আমাদের সোনাইমুড়িঃ সোনাইমুড়ী সেকাল এবং একাল

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৭ জুন, ২০১৫, ০১:৫৫:৪২ দুপুর

সময়টা অবশ্য খুব একটা পার হয়নি যে, সেকাল একাল লিখতে হবে। কিন্তু সময় কম হলেও পরিবর্তন হয়েছে অনেক তাই মন চাইছে আধুনিক পাঠকদের কাছে এই সেদিন আর আজকের দিনের কিছু পরিবর্তন তুলে ধরতে।

হ্যাঁ, অবশ্যই কথাগুলো আমাদের সোনাইমুড়ী নিয়ে। আমি আজ বাইশ বছর সোনাইমুড়ী থেকে দুরে। এই বাইশ বছরে এই সোনাইমুড়ী আর সেই সোনাইমুড়ী নাই। সবচে' বড় কথা, বড় মজার, বড় আনন্দের কথা হলো আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বিশ্বময় আমরা খবর পাই সেকেন্ডের মধ্যে। বিশেষ করে ফেইসবুক আধুনিক যুগের এমন এক সপ্তাচার্য যে, ব্যাক্তিগতভাবে এই ফেইসবুকের মাধ্যমে আমি এমন অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি যাদের সাথে আজ ২৫ বছর দেখা না, যাদের অনেকে ছিল আত্নার আত্নীয়, প্রিয় বন্ধু।

সে যাক, কথাগুলো সোনাইমুড়ী নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। আমার শৈশবে দেখা সোনাইমুড়ী আর আজকের ২০১৫ সালের সোনাইমুড়ী কত ফারাক, কত তফাত। আমার শৈশবের সোনাইমুড়ী বলতে আমি সেই ৭৬,৭৭,৭৮ সাল দিয়েই শুরু করি। তার আগের কথা হয়তো প্রয়োজনও নাই বা আমারও খুব একটা মনে নাই।

আমি তখন সোনাইমুড়ী আলীয়া মাদ্রাসায় পড়ি। অকপটে স্বীকার করতে আপত্তি নাই, সত্যি বলতে কি আমি ছিলাম বেশি হাবা গোবা। দেদ্দেরইয়া (ময়লা, আগোছালো, পাঞ্জাবী, কোরতা, মাথায় একখান টুপি, পররে উঁচা নিচা লুঙ্গি পরে প্রতিদিন বগাদিয়া থেকে হেটে সোনাইমুড়ী মাদ্রাসায় যেতাম। আমার এই লেবড় দেবড় চলা নিয়ে আমার মরহুমা মায়ের বকা ছাড়াও বন্ধুবান্ধবদের বহু টিটকারি খেয়েছি। ক্লাসমেটরা ভালও বাসতো। অবশ্য একথা না বললে হয়তো কথাগুলো বেখাপ্পাও থেকে যাবে, আত্নপ্রশংসা নয়, আমি ছিলাম অসম্ভব ভাল ছাত্র। আমার ক্লাসমেটরা অনেকেই আমার বাড়ী এসে পড়া বুঝে নিত আমার কাছ থেকে। জীবনে কোন পড়া দু'বার পড়িনি। সেসময়ের কথা বলছি। এখন আর সেই স্মরণশক্তি না্ইরে ভাই। একদিকে লেবড় দেবড় চলা অপরদিকে পড়াশোনায় অসম্ভব ভালর এ অবস্থায় কালিকাপুরের আনা মিয়া মেম্বারের ছেলে আমার আবাল্য বন্ধু জাহাঙ্গির গালিতে দিতে দিতে বলতো "আবুসাইদ, পড়ালেখা ছাড়া আল্লা্হ বুঝি তোরে আর কিছু দেয় নাই।"

বগাদিয়া থেকে সোনাইমুড়ীর পথে সে সময় তেমন কোন বাস ছিলনা। চাটখিল থেকে সোনাইমুড়ী হয়ে মাত্র দু'টি বাস চট্রগা্ম যেত। বাস দুটির নাম ছিল, (১) বিলাস ভ্রমন (২) ফ্রেন্ডস অটো সার্ভিস। আমার যতদুর মনে পড়ে এ বাস দুটিও আমাদের সময়ই অর্থাৎ ৭৭-৭৮ এর দিকে চালু হয়েছিল। সোনাইমুড়ী থেকে বাসে ঢাকা যেতে হলে অবশ্যই চেীমুহনী হয়ে সম্ভবত লক্ষীপুর - ঢাকা বাসে ফেনী হয়ে যেতে হতো। ট্রেনে সোনাইমুড়ী থেকে লাকসাম গিয়ে চট্রগামের ট্রেনে উঠতে হতো ঢাকা যাওয়ার জন্য।

বগাদিয়া থেকে প্রতিদিন হেঁটে সোনাইমুড়ী যেতে রাস্তার সবকিছু মুখস্ত হয়ে যেত। সোনাইমুড়ীর কাছাকাছি, সম্ভবত বর্তমান উপজেলা কম্প্লেক্সের পাশে একটি মাইল পোস্ট ছিল। সে সময় মাইলের হিসাবই করা হতো, মাইলপোস্টে লেখা ছিলা "রামগঞ্জ ১৭, চাটখিল ১০" স্বভাবতই বুঝার বিষয় সোনাইমুড়ি থেকে রামগঞ্জ ১৭ মাইল আর চাটখিল ১০ মাইল। অপরদিকে মা্ইলপোস্টে লেখা ছিল "মাইজদি ১১, বেগমগঞ্জ ৬"। সেই ৩৬-৩৭ বছর আগে হাঁটতে হাঁটতে মুখস্ত করা মাইলপোস্ট এখনো মনে আছে।

ও হ্যাঁ, আধুনিক সোনাইমুড়ীর বন্ধুরা, সোনাইমুড়ী বাইপাস বলতে কিছুই ছিলনা সেসময়, বাইপাসের এই যায়গায় ছিল খাল, নোয়াখালীর সেই খাল। এই সে সময় বর্ষা কালে পালতুলে নেীকা চলতো। আর খালের মধ্যে মাছ ধরার জন্য ছিল বেয়াল। আমি জানি না, আধুনিক বাংলায় বেয়ালকে কি বলে। অর্থাৎ মাছ ধরার সেই কি বিশাল জাল। আমরা যখন কয়েকজন কিশোর বালক পাকা রাস্তা দিয়ে হাটতাম সে সময় যতদুর মনে পড়ে বেলা ৩টা সাড়ে তিনটা দিকে বিলাস ভ্রমন অথবা ফ্রেন্ডস অটো সার্ভিসের একটি বাস চিটাগাং থেকে বগাদিয়া সোনাইমুড়ী পার হতো আমরা তখন মাদ্রাসা থেকে বাড়ীর পথে থাকতাম, বাস আসতে দেখলে কিশোর মনে সেদিন সে কি আনন্দ, লাফানি আর চিতকার।

ও হ্যাঁ, রেলগাড়ীর আনন্দের কথা তো বলেই শেষ করা যাবেনা, অনেক সময় খালের উপর দিয়ে বাঁশের সাকো পার হয়ে রেললাইন দিয়ে হেঁটে যেতাম সোনাইমুড়ী। আর শোন, কানে কানে একটা কথা বলি, আমরা খুব দুষ্ট ছিলাম, রেললাইনে দু বন্ধু হাত ধরাধরি করে হাটতাম, আলোকপাড়া সিগনালের কাছে গেলে সিগনাল ধরে টানাটানি করতাম। আর ট্রেন আসতে দেখলে, দুষ্টামি করে, পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা বা সিকি রেখে দিতাম রেল লাইনের উপর, পয়সাগুলো ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে গেলে খুব মজা পেতাম।

বন্ধুরা কথাগুলো, তোমাদের কানে কানে বললাম, দোহাই লাগে, কাউকে বলো না। তাছাড়া, শুনছি, সোনাইমুড়ীতে নাকি এক কড়া ইউ. এন. ও এসেছে। ইউ এন ও ম্যাডাম শুনলে তো আর নিস্তার নাই।

আমার মনে আছে, একদিন বাড়ী থেকে সোনাইমুড়ী যাচ্ছি হেটে, ভানুয়াইর কাছে আসলে দেখি, দু'চার জন লোক ভানুয়াই মসজিদের কাছাকাছি দু' একটা ছোটখাট মেশিন টেশিন নিয়ে কি যেন দেখছে। সেদিনের কিশোর মন, মাদ্রাসায় ক্লাসের কথা ভুলে দাঁড়িয়েছিলাম অনেক্ষণ, পরে শোনলাম সেখানে নাকি রাস্তা হবে বাইপাস। ভানুয়াই থেকে কোনাকুনি ছাতারপাইয়া দিকের পুলের সাথে সংযোগ দিয়ে। সেদিন আমার মনে হয়েছিল, এটা কিভাবে হবে, এটাতো ধানক্ষেত আর গাং। হায়রে সেদিনকার ধানক্ষেত আর গাং যে আজকের এত ব্যাস্ত সোনাইমুড়ী হবে সেটা কি কল্পনাও করতে পেরেছি।

সোনাইমুড়ী বাজারের কথা, থাকরে ভাই আরেকদিন বলবো। আমার এখানে এখন ভোর ৩টা ৫৩, সারা রাত ঘুমাইনি। সেহরী খেতে হবে ২০ মিনিটের মধ্যে ওয়াশিংটনে সেহরীর সময় শেষ হয় ৪:১০ তা্ই গেলাম। সত্যিই আজকের সোনাইমুড়ীর এত উন্নতি দেখে ভাল লাগে। তোমরা ভাল থেক।

বিষয়: বিবিধ

৯২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327634
২৭ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:০৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : পড়লাম
327657
২৭ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
সোনাইমুড়ি মানে কি সোনালি রং এর মুড়ি নাকি সোনায় মোড়া???
327669
২৭ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:১৯
মু নূরনবী লিখেছেন : ওরে হেতে দেই আঁর বাড়ীর কাছের মাইনস!

ভাই ভালা আছেন্নি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File