ফরিদ রেজা ভাইয়ের ৮২'র স্মৃতিচারণ এবং আমার কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৫২:০৩ সকাল

ফরিদ আহমদ রেজা ভাইয়ের সাম্প্রতি লেখা এবং আমার কিছু কথা ঃ

ফরিদ আহমদ রেজা ভাইয়ের সাম্প্রতিক লেখাটা হঠাৎ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ বা হাৃসিনার উপর জামায়াত শিবির কর্মীদের যত ক্ষোভ সব এসে বেচারা ফরিদ রেজা আর আবদল কাদের বাচ্চুর উপর বর্ষিত হলো।

ফরিদ রেজা নামে একটা নাম ছোটবেলায় শুনেছি। আমি এ অঙ্গনে কমপক্ষে ৪-৫ জন ফরিদ নাম শুনেছি। ড. ফরিদ, সরদার ফরিদ, এভাবে। তবে আবদুল কাদের বাচ্চু এবং আহমদ আবদুল কাদের দুটো নামই ছোটকাল থেকে ভালভাবে জানতাম।

আধুনিক যুগের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বহু বহু পুরনো বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হয়। এ বছর, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসের প্রথম দিকে ফেইসবুকের একটা স্ট্যাটাসে কোন এক বন্ধুর মাধ্যমে আইয়ুব মিয়া নামে একজনের সাথে ফরিদ আহমদ রেজা নামের একজনকে ভাল একটা কমেন্ট করতে দেখে ফরিদ রেজাকে ফলো করতে থাকি এবং ফরিদ রেজার অনেকগুলো স্ট্যাটাস পড়ি। মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব নামে একজনকে খুব ছোটবেলা থেকে চিনতাম, যিনি মাসিক পৃথিবী নামক গবেষনাধর্মী একটি ম্যাগাজিনে অত্যন্ত গবেষনাধর্মী লেখা লিখতেন। মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব বাংলাদেশ সরকারের খুব উচ্চ ধরনের একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন সম্ভবত সচিব ছিলেন। একবার ঢাকায় কোন এক অনুষ্ঠানে এই মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুবের আন্তর্জাতিক বিষয়ে একটি আলোচনা শুনেছিলাম। আমার একান্ত শ্রদ্ধেয় এবং প্রিয় ব্যাক্তিদের একজন শিবিরের এক সময়ের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহ ভাই মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুবকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সে অনুষ্ঠানে। বলা বাহুল্য মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুবের লেখা অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ এবং উচ্চ মানের। আমি মিয়া আইয়ুবের একজন ভক্ত আজ সম্ভবত ৩০ বছর যাবত। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো আমি জানতাম, এই মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব আবদুল কাদের বাচ্চু বা ফরিদ রেজা ভাইদের একই নেীকার যাত্রী।

৮২ সালে আমি খুব ছোট ছিলাম। ছোট থাকলেও ৮২ সালে জামায়াত, শিবির, যুব শিবির, কিছু ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটতে দেখেছিলাম।

আমি মাওলানা তোফায়েল আহমদের ছেলে, যারা মাওলানা তোফায়েলকে চেনেন তারা চেনেন। তবে সংক্ষেপেঃ জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ সাহেব এবং মাওলানা রফিউদ্দিন সাহেব মাওলানা তোফায়েল আহমদকে ভালভাবে চিনেন। আমার আগের জেনারশনের কেউ জামায়াত শিবির করেনি। আমার পরে আমার দেখাদেখী পরপর্তী জেনারেশনের অনেকেই শিবির জামায়াতের সাথে জড়িত হয়েছে।

আমার মরহুম বাবা একজন দেওবন্দী আলেম। একসময় একজন নামকরা আলেমদের একজন ছিলেন। আমার বাবার কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আমি যেন শিবিরের ছেলেদের সাথে কথাই না বলি। আমার আব্বা আমাকে সবসময় নজরে রাখতেন। সে সময় অনেকটা এমন হয়ে গিয়েছিল যে ভাল ছাত্রগুলো সব শিবির করতো। আমি কয়েকবারই পরীক্ষার ফলাফলে, উপস্থিতিতে এবং কিতাব মুখস্ত করনে পুরো মাদ্রাসার সেরা ছাত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। উ্ল্লেখ্য আমার আব্বা মাদ্রাসায় পুরা কিতাব প্রথম অক্ষর থেকে শেষ অক্ষর মুখস্ত করার প্রচলন করেছিলেন এবং এ জন্য মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় কৃতকার্য মুখস্তকারীদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেয়া হতো। নাহু সরফ, ফিকাহ এর কিতাব মুখস্ত প্রতিযোগীতায়ও পুরো মাদ্রাসায় আমি প্রথম হয়েছিলাম কয়েক বছর। ভাল ছাত্র হবার কারণে আমার আব্বা এবং শিক্ষকদের সবারই ভয় ছিল আমি হয়তোবা শিবিরের কোপানলে পড়তে পারি। আমার ওস্তাদ মাওলানা মোস্তফা আল হোসাইনী যিনি বর্তমানে সম্ভবত ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আমীর তিনি আমাকে সাথে অনেক বড় বড় ওয়াজ মাহফিলে নিয়ে যেতেন এবং বড় বড় হুজুরদের কাছে আমার জন্য দোয়া চাইতেন। একবার সুলতান আহমদ নানুপুরী নামক এক হুজুরকে আমাকে দেখিয়ে বললেন, "হুজুর ছেলেটাকে একটু দোয়া করে দেন, ছেলেটা ভাল আলেমের ছেলে, কিন্তু ছেলেটাকে মওদুদীয়ে পাইছে।"

একবার স্থানীয় শিবিরের একজন ভাই আমাকে বই দিলেন, বইটির নাম "ঢাকায় কাবা শরীফের ইমাম"। আমার যতটুকু মনে পড়ে বইটিতে স্থানীয় শাখা শিবিরের সিল মারা ছিল। আমি সরল মনে বইটি বাড়ীতে নেই। ভাগ্যের পরিহাস বইটি আব্বার হাতে পড়ে। আব্বা আমাকে খুব শাসালেন, শিবিরের বই আমার বাড়ীতে কেন?!

আমার বাবা এমনি প্রকাশ্যে শিবির জামায়াতের বিরোধীতা খুব একটা করতেন না। কিন্তু নিজে কড়া ছিলেন, আমার স্মরণ আছে আমার বোনদের বিয়ের জন্য ভাল ভাল ছেলে এসেছে, শিবির করে, বাবা বিয়ে দেবেন না।

আব্বার বহু ছাত্র ছিলেন জামায়াত শিবিরের। আবার ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ রইসুদ্দিনের মত আব্বার একান্ত প্রিয় ছাত্রদের অনেকেই ছিলেন যারা জামায়াত শিবির করতেন না।

সে সময়রে শিবিরের জেলা সভাপতি পরে এক সময় জামায়াতের সম্ভবত নোয়াখালী জেলা আমীর হিফজুর রহমান ভাই আমার আব্বার ছাত্র ছিলেন, হিফজু ভাই, আমার ৫-৬ বছরের সিনিয়র ছিলেন, হিফজু ভাই আমাকে খুব আদর করতেন। অনেক স্থানে সাথে নিয়ে যেতেন। তেমনিভাবে আমার আব্বার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর বিয়াই শায়খ আবদুল কাইয়ুম, কাইয়ুম ভাই আমার ৮-১০ বছরের সিনিয়র ছিলেন।

৮২ সালে শিবির ভাঙ্গার সম্ভবত প্রাথমিক পর্যায়ে একদিন আমি যখন হিফজু ভাইয়ের সাথে ছাত্রশিবিরের নোয়াখালী জেলা অফিসে, আমি তখন শিবির সম্পর্কে তেমন একটা কিছু জানি না। দেখলাম হিফজুর রহমান ভাই কয়েকজন তরুনের সাথে কথা বলছেন, কথা বার্তা একটু ব্যাতিক্রম ধর্মী। হিফজু ভাইয়ের কথার আমি যতটুকু শুনেছি তার সারমর্ম ছিল, আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে তিন ভাগ হয়েছে আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান), হাসিনা সম্ভবত সে সময় বাংলাদেশে ফিরে গেছেন তাই আওয়ামী লীগ (হাসিনা)। হিফজু ভাইয়ের সেদিনের কথার সারাংশ হলো, তারপরও আওয়ামী লীগের কিছুই হয়নি, মুল আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগই রয়ে গেছে। মালেক মিজানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুতরাং জামায়াতই মুল সংগঠন আপনারা যদি ভেঙে চলে যান, এভাবেই হারিয়ে যাবেন।

হিফজু ভাইয়ের সেদিনকার কথাবার্তার আগামাথা সেদিন কিছুই বুঝিনি। পরে অবশ্য স্বাভাবিকভাবে ব্যপারটা স্পষ্ট হয়েছে।

মাদ্রাসায় ফাজিল পরীক্ষা দেয়ার পর, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় খ ইউনিটে, মেধা তালিকায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে উর্তীর্ণ হলাম। স্বভাবতই আত্নীয় স্বজন সবাই খুশী তবু আমার বাবা মাওলানা তোফায়েল আহমদ আমাকে ঢাকা যেতে দেবেন না, কারণ তাঁর ভয় হলো ঢাকা গেলেই আমি নাকি শিবির করবো। এ নিয়ে আমরা বাপ বেটার লড়াই। একদিন আমার মা বললেন, "বাবা, দেখ তোর বাবা যেহেতু পছন্দ করেনা, কি দরকার এসব শিবির টিবির করার। তুই তাহলে ঢাকা যাসনে বাবা।"

মায়ের সে কথায়, মাকে সেদিন রাগ করে বলেছিলাম, 'আম্মা, আপনারা পেয়েছেনটা কি? আমি শিবির করবো এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দেবেন না?! মানুষ ছেলে মেয়েকে কতটাকা পয়সা খরচ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল সাবজেক্টে চান্স নিতে পারে না, আর আমি মেধা তালিকায় এত উপরে উঠেও আপনারা আমাকে যেতে দিবেন না এটা কি বলেন?! বললাম, আমি যদি শিবির করি তাহলে অাপনারা আমাকে বাক্সে বন্ধি করলেও শিবির করবো আর যদি শিবির না করি তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজে গেলেও করবো না। আপনারা কি আমাকে বাচ্চা ছেলে পেয়েছেন নাকি। জোর করে থামাতে পারবেন না। আমার এ কথা শুনে মা বললেন, "বাবা দেখ, তোর বাবা এসব রাজনীতি করে আমাদের সংসারে কত কষ্ট হয়েছে তা আমি জানি, কি দরকার তুইও এসব করে অন্য জীবনে এভাবে কষ্ট আনবি।"

অনেক লম্বা কাহিনীকে ছোট করে বলি, আমি মাওলানা তোফায়েল আহমদের ছেলে তারপরও শিবির করেছি। না, যুব শিবির নয়, জামায়াত-শিবিরই। এবং স্বভাবতই, সত্য বলতে দ্বিধা নাই, যুব শিবিরকে খারাপই মনে করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুব শিবিরের ভাল ভাল ছেলেগুলোর সাথে একই সাথে পড়লেও কথাই বলতাম না।

আর শিবির যখন করেছি ভালভাবেই করেছি। ১৯৮৬ সালের কথা, আমি তখন শিবিরের কর্মী, গাজীপুরের বোড বাজারে সে সময় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকি। আমার রুমমেট ছিল আবদুল আজিজ মল্লিক এবং মইনুল হক, মল্লিক এখন কোথায় আছে জানি না, তবে মইনুল এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। শিবিরের কোন সদস্য সাথী গাজীপুর থেকে ঢাকা শহরে যেতে হলে সংগঠনের অনুমতি নিতে হতো।

একদিন মল্লিকের সামনে কে একজন বন্ধের আগের দিন একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "মাহফুজ ভাই ঢাকা যাবেন নাকি?" আমি উত্তরে বললাম, সংগঠনের সভাপতির সাথে কথা বলে দেখি অনুমতি দেয় কিনা। তখন মল্লিক ভাই একটু টিটকারী করে বললেন, "মাহফুজ ভাই এমন ভাবে কথা বলেন মনে হয় যেন সদস্য হয়ে গেছেন।" আমি বললাম, সদস্য বা কর্মী বড় কথা নয় সংগঠনে কর্মী যেহেতু হয়েছি, সংগঠনের নিয়ম মেনে চলাটাই আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি।

হ্যাঁ, মাওলানা তোফায়েল আহমদের ছেলে হয়েও আমি শিবির করেছি। আমি যখন মাদ্রাসা ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক তখন একদল প্রতিনিধি নিয়ে গিয়েছিলাম মাওলানা মান্নান (সাবেক মন্ত্রী এবং ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা) এর সাথে দেখা করতে। মাওলানা মান্নান আমার পরিচয় পেয়ে তো মাথা খারাপ, তুমি তোফায়েল সাহেবের ছেলে হয়ে আমার কাছে এসেছো জামায়াতের প্রতিনিধি নিয়ে।?!

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই শিবির করা নিয়ে আমার বাবা অনেকদিন আমার সাথে কথা বলেন নি। ঢাকা থেকে বাড়ী গেলে আব্বাকে দেখে সালাম দিলে শুধু ওয়ালাইকুম আস সালাম বলে সরে পড়তেন আর কোন কথা বলতেন না। টাকা পয়সাও দিতেন না । যা কিছুু টাকা পয়সা দিয়েছেন মা দিয়েছেন আর নিজে কষ্ট করে টিউশনি করে চলেছি।

সেসময় এক ঈদে আমি তখন ঢাকার কলাবাগান মেসে, এক ঈদে সবাই দেশে যাচ্ছে আমি যাচ্ছি না, দেখে ডাঃ আমিনুল ইসলাম মুকুল ভাই ডেকে নিয়ে জোর করে দেশে পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, বাবা যতই রাগ করুক, তারপরও বাবা। এমনি ভাবে অনেকগুলো কারণে মুকুল ভাই,ওবায়েদ ভাই এবং হালিম ভাই সারা জীবন আমার প্রিয় ব্যাক্তিদের মধ্যে থাকবেন।

অতীত এই কাহিনী টানার মুল কারণ এটা বুঝানো যে, ফরিদ আহমদ রেজা বা যুব শিবিরের সাথে সম্পর্ক কোনদিন আমার ছিলনা। তবে যুবশিবিরের সে সময় ছিটকে পড়া কয়েকজনকে চিনতাম, তাদের লেখা পড়তাম এবং সত্যি বলতে কি যে যেভাবেই নিক, তাদের লেখার মান অনেক অনেক উপরে। আমার যতটুকু সম্পর্ক ছিল জামায়াত -শিবিরের সাথেই।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ৮২ সালের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখার পর ফেইসবুকে এবং সংশ্লিষ্ট ব্লগে খুব আপত্তিকর অনেকগুলো মন্তব্য দেখে আমার মনে এক ধরনের অপরাধবোধ জেগেছে। এবং এধরনের হীন মানষিকতা দেখে বিরক্তি বাড়ছে। যারা আজে বাজে মন্তব্য করছেন, সীমা অতিক্রম করছেন, আমি জানি ফরিদ রেজা ভাইকে অসম্মান করতে পারবেন না, আপনারা নিজদের হীনমন্যতারই পরিচয় দিচ্ছেন। জামায়াত কর্মীদের মান যে কত নীচে যাচ্ছে তার প্রমাণ দিচ্ছেন। আর সত্যি বলতে কি কথাটা একটু রুঢ় মনে হলেও আপনারা যা করছেন তাতে আজকে যা ঘটছে তা কেন ঘটছে বুঝতে আরেকটু সহজ হচ্ছে।

৩৩ বছর আগের পুরনো ইতিহাস টেনে ফরিদ ভাই কোন অপরাধ করেছেন কিনা জানি না, তবে যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে সে অপরাধে আমিও অপরাধী হতে পারি। কারণ

আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমিই কি ফরিদ রেজা ভাইকে বাঘের মুখে ঠেলে দিলাম।? ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলি।

ফরিদ আহমদ রেজা ভাইয়ের সাথে আমার ইদানিং এর যোগাযাগটা বলা প্রয়োজন। আধুনিককালে ফেইসবুকের মাধ্যমে অনেক পুরনো বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ এবং সম্পর্ক হয় । ফেইসবুকে আইয়ুব মিয়া নাম দেখে এবং লেখার স্টাইল দেখে ধরে নিয়েছিলাম ইনি সেই মিয়া মুহম্মদ আইয়ুব, আর ফরিদ আহমদ রেজাও সেই ফরিদ আহমদ রেজা। এই দুটো নামের সাথে আরো যে নামগুলো ছোটবেলা থেকে জানতাম তাঁরা হলেন, শাহজাহান খান মুকুল, মুজাহিদুল ইসলাম, মাসুদ মজুমদার প্রমুখ।

ফেইসবুকে ফরিদ আহমদকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই এবং ৬ মার্চ ২০১৫, বিকেলে, ফরিদ আহমদ রেজা ভাইয়ের ব্যাক্তিগত ইনবক্সে নিম্মোক্ত ম্যাসেজটি পাঠাই

" ফরিদ আ. রেজা ভাই, সালাম। আপনি আমাকে না চেনারই কথা। কোনদিন কথা হয়নি আমাদের। আমার বিশ্বাস, যে ফরিদ রেজা ভাইর নাম জানতাম ছোটবেলা থেকে আপনি সেই ফরিদ রেজা। আইয়ুব মিয়া নামে একজনের একটা পোস্টে আপনার কমেন্ট দেখে আইয়ুব মিয়া নামে যাঁকে ধারনা করেছি আশা করি তিনিও তিনিই। আপনার কয়েকটি আদর্শবাদী পোস্ট পড়ে অনেকটা নিশ্চিতই হলাম যে, আপনি হয়তোবা সেই ফরিদ রেজা যার নাম ছোটবেলায় জানতাম। মাসুদ মজুমদারের লেখা মাঝে মধ্যে পড়ি। সে যাক, ফরিদ ভাই, আপনাকে না যে জেনে আপনাকে হঠাৎ লেখার মুল কারণ হলো, উরুগুয়ের মুজিকা নিয়ে আপনার পোস্টটা দেখেই হঠাৎ চোখ পড়লো।

প্রশ্ন হলো, কেন এমন হলো ভাই। কেন এমন হচ্ছে। আমরা আসলে কোনদিকে যাচ্ছি। বাংলাদেশ বলেন আর বিশ্ব বলেন। সে যাক, বাংলাদেশের কথাই বলি। আমার ধারণা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আপনারা আমাদের অগ্রজ, আমরা অনুজ। আমি যে আইয়ুব মিয়াকে চিনতাম তাঁর অনেক লেখা পড়েছি, ব্যাক্তিগতভাবে আমি নিজেও একটু আধটু লিখতাম। আমাদের ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে ও কিছু লেখা পড়েছি, বিশ্ব সম্পর্কেও সামান্য কিছু পড়েছি, সবকিছুই যেন আজ তালগোল পাকানো।

ফরিদ ভাই, একটু ফিরে তাকানতো? একটু ভাবুন তো, কি মনে করেন, বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর পেছনে সমস্যার মুল কারণ আপনি কি বলে মনে করেন। নিজের দেখা জীবনের কিছু কিছু ঘটনাকে মুল্যায়ন করলে কিছু মনে হয় কি? আসলে, কথা বলার কোন মানুষ পাই না, তাই আপনাকে ধরে বকবক শুরু করলাম। দুঃখ হয়, কষ্ট লাগে, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি কেন এমন হলো, কেন এমন হচ্ছে। নীরিহ মানুষগুলোর তো কোন দোষ ছিল না। তাহলে নীরিহ মানুষগুলো মরবে কেন। শুধু মরলেও তো একটা কথা ছিল, কিন্তু কারো ভুলের কারনে, কারো লোভের কারনে, কিংবা কারো গোয়ার্তোমির কারণে অন্য কারো জীবন ধুঁকে ধুঁকে জ্বলবে তাতো হয় না। সেটা তো সুবিচার হতে পারে না।
" (ফেইস বুকে ফরিদ রেজা ভাইকে আমার পাঠানো মেসেজ থেকে সরাসরি কপি করা)

আমার মেসেজের পর ফরিদ রেজা ভাই,

ইংরেজীতে ছোট্র একটা জবাব দিলেন,

Salam.

Jzk

Now in a meeting. Talk to you tomorrow.

পরদিন ৭ই মার্চ সকালে নিউ ইয়র্ক সময় সকাল ৬টায় ফরিদ রেজা ভাইর একটি মেসেজ পেলাম যে মেসেজে তিনি লিখলেন,

"সালাম। আপনার কষ্ট এবং আমার কষ্ট একই সমতলে। আপনার এবং আমার ক্ষমতা সীমিত। তবু প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। আইয়ুব ভাই এবং মাসুদ ভাই - আমরা একই নৌকার যাত্রী। সুতরাং মনে হচ্ছে আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। আপনি কোথায় থাকেন, কি করেন, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি জানালে খুশি হবো। ভালো থাকুন, যেখানেই থাকুন। খোদা হাফেজ।" (ফরিদ ভাইয়ের মেসেজ থেকে সরাসরি কপি করা। হয়তো ফরিদ ভাইকে জানানো উচিত। তবে মেসেজটি যেহেতু আমাকে পাঠানো সেহেতু এটা এখন আমার প্রপাটি তাই প্রকাশ করলাম )

ফরিদ রেজা ভাইয়ের মেসেজটি সকাল ৯টার দিকে দেখার পর ৯:৩২মিনিটে আমি আবার নিন্মোক্ত মেসেজটি পাঠালাম।

"প্রিয় এবং সম্মানিত ফরিদ ভাই,

সালাম এবং ধন্যবাদ উত্তর দেয়ার জন্য। আমি আমেরিকায় থাকি, আছি আজ প্রায় বিশ বছর থেকে। জীবনের সুখ দুঃখ বেদনার সাথে একটা পরিচয়ে আমি আনন্দিত এবং গর্বিত, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি সেটা হলো আমি একজন একটিভিস্ট। ফলাফল কি হয়েছে, হচ্ছে জানি না, জীবনে যখন যেখানে ছিলাম, গিয়েছি আমি টুটা ফাটা কিছু কাজ করেছি এবং চেষ্টা করেছি।

আমি আপনাদের বেশ জুনিয়র, কতবছর জুনিয়র হবো ঠিক বলতে পারবো না, তবে কমপক্ষে বা প্রায় দশ বছর। আইয়ুব মিয়া, মাসুদ মজুমদার, মুজাহিদ ভাইদের মত প্রতিভাবান ব্যাক্তিরা একসময় ছিলেন।

আমার প্রশ্ন হলো তারপর কি হলো, আজ কেন এমন লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, মেধাবী কাউকে ইসলামের দিকে দেখি না।

আমি জানি না, আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন কিনা। ফরিদ ভাই আমি মাদ্রাসা পড়ুয়া, দেওবন্দী পরিবারের একজন ভাল দেওবন্দী আলেমের ছেলে মাদ্রাসায় জালালাইন পড়ার সময় ক্লাসে ডায়ালেক্টিক মেটেরিয়ালিজম বইটি রেখে চুপি চুটি পড়ার কারনে হুজুর বাবার কাছে অভিযোগ করলে বাবার পিটুনি খেয়েছি। তারপরও মার্কসবাদের উপর পড়েছি। রবীন্দ্রনাথে গল্প সমগ্র, শরতচন্দ্রের শ্রীকান্ত পড়েছি, দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা পড়েছি।

আমি সেই কথা বলছি, মাসুদ মজুমদার ভাইয়ের লেখা আজো পড়ি, ভাবি তাঁর মত একজন মেধাবী অথচ ইতিবাচক লেখকের মূল্যায়ন নাই কেন। আর এ ধরনের লেখাপড়া জানা ভদ্রলোক (ওয়েল ইনফর্মড) লেখক বুদ্ধিজীবি নাই কেন।

ফরিদ ভাই, আপনাকে এত কথা লেখার অন্যতম কারণ হলো, ১৯৮১-৮২ সালে আমি খুব ছোট ছিলাম। তেমন একটা জড়িতও ছিলাম না। কিন্তু আমার বার বার মনে হয়, বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের ইতিহাসে ১৯৮২ সালের ঘটনা একটা বড় তাৎপর্যপূর্ণ।

ইসলামপন্থীদের সাথে জড়িত ছিলাম অনেকদিন। আমি মনে করি আনুগত্যের জন্য পবিত্র কোরআনের যে আয়াতেকে ব্যাবহার করা হয়, "আতিউল্লাহ ..... উলিল আমর" (সুরা নিসা ৫৯) আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এই আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমের এক ধরনের গোলামী মানষিকতা তৈরি হচ্ছে।

জানি না, আপনার বর্তমান প্রেক্ষিত কি, আমি জানি আমার স্পষ্টবাদিতার কারণে অনেকে আমাকে পছন্দ করেন না, তাই আমি আমার জগত নিয়েই থাকি। প্রায় দশ বছর আমেরিকার মিশিগানে একটি পত্রিকা বের করেছিলাম। বর্তমানে ওয়াশিংটন ডি.সি তে আছি। আই টি তে ছোট খাট কাজ করি।

চোখ কান যেহেতু আছে, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে দেশের খবর পেয়ে যাই। তখনই একটু খারাপ লাগে। আমার পুরো নাম, আবুসাইদ মাহফুজ, আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে নিয়মিত লিখতাম বাংলাদেশে। গত এক দশক আমেরিকার মুলধারার রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম ভালভাবেই, তারপর একটু কমিয়ে ব্যাক্তিগুত জীবনে কিছুটা মনযোগ দিয়েছি।" (ফেইসবুক থেকে সরাসরি কপি করা)

এর কিছুক্ষণ পর ৯:৩৯মিনিটে আবার নিন্মোক্ত মেসেজটি পাঠিয়েছিলাম।

"আমার বলার মূল বিষয় হলো, বাংলাদেশে মেধার অবক্ষয় ঘটেছে এজন্য ইসলামপন্থীরা অনেক বেশী দায়ী। কারণটা ব্যাখ্যা করা একটু কঠিন কারণ এটা অনেক ব্যাপক। সম্প্রতি নিহত অভিজিৎ রায়কে আমরা চিনতাম সেই ২০০২ সালে থেকে, এবং তার সাথে কিছুটা কলমী লড়াই করেছিলাম সে সময়। অভিজিতের মৃত্যুর পর আমি ছোট্র একটা পোস্ট দিয়েছিলাম মুক্তমন এবং যুক্তিবুদ্ধি নিয়ে। ইবরাহীম আঃ এত বেশী সম্মানিত হবার অন্যতম কারণ ছিল, ইবরাহীম আঃ ছিলেন একজন প্রচন্ড মুক্তমনা এবং যুক্তিবাদি। কিন্তু কই আমাদের ইসলামিস্টদের মধ্যে আজ সেই যুক্তিবাদিতা আর মুক্ত মন কোথায়। ?"

আমার উপরোক্ত লম্বা মেসেজের পর ফরিদ রেজা ভাই দুই শব্দের ছোট্র একটি জবাব দিলেন, শুধু লিখলেন, "ঠিক বলেছেন।"

ফরিদ রেজা ভাইয়ের লেখা ৮২ সালের স্মৃতিচারণ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় তার উপর ক্ষিপ্ত কিছু ব্যাক্তি কমেন্ট, আমার মাঝে একধরনের অপরাধবোধ জাগার কারণ হলো, আমি জানিনা, ফরিদ রেজা ভাইকে আমি ৮২'র স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে লেখার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেছিলাম কিনা যার কারণে তাঁকে বাঘের মুখে পড়তে হয়েছে। নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আর তাঁকে এভাবে গালি শুনতে হয়েছে। একজনের একটা মন্তব্য পড়ে আমার ঠিক বমি আসার উপদ্রব হয়েছে। সে ব্যাক্তি লিখেছে, "ফরিদ রেজা নাকি গাঁজা টেনে এসব লিখেছেন।"

ছি ছি ছি। তোমরা যারাই এসব লিখছো, মনে রেখ, তোমাদের এত নীচতা শুধু জামায়াত শিবিরকেই আরো নীচু করবে। জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা কত নীচে যেতে পারে সেটা দেখাচ্ছো।

আমার এক পুরনো বন্ধু আবদুল কাদের বাচ্চুকে একহাত নিতে গিয়ে লিখেছেন, "কার দ্বারা সিন্নি খালি মোল্লা চিনলি না।" অর্থাৎ আবদুল কাদের বাচ্চুকে জামায়াত শিবিরই নেতা বানিয়েছে। আমার সে বন্ধুটিকে বলতে চাই। আমি আবদুল কাদের বাচ্চুকে চিনি না। তাঁর সমর্থকও নই, তবে আপনার মন্তব্যের ব্যপারে তাকেঁ সমর্থন করতে চাই এ বলে যে, শিন্নি কি খালি জামায়াত শিবিরেরই কাছে আছে। তাহলে আপনি বুঝাতে চান বাংলাদেশে যতজন নেতা হয়েছে, জ্ঞানী হয়েছে একমাত্র জাময়াত শিবিরের উসিলায়ই হয়েছে? আপনার কাছে থাকে এত সস্তা লেখা আশা করিনি।

আমার এ লেখা প্রায় শেষ করার পর, আজ এইমাত্র আমার সেই পুরনো বন্ধু ফেইসবুক পোস্টে আবারো ফরিদ রেজা ভাইকে খোঁচা দিলেন, আপনার লেখার হেডিং ছিল "তোমার জাত ভাই আমার পাছায় ঢুকলে আমার কি করার আছে?"

ছি! একভা্ই প্রশ্ন করেছেন, "আচ্ছা আপনার কি মনে হয় ফরিদ রেজা সাহেব সমালোচনা করেছে ? নাকি উনি ঘটনাগুলো ধারাবাহিক লিখে গিয়েছেন। উনি যদি মিথ্যা কিছু বলে থাকে তাহলে ওই সময়ের জীবিতরা খন্ডন করে দিলেই তো চুপ।"

তখন আপনি জবাব দিয়েছেন, "ফরিদ আহমদ রেজা ভাইকে ব্যবহার করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ওরা তার পেছনে কাজ করে যাচ্ছিল। তার লেখার মাঝেই অনেক সব্বিরোধিতা আছে। ভাল করে পড়ে দেখুন।" ওহ তাই নাকি? আপনার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে ফরিদ রেজা ভাইয়ের ব্যপারে আমার আর কোন কথা নাই, আর আপনার কথা যদি সত্য না থাকে তাহলে আপনি কিন্তু মিথ্যা অপবাদের দায়ে ফাসেকের পর্যায়ে পড়তে পারেন। যেটা গীবত নয় তোহমত।

আমি বাচ্চু ভাইকেও চিনি না ফরিদ ভাইকেও চিনি না। কাদের বাচ্চু বা আহমদ আবদুল কাদের ভাইকে একবার অবশ্য দেখেছি সম্ভবত ১৯৯৬ সালে তিনি মিশিগানে এসেছিলেন। আমি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের কোনদিন সমর্থক ছিলামনা, এবং তাঁর (ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবের) এপ্রোচকে খুব অন্যায় মনে করি। কিন্তু জামায়াত শিবিরের কিছু অসহনশীল, অসম্ভব প্রতিক্রিয়াশীল ব্যাক্তির আচরণ দেখে ভাবতে মনে চায় কেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদরা এত এক্সট্রিম অবস্থায় যায়, কেন আল আজহারের শায়খ গামা'র মত ব্যাক্তিরা এত চরম বিরোধীতায় চলে যায়। আমার মনে হয় কোন মানুষের দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকিয়ে দেয়া হয়। তখনই মাওলানা মাসউদদের মত অবস্থা দাঁড়ায়। আপনারা মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেবেন না দয়া করে। আমি শ্রদ্ধেয় মকবুল আহমদ সাহেব, শ্রদ্ধেয় মাওলানা রফিউদ্দিন সাহেব , ডাঃ তাহের ভাই, ডাঃ মুকুল ভা্ই, মাওলানা আবদুল হালিম ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হতে পারে এ মুহুর্তে ফরিদ রেজা ভাই এ কথাগুলো লেখার কারণে অনেকের কষ্ট লেগেছে কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানানোর একটা সুন্দর পদ্ধতি থাকা উচিত।

ফরিদ রেজা ভাই তাঁর লেখায় শিবিরের সাবেক সভাপতি ডাঃ সাইয়েদ আবদুল্লাহ তাহের ভাই, ডাঃ আমিনুল ইসলাম মুকুল ভাইয়ের নাম এনেছেন। ডাঃ তাহের ভাই, মুকুল ভাই, ওবায়েদ ভাই, মাওলানা আবদুল হালিম ভাইকে আমি খুব ভালভাবে চিনি। মুকুল ভাই, ওবায়েদ ভাই, হালিম ভাই আমার জীবনে পাওয়া কিছু প্রিয় মানুষদের অন্যতম। আমি মুকুল ভাই, হালিম ভাইরা আমার জীবনে পাওয়া সবচে মোখলেস কিছু মানুষের অন্যতম। আপনি নিশ্চয়ই রেজা ভাইকে চেনেন। আমি বুঝতে পারছিনা ফরিদ রেজা ভাই কি এত অন্যায় কথা বলে ফেলেছেন। পারলে আপনারা কিছু বলেন।

তবে আমি আমার একটা কৈফিয়ত দিতে চাই। ফরিদ ভাইকে লেখা আমার মেসেজের মধ্যে আমি ১৯৮২ সালের ঘটনাকে উল্লেখযোগ্য এবং মাইলস্টোন বলেছি এর কারণ তিনটি প্রধান কারণে।

জামায়াত-শিবির, যুব শিবির নিয়ে বিতর্ক টেনে আনার সামান্যতম চিন্তা তো ছিলইনা এবং এটা যে এসে পড়বে সেটাও ভাবিনি। তবে আমি ৮২ সালকে এত গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কারণ দুটি (১)আমি মনে করি বর্তমানে যা ঘটছে তা প্রধানত সাংবাদিক এবং লেখকরা ঘটিয়েছে। জাফর ইকবালরা তরুন লেখক তৈরি করেছে। অনেকদিন থেকে জামায়াত এবং ইসলামবিরোধী সাহিত্য তৈরি, সংবাদ এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ১৯৮২ সালের বিভক্তির মাধ্যমে সবচে' ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষেত্রে। প্রচুর পরিমানে মেধাবী ইসলামপ্রিয় তরুন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মাসুদ মজুমদার, মিয়া মোহাম্মাদ আইয়ুব, প্রফেসর মুজাহিদ, ডঃ শাহজাহান খান মুকুলদের মতো অসাধারণ প্রতিভাবানদেরকে হারানো ইসলামের জন্য বিরাট ক্ষতির দিক ছিল। সাংবাদিকরা স্বাধীনচেতাই হয়ে থাকে। একটু ব্যাতিক্রম না হলে সাংবাদিক হতে পারে না। সাংবাদকিতায় একটা কথা আছে, কুকুর যখন মানুষ কামড়ায় সেটা কোন সংবাদ নয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ যদি কোনদিন কুকুর কামড়ায় সেটাই সংবাদ। অপরদিকে, আনুগত্য সম্পর্কে সুরা নিসা'র ৫৯ নং আয়াতের যে ব্যাখ্য দেয়া হয়, সেটা ভুল। বিশেষসত প্রায়গিকভাবে এটা একধরনের মানষিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। সে যাক এ মুহুর্তে আমি সে আলোচনায় গিয়ে নতুন বিতর্ক আনতে চাইনা। আমার জানামতে জামায়াত সমর্থিত অনেক আলেম আছেন যারা মদীনা, বা আল আজহার থেকে উর্ত্তীর্ণ প্রয়োজনে এ ব্যপারে আলোচনা হতে পারে।

জ্বি হুজুর মার্কা কিছু বাহিনী তৈরি না করে শিবিরের কর্মসূচীর মধ্যে যেভাবে বলা ছিল, "আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাহেলিয়াতরে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতা সম্পন্ন" কিছু লোক তৈরি করা হতো তাহলে আরো অনেক ভাল হতো। 'জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা।' সত্যিই তাই!!

ইসলামী সাহিত্যের নামে কিছু চর্বিত চর্বনের বাইরে পর্যাপ্ত সাহিত্য থাকতো, ভাল মানের সাংবাদিক থাকতো, তাহলে ইতিহাস হয়তো ভিন্ন হতো। পত্রিকা কিনে মিডিয়া কিনে যে কিছু হয়না তার প্রমান তো আর দেয়ার দরকার নাই। দরকার ছিল সাংবাদিক সৃষ্টি। পৃথিবীর সবগুলো সমাজ বিপ্লবের পেছনে সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা এবং শিক্ষা বিশাল ভুমিকা রেখেছে। পত্রিকা বা টি.ভি'র মালিকানা নয়। বুর্জুয়া সৃষ্টির মাধ্যমে নয়। জ্বি হুজুর মার্কা কিছু লোক দিয়ে আনুগত্য পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সমাজ পরিবর্তনে কোন ফায়দা হতে পারে না।

(২) দ্বিতীয় যে কারণে আমি ৮২ সালকে মাইল স্টোন মনে করি তা হলো মুসলিম বিশ্বের সাথে সর্ম্পকের বিষয়ে। আমার জানামতে ৮২ সালের পর থেকেই জামায়াতের সাথে ইরানের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এটা হয়তোবা জামায়াতকে সেীদি-ইরানের চিরন্তন রাজনীতির কোপানলে পড়তে হয়েছে। সবাই জানতো, জামায়াতের সাথে সেীদি আরবের সম্পর্ক ভাল, জামায়াতের এই বিপদের সময় সেীদি আরব কি সামান্য ভুমিকা রেখেছে? তাছাড়া শিয়া সুন্নী একটা বড় পার্থক্য যদিও আছে। তবে যত পার্থক্য আছে তার চেয়ে অনেক বেশী দুরত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে সেীদি -ইরান রাজনীতি। মুসলমানরা যতদিন এসব ফিরকাবাজী থেকে নিজদেরকে দুরে রাখতে পারবে না ততদিন সমস্যা দুর হবার কোন সম্ভাবনা নাই। পার্থক্য নাই কোথায়? কেয়াম বেকেয়াম, দোয়াল্লিন যোযাল্লিন, মাজহাবী লা মাজহাবী ওহাবী সুন্নী ফেরকাবাজী কোথায় নাই। শিয়া সুন্নী ইস্যুকে খুব বেশী সামনে আনাটা সেই ইরান-সেীদি রাজনীতির মারপ্যাঁচ।

(২) ৩য় যে কারণে আমি মনে করি ৮২ উল্লেখযোগ্য, যে কথাটা বারবার, বার বার এসেছে সেটা হলো ৭১। অবশ্য জামায়াতের পক্ষ থেকেও বার বার উত্তর পাওয়া গেছে । ফরিদ রেজা ভাইয়ের লেখা অনুসারে আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের ভাষায় '৭১ আমাদের ক্রেডেনশিয়াল'। ওয়েল, স্বভাবতই এ কথার পর আর কোন কথা থাকে না। তবে তারপরেও আমি মনে করি তার পরেও সম্ভবত কথা থেকে যায়। আমি যতদুর জানি মাওলানা আবদুর রহীমও এব্যাপরে কথা বলেছিলেন।

সে যাক, এটাই ছিল আমার চিন্তা এ কারণেই আমি ফরিদ রেজা ভাইকে লিখেছিলাম। আমি মনে করি ফরিদ রেজা ভাই ৮২ সালের স্মৃতিচারণে মনের আবেগে কথাগুলো লিখেছেন। এত প্রতিক্রিয়া আসবে তিনিও হয়তো ভাবতে পারেন নি। জামায়াতের এই বিপদ মুহুর্তে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার জন্য ফরিদ ভাই করেন নি বলেই আমার বিশ্বাস। এটা কোন বিবেকবান মানুষ করতে পারেনা।

আমি ফরিদ আহমদ ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার ইনবক্স মেসেজ যদি আপনাকে ৮২ সালের স্মৃতিচারণ করতে অনুপ্রাণিত করে থাকে এবং সে প্রেক্ষাপটে ন্যাস্টি কমেন্টে আপনি যদি আহত হয়ে থাকেন তাহলে সে জন্য আমি ক্ষমা চাই। আপনাকে বাঘের মুখে ঠেলে দেয়ার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।

আমরা যারা জামায়াতের সমালোচনা করি আর না করি, ৭১ এর বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল কোন সন্দেহ নাই। সাথে সাথে আমি মনে করি বর্তমান সরকার একান্ত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই জামায়াত নেতাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিচ্ছে। এর প্রতিবাদ যে কোন বিবেকবান ব্যাক্তি করবে এবং করা উচিত। আপনার কতটুকু বিবেক আছে তাতেই প্রমাণ করবে। যেমন করেছেন ডঃ আসিফ নজরুল, ডঃ তুহিন মালিক। এ সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন। এটাও সত্য। কিন্তু সে সুযোগটা করে দিয়েছি আমরা ইসলামিস্টরাই।

বিষয়: বিবিধ

১৯৮৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342466
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১৯
আয়নাশাহ লিখেছেন : পড়ে নিলাম। ধন্যবাদ এই বদবখতকে কোট করার জন্য।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৫১
283870
সালাম আজাদী লিখেছেন : বদবখত?!!!!!
342470
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
সালাম আজাদী লিখেছেন : হাহাহা, ভাইরে, এক খান স্টাটাস দিয়ে আমি এখন বিপথগামিদের তালিকায়.... এতো অধৈর্য আমরা...
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৩
283882
কলমি লতা লিখেছেন : ফেসবুকে আপনার কমেন্টটা বেশ সরলিকরণ মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে, পুরা জামাত রেজা সাহেবদের ঘ্ররুনা করার জন্য নোটিশ জারি করেছিল। হতে পারে আপনার এলাকার নেতার ভাষ্য ছিল ওটা। তার ব্যক্তিগত মত । আমি তো অনেক নেতার কাছে বাচ্চু সাহেবের ভালো দিক শুনেছি। তাহলে এমন ( সব নেতাই বাচ্চু/রেজাদের ব্যপারে খারাপ বলতেন? সরলিকরন কি ঠিক হলো? বিশেষ করে আপনার মত জ্ঞানী লোকদের কাছে?
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৪৫
284071
সালাম আজাদী লিখেছেন : যে সব মন্তব্য পেয়েছি, এবং আপনিও করলেন তাতে কি আমার জ্ঞানের কোন মূল্য আছে? এখনো পর্যন্ত আমি যেসব কথা পড়লাম আমাদের ভাইদের কাছ থেকে তাতে কি আমার কথার সত্যতা মেলেনা? রেজা সাহেব গণ কি এখনো শান্তিতে আছেন? যা হোক, আমাদের ধৈর্য একটু বাড়লে ভালো হত....., কি বলেন কলমি লতা ভাই
342477
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর লিখাটির জন্য। একটি সংগঠন যদি সাধারন মানুষের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করে সে ক্ষেত্রে সব ধরনের মানসিকতার মানুষই এর মধ্যে আসবে। প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখা যাবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার শেষ প্যারার সাথে পুরাপুরি একমত। ৮২ সালে আমি যদিও শিশু কিন্তু পরবর্তিতে ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলন এর কর্মিদের সাথে সখ্যতার কারনে সেই সময় এর ঘটনা কিছু আগেই শুনেছি। সেই সময় কিন্তু সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মিদের উপর ও কিছু চাপ এসেছিল। বুলবুল সারওয়ার এর মত মানুষ কেন এখন বাইরে সেটাও প্রশ্ন করা যায়। শুনেছি সাইমুম সিরিজ লিখার জন্য আবুল আসাদ এর বিরুদ্ধে ও অভিযোগ এসেছিল। তবু ভাল এখন সেই অবস্থা থেকে উত্তির্ন হয়েছে। আমার মনে হয় ফরিদ রেজা সাহেব অসময়ে লিখাটি লিখেছেন। লিখাটিতে উল্লেখিত অনেকেই এখন জেলে কিংবা ফাঁসিতে শাহদাত বরন বরেছেন। মানুষের আবেগ তার বিরুদ্ধে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আর ৭১ বিষয়টি নিয়ে কিন্তু এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে বিশেষ করে ভারতিয় অনেক গবেষক এই নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষনার পর।
342484
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৩
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : নিজদের হীনমন্যতারই পরিচয় দিচ্ছেন। জামায়াত কর্মীদের মান যে কত নীচে যাচ্ছে তার প্রমাণ দিচ্ছেন। আর সত্যি বলতে কি কথাটা একটু রুঢ় মনে হলেও আপনারা যা করছেন তাতে আজকে যা ঘটছে তা কেন ঘটছে বুঝতে আরেকটু সহজ হচ্ছে।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৬
283869
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : ১০০% একমত । সংখ্যায় বেড়েছি but গুনগত মান নিচের দিকে ।
342488
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩১
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ৮২ সালে আমি যদিও শিশু কিন্তু পরবর্তিতে ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলন এর কর্মিদের সাথে সখ্যতার কারনে সেই সময় এর ঘটনা কিছু আগেই শুনেছি,
তবে আমার কথা হলা বর্তমান পেক্ষাপটে ৮২ সালের ঘটনা নিয়ে আসা মানে হচ্ছে কাটা গায়ে নুনের চিটা দেওয়া।
ইনশা্আল্লাহ জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির বাংলার জমিনে আছে, ছিল, থাকবে। যতই বাধা আসুক, ষড়যন্ত্র হউক না কেন?
মাওলানা শাখাওয়াতের মত লোক যেখানে কিছু করতে পারে নাই, বর্তমানের শাখাওয়াত মার্কা মানুষরাও কিছু করতে পারবে না।
342489
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৫৫
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনার অনেক বড় লিখাটা সময় নিয়ে পুরাই পড়লাম, তবে ৮১-৮২ সালের কিছুই জানা না থাকার কারনে আমি তেমন কিছু বুজতে পারিনি। কারন আমি দুনিয়াতে এসেছি ৮৬ এর শেষের দিকে, তাই আপনাদের অনেক অনেক জুনিয়র বলতে পারেন। তবে আমি জামাতের সাথে চলাফেরা করার সুবাদে যা বুজতে পারতেছি তা হলো, জামাত লিখালিখির ব্যাপারে তেমন কোন সহযোগিতা মুলক আচরন করেনা, বরং অনেকটা বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা আমার ও ভাল লাগেনা, মানুষ জনমগতভাবেই স্বাধীন, তাই মানুষের মাঝে স্বা্ধীনচেতা স্বভাব থাকবেই। জোর করে এই স্বাধীনচেতা কে দাবিয়ে রাখতে চাইলে হিতে বিপরীত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আমি মনে করি নিজেদের মধ্যে কাদা ছুটাছুটি না করে যার যার মত করে অতীতের সব কিছু ভুলে সবাই ইসলামের জন্য মানবতার জন্য কলম চালিয়ে যা্ওয়া উচিত।
লিখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
342491
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৮
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অফিসে তবুও লেখাটি পুরো না পড়ে থাকতে পারলাম না !! আজ অফিসে ফাঁকি দিলাম। কারণ এমন একটি বিষয়ে লেখা পোস্ট,যাকে(ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন) সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ফীল করি ।
মাহফুজ ভাই যেই সময়ের কথা বলছেন, তখন আমার জন্মও হয়নি ! তাই অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার কাছথেকে কিন্তু আমার সময় আমি যা দেখেছি তা থেকে কিছু পয়েন্ট আপনাকে বলছি।
* সবচেয়ে ক্ষতিকর সময় জোট সরকারের আমল।
* ৮২ সালের চেয়েও শক্তিশালী আঘাত ২০০৯-২০১০
মাসুদ ভাইয়ের পরে, যিনি ছিলেন উনার থিম ছিল যে কোন ভাবেই হোক জনশক্তি বাড়ানো, ফলে এই জাগায় এসে আমরা মান হারিয়েছি।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় আমি এই রকম অনেকই দেখেছি যাদের রিপোর্টে লিখা থাকত, তাঁরা দৈনিক ১২০০-১৪০০ পৃষ্ঠা ইসলামী সাহিত্য পড়তেন !!!!!! এটা আমার কাছে দুনিয়ার অষ্টম বিস্ময় মনে হত। শুধুমাত্র ১৫ দিন রিপোর্ট রেখে একটি লোক সাথী শপথ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধীন হন !!!! এই রকম অনেক বিষয় আছে।
এই সব বিষয়ে প্রশ্ন করে বেশ কয়েক বার বৈঠক থেকে বাহির হতে হয়েছে।
যাক তাঁর পরেও কথা হল, সমালোচনা করারও একটি সময় আছে, স্থান আছে। সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা ইসলামী আন্দোলন করি, কখনও শিবির নামে, কখনও যুব শিবির , কথনও জামাত বা অন্য নামে ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ( আশা করি, পড়া শেষে এই মন্তব্যটি ডেলেট করে দিবেন।)
342508
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৯
আবু নাইম লিখেছেন : হিফজু ভাইয়ের কথার আমি যতটুকু শুনেছি তার সারমর্ম ছিল, আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে তিন ভাগ হয়েছে আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান), হাসিনা সম্ভবত সে সময় বাংলাদেশে ফিরে গেছেন তাই আওয়ামী লীগ (হাসিনা)। হিফজু ভাইয়ের সেদিনের কথার সারাংশ হলো, তারপরও আওয়ামী লীগের কিছুই হয়নি, মুল আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগই রয়ে গেছে। মালেক মিজানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুতরাং জামায়াতই মুল সংগঠন আপনারা যদি ভেঙে চলে যান, এভাবেই হারিয়ে যাবেন।[i][/i

রেজা ভাইয়ের সাথে আমার বেশ কয়েকবার সাক্ষাত হয়েছে. উনি বাড়ীতে গেলে দেখা করতাম. তখন আমি ওনার থানা সভাপতি.

আলোচনা, সমালোচনা, স্মৃতিচারণ সব কিছু হতেই পারে. কিন্তু তা সময় সুযোগ সাপেক্ষে. কাউকে কস্ট দিয়ে বিপদে ফেলে এরকম করা কি উচিত. রেজা ভাই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থান ব্যক্তির নাম নিলেন. যারা এখন বিপদ গ্রস্ত। সামনে আও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন.
342537
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৩০
আবু মাহফুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ, ভাই আবু নাইম, আমার মনে হয় ফরিদ রেজা ভাই সরল মনে লিখেছেন, ব্যাপারটা সেভাবে চিন্তা করেন নি। এ ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত। বিশেষত আবেগের দৃষ্টিতে ফরিদ ভাই এ সময় কয়েকজন ভাইয়ের নাম নিয়ে লেখা অনেক ভাইয়ের আবেগে লাগাটা স্বাভাবিক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
১০
342590
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৩৬
স্বপন১ লিখেছেন : চমৎকার বিশ্লেষন। তখন আমি ঢাকাতে ছিলাম। পুরো তখন ঢাকা ননকোঅপেরশনে ছিল, মিলন গ্রূপের সাথে। ফরীদ ভাই যে ৭ পর্ব প্রকাশ করেছে, ঘটনা ১০০ পাসেন্ট সত্য। ২০১০ সালে আবারও খন্ডন। আমিও নিজেও মরহূম মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেব এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের সভাপতি, হূমায়ুন ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি।

আমি আল বদর বলছি এবং জামাত রিসার্স পর্ব পড়ুন।

১১
342595
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:৫৬
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
একটু লম্বা ও অগোচালো মনে হলেও পড়া শেষে মনে হয়েছে - লিখেছেন চমৎকার।

আপনার লিখার উপর করা মন্তব্য পড়ে আমি লিটারেলী এক ধরনের অবাক হলাম। মনে হল - কোন এক অদ্ভুত সীমাবদ্ধতায় ইসলামী আন্দোলনের ভাইরা কোমর বেঁধে জামায়াতে ইসলামী আর শিবিরের স্বার্থ সংরক্ষন করতে, মরনপন যুদ্ধ করতে বদ্ধ পরিকর হয়েছে ও ফাইট এ নেমে পড়েছে।

কিন্তু কতই না ভাল হত যদি ভাইরা বুঝতো প্রতিটি ভাইয়ের দায়িত্ব ইসলামের স্বার্থ সংরক্ষনটি বুদ্ধিমানের কাজ, নাজাতের কাজ। জামায়াতে ইসলামী আর শিবিরের স্বার্থ সংরক্ষন নয়। জামায়াত কিংবা শিবির বড় জোর একটা প্লাটফর্ম ঐ দায়িত্ব পালনের। কিন্তু জামায়াত শিবিরকে জোর করে ধরে শক্তি ক্ষয় কোনদিন ইসলামের সুফলের জন্য সহায়ক বলে বিবেচিত হবে না।

ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File