কিছু কথা, কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর - আঁকি বুকি

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:১৯:৫০ বিকাল

অনেক কথা বলার ছিল, অনেক কিছু লিখার আছে, কিন্তু কোথায় লিখবো, কাকে বলবো। না, আমি হতাশ নই, আমি এর একটা শেষ দেখার অপেক্ষায় আছি। আমি যদি সামান্য একটু ইতিহাস পড়াশোনা না করতাম তাহলে হয়তো হতাশ হতাম, কষ্ট পেতাম।

কিন্তু কেন লিখবো, কার জন্য লিখবো। কোথা থেকে শুরু করবো? অনেক অনেক কথা, অনেক ঘটনা একটার পর একটা ঘটেই যাচ্ছে। আমি খুব চেষ্টা করছি যত সংক্ষেপ এবং সীমিত করা যায়।

আমি একজন সাবেক সাংবাদিক। সাংবাদিক শব্দটা লিখতে এবং বলতে বড় লজ্জা এবং ঘৃণা হয়্। হ্যাঁ, পরিচয়টা বলতে হবে, আমি বছর গুনলে প্রায় বিশ বছর সাংবাদিকতা করেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, জাতীয় প্রেসক্লাবে সে যুগে যারাই সংবাদ সম্মেলন করতো, তাদের যে লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের দিত বা পত্রিকা অফিসে পাঠাতো তার মধ্যে অন্ততঃ কয়েকবার সম্বোধন করা হতো, "জাতির বিবেক সাংবাদিক" বলে। ছোটকাল থেকে ভেবে এসেছি, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে।

আজ নিজের বিবেকের কাছেই প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে, আসলেই কি তাই? আগেই বলেছিলাম, দেশে বিদেশে প্রায় বিশ বছর সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলাম। নিজে পত্রিকা প্রকাশ করেছি। দেশ বিদেশ থেকে তিনটি মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েও নিজের ক্যারিয়ারটা প্রায় শেষ করে দিলাম সাংবাদিকতা নামক এই মরিচিকার পেছনে।অথচ আজ সাংবাদিকতায় অসততা, অনৈতিকতা দেখে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জা হয়।

বিশ্ব সাংবাদিকতা জগতে ব্রায়ান উইলিয়াম পরিচিত নাম । এন.বি.সি নাইটলি নিউজের সম্পাদক ১৩ বছর আগের ইরাক যুদ্ধ নিয়ে একটি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ নিয়ে প্রথমে নিজে পদত্যাগ করেন তারপর শোনা যায় তাকে ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। আমেরিকার ফক্স নিউজ, এন.বি.সি বা সি.এন.এন এর সংবাদগুলো স্বভাবতই সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দেখে, এসব সংবাদ মাধ্যম রাতকে দিন বলতে পারে আর দিনকে বলতে পারে রাত, এবং তাই হয়। ব্রায়ান উইলিয়াম এর ১৩ বছর আগের সেই সংবাদ আমেরিকার ইরাক যুদ্ধের ক্ষেত্রে অন্যতম ভুমিকা রাখে। ব্রায়ান দাবী করেন যে, তিনিও একটি বিমানে ছিল যে বিমানে ইরাকীরা হামলা চালায়, যে সংবাদ ছিল মিথ্যা, আজ তের বছর পর ব্রায়ান তা স্বীকার করেন। যেটা ছিল সে সময়কার বুশ প্রশাসনের মিথ্যা সংবাদ দিয়ে ইরাক আক্রমনের অন্যতম সংবাদ। ব্রায়ান উইলিয়ামের পদত্যাগ বা অপসারনের পর সারা আমেরিকা জুড়ে রোল পড়েছে যে, তাহলে যারা ব্রায়ানকে ব্যাবহার করেছে সেই বুশ, চেনী সহ সে সময়কার ক্ষমতাধরদের কি হবে।

মাত্র কয়েকদিন আগে, ফক্স নিউজের চিরাচরিত মিথ্যাচার নিয়ে আমেরিকার একই হাই স্কুলের সাংবাদিকতা বিভাগের কিছু তরুন তরুনী একটি ভি.ডিও প্রকাশ করে, সেখানে তারা ফক্স নিউজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে দেয় যে, তোমরা সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করেছ।

আমার বাসায় টেলিভিশন নাই, হ্যাঁ, আমি আমেরিকায় থাকি, শুধু আমেরিকায় নয়, ওয়াশিংটন ডি.সি.র উপকন্ঠেই থাকি। আর সত্যি সত্যিই আমার বাসায় টি.ভি নাই আজ প্রায় তিন বছর। আগেও খুব একটা সময় ছিল না। আসলে টি.ভিতে এসব গার্বেজ আর মিথ্যাচার আমার সহ্য হয় না।

আমার অফিসে জিম বা ব্যায়ামাগার আছে, অফিস শেষে প্রায়ই আধাঘন্টা বা ঘন্টা খানেক জিমে কাটানোর অভ্যাস আমার আছে, জিমে তিনটা টি.ভি স্ক্রিন আছে, তাতে প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই সি.এন.এন বা এন.বি.সি চলে, আর তাতে প্রায়শই সি.এন.এন আর ফক্স নিউজ এর ঘ্যানর ঘ্যানর আর মিথ্যাচার সহ্য করতে হয়।

আমার একটা বড় ধরনের খারাপ অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ছেড়ে এসেছি আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে, এখনো সে দেশটাকে ভুলতে পারছিনা। রাগে দুঃখে অপমানে ভুলতে চেষ্টা করেও পারি না। দেশের সংবাদ প্রতিদিনই দেখতে মন চায়। দিনে ৪-৫-৬ বার চেষ্টা করি দেশের খবর জানতে, কি হলো, কি হচ্ছে।

কিন্তু কোথায় দেখি, কিভাবে দেখি। বাংলাদেশে কোন পত্রিকা আছে নাকি। হাসানুল হক ইনু নামের এক কুলাঙ্গার দাবি করেছে, বাংলাদেশে নাকি স্মরনকালের সবচে' বেশী সাংবাদিক স্বাধীনতা ভোগ করেছে। একটা জাতির জন্য এরচে' বড় তিরস্কার আর কিছু হতে পারে? পাশাপাশি আরো অনেকগুলো সংবাদ কোনটা রেখে কোন নিয়ে কথা বলবো, আসিফ আকবর নামের একজন গায়ক প্রথম আলোর মিথ্যাচার নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্রাটাস নিয়ে পড়লাম, আর ভাবলাম ফক্সনিউজ, সি.এন.এন আর বিদেশীদের দালাল আর পোষ্যদের জন্য এটা আবার নতুন কি! এভাবে একটা দুটা না, প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কত কিছু পড়ি আর ভাবি, আসলে দোষটা আমাদেরই, এই চ্যানেলগুলো এই মিডিয়াগুলোকে পয়সা আমরাই দেই, আমরাই কিনি তাদের প্রডাক্ট।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে ওলামায়ে কেরাম ইংরেজী শিক্ষা হারাম বলেছিলেন, যদিও সেটা সমালোচিত হয়েছিল এ বলে যে, আলেমরা জনগনকে প্রগতি থেকে দুরে রাখতে চেয়েছেন, আসলে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা তো হারাম হতে পারে না, কিন্তু মনে মানষে ইংরেজদের গোলাম হয়ে গেলে সেই আধুনকিতা দিয়ে আমার লাভটা কি। আমি জানি না, আজকে যুগে কোন আলেম টি.ভি দেখা বা সি.এন.এন দেখা, কিংবা প্রথম আলো পড়া হারাম বলেছেন কিনা? সে যাক, হারাম হোক আর হালাল হোক কিন্তু আসলেই কোন লাভ আছে কিনা সেটা আমি জানি না।

আজকে যখন এ লেখাটা লিখছি তখন ওয়াশিংটন ডি.সি এরিয়াতে ভোর ৪:৩৪মি। এ লেখাটা শুরু করেছিলাম কাল সন্ধায়, বাংলা টাইপ করতে সময় লাগে বিধায় বিরতি দিয়ে লিখতে হয়, অনলাইন লাগে। আজ যখন আবার লিখতে বসলাম, একটা নিউজ দেখলাম। নিউজটার শিরোনাম হলো, "‘আমার ছেলেকে কোন বিএনপি-জামাতের লোক মারেনি, মেরেছে আমারই দলের লোক। যে দল থেকে আমি একটা জীনিস পেয়েছিলাম আর তা হলো মুজিব কোর্ট। আজ দল থেকে আর একটা জীনিস পেলাম আর তা হলো আমার সন্তানের লাশ।" এই কথা গুলো প্রবীন রাজনীতিবীদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল ইসলাম বেবী চৌধুরীর। এই কথাগুলো বলতে বলতে তিনি বার বার সন্তান খুনের বিচার চাইলেন সবার কাছে।

জনাব নুরুল ইসলাম বেবী চেীধুরীর ছেলে হারানোর ব্যাথায় আমিও ব্যাথিত। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, সরি কথাটা রুঢ শোনা যেতে পারে, তা হলো, আওয়ামী লীগের কাছে এটা আবার নতুন কি। ? এইতো ২-৩ দিন আগে হাসিনার একটা পুরনো ভি.ডিও দেখলাম সেখানে হাসিনই বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাই তার বাবাকে মেরেছে। আপনাদের কারো কি মিলকির কথা মনে আছে? কে মেরেছে মিল্কিকে? নরসিংদীর মেয়রের কথা মনে আছে, কে মেরেছে। ওহ, কয়টা বলবেন? শত? হাজার? এটাই তো আওয়ামী লীগের ইতিহাস।

আশির দশকে বা নব্বুইর দশকে আমরা হাজার হাজার ব্যাক্তির কাছে শুনেছি যাঁরা অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আওয়ামী লীগ করতেন তারা বলতেন যে, মুজিব আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে, আমাদেরকে বলেছে, পাকিস্তানীরা সব নিয়ে গেছে, দেশ স্বাধীন করে দেশকে সোনা বানিয়ে দিবে। তারপর মুজিব সে দেশকে ৭৪ এর দুভিক্ষ দিয়েছিল অপরদিকে নিজেকে সোনা দিয়ে ঢেকেছিল।

আজ এই মাত্র আরেকটা সংবাদ দেখলাম, "জাতীয় পার্টি ‘দালালের দালাল, তোষ্য দালাল’" এই শিরোনামে। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি এবং বি.এন.এফ নাকি একে অপরকে দালাল আর বেইমান বলে গালি দিয়েছিল। আমার হাসি পেল, এ আবার এমন কি।

আমরা "এফ ওয়ার্ড" ব্যাবহার করি না। মানুষ রেগে গেলে এরকম কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করে, আমেরিকায় বা ইংরেজি ভাষাভাষিরা এই এফ ওয়ার্ড ব্যাবহার করে। আওয়ামী লীগের নিজেদের এই খুনাখুনি দেখলে, দালাল দালাল তোষ্য দালাল শুনলে ঐ এফ ওয়ার্ড মনে পড়ে।

আমি বেশ কিছুদিন আগে একবার কোথায় যেন বলেছিলাম যে, শেখ মুজিবকে মেরেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। আমরা হয়তো দেখবো বঙ্গভবনে শেখ হাসিনাকে নিজ ছেলেই হয়তো মারতে পারে, আমরা এমন একটা দিনের অপেক্ষায় আছি। যারা ৭৪-৭৫ দেখেছেন, তাদের কাছে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্যও মনে হতে পারে।

আমি দু'এক স্থানে লিখেছিলাম, এবং নিউ ইয়র্কসহ দু'তিনটি স্থানে বক্তব্যে বলেছি। ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেই বি.এন.পি জামাত বা আওয়ামী লীগ নয়। সমস্যা সেখানেও রয়েছে। তবে, বর্তমানে কোন ব্যাক্তি যদি বর্তমান অবৈধ সরকারকে সমর্থন করেন, সরকারের সমর্থক কারো সাথে যদি বন্ধুত্ব রাখেন, আপনি যদি প্রথম আলো বা এই মিথ্যুক মিডিয়াগুলোকে ফান্ডিং করেন, আপনি যদি সরকারের কোন দালালের সাথে হাত মিলান, সমস্যাটা আসলে আপনার মধ্যেই।

আমার মনে হয় টি.ভি না দেখলে জীবন বাঁচে। মিথ্যুক মিডিয়াগুলো না পড়লে, বিদেশী চ্যানেল না দেখলে পেটের ভাতও হজম হয়।

একটা হাদিস এবং পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন অন্যায় দেখে সে যেন হাত দিয়ে তা পরিবর্তন করে দেয়, সে যদি তা না পারে, তাহলে সে যেন কথা দিয়ে ভাষা দিয়ে চেষ্টা করে, আর কথাও যদি না বলতে পারে তাহলে কমপক্ষে অন্তর দিয়ে যেন করে"।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেছেন, "নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানাহু কোন ব্যাক্তি বা জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষন না, সে ব্যাক্তি বা জাতি নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করেন।"।

এখানে একটি প্রশ্ন হলো পরিবর্তনটা করবে কিভাবে? হ্যাঁ, অনেকেই বলবেন, পরিবর্তন তো করতে চাই, এবং চেষ্টাও করছি কিন্তু পরিবর্তনতো হচ্ছে না। এ প্রেক্ষিত ইবরাহীম ইবনে আদহাম নামের এক মহামানব পন্ডিতকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আমরা তো দোয়া করি কিন্তু দোয়া কেন কবুল হয় না, তখন ইবরাহীম ইবনে আদহাম দশটি কারণ দিয়েছিলেন, কারনগুলো সব মনে নাই এখন, তবে এর মধ্যে মুল কারণগুলোর মধ্যে ছিল যে, তোমরা দোয়া করবে আর শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব রেখে চলবে আর আশা করবে দোয়া কবুল হয়ে যাবে?

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304941
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৬
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : হক কথা। খুব ভালো লাগলো।
304979
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলি সত্য কে বিকৃত করে কিন্তু তারও বোধ হয় বাংলাদেশের মিডিয়াগুলির মত অন্ধ দালালি করেনা।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৪২
246738
আবু মাহফুজ লিখেছেন : হ্যাঁ, আপনার কথা সত্য, এদের কমপক্ষে চক্ষুলজ্জা আছে বলেই পদত্যাগ করেছে। বাংলাদেশের এগুলো তো অজাত কুজাত, এরা তো পা চাটবেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File