উইগোরের মুসলমান ঃ মুসলমানদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৭ জুন, ২০১৫, ০৯:১৫:১৩ রাত
উইগোরের মুসলমান ঃ মুসলমানদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য
গত সপ্তাহের এক সংক্ষিপ্ত পোস্টে চীনে উইগোরের মুসলমানদের উপর অত্যাচারের কথা সামান্য উল্ল্যেখ করেছিলাম। এ বছর অবশ্য এ নিয়ে আরো কিছু সংবাদ এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। চীনা কম্যুনিস্ট সরকার এই উইগোর মুসলমানদের উপর রোজা রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শুধু তাই নয়, এবছর রমজান উপলক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট সরকার প্রকাশ্যে মদপান এবং নারী নৃত্যের আয়োজন করে।
এ সব প্রেক্ষাপটে, আসলে এই উইগোরের মুসলমানদের সম্পর্কে আজকের মুসলমানদের আরো জানা দরকার।
উইগোরের মুসলমানদের সম্পর্কে আজকের বিশ্ব বা সাধারন মানুষ এবং সাধারণ মুসলমানরা না জানার অনেকগুলো কারন রয়েছে। প্রথমত কমিউনিস্ট সরকার সবযুগে সবদেশে হিটলারের মত গোয়েবলসীয় যে কায়দা অবলম্বন করে যেটা হলো মিডিয়া এবং প্রচার মাধ্যম। আর মুসলমানদের হুজুররা সারা জীবনই এই মিডিয়া নামক বস্তু থেকে যোজন যোজন দুরত্ব বজায় রাখেন। আমাদের মুসলমান ভাইরা কেউ আখেরাত নিয়ে ব্যাস্ত, আবার কেউ দুনিয়া নিয়া ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। তাদের দৃষ্টিতে মিডিয়াতে দুনিয়া ও নাই আখেরাত ও নাই।
সে যাক, উইগোরের মুসলমান সর্ম্পকে বিশ্ব না জানার কারণ হিসেবে কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর মিডিয়া নীতি ছাড়া চীনা ভাষার জটিলতাও এক বিষয়। প্রথমত মনে করুন আপনি এ লেখা পড়ে বা কারো কাছে শুনে ইন্টারনেটে সার্চ করবেন, কিন্তু উইগোর বানান করবেন কিভাবে। ইংরেজীতে এই উইগোর বানানটাও একটু কঠিন। তারপর এই উইগোর জাতি চীনে যে অঞ্চলে রয়েছে সে অঞ্চলকে আমরা বলি সিংকিয়াং । আবারতেবলি জিংজিয়াং। ইংরেজীেতে এই এলাকার নামের বানান শুরু হয়েছে ইংরেজী এক্স অক্ষর দিয়ে। ইংরেজী ভাষায় সম্ভবত এক্স অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া শব্দের সংখ্যা চীনা ভাষার শব্দগুলোই কিংবা বেশীরভার চীনা ভাষার অক্ষরগুলো।
চীনের উত্তর পুর্বাঞ্চলের এই বিশাল এরিয়া মুসলিম অধ্যুষিত। সিংকিয়াং এর উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এর বিশাল ব্যাপী রয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত কিরগিজিস্তান, পশ্চিমে রয়েছে তাজিকিস্তান। এই তাজিক মুসলিমরা আরেক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। পৃথিবীর অন্যতম সাহসী জাতি। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ভারতের জম্মু এবং কাশ্মির যেখানেও রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসতি। আর দক্ষিণে পর্বতমালার পর রয়েছে তিব্বত।
চীনের সিংকিয়াং এর মুসলিম বসতির অন্যতম একটি নাম হল কাশগর। এই কাশগরে অনেক মুসলিম জ্ঞানী গুনি জন্মেছিলেন। কমিউনিস্ট শাসনের অত্যাচারে এসব মুসলমানদের অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে যান। এই কাশগরেরই অন্যতম ইসলামী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুর রহমান আল কাশগরী বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। অধ্যাপক আবদুর রহমান কাশগরী ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় সম্ভবত আল্লামা কাশগরীর নামে একটি ছাত্রাবাস করা হয়েছে। এই আল্লামা কাশগরী ছাত্রাবাস সেই উইগোরের নির্যাতিত মুসলমানদেরই স্মৃতি চিহ্ন। বাংলাদেশে একসময় দাখিল শ্রেণীর ১ম বা ২য় বর্ষে আরবী সাহিত্য হিসেবে আল হাদীক্কাহ নামে একটি কিতাব পড়ানো হতো, এই আল হাদীক্কাহ কিতাবখানা আল্লামা কাশগরীর লেখা।
আরবী ক্যালিওগ্রাফীতে চীনে উইগোরের এই মুসলমানরা সম্ভবত সারা বিশ্বে সেরা। বিচ্ছিন্নভাবে আরবী লেখার ক্যালিওগ্রাফী অনেক দেশেই চর্চা হয়, কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে সম্ভবত এই উইগোরের মুসলমানদের ক্যালিওগ্রাফী সারা বিশ্বে সেরা।
আজকের মুসলিম বিশ্ব চীনে সিংকিয়াং এর উইগোরের এই মুসলিম জাতি সম্পর্কে জানা একান্ত জরুরী। মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য ছাড়াও মুসলমানদের বুদ্ধিভিত্তিক বা ইন্টেলেকচুয়াল গোড়া পত্তন যে এরিয়াগুলোতে হয়েছে এই সিংকিয়াং, বা উইগোর জড়িত।
এর সাথে রাশিয়ার কিছু অংশও জড়িত। আমরা মুসলমানরা বোখারী শরীফ চিনি, একটু সচেতন মুসলমানরা বোখারা সমরকন্দ হয়তো জানি। কিন্তু অধিকাংশ মুসলমানই জানেন না যে পবিত্র কোরআনের পর হাদীস গ্রন্থের অন্যতম প্রধান এই বোখারী শরীফের ইমাম বোখারীর ইতিহাস এই বোখারার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
শুধু তাই নয় এই উইগোর বা কাশগর থেকে উত্তর পশ্চিম কোণের দিকে দুই আড়াই হাজার মাইল প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার ব্যাপী কিরগিজিস্তান, কাজাস্তান পেরিয়ে রাশিয়া সাম্প্রতিককারে ইউক্রেনের বিতর্কিত ক্রিমিয়ায় তাতারস্তানে রয়েছে আরক মুসলিম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সম্প্রদায়।
ব্যাপারটা এতই গভীর যে, এই সংক্ষিপ্ত লেখায় এটা ব্যখ্যা করা সম্ভব নয়। আগ্রহী পাঠকগনকে (পাঠিকা সহ) অনুরোধ করবো উপরে উল্লখিত কয়েকটি কী ওয়ার্ড বা মুল শব্দ নিয়ে গবেষনা করতে। (১)উইগোর (২)সিংকিয়াং (বা জিংজিয়াং), (৩)কাশগর (৪) তাতার বা তাতারস্তান এছাড়াও তাজিকিস্তান, কিরগিস্তান, উজবেকিস্তান। আল্লাহ পাক মুসলমানদের সহায় হোন।
বিষয়: বিবিধ
২৩০২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চিনে মুসলিম আছে প্রথম জেনে ছিলাম সাইমুম-১ এর শুরুটুক পড়ে। তারপর উইঘুর,হুই মুসলিমদের আরো ইতিহাস পড়েছিলাম সাইমুম সিরিজ এরই তিয়েনশানের ওপারে,সিংকিয়াং থেকে ককেশাস পড়ে। তারপর "ইবনে বতুতার সফর নামা" আর অন্যান্য কিছু বই পড়ে জেনেছি চিনের মুসলিম দের কথা। য চিন একসময় বন্ধুত্বপুর্ন হয়ে উঠেছিল মুসলিমদের এবং ইসলাম গ্রহন করেছিল সাহাবিদের হাতে। সেই চিনই এখন ইসলামকে ধ্বংস করছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন