আমেরিকার মুসলমান এবং নন আমেরিকান মুসলমান

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:১৮:১৬ রাত

আহমদ নামক আমেরিকার টেক্সাসের সেই ছেলেছি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আজ একটি সংবাদ দেখলাম, সংবাদটির শিরোনাম "মুসলিম বিজ্ঞানী বালক যুক্তরাষ্ট্রে 'সন্ত্রাসী' কানাডায় হিরো।"

আমি মনে করি এই সংবাদটি একপেশে এবং একদেশ দর্শী। গড় পড়তায় কেউ আমেরিকাকে দোষ দেয়া আমি একদেশ দর্শী মনে করি। বিশেষত আহমদের বিরুদ্ধে যদি মামলা অব্যহত থাকতো তাহলে উপরোক্ত সংবাদকে জাস্টিফাই করা যেত।

আহমদের ক্ষেত্রেই ধরুন। আহমদকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে স্বভাবতই বর্ণবাদী, ইসলাম বিদ্ধেষী স্কুল। কিন্তু সাথে সাথে প্রতিবাদ এসেছে, অপরদিকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ওবামা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজে দাওয়াত দিয়েছেন। মার্ক জুকারবার্গ আহমদকে সমর্থন করেছেন।

আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। প্রাচ্যের মুসলমানরা তো কথায় কথায় আমেরিকাকে গালি দেনই, পাশ্চাত্যের মুসলমানরা বিশেষভাবে ইউরোপ এবং এখন দেখছি কানাডার মুসলমানরা কথায় কথায় আমেরিকার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন।

এ সব সমালোচকরা যদি সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলতেন আমার কেন কারও আপত্তি ছিল না। উদাহরণস্বরুপ ডোনাল্ড ট্রাম্প নামের এক পাগল, আর ববি জিন্দাল নামের আরেক ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা পরগাছার আবোল তাবোল বকবকানি খোদ আমেরিকাতেই বিশেষভাবে সমালোচিত। এবং আমেরিকাতেও ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের রাজনীতি থাকলে কিছু মানুষের মুল্যবোধ আছে। যেমন উদাহরণ স্বরুপ একজন আমেরিকান ডেমোক্রাট হিসেবে আমি জন মেককেইনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করিনি। তবে রাজনীতির বাইরে, সিনেটর জন মেককেইনের প্রতি রয়েছে আমার যথাযথ সম্মান এবং শ্রদ্ধা। এ ব্যাক্তি জন মেককেইন নিজ দেশের জন্য একজন ত্যাগী সৈনিক। ২০০৮ সালে তিনি যখন ওবামার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছিলেন তখন তাঁর এক মিটিং এ একজন এসে জন মেককেইনকে মন্তব্য এবং প্রশ্ন ছুঁড়লেন যে ওবামা একজন আরব একজন মুসলমান (উল্লেখ্য ওবামাকে আরব এবং মুসলিম বলেছিলেন তাচ্ছিল্যভাবে। তখন জন মেককেইন এর প্রতিবাদ করেছিলেন, জন মেককেইন বলেছিলেন, নো মেম, নো। তিনি আরবও নন, মুসলমানও নন, তিনি একজন আমেরিকান, যার সুন্দর পারিবারিক জীবন রয়েছে। তবে কিছু মেীলিক বিষয়ে আমি (জন মেককেইন) তাঁর (ওবামার) সাথে দ্বিমত পোষণ করি।

জন মেককেইন একজন রিপাবলিকান হলেও মানবিক মুল্যবোধের দিক থেকে তাঁর মত ব্যাক্তির কাছে অনেক শেখার আছে।

আরেকটি বিষয়ে উল্লেখ করতে চাই, গত বছর আরব ইসরাইল ইস্যু নিয়ে আমেরিকার মুসলমানদের সর্ব বৃহৎ সংগঠন ইসনা বা ইসলামিক সোসাইটি অফ আমেরিকা তাঁদের দৃষ্টিতে আরব ইসরাইল ইস্যুতে ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যথাযথ এবং যথেষ্ট সোচ্চার নয় এই প্রতিবাদে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ তারিক রামাদান ইসনা বা ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার বার্ষিক কনভেনশনে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন। এবং এ নিয়ে ইসনা এবং তারিক রামাদানের মধ্যে কিছু মতানৈক্য এবং প্রকাশ্য প্রতিবাদ দেখা যায়। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, এটা সত্য আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে খোদ আমেরিকাতেই প্রচন্ড বিতর্ক রয়েছে। আমেরিকার ইসরাইল নির্ভশীলতও একটা বিরাট বড় প্রশ্ন। অনেক ক্ষেত্রে সত্য বলতে কি, ইসরাইল, ইহুদী লবি, বড় বড় ইহুদী বুদ্ধিজীবি, থিং ট্যাং এর কাছে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা অনেকাংশেই বন্দি। অপরদিকে প্রচুর সমালোচিতও।

তবে আমি নন আমেরিকান মুসলমান তথা যে সমস্ত মুসলমানরা গড় পড়তা আমেরিকাকে ইসলাম বিদ্ধেষী হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করাটা আমেরিকা এবং আমেরিকার মুসলমানদের প্রতি অবিচার। প্রেসিডেন্ট ওবামা ক্ষমতায় এসেই তুর্কিস্তান এবং মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন, তিনি সেখানে স্পষ্ট বলেছিলেন আমেরিকা এবং ইসলাম পরস্পর বিরোধী নয় বা পরষ্পরের মধ্যে শক্রতা নাই বা কখনো হবে না।

আমি মনে করি, কথায় কথায় আমেরিকাকে ইসলাম বিদ্ধেষী হিসেবে অঙ্গুলী নির্দেশ করা আমেরিকায় বসবাসরত মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর এবং অবিচার। আমেরিকায় ইসলামের প্রেক্ষাপট, এখানকার মুসলমানরাই ভাল বুঝেন এবং বুঝবেন।

আমেরিকা যদি অযাচিতভাবে অন্য কোন দেশের ব্যাপারে নাক গলায় বিশ্বের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই এর প্রতিবাদ করি। আমেরিকার অন্যায় পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী একটা বিরাট আমেরিকানদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ঢালাওভাবে আমেরিকাকে দোষারোপ করাটা অবিচার।

ইসলাম এবং আমেরিকা এব্যাপারটা আমেরিকার মুসল

বিষয়: বিবিধ

১১১৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342581
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:২৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:২৪
283957
আবু মাহফুজ লিখেছেন : দোয়া করবেন, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
342588
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৩
স্বপন১ লিখেছেন : চমৎকার লেখা। জাকির নায়েক মত বাইবেল জেনে ডায়লগে বসা। ইসলামের দাওয়াত দেওয়া
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:২৫
283958
আবু মাহফুজ লিখেছেন : দোয়া করবেন, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কবুল করুন।
342589
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুনেছি আমেরিকার মূল ভুখন্ডে যে সব ইউরোপিয় প্রথম বসতি করেছিল তাদের মধ্যে মুসলিম দাস ও স্বাধিন মানুষ উভয়ই ছিল। এছাড়া আমেরিকার স্বাধিনতা যুদ্ধেও নাকি কয়েকজন মুসলিম সৈনিক অংশ নিয়েছিল আর গৃহযুদ্ধের সময় অফিসার হিসেবে অংশ নেওয়ার প্রমান অাছে। "লিটল হাউস অন দ্য প্রেইরি" সিরিজ টা পরে আমার মনে এসেছিল হলিউডি মুভি আর মার্কিন আর্মির বাইরেও একটা মানুষের আমেরিকা আছে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৩২
283959
আবু মাহফুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। আপনার প্র্শ্নের সুনিদ্দিষ্ট উত্তর আমার জানা না্ই। তবে, রিসার্চে দেখা গেছে আমেরিকায় মুসলমানদের আগমন অনেক অনেক আগে হয়েছিল। এমনকি ক্রিস্টপার কলম্বাসের আগেও মুসলমান ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি নামাজের স্থান বা মসজিদ ছিল বলে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মুসলমান যেহেতু ছিল বিভিন্ন অঙ্গনে মুসলমানদের ভুমিকাও ছিল স্বভাবতই। তবে আপনার প্রশ্নের যে সুনির্দিষ্ট দিক সে ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নাই। আমি আমেরিকায় মুসলমানদের ইতিহাসের উপর ২-৩টি মেীলিক বই পড়েছি একটি বইয়ের লেখিকা ইভান হাদ্দাদ, তবে সবচে' গুরত্বপুুর্ণ বইটির রচয়িতা অধ্যাপক সোলায়মান নায়াং। বাংলায় আমার নিজের লেখা একটি বই রয়েছে। "আমেরিকায় ইসলাম" এই নামে। বইটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত। যদিও বইটিতে অনেক সংস্কার এখন দরকার।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১১
283985
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পালাবদলে এই বিষয়ে কয়েকটি লিখা লিখেছিলেন মনে আছে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৪
284058
আবু মাহফুজ লিখেছেন : জনাব ভাই রিদওয়ান কবীর, ধন্যবাদ। পালাবদলে "আমেরিকায় ইসলাম" ঠিক এ বিষয়ে লিখেছিলাম কিনা আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে, পালাবদলে অনেক লিখাই আমি লিখেছিলাম, বেশ কয়েক বছর যাবত। পালাবদলের সম্পাদক মরহুম আবদুস সালাম সাহেব আমাকে খুব ভালবাসতেন। তাঁকে আল্লাহ পাক জান্নাত নসীব করুন। পালাবদলে আমার লেখাগুলোতে আমেরিকায় মুসলমানদের চিত্র, জীবনযাত্রা অনেকভাবেই তুলে ধরেছিলাম বিচ্ছিন্নভাবে। আপনি হয়তো সেগুলো পড়েছেন তাই এখন স্মৃতিতে ভাসছে।
342637
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ৯০% মুসলিমের দেশে যেখানে কোরানের মাহফিলের উপর ১৪৪ ধারা জারী করা হয়,ইসলাম বিরোধী আইন পাশ করা হয়, কোরান হাদিস ও ইসলামী বই দেখলেই জংগী বই বলা হয়। সেখানে তো আমেরিকা বাংলাদেশের তুলনায় আমি মনে করি অনেক ভাল !!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File