর্তে, যে কোন পরিস্থিতিতে আমি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারি।

আমি ছোটকাল থেকে একটা জিনিস শিখেছি। আমার উপর পতিত যে কোন পরিস্থিতির জন্য আমি দুনিয়ার সবাইকে দায়ী করতে পারবো, এবং সত্যি সত্যি হয়তো দুনিয়ার অন্য মানুষগুলোই আমাকে এই বিপদ দিয়েছে কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির শিকার আমিই। এবং এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আমাকেই চেষ্টা করতে হবে। পৃথিবীর আর কেউ নয়। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত আমার এ কথার সমর্থনে রয়েছে। আল্লাহ পাক কোন ব্যক্তি বা জাতির ভাগ্যে বা কোন পরিবর্তন আনেন না, যতক্ষন না তারা নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনেন। (সুরা আল রা'দ ১৩ঃ১১)

আমি মাঝে মধ্যে একটা উপমা টানি উপমাটা হলো, মনে করুন আমি আপনার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম এক গ্লাস পানি চাইলাম। আপনি আমাকে পানি দিতে পারলেন না, ১০টা কারণ দেখালেন কেন পানি দিতে পারলেন না। এই ১০ টি কারণের সবগুলিই সত্য। কিন্তু তারপরও আমার কাছে বাস্তবতা হলো, আমি আপনার কাছে এক গ্লাস পানি চেয়েও পাইনি।

পৃথিবী দেখতে চায় বাস্তবতা। পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর, পৃথিবীটা বড়ই স্বার্থপর।

আমি আমার ইসলামিস্ট বন্ধুদেরকে হৃদয় দিয়ে একটা প্রশ্ন করতে চাই, কি নিয়ে এত লড়াই লড়াই ভাব দেখান? কোন কোরঅান হাদীস নিয়ে। কতটুকু জানেন এই কোরআন। কোরআনের কতটা তাফসীর পড়েছেন।

যে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের কথা বলছেন, একটু নিজের সাথে একাকী বসুন, আসলেই কতটুকু। আমি কোথায় আছি। পৃথিবীটাকে উদ্ধার করার আগে আমাকে কতটুকু উদ্ধার করেছি।

আমি সরি আমি এটা বলছিনা যে, যারা কথা বলছেন তারা এটা বুঝেন না বা করেন না। আমি শুধু হৃদয় দিয়ে এই প্রশ্নটা করতে মনে চাইছে। সারা বিশ্বটা একটা মেস হয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন। এজন্য আমি কি দায়ী নই।

ওয়েল, আমি জানি না, আমার এ লেখা কে পড়ছেন। আমি জানিনা আপনার মনের খবর, আপনার জীবনের খবর। তবে আমি জানি, আমিও দায়ী।

সত্যিই, আমি জানি আমিও দায়ী। কমপক্ষে কিছু কিছু বিষয় আমি জানি যেটা আমার করা উচিত ছিল কিন্তু আমি করিনি এবং কিছু কিছু বিষয় আছে করা উচিত ছিলনা তারপরও করেছি। আমি মনে করি, কমপক্ষে আমরা আমাদের নিজদের কাছে সৎ হতে হবে। আমি কারো কাছে প্রকাশ করি আর না করি, আমার সমস্যাটা কোথায় সেটা আমাকে খুজেঁ বের করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন তার কোন দোষ নাই, কোন সমস্যা নাই, সিরিয়াসলি ঐ ব্যাক্তিকে মানষিক ডাক্তার দেখানো উচিত।

পৃথিবীর আজ যে অবস্থা তাতে মাঝে মধ্যে আমার কেন জানি মনে হয়, কেয়ামত বলতে যে একটা জিনিস আমরা বিশ্বাস করি সেটা চলে আসলো কিনা।

যদি ইতিমধ্যে কেয়ামত নাই হয়, তাহলে আগামী ৫০ বা ১০০ বছর পর কেমন হবে পৃথিবীটা। কেমন হবে বাংলাদেশ। আমার জন্মের ৫০ - ১০০ বছর আগে যে বাংলাদেশের কথা শুনেছি, পড়েছি আমার দেখা বাংলাদেশকে তার চেয়ে ভিন্ন দেখেছি। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যে বাংলাদেশে আমি জন্মেছিলাম তার থেকে আজ এক ভিন্ন বাংলাদেশ।

কেয়ামত যদি নাই হয়, কিন্তু আমি নিশ্চিত পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন হবে। একসময় বৃটিশরা গরিব ছিল, আমাদের দেশে গিয়েছে রুটি রুজির সন্ধানে, আজ আমরা পৃথিবীর দেশে দেশে যাচ্ছি। আমরা জানি আজ থেকে ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে আটলান্টিক মহাদশে একটি খালের মত ছিল। অস্ট্রেলিয়া লাগা ছিল এশিয়ার সাথে। আসলে ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে যাওয়ার দরকার নাই। বাংলাদেশে একসময় বড় নদী ছিল ব্রম্মপুত্র, আমি জানি না সে নদীর এখনকার অবস্থা কি, এ নামে কোন নদী আসলেই আছে কিনা। যে প্রমত্তা পদ্মা সম্পর্কে পড়েছি। আবদুল আলিমের গান শুনেছি। নিজে দেখেছি সেই পদ্মা আর নাই সেটা আমার চোখের সামনেই। হয়তো কয়েক বছর পর স্কুলের ছাত্ররা ঈশ্বরদীর পাশে কোন বিশাল ভবনের সামনে গিয়ে শুনবে এখানে পদ্মা নামের একটা নদী ছিল।

সে যাক, নিজের কথায় ফিরে যাই। আমি লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছিলাম প্রথম কারণ তো বলেছি, আমার ভিতর যে লেখক ছিল সে লেখকের মৃত্যু হয়েছিল। একজন মানুষের মৃত্যু যে সব কারনে হয়ে থাকে, ভেতরের আত্নার এসবের অনেক কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। দ্বিতীয় যে কারণে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছিলাম সেটা হলো আমি স্ট্রাটেজি চেঞ্জ করেছি বলা যায়। লেখালেখির বদলে কিছুটা পড়াপড়ি শুরু করেছি। সত্য বলতে দ্বিধা নাই। পরের ক্ষেতের মোষ তাড়াতে গিয়ে আমি আমার নিজের পরিবারের উপর যুলুম করেছি। আমি প্রায় লেখাতেই আমার বাবার কথা লিখি। এজন্যই লিখি। আমি আমার মা বাবার হক্ক আদায় করতে পারিনি, আমার এই দুঃখ হয়ত চির জীবন থাকবে। আমার ছেলে মেয়ের দিকে কিছুটা নজর দিয়ে, আর বাবা মা'র জন্য দোয়া করে ক্ষতিটা যদি একটু পোষাতে পারি।

তবে ব্যক্তিগত কৈফিয়তের পাশাপাশি আমার ইসলামিস্ট ভাই বোনদের প্রতি অনুরোধ কিসের পেছনে দোড়াচ্ছেন একটু ভালভবে জেনে নিন, দেখে নিন, ভেবে নিন। প্রথমেই যেটা বলেছি। যে কোরআন বুকে নিয়ে লড়ছেন, একটা আয়াতকে আপনি যা বুঝে লড়ছেন অন্য মুফাসসিরগন কি বলেছেন একটু দেখে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি?

দেখুন ভাই, আমি আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে অন্তর থেকে বলছি, আমরা যদি কোন বিষয়ে ভুল বুঝে মেীমাছির মত দেীড়িয়ে নিজের জীবনের ক্ষতি করি, ক্ষতিটা কিন্তু আমারই হবে। কাল কেয়ামতের ময়দানে আমাকেই জবাব দিতে হবে। অন্য কাউকে নয়।

আমার কথার শেষ কথা হলো, আরেকটু পড়ুন। কোরআন যদি পড়েন বিভিন্ন তাফসির পড়ুন। রাসুল সাঃ এর সীরাত পড়ুন, সাহাবীদের জীবনী পড়ুন। মহামনষিীদের জীবনী পড়ুন। সময়টা সেদিকে দিন।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। সবাইকে সিরাতুল মুস্তাক্কীমের পথে চলার তেীফিক দিন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342787
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

যে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের কথা বলছেন, একটু নিজের সাথে একাকী বসুন, আসলেই কতটুকু। আমি কোথায় আছি। পৃথিবীটাকে উদ্ধার করার আগে আমাকে কতটুকু উদ্ধার করেছি।



আমি একজন গুনাহগার মানুষ। এটা কোন আমার সাধারণ শালিনতা বা ভদ্রতাবোধ নয়। আমি জানি আমি গুনাহগার।
At Wits' End At Wits' End
Praying


সত্যিই, আমি জানি আমিও দায়ী। কমপক্ষে কিছু কিছু বিষয় আমি জানি যেটা আমার করা উচিত ছিল কিন্তু আমি করিনি এবং কিছু কিছু বিষয় আছে করা উচিত ছিলনা তারপরও করেছি। At Wits' End At Wits' End

Praying Praying Praying


Praying
রব্বানাগ্বফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজীনা সাবাক্বুনা বিল ঈমান,
ওয়া লা তাজআল ফী ক্বুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজীনা আমানু, রব্বানা ইন্নাকা রউফুর রহীম
Praying
রব্বানা যলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লামতাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন!
342799
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : লিখাটা ভাল লাগল।
কিন্তু এর পটভুমিটা বুঝে খারাপ লাগল। আমরা কেন শুধু অতিতের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত হচ্ছি।
342813
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো
342819
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : লিখাটির পটভুমির ব্যপারে আমি কিছু আন্দাজ করতে পারি নাই, কি মন্তব্য করবো ভেবে কুল পাচ্ছি না।
343151
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:৫৪
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আপনি পর্যাপ্ত রাখ-ডাক করেই লিখেছেন। কিন্তু তারপর ও সংশোধনের নিমিত্তে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় মেসেজ দিয়েছেন।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি আপনার দৃষ্টিশক্তি আরো প্রশান্ত হবে, আরো বিস্তৃত হবে - যখন আপনি আরো বেশি বেশী পড়বেন, শুনবেন এবং চিন্তাভাবনা করবেন।

আমাদের অনেকের একটা সমস্যা হল আমরা যা বুঝি - আমরা প্রায়ই মনে করে ফেলি যে তাই সব - এর বাহিরে যা কিছু সবই ভুল, এবং সব কিছুকে আমাদের চিন্তা ও ভাবনার ফ্রেমে ফেলে কনক্লুশান টানি।

আমি ও আপনার সাথে আহ্বান জানাই ইসলামী ভাই ও বোনদের পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে তা কনটিনিউয়াসলী খোজ নিন, কেন ঘটছে তা জানার চেষ্টা করুন এবং সব শেষে ঐ ঘটনা ও ঘটনার প্রেক্ষিতের সাথে কোরান ও হাদীসের সামন্জস্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন - দেখবেন আপনার মধ্যে নতুন এক চোখ ও বোধ সৃষ্টি হয়েছে - আপনি স্বভাবতঃই মরীচিকার পেছনে দৌড়াবেন না এবং আল্লাহর সামনে আপনার মস্তক আরো অধিকতর বিনীত ও বিনম্রভাবে পতিত হবে, আবধমিত হবে।
344586
০৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:১৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : এজন্যই ত কুরআনে বলা হয়েছে, নিজে বাঁচ, আহালকে বাঁচাও। আগে নিজের কথা বলা হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File