হায়রে জামাত, হায়রে শিবির, কবে হবে হুঁশ এবং কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৪৩:০৪ রাত
সাম্প্রতিক কালে এ রকম শিরোনামে একটি লেখা মোটামুটি বাজার গরম করেছে। লেখাটির লেখক বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে মোটামুটি পরিচিত। সুন্দর লিখেন এবং সুন্দর কথা বলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে তাঁর পরিচিতির ব্যাপ্তি ঘটতে থাকে বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রথম কিস্তির এক সময়ের একজন ডাক সাইটে মন্ত্রী আবুল হোসেনে মন্ত্রীত্ব লাভের পেছনের একটি দেীড়ের কাহিনী নিয়ে। কাহিনী হয়তো অনেকে জানেন, তবুও একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি, সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশের কোন এক দেশে গিয়েছিলেন আবুল হোসেন আর সম্ভবত ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে। এক পর্যায়ে কোন এক পার্কে বা কোথাও শেখ হাসিনা ঠাট্রা করে সম্ভবত আবুল এবং ওবায়েদুলকে বলেছিলেন, একটু দেীড় দিতে এবং বলেছিলেন, তিনি যদি ক্ষমতায় যান তাহলে দেীড়ে যে ফাস্ট হবে তাকে মন্ত্রী বানাবেন। আবুল শেখ হাসিনার উক্তিকে সিরিয়াসলি নেয় এবং দেীড় দেয়। আবুল সে কথা মনে রাখে এবং আবুলের কপাল খোলে। আবুল মন্ত্রী হয়।
দেীড়ের ঘটনার সত্য মিথ্যা আমরা জানি না, তবে এই কাহিনী িট.ভি টক শোতে এবং ফেইস বুকে একাধিকবার বর্ণিত হয় এবং কেউ এই কাহিনীর প্রতিবাদ করেনি।
কাহিনীর রচয়িতা সেই থেকেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুন্দর কথা বলতে পারেন, এবং সত্যি বলতে কি লিখেন ও সুন্দর।
কে এই গল্পকার, অনেকেই চিনেন তাঁকে, তার নাম নেয়ার প্রয়োজন আসলেই নেই। আমি এ লেখায় চেষ্টা করবো তাঁর নাম একবার না নিতে। যদি পারি তাহলে সেটাই প্রমাণ করবে তিনি আসলেই পরিচিত।
পরিচয় দেয়ার দরকার নেই, তবু আমরা জানি তিনি আওয়ামী লীগের আগের আমলের এম.পি। তিনি দাবি করেছেন তিনি হাজি শরিয়তুল্লাহর বংশধর।
আধুনিককালের পরিচিত এই লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদের টক শো'র অনেক আলোচনা আমি শুনেছি, বেশ কয়েকটি লেখাও পড়েছি। সবচে' বড় কথা হলো, যুক্তরাষ্টের মিশিগানের এক অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে তিন ঘন্টা একত্রে থাকা এবং একই মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেই সুযোগে তাঁর টক শো'র আলোচনা, লেখা ছাড়াও সাক্ষাতে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ আমার হয়েছিল।
সত্যি বলতে কি, তার কথা শুনে, তাঁর লেখা পড়ে তাঁর সাথে একই মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে তাঁকে আমার এমন কোন ব্যাক্তি মনে হয়নি যাঁকে নিয়ে আমার লিখতে হবে, বা লিখার ইচ্ছা হবে।
তিনি বাহ্যিকভাবে বেশ চালাক, কিছুটা কথা সাহিত্যিক, হুমায়ুন আহমদ, জাফর ইকবালদের মত । সবচে' ভাল কথা হলো ভদ্রলোক পড়াশোনা করেন। জামায়াত শিবিরকে নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার লিখেছেন এবং পরিচিতিতে বাজিমাত করেছেন। জামায়াত শিবিরের পক্ষে এবং বিপক্ষে। জামায়াতীদের সবচে' বেশী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কাদের মোল্লার চিঠি নিয়ে লেখা দিয়ে।
তিনি জামায়াতের বই পুস্তকও পড়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ তিনি বেশ কয়েকটি আলোচনায় যে সব কথা বলেছেন, জামায়াতের ইসলামী সাহিত্য না পড়লে এসব রেফারেন্স দেয়া সম্ভব নয়।
সুতরাং আমার দৃষ্টিতে জামায়াত সম্পর্কে তাঁর স্টাডি অনেকটা সঠিক।
কাকে নিয়ে লিখলে বাজিমাত হবে অথচ কোন বাজ পড়বে সেটা রনি ভালই বুঝেছেন। কথায় আছে না, গরীবের বেী সকলের ভাবী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতই একমাত্র দল যাদেরকে নিয়ে এখন বল খেলা যাবে। অধুনা পরিচিত এই লেখক এবং উত্থিত এবং পতিত রাজনীতিবিদ সে বলটাই খেলেছেন। অধুনা আলোচিত এই লেখককে অনেককে খুব চালাক মনে করেন, তিনি নিজেকেও তাই মনে করেন, এ জন্যই তিনি এ খেলা খেলেছেন। তবে আমি কিন্তু তাঁেক মেীলিকভাবে বুদ্ধিমান মনে করিনা। কারণ, যদিও আগেই বলেছি তিনি পড়াশোনা করেন, জামায়াত কমিউনিজম, রাজনীতি অনেক কিছু নিয়েই তিনি পড়াশোনা করেন বলে মনে হয়। কিন্তু তারপরও তাঁকে বুদ্ধিমান না বলার অনেকগুলো কারনের মধ্যে একটি হলো, আমরা জানি তিনি অনেক বক্তব্যের আগের ওয়াজ মাহফিল এবং মিলাদ স্টাইলে দুরুদ পড়ে জনগনতে সম্মোহিত করার চেষ্টা করেন। যাঁরাই তাঁর এ ধরনের বক্তব্য শুনেছেন তাঁরা একমত হবেন যে তিনি কিছু দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী স্টাইল ফলো করেছেন। অবশ্য এভাবে জনগনকে সম্মোহিত করার কাজ করতেন একসময়ের ফিলিপাইনের কোরাজন একিইনো। সে যাক, আলোচিত এই লেখকের এই স্টাইলের কারনে, তাঁর সাথে যখন আমার দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্রে মিশিগানে, আমি তাঁকে বলেছিলাম, "আপনি তো ক্বিরাত (কোরআন তেলাওয়াত) ভালই পড়েন।" তিনি তো খুশীতে গদগদ।
মজার ব্যাপার হলো তিনি বুঝতে পারেন নি, তিনি কার সাথে কথা বলেছেন, এবং আমি কেন বলেছি যে, তিনি ক্বিরাত ভাল পড়েন। এটা না বুঝে তিনি পরবর্তি অনেকটা সময় ধরে আমাদেরকে ইমপ্রেস করা চেষ্ট করেন যে তিনি নাকি তাফসির মাহফিল করতে যান। তবে বাস্তব কথা হলো তাঁর ক্বেরাত আসলেই ভুল। আমার খুব বিরক্তি বোধ হয় যখন তিনি আমাদেরকে বুঝাতে চাইছিলেন যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে খুব জানেন এবং তাফসির করতে যান।
আগেই কয়েকবার বলেছি, এই লেখককে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আমার ছিল না।
তবু লিখছি এ জন্য যে, তাঁর সাম্প্রতিক লেখাটা আমি সমর্থন করি। "হায়রে জামাত, হায়রে শিবির, কবে হবে হুশ"।
আমি আগেও বলেছি যে, জামায়াত সম্পর্কে তাঁর স্টাডি ভাল। তাই তিনি জামায়াতকেই টার্গেট নিয়েছেন। কিন্তু জামায়াতীদের তারপরও হুশ নেই।
কেন বললাম।
হায়রে জামাত, হায়রে শিবির, কবে হবে হুঁশ এবং কিছু কথা
(১) প্রথমতঃ আমার মনে হয় এই একটা লেখা নিয়ে মিডিয়া এবং অনলাইন জগতে জামায়াতী পাঠকরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন এবং দেখিয়েছেন, এটা দ্বারা জামায়াতীরা তার কথাটাই প্রতিষ্ঠিত করলো, এবং পতিত এই রাজনীতিবিদ নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করার জন্য যে বলে পদাঘাত করলেন, তার সে ইচ্ছাই পুর্ণ হলো।
(২) জামায়াতীদে নিজস্ব কোন ফোকাস নাই। প্রায় বিশ্বের সবাই জানে, যে জামায়াত বা জামায়াতের মত দলগুলো অত্যন্ত সু সংগঠিত। শক্তিশালি এবং আদর্শিকভাবে অনঢ়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এদের যদি নিজস্ব ফোকাস থাকতো তাহলে, এই একটা দু'টা লেখায় এত তেলে বেগুনে জ্বলে উঠার প্রয়োজন ছিল না।
তিনি যতদিন আপনাদের পক্ষে লিখেছেন তখন খুব ভালো লেগেছে, যখনই সমালোচনা করেছে, তখনই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন??
তিনি যদি কোন গুরুত্বপূর্ন কথা বলে থাকেন, ভেবে দেখুন, আর যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, ফেলে দিন গার্বেজে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক যে, বলেছেন, "ওয়া ইযা খাতাবাহুমুল জা-হিলুনা, ক্বালু সালামা"।
কি এত অন্যায় বলেছেন তিনি যে, তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতে হবে। কিসের আত্ন সমালোচনা করেন সারা জীবন। সারা জীবন ব্যাক্তিগত রিপোর্টে আত্নসমালোচনার বুলি আওড়ান, একবারও কি সিরিযাসলি আত্নসমালোচনা করেছেন। যদি করতেন, হয়তো, তিনি যা বলেছেন, সে কথাগুলোর অনেকগুলোই সংশোধন হয়ে যেত।
আমার প্রশ্ন জাগে জামায়াতীরা আর কত শক্র বানাতে চায়। ঢাকার শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজত যখন পিছুটান দেয়, তখন আমরা দেখেছি অনেক অসহনশীল জামায়াতী হেফাজত এমনকি আল্লামা শফি সাহেবকে নিয়ে কটাক্ষ করতে। আল্লামা শফি সাহেববে নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য দেখেছি যা দেখে খুবই কষ্ট লেগেছে। জামায়াতীদের প্রতি বিরুপ ভাব এসেছে। এই অসহসশীল জামায়াতীরা বুঝা উচিত ছিল, হেফাজতিরা তো পিছুটান দেবেই, যারা জীবনে রাজনীতি করেনি, সে সময়কার এই কঠিন রাজনীতিতে তারা পিছুটান দেবে এটাই বাস্তব কথা, কেউ যদি ভিন্ন কথা ভেবে থাকেন তাঁরা বোকার স্বর্গে।
তারপর দেখেছি এবং দেখি সুন্নী-মিলাদী-ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের সম্পর্কে অসহনশীলতা, বায়তুল মোকাররমের খতিব সম্পর্কে কঠিন মন্তব্য। েদখেছি, বি.এন.পি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করতে, বি.এন.পি সেক্রেটারী জেনারেল নিেয় বাজে মন্তব্য, খালেদাকে নিয়েও মন্তব্য দেখেছি।
নাস্তিক, কমিউনিস্ট, বুদ্ধিজীবি, দেওবন্দী, সুফী, মিলাদি, কেয়ামী, শিয়া, ওহাবী, আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি সবাই আপনাদের শক্র।
তাহলে বন্ধু কে আপনাদের? আল্লাহ? আল্লাহই আপনাদের জন্য যথেষ্ট, এটাই তো বলবেন? আল্লাহ যদি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে সারা দুনিয়া আপনাদের বিরুদ্ধে গেলেও কিছু যায় আসে না, এটাই তো বলবেন, তাহলে আবার আরেকটু ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন।
সব মানুষকে শক্র বানিয়ে আল্লাহকে বন্ধু বানানো সম্ভব নয়। আল্লাহর বান্দাহদেরকে বন্ধু বানান, আল্লাহও বন্ধু হয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মোটা মাথায় বিষয়টা খোলাসা হল না৷ অমুসলীম ইহুদী খ্রীষ্টানও আল্লাহর বান্দা, তাদের কি বন্ধু কা যাবে?
আপনি সরাসরি জামায়াত-শিবিরের জড়িত নন, মনে হয়। কারণ যারা জড়িত, তারা কেউ এ ব্যাপারটিকে ভালভাবে নেন নি। আমি এতেও অবাক নই। ডা ইসরার আহমদসহ পাকিস্তানি বেশ কিছু সাবেক জামায়াতিদের সমালোচনা-আত্মসমালোচনার কিছু লেখা চোখে পড়েছে। তারপর থেকে আমার এ/এদের ব্যাপারে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া জাগে না। তবুও সময় হলে লিখি। আপনার এ লেখাটি আমার লেখার আগ্রহটিকে দমন করতে পেরেছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
যথার্থই বলেছেন।
জামাত এমন একটি দল, তাদের আদর্শ চিন্তা ভাবনার সাথে কারো চিন্মিতা ভাবনা মিলে গেলে এবং পরম শত্রুও তাদের সাথে যোগ দিলে তারা সে ব্যক্তিকে আপন করে নেন, তার পূর্বের কৃতকর্মের জন্য তার প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব রাখেন না। রনি তেমনি একজন। জামাতের পক্ষে কিছু লেখালেখির কারণে দলের সবার কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হন। তাই উনাকে নিয়ে জামাতের এতো আধিখ্যেতা দেখানো। এই আধিখ্যেতা দেখানো ভাল হয়য় নি।
এতা খুব স্বাভাবিক ব্যপার, মানুষ একজন অন্যজন কে খুব ভালবেসে হঠাত চোখ উল্টালে ঘটনার আকস্মিকতায় রাগের বশে নানান সমালোচনা করে। তাই জামাত শিবিরের লোকেরা রনির হঠাত সাপের মত সিলম/চামড়া বদলানোর কারনে সমালোচনায় ফেতে পড়ে।
কিন্তু রনি কেন হঠাত এমন বদলে গেলো? তাহলে জামাতের রনির সক্ষতা কি সত্যিকার সক্ষতা ছিল না কি রনি গোয়েন্দাগিরি করতেই জামাতের সাথে সক্ষতা দেখিয়েছে? যদি তাই হয়, তাহলে রনির চরিত্র নিয়ে বাড়তি কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। দুমুখো সাপ নয়ত কি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন