ড. রইছ উদ্দিন এর ইন্তেকালে আমি শোকাহত
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৯ মে, ২০১৫, ০৯:৩০:২৪ রাত
ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আ.ন.ম রইছ উদ্দিন এর ইন্তেকালে আমি শোকাহত। আমার বাবা মা আজ জীবিত নাই। আজ সকালে ড. রইছ উদ্দিন এর মৃত্যু সংবাদ দিলাম, বড় আপা, দুলা ভাই ড. রইছ উদ্দিনের মৃত্যু সংবাদে খুবই মর্মাহত হলেন।
ড. রইছ উদ্দিন আমাদের পরিবারের সাথে খুবই সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আমার আব্বা ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের সম্ভবত খুব প্রিয় আদর্শ ছাত্রদের একজন। ড. রইছ উদ্দিন সোনাইমুড়ী আলীয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিকভাবে লেখা পড়া করেছিলেন, আমার আব্বার অসম্ভব ভক্ত ছিলেন। আমাদের বাড়ীতে শুধু আসতেন না, আমাদের বাড়ীতে থেকে নিয়মিত আমার আব্বার কাছে পড়াশোনা করতেন, আমাদের পরিবারে আমাদের আরো একজন ভাইয়ের মত ছিলেন। আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম, আমাকে নাকি তিনি অনেক কোলে পিঠে নিয়েছিলেন।
অামার আব্বার কাছে রইছ উদ্দিন এর গল্প এত শুনেছি যে, ছোট কাল থেকে আমাদের মাথায় রইছ উদ্দিন মডেল তৈরি হয়েছিল।
সে যুগে শিক্ষকরা ছাত্রদের খুব পেটাতেন, আমার আব্বা ছিলেন অসম্ভব কড়া শিক্ষক, অকপটে বলতে বাধা নেই, ড. রইছ উদ্দিন আমার আব্বার হাতের অনেক মার খেয়েছিলেন। আমি কত মার খেয়েছিলাম তার তো কোন শেষ নাই। তারপরও আমার আব্বার কাছে ড. রইছ উদ্দিন ছিলেন একজন মডেল ছাত্র। আর ড. রইছ উদ্দিনের কাছেও আমার আব্বা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক।
আমার আব্বার প্রিয় ছাত্রদের অনেকে যাঁরা আমার আব্বার সুন্দর হাতের লেখা অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন, ড. রইছ উদ্দিন ছিলেন তাঁদের একজন।
আজকের যুগে যেমন মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমমান দেয়া হয়, ড. রইছ উদ্দিন যে যুগে লেখাপড়া করেছেন সে যুগে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমমান দেয়া হতোনা। সে সময় মাদ্রাসায় ডিগ্রী সমমান পাশ করে আবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো। ড. রইছ উদ্দিন তাই করেছিলেন, এস.এস.সি. এইচ.এস.সি.দিয়ে তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন।
শুধু মেধাই নয় ড. রইছ উদ্দিন ছিলেন কঠোর পরিশ্রমি এবং আদর্শ মানুষ। সে যুগে মাদ্রাসাগুলোর জন্য মানুষ ধান চাল দান করতেন। সে যুগে সেই সোনাইমুড়ী এলাকায় রিকশা বা যানবাহনও তেমন ছিলনা। একবার শুনেছিলাম, মাদ্রাসার জন্য করা একটা ধান বা চালের বস্তা রইছ উদ্দিন নিজে কাঁধে করে মাদ্রাসায় নিয়ে আসছিলেন, কিন্তু সেই বস্তা ছিল তাঁর শরীরের শক্তি এবং সামর্থের চেয়ে বেশী, তাই রাস্তার মধ্যেই অনেকটা বেহুশ হয়েই পড়ে গিয়েছিলেন।
মাস খানেক আগে ড. রইছ উদ্দিনের ফোনে ফোন করেছিলাম, কোন একজন মহিলা ধরেছিলেন। সম্ভবত তাঁর স্ত্রী, শুধু বললেন যে, আমি শুনেছি কিনা যে তিনি অসুস্থ, কথার ধরন শুনেই অনুমান করেছিলাম অসুস্থতা গুরুতর।
আমি আজ ২২ বছর দেশের বাইরে। ২০১২ দেশে গিয়ে শুনেছিলাম, কয়েক বছর আগে ড. রইছ উদ্দিন সহ প্রাক্তন ছাত্ররা সোনাইমুড়ী মাদ্রাসায় প্রোগ্রাম করেছিলেন। ড. রইছ উদ্দিন আমার আব্বার নামে সোনাইমুড়ীতে একটা স্কলারশীপ ফান্ড করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
নিঃসন্দেেহে এটা আমার ব্যার্থতা, এ ব্যাপারে আমি নিজে উদ্যোগ নেয়া তো দুরে থাক কোন রকম সহযোগীতা করতে পারিনি।
ড. রইছ উদ্দিনের কোন ছাত্র, বা সোনাইমুড়ী আলীয়ার, কিংবা আমার আব্বার কোন প্রাক্তন কোন ছাত্র ইচ্ছুক হলে দয়া করে যোগাযোগ করবেন। আমার বাবা চলে গেছেন প্রায় ৭ বছর আগে। আজ ড. রইছ উদ্দিন চলে গেলেন। আমাদেরকেও একদিন এভাবে চলে যেতে হবে, হয়তো খুব শীঘ্রই।
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন