চীন ও জাপান হামারা, হিন্দুস্তান হামারা, মুসলিম হ্যাঁ হাম, সারা জাহান হামারা
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৮ জুন, ২০১৫, ০৯:০১:১১ সকাল
সপ্তাহ খানেক আগে এখানকার লোকাল ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংকে যে মহিলা আমাকে সহযোগীতা করেছিলেন তাঁর নাম মাদিনা। মহিলা তাঁর নাম বলার পর আমি বললাম, তোমার নাম তো মুসলিম নাম। তিনি বললেন, "আমি তো মুসলিম"। মহিলাকে প্রথমে আমি মুসলিম ভাবিনি। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোথা থেকে এসেছো, বললেন, উইগুর। সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন, উইগুর চেনো? আমি বললাম, অবশ্যই চিনি। মহিলার মনে হলো বিশ্বাস হলোনা, আমি উইগুর চিনি বলার পর। তখন হাসি মুখে, বললাম, বোন, আমি উইগুরের অনেক কাহিনী জানি, তোমাদের ইতিহাস, তোমাদের কষ্টের ইতিহাস, আমার কথা শুনে মনে হলো মহিলার চোখে পানি এসে গেল। বললো, জানো, দুঃখের ব্যাপার হলো, পৃথিবীর অনেক স্থানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের কাহিনী মোটামুটি বিশ্ব জানে কিন্তু উইগুরের কষ্টের কথা কেউ জানে না, শোনেনা, জানো, কমিউনিজম এতই খারাপ। মহিলা বললেন, এই কয়েক বছর আগেও নাকি কয়েক হাজার মুসলমান যুবককে মেরে ফেলা হয়েছে শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে।
বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের কষ্টের কথা অল্প বিস্তর আমরা জানি, আজ মায়ানমার, কাল ফিলিস্তিন, এর আগের দিন কাশ্মির, তার আগে গুজরাট, তার আগে বসনিয়া, কসোভো, ইরাক, আফগানিস্তান। এই তো মুসলামানদের ইতিহাস। তার উপর রয়েছে বদনাম। এখানে মসজিদে হামলা, ওখানে তালেবান, আই.সিস, বোকে হারাম। মনে হচ্ছে, মুসলমান হিসেবে জন্ম নেয়াই একটা অপরাধ। আমাদের রাসূল সাঃ কি অপমান অবমাননার কথা না হয় বাদই দিলাম।
আজকের মুল প্রসঙ্গে আসার আগে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট বুশের ছেলে এবং ৪৩ তম প্রিসিডেন্ট জর্জ বুশের ভাই আমেরিকার ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হবার জন্য মাঠে নেমেছেন। এ প্রেক্ষাপটে এই কিছুদিন আগে মাত্র ১৯ বছরের একটি মেয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বুশকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আইসিস তো তোমার ভাই সৃষ্টি করেছে। বলা বাহুল্য, ছোট্র একটা মেয়ের এই সাহসী আক্রমনে মিঃ বুশ থতমত খেয়ে গিয়েছিেলেন, এবং আমেরিকার রাজনীতি যারা ফলো করেন, তারা জানেন, এভাবের কিছু কিছু কারনে আগামী ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের প্রেক্ষাপট আপাতত হলেও কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। বুশকে এ মুহুর্তে আর কেউ ফ্রন্ট রানার প্রার্থী মনে করেন না।
সে যাক, আশা বিশ্বময় মুসলিমদের দুঃখ কষ্টের কথা নতুন কিছু নয়। আজকে আসলে মুসলিম নির্যাতনের পুরনো কাহিনি বলার জন্য বসিনি। আজ একটা সু সংবাদ, আনন্দের সংবাদ দেয়ার জন্য। সংবাদটা খুবই ছোট, খুবই সামান্য, তবু আনন্দ দেয়ার জন্য।
আমার এক সম্মানিত জ্ঞানী বন্ধু, আজ তাঁর ফেইসবুকে রমজান মুবারাক জানিয়ে পৃথিবীর অনেকগুলো (প্রায় ২০টি )ভাষায় রমজান মুবারাক লিখে ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন। এবং সাথে সাথে ইংরেজীতে বিশ্বের সকল মুসলমানদেরকে রমজানের স্বাগতম জানিয়ে লিখেছেন যে, তোমাদের সবাইকে তোমাদের ভাষায় রমজান মুবারাক জানানোর ভাষা আমার জানা নাই, যতগুলো ভাষার মুসলমানদের রমজান মুবারাক আমার জানা আছে সেগুলোই জানালাম।
ডঃ জাসের আওদার এই ছোট্র পোস্টিং এ আমার অবচেতন মনে আরেকবার চেতনা আসে। আল্লামা ইকবালের একটা কবিতা আছে, চীন, জাপান, আমাদের, হিন্দুস্তান আমাদের, আমরা মুসলমান, সারা বিশ্ব আমাদের। এ প্রসংঙ্গক্রমে ছোট বেলার একটি মজার গল্প মনে পড়লো। এক ব্যাক্তি, সোদি আরব গেছেন, কিন্তু তাদের ভাষা বুঝেন না, সবাই আরবী বলে। তাই বাড়ীতে চিঠি লিখেছেন যে, সেখানে তিনি কারো কথা বুঝেন না সেখানে সবাই সব কথা আরবীতে বলেন, শুধুমাত্র আলহামদুলিল্লাহ সুরা ছাড়া। তিনি যেহেতু নিজে আলহামদুলিল্লাহ সুরা জানেন, তিনি হয়তো মনে করেছিলেন আলহামদুলিল্লাহ সুরা বাংলাতেই।
এ ব্যাপারে আমার ব্যাক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৪ সালের কথা। মালয়েশীয়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে থাইল্যান্ড সফরে গিয়েছিলাম। ব্যাংকক শহরে এক ঘন্টা ঘুরাঘুরি করেছি টেক্সি পেতে। ব্যাংককের ভেতরে দারুল ইহসান নামে ছোট্র একটি উপ শহর আছে যেখানে মুসলমানরা বাস করে, তাছাড়া ব্যাংকক জেনারেল পোস্ট অফিসের পাশে মসজিদ হারুন নামে একটি মসজিদ ছিল যেটা মুলত ভারতীয় তাবলীগ মনমানষিকতার লোকেরা চালাত। সারা ব্যাংকে থাই ভাষার একটি শব্দও বুঝতাম না, কিন্তু মসজিদে ঢুকার পর মনে হলো সেখানে সবই বুঝি।
ডঃ জাসির অাওদার রমজান মুবারাক নিয়ে কথাটা। আজ থেকে পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। আল্লাহু আকবার, এত দুঃখ, এত কষ্ট, এত অপমানের পর আজ কি আনন্দ। বিশ্বময় সেকি এক মহা উতসব। আজ থেকে একমাস ব্যাপী প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড পৃথিবীর আনাচে কানাচে আল্লাহর বান্দাহরা সে কি এক মহা আনন্দে, মহা উৎসবে তাদের প্রভুর কাছে নিজেকে সপেঁ দেবেন। বাালাদেশে যখন রাত ১০টা ভারতে রাত সাড়ে ৯টা, পাকিস্তানে ৯টা আফগানিস্তানে সাড়ে আটটা ইরানে ৮টা, ইরাকে সাড়ে সাতটা, বাংলাদেশে তারাবী শেষ হবার আগেই ভারতে তারাবী শুরু, তারপর পাকিস্তানে, তারপর আফগানিস্তানে, তারপর ইরানে, তারপর ইরাকে, ইয়েমেনে, মক্কা, মদিনায়, তারপর মিশরে, তার আলজেরীয়ায়, তিউনিশিয়ায়, মরক্কোতে, তারপর আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্কে, একের পর এক সানফ্রানসিসকোতে, তারপর আবার প্রশান্ত পাড়ি দিয়ে চলে যাবে জাপানে। এভাবে আগামী একমাস যাবত সারা পৃথিবীতে আল্লাহর বান্দাহর ২৪ ঘন্টা তারাবীহ আর কোরআন খতমই করতে থাকবে, বাংলাদেশে যখন তারাবীহ পড়বে মায়ানমারের নির্যাতিত মুসলমানরা তখন হয়তে তাহাজ্জুদ পড়বে, ব্যাংককে হয়তো সেহরী খাবে, কুয়ালালামপুরে হয়েতো ফজর পড়বে, নিউ ইয়র্কে হয়তো তখন জোহর পড়বে।
আল্লাহু আকবার। হে আল্লাহ, যত কষ্টই হোক, যত লাঞ্ছনা বঞ্ছনাই হোক, তবু আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করছি তুমি আমাদেরকে মুসলিম হবার তেীফিক দিয়েছো। আল্লাহ তুমি আমাদেরকে কবুল করো। এই পবিত্রতম মাসে আমাদের গুনাহ খাতা মাফ করে দাও। আমাদেরকে পরষ্পর ভাই ভাই হিসেবে জীবন যাপন করার তেীফিক দাও।
বিষয়: বিবিধ
২০০১ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দিনের পর রাত আর রাতের পর দিন - প্রকৃতির এ অমোঘ নিয়মের ন্যায় মুসলিমদের দিন ও রাত এর পর নেক্সট দিন এর শুভাগমন ক্ষন চলছে।
ভাল লাগলো আপনার আঁকা ছবিটি ভাবতে যে - আল্লাহর এ জমিন এর কোন না কোন স্থানে কোন না কোন আল্লাহর বান্ধা, আল্লাহর পথে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন আছেন ই - সোবহানাল্লাহ্।
আল্লাহু আকবর।
আমরা আজ শাসিত হচ্ছি, শাসক করছি না। কারণ আমরা আমাদের পরিচয়ই ভুলে গেছি।
অনেক ধন্যবাদ
পৃথিবির প্রতিটি প্রান্তেই যেন শোনা যায় কুরআন এর তিলাওয়াত।
জাজাকাল্লাহ খাইর ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন