আমার মাদ্রাসা আমার গর্ব

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:২৩:৩৬ রাত

আমার মাদ্রাসা আমার গর্ব

আবু সাইদ মাহফুজ

আমার ভাতিজা হাফেজ মাওলানা যোবায়ের হাটহাজারী দারুল উলুম থেকে দাওয়ায়ে হাদীস পাশ করেছে ২০১২ সালে। সে বছরই আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। মাওলানা যোবায়েরের সাথে প্রথম দেখা হবার পরই বললাম, ”ভাতিজা তোমার অনেক শুনাম শুনেছি যে, তুমি লেখাপড়ায় ভাল, তো, তুমি নুরুল আনোয়ার বুঝ? নুরুল আনওয়ার, অসুলে ফিকাহ, অসুলে তাফসির আর অসুলে হাদীস না বুঝলে আমি কিন্তু কাউকে আলেমই মনে করিনা।”

আমার প্রশ্ন এবং মন্তব্য শুনে ভাতিজা হাফেজ মাওলানা যোবায়ের রীতিমত থতমত খেয়ে গেল। আমার মুখে নুরুল আনোয়ার, অসুলে তাফসীর, অসুলে হাদীসের প্রশ্ন শুনে তাজ্জবই হয়। চাচার সাথে দেখা অনেক বছর পর, মুখে দাঁিড় নাই, থাকলেও এত ছোট যে, দুরবীন দিয়ে দেখতে হবে, সেই চাচা হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীস একজন হাফেজ এবং মাওলানাকে এভাবে প্রশ্ন করা শুনলে থতমত খাবে না এমন লোক সম্ভবত খুব কমই আছে।

যতটুকু শুনেছি এবং দেখেছি আমার এই ভাতিজা লেখাপড়ায় ভাল, সবে পাশ করেছে, এখনই মাওলানা তাফাজ্জুল হক সাহেব সহ নামকরা আলেমদের সাথে একই মাহফিলে ওয়াজ করে বেড়ায়। এবং আনন্দের কথা হলো, আমার ভাতিজা মাওলানা যোবায়ের আসলেই নুরুল আনোয়ার বুঝে, এবং জালালাইন পড়ায়। আমার সে ভাতিজা আমার মুখে নুরুল আনোয়ার, অসুলে তাফসীর, অসুলে হাদীসের প্রশ্ন শুনে তাজ্জবই হয়। চাচার মুখে দাঁিড় নাই, থাকলেও এত ছোট যে, দুরবীন দিয়ে দেখতে হবে, সেই চাচা কোরআন হাদীস ফিকহের এত গভীর প্রশ্ন করবে ভাবতেই পারেনি।

আমি যখন দেশ থেকে বের হই তখন এই ভাতিজার বয়স সম্ভবত ৩-৪ বছর ছিল, সত্যি বলতে কি আমার খেয়ালই নাই। দেশেও আমার খুব বেশী যাওয়া হয়নি। মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য যখন গিয়েছিলাম তখন হয়তোবা সে হাটহাজারী ছিল। আমার প্রশ্ন এবং মন্তব্যের পর, এরপর অনেক্ষণ কথা বার্তা হয়, আমাদের আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে বেশির ভাগই ছিল আমার পক্ষ থেকে প্রশ্নের মত, অসুলে হাদীস, অসুলে তাফসীর এবং অসুলে ফিকহের উপর। আমার প্রশ্ন এবং কথাবার্তা ভাতিজা যোবায়েরের পছন্দই হয় মনে হলো, কথা বার্তার পর্যায়ে ভাতিজা যোবায়ের একসময় বলেই ফেলে, ”কাকা, মনে করেছিলাম, আপনি আমেরিকা থেকে এসেছেন, কি জানি আপনার সাথে ইংরেজীতেই কথাবার্তা বলতে হয় কিনা। এখন দেখি চাচা, তো আমার নিজেরই লোক।” সেই থেকেই আমার এই ভাতিজা হাফেজ মাওলানা যোবায়েরের সাথে আমাদের চাচা ভাতিজার সম্পর্ক খুবই গভীর। যোবায়ের এবং আমার মধ্যে বয়সের পার্থক্য অনেক, তারপরও আমার ভাতিজা ভাগিনারা বা অন্যন্য আতœীয় স্বজনের মধ্যে এই যোবায়েরের সাথেই আমার কথা বার্তা বেশী হয় বা সম্পর্ক একটু গভীর।

আমরা ৬ ভাই, আমাদের ৬ ভাইয়ের সবাইকে আমার আব্বা অনেকটা জোর করেই মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আমার বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব ভরে বেশ কয়েকবার বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লিখেছি, আমার প্রায় সব নিবন্ধেই আমি লিখেছিলাম যে, আমার আব্বার সাথে কিছু বিষয়ে মেীলিক মত পার্থক্য ছিল। আমার আব্বা যদিও সারা জীবনই আমাদের সাথে খুবই উচ্চ ব্যাক্তিত্ব এবং গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলতেন, তারপর আমার সাথে ঐ মেীলিক বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সময়ই টিটকারি বা কখনো সিরিয়াসলিই তোমাদের লোক, আর আমাদের লোক পরিভাষাগুলো ব্যাবহার করতেন। এ কথাটা আরেকটু স্পষ্ট করতে গেলে বলতে হয়, আমার আব্বা ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ। বাংলাদেশের একসময় দাপুটে আলেমদের একজন। আমার আব্বা দেওবন্দী আলেম হয়ে জমিয়তুল মোদাররেসীনের জয়েন্ট ছিলেন যে একদিকে কিছুটা জটিল, এজন্য একসময়ের দাপুটে মাওলানা এবং মন্ত্রী মাওলানা মান্নানের সাথে আমার আব্বার বনতো না।

আমার বড় চাচা মরহুম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ছিলেন নোয়াখালী ইসলামীয়া আলীয়ার মোহাদ্দিস ছিলেন। আমার আব্বা এবং বড় চাচা ছাড়া ও আমার পিতৃপুরুষের বংশে দেওবন্দ ফারেগ আলেমের সংখ্যা ডজনের কাছাকাছি। আমার আব্বা চাচার পরে আমরা সবাই বা বেশীর ভাগই সরকারী মাদ্রাসায় পড়া। আমার আব্বাসহ ওলামায়ে দেওবন্দের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি, সারাক্ষণ তাঁরা দেওবন্দ নিয়ে গর্বিত। বাংলাদেশের একসময়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম খতিব, মাওলানা ওবায়দুল হক একসময় আমাকে বলেই ফেলেন এভাবে, ”বাবা, তোমরা কিসের মাদ্রাসায় পড়েছ, তোমাদের ছেলেরা (মাদ্রাসার ছাত্ররা) মাদ্রাসা ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতেই, আর পরিচয়ই দিতে চায়না যে মাদ্রাসায় পড়েছে,অথচ দেখ, আমরা দেওবন্দ পড়ে এসেছি, আজ ৩০ বছর হয়েছে, এখনো দেওবন্দের নাম শুনলে, আলোচনা হলে, গা কাঁটা দিয়ে উঠে।”। হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা ওলামায়ে দেওবন্দের মধ্যে। আমার আব্বার মাঝেও দেখেছি, দেওবন্দের কত গল্প শুনেছি বাবার মুখে তার শেষ নাই। মাওলানা কাশেম নানুতবী, হাজী এমদাদুল্লাহ মোহজেরে মক্কী, রশীদ আহমদ গঙ্গোহী দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এসব মহীরুহ ব্যাক্তিদের কত মহত ঘটনা, নাম কত শতবার শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই।

আমার এসব কাহিনী আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের কাহিনী। যে নুরুল আনওয়ার কিতাবের আলোচনা শুরু করেছি সে নুরুল আনওয়ার কিতাবখানা পড়েছি আজ থেকে ঠিক তিরিশ বছর আগে। নুরুল আনোয়ার হলো অসুলে ফিকহের কিতাব। সোজা কথায় অসুলে ফিকহ হলো সে শরীয়তী মাসলা মাসায়েল এবং ইসলামী আইনের মারপ্যাঁচ। ফকিহ এবং ইমামদের মতানৈক্য বিষয়ে চুল চেরা ব্যাখ্যা বিশ্লেষন। এ প্রসঙ্গে এই নুরুল আনওয়ার থেকেই একটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার জন্য একজন নারী কতদিন অপেক্ষা করবে এ নিয়ে ইমাম আবু হানিফা এবং শাফেয়ী পবিত্র কোরআনে সুরা বর্ণিত তিন ”কুরু”, এখানে কুরু বলতে কি বুঝানো হয়েছে সে প্রসংঙ্গে তিন সংখ্যা, ভগ্নাংশ এবং শব্দের ব্যাকরণ নিয়ে এত গভীর বিশ্লেষন করেছেন যে বিষয়গুলো তাজ্জব হতে হয়। এই তিরিশ বছরের মাঝে নুরুল আনওয়ার পড়া তো দুরের কথা চোখেও দেখেছি কিনা মনে পড়ছে না। আজ থেকে ১৮ বছর আগে ১৯৯৫ সালে মালয়েশীয়া পড়ার সময় আমার থিসিস ছিল ইসলামী শরীয়া আইনের উপর। মালয়েশীয়া ছেড়ে আসার পর আজ ১৮ বছরে নিজের থিসিসটাও উল্টিয়ে দেখিনি। আমেরিকায় এসে ২০-৩০ বছরের পড়াশোনাকে প্যাকেট বন্দি করে, ২০০৫ সালে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে আবার মাস্টার্স করি, তার সাথে সাথে গত আঠার বছরের আমেরিকার জীবনে সাংবাদিকতা, আই.টি কাজ আর মুল ধারার রাজনীেিত সত অনেক কিছুই সাথে নিজেকে জড়াই। আমার সেই তিরিশ বছরের পড়াশোনা প্যাকেট বন্দিই থাকে।

সাম্প্রতিককালে ইসলামী শরীয়া আইন একটি হট টপিক। বছর খানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক কংগ্রেশনাল হিয়ারিং এ কোন একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের আলোচনায় ”শরীয়া আইন” শব্দদ্বয় বেশ কয়েকবার শুনে আমার চেতনায় করাঘাত হয়। নিজের থিসিসটার কথা মনে পড়ে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আমার এই ১৮ বছর জীবনের অনেক চড়াই উতরাই পার হতে গিয়ে থিসিসের যে একটা কপি ছিল সেটাও হারিয়ে যায়। যোগাযোগ করি মালয়েশীয়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে, সাথে সাথে যোগাযোগ করি আমার মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠি একান্ত বন্ধুবর আতœার আতœীয় ডঃ ইউসুফ আলীকে। ডঃ ইউসুফ আলী এখন এসোসিয়েট প্রফেসর, ইউসুফ ভাইয়ের তড়িৎ এবং সময়োপযোগী সহযোগীতায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমার থিসিস উদ্ধার করে তিন দিনের মধ্যে সফট কপি আমাকে পাঠানো হয়। গত ১৪ই অক্টোবর, থিসিসের কপি হাতে পাওয়ার পর গত প্রায় দু মাস আমার জীবনের মোড় নতুন দিকে নিতে শুরু করে।

অসুলে ফিকাহ এবং মাক্কাসিদে শরীয়ার অনেকগুলো বই পড়া শুরু করি, সেই তিরিশ বছর আগের পড়া নুরুল আনওয়ার, হিদায়া ছাড়াও ইমাম শাফেয়ী’র রিসালাহ, ইমাম শাতেবীর মুয়াফাক্কাত, আহমদ আল রাইসুনী’র আল তাজদীদ আল উসুলী, শাহ ওয়ালী উল্লাহর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আস সিয়াসাহ আশ শরয়ীয়্যাহ, এ ছাড়াও আল হুকমুশ শরয়ী, মাসালিহ আল মুরসালাহ কিতাব সহ ইংরেজী আরবী মিলিয়ে প্রায় ২৫-৩০টি কিতাব পড়ার সুযোগ হয়। এজন্য ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিউট অফ ইসলামিক থট সংস্থাকে ধন্যবাদ তারা আমাকে অত্যন্ত উদার চিত্তে তাদের পাঠাগার ব্যাবহারের সুযোগ দেয়া ছাড়াও তাঁদের প্রকাশিত যে কোন বই চাওয়া মাত্রই দিয়ে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন।

এই কিতাবগুলোর অনেকগুলোই হাতে পাওয়ার আগে একটু চিন্তিত ছিলাম যে, পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হয় কিনা, বা বুঝতে অসুবিধা হয় কিনা। বইগুলো হাতে পাবার আগে কয়েকজন নামকরা আলেমের সাথে যোগাযোগের পরিকল্পনা করি এবং তাঁদের ফোন নং যোগাড়ের চেষ্টা করি।

আল্লাহ পাকের লাখো শুকরিয়া, গত কয়েকদিন যাবত এই কিতাবগুলো পড়তে গিয়ে আমার মাথা ঘুরে যায়, মনে পড়ে আমার বাবা মরহুমের কথা, বারবার আমার বাবা মরহুমের জন্য দোয়া করতে মন চায়। আমার বাবা আমাদেরকে জোর করে মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আমাদের ছয় ভাই প্রত্যেককে মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আমি আমার বাবা সম্পর্কে লিখিত অনেক নিবন্ধেই লিখেছি যে, আমার বাবার সাথে আমার অনেক মতানৈক্য এবং কিছুটা আদর্শিক দ্বন্ধ থাকলেও বেশ কিছু বিষয়ে আমার বাবা ছিলেন আমার কাছে ছিলেন আদর্শ পুরুষ বা মহাপুরুষ। এর একটা ছিল তিনি যা বিশ্বাস করতেন সেটা করতেন, নিজে মাদ্রাসায় পড়েছেন, পড়িয়েছেন এবং ছেলেদেরকে সবাইকে মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আমার বাবা ছিলেন জমিয়তুল মোদাররেসীনের যুগ্ন মহাসচিব, এবং মাদ্রাসা বোর্ডের মেম্বার। আমার আব্বা বলতেন, এবং আমরা নিজে দেখেছি বাংলাদেশের অনেক আলেমই নিজেদের সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় পড়াতেন না। আমার বাবা মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতিনিধি ছিলেন, নিজের ছেলেদেরকে সবাইকে মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। আজ অনেক বছর পর বাবার জন্য দোয়া আসছে এজন্য যে, সেদিন বাবা যদি মাদ্রাসায় না পড়াতেন তাহলে উপরোক্ত মহামুল্যবান কিতাবগুলো নিজে পড়ে বুঝার সুযোগ হতো না। আব্বা জীবনে যা করো না করো সেটা তোমাদের ব্যাপার, কিন্তু মাদ্রাসা তোমাদের ফাউন্ডেশন। আমার বাবা গড়ে দেয়া সে ফাউন্ডেশন আজ জীবন সন্ধিক্ষণে আমার জন্য বড়ই উপকারী হয়ে দাঁিড়য়েছে।

ইসলামী শরীয়া আইনের জটিল এবং বিস্তারিত আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে শেষ করা সম্ভব নয়, ইনশা আল্লাহ, আল্লাহ পাক তেীফিক দিলে আমার থিসিসটাকে সংস্কার করে বই আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা রয়েছে, সময় সুযোগ এবং বাকি আল্লঅহ পাকের ইচ্ছা। তবে, পাঠকদের সুবিধার্থে সংক্ষেপে একটু বর্ণনা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি যে, আমরা জানি যে, ইসলামী আইনের উৎস মুলত ৪ চারটি, (১) কোরআন (২)হাদীস (৩) ইজমা এবং (৪) ক্কিয়াস

গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় যেমন বলা হয় জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। আবার রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষায় সংবিধানের প্রকার ভেদের মধ্যে লিখিত এবং অলিখিত সংবিধান রয়েছে, এছাড়াও রয়েছে পরিবর্তনশীল এবং অপরিবর্তনশীল সংবিধান। এক্ষেত্রে আমেরিকার সংবিধানকে লিখিত সংবিধানের উদাহরণ এবং যুক্তরাজ্যের সংবিধানকে অলিখিত সংবিধানের উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হয়, যুক্তরাজ্যের সংবিধানে ঐতিহ্যটাই (বা কাস্টম) সংবিধানের একটা বড় উৎস। তেমনিভাবে ইসলামী আইন বা সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৪টি উপাদান রয়েছে। এই ৪টি উপাদানের অংশ হিসেবে আরো কিছু উপাদান রয়েছে যেমন, ইসতিহসান, ইসতিসলাহ, মাসালিহ আল মুরসালাহ, এবং উরফ বা ঐতিহ্যকে ইসলামী আইনের উৎস হিসেবে গণ্য করেছে।

কোরআন এবং হাদীসের পরিচয় মোটামোটি আমাদের জানা আছে, কিন্তু ইজমা এবং ক্কিয়াসের পরিচয় এবং পরিধি আমাদের অনেকের হয়তো জানা নাই। তাছাড়া কোরআন এবং হাদীসের পরিচয় জানা থাকলেও কোরআনের আয়াতের অনেকগুলো আয়াত আছে যার অর্থ জনসাধারনের কাছে স্পষ্ট নয়। যেমনিভাবে আগেই নুরুল আনোয়ার প্রসঙ্গে ”কুরু” শব্দের অর্থ সম্পর্কে বলেছিলাম। তাছাড়া কোরআনের আয়াতের মধ্যে খাস, আম, মুশতারিক, মুয়াউয়াল, হাকিকত, মাজায, মুহকাম মুতাশাবিহ, নাসিখ, মানসুখ, সরিহ কিনায়া জাতীয় পরিভাষা এবং প্রকারভেদ রয়েছে যা অসুলে তাফসীর অসুলে ফিকাহ না জানলে বুঝা সম্ভব নয়।

এছাড়া ইসলামী শরীয়ার ক্ষেত্রে শরীয়তী আইনের ক্ষেত্রে কোরআন হাদীস ইজমা ক্কিয়াস এ চারটি উৎস হলেও এর উপশাখা বা উপ উৎস রয়েছে। এ ৪টি উৎসের সাথে আরো কিছু রয়েছে ইসতিহসান, ইসতিসহাব, উরফ, মাসালিহ আল মুরসালাহ। ইসতিহসান আর মাসালিহ আল মুরসালাহ কে অনেক ফিকহবিদ একাকার করে ফেলেছেন যেটা সোজা বাংলা হতে পারে জনকল্যান। অর্থাৎ ইসলামী আইন, কিংবা ফতোয়ার ক্ষেত্রে জনকল্যাণের বা জন স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। উরফ বা ঐতিহ্যও ইসলামী আইনের ক্ষেত্রে একটা উৎস।

ইসলামী শরীয়া বা আইনে উৎসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইমাম আবু ইসহাক আল শাতেবী। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল মুয়াফাক্কাত এর একটি বিশাল অংশ মাক্কাসিদ আল শরীয়া বা ইসলামী আইনের মুল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর সেই আলোচনায় ইমান শাতেবী প্রথমে এক কথায় বলেছেন যে, ইসলামী আইনের মূল এবং একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যান এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। তিনি এ প্রসঙ্গে মানুষের জীবনের প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, মানুষের জীবনের প্রয়োজনের মধ্যে তিনটি স্তর রয়েছে যেটা তাঁর ভাষায় (১) জরুরীয়াত বা একান্ত প্রয়োজন (২) হাজিয়াত বা প্রয়োজন তবে না থাকলেও জীবন বাচবে বা চলবে (৩) তাহসিনিয়াত বা সেীন্দর্য বর্ধন। ইমাম শাতেবীর এই স্তর বিন্যাসের পথ ধরে আরো অনেক ইসলামী আইন বিশারদ বলেছেন যে, এই স্তরটা ৫ প্রকারের হতে পারে (১) জরুরত বা একান্ত প্রয়োজন (২) হাজত বা প্রয়োজন কিন্তু না হলেও চলতে পারে (৩) মানফা’ বা উপকারী (৪) ঝিনাত বা সেীন্দর্য (৫) ফুদুল বা অতিরিক্ত

ইমাম শাতেবী এবং অন্যন্য ফকীহ বা ইসলামী আইন বিশারদদের মতে ইসলামী আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্তরগুলোর মধ্যে প্রথম স্তর বা জরুরীয়াত বা জরুরাতের নিশ্চয়তা বিধান করা এ ই জরুরীয়াত বা জরুরতের ব্যাখ্যায় তারা বলেছেন এক্ষেত্রে মুলত জীবনের ৫টি জিনিস নিশ্চিত করা (১) হিফজ আন নাফস বা জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা (২) হিফজ আল মাল বা সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (৩)হিফজ আদ দ্বীন বা ধর্ম বিশ্বাসের নিরাপত্তা বিধান করা (৪)হিফজ আল নসল বা পরিবার পরিজনের এবং সন্তান সন্ততির নিরাপত্তা বিধান করা (৫)হিফজ আল আক্কল বা চিন্তা বা বুদ্ধির নিরাপত্তা বিধান করা।

উপরোক্ত ৫টি জিনিসের নিরাপত্তা প্রদান করাই ইসলামী শরীয়ত বা ইসলামী আইনের প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য। আল্লাহু হুয়াল মুয়াফফাক্ক।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

294404
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৪৪
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১৮
238209
আবু মাহফুজ লিখেছেন : পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, দোয়া করবেন।
294429
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫১
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : (১) হিফজ আন নাফস বা জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা (২) হিফজ আল মাল বা সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (৩)হিফজ আদ দ্বীন বা ধর্ম বিশ্বাসের নিরাপত্তা বিধান করা (৪)হিফজ আল নসল বা পরিবার পরিজনের এবং সন্তান সন্ততির নিরাপত্তা বিধান করা (৫)হিফজ আল আক্কল বা চিন্তা বা বুদ্ধির নিরাপত্তা বিধান করা।

এই পাচটি মানব মৌলিক চাহিদার নিরাপত্তা বিধান এ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক অমুসলিমরা কতটুকু সফল এবং কতটুকু ব্যার্থ বলে আপনি মনে করেন ?
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩১
238219
আবু মাহফুজ লিখেছেন : প্রশ্নটার উত্তর অনেক বড় এবং ব্যাপক। প্রথম কথা হলো আমি পশ্চিমা জগতের বা কোন জগতেরই এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি নয় যে এ ব্যপারে কথা বলতে পারি। কারণ ব্যাপারটা অনেক ব্যাপ্ত তাছাড়া আপেক্ষিক। একটা বিষয়কে কে কিভাবে দেখে সেটার উপর নির্ভর করে। কার কাছে কোনটার গুরত্ব বেশী। তবে সাধারণভাবে একথা সবাই জানে বুঝে এবং দেখে যে, অনেকগুলো মানবিক বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের চেয়ে পশ্চিমা বিশ্ব অনেক এগিয়ে আছে, যে বিষয়গুলোকে ইসলামী পরিভাষায় হক্কুল ইবাদ বলা হয়েছে এবং ইসলাম অনেক অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। এটাই ইসলামী জগতের সবচে' বড় দুঃখ এবং ব্যার্থতা, যে, মুসলিম বিশ্বের প্রায় কোথাও সেই হক্কুল ইবাদ বা মানবাধিকারের বিষয়ে চর্চা নেই, এমনকি আলোচনা নাই। আমাদের মসজিদ মাদ্রাসাগুলোতে বেহেশত দোজখ আখেরাতের ওয়াজ নিয়েই সারাক্ষন ব্যাস্ত। অথচ হক্কুল ইবাদ বা মানবাধিকার যে, ইসলামের একটি বড় মূল অংশ এব্যপারে আমাদের আলোচনা নাই, চর্চাও নাই। পশ্চিমা বিশ্ব এ ব্যাপারে কতটুকু সফল সেটা বলা এবং দেখাটা আপেক্ষিক। পশ্চিমা বিশ্বে অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের সামাজিক সমস্যা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া যেভাবে নাচানাচি করে আর ফলাও করে প্রচার করে, সে তুলনায় পশ্চিমা বিশ্বের সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে মুখই খোলেনা, আর আমরা মুসলিমরা তো এতই বেকুব যে, সে সমস্যা জানিও না, বুঝিও না, কিছু বুঝতে পারলেও বলার যোগ্যতাও নাই, বলার কোন মিডিয়া না। তবে, আপনি আমাকে যেহেতু প্রশ্ন করেছেন, আমার দৃষ্টিতে পশ্চিমা মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বে অনেক সমস্যা থাকলেও আমি মনে করি মুসলিম বিশ্বের চেয়ে পশ্চিমা মানবাধিকার বা হক্কুল ইবাদের বেশী অনেক বেশী সফল এবং মুসলমানদের চেয়ে অন্ততপক্ষে আপেক্ষিকভাবে বেশী যত্নবান।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫১
238223
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : শুধুই কি হকক্কুল ইবাদ ? আইনের শাসন ও সুসান প্রতিষ্ঠায় কি তারা সফল নয় ? আমার তো মনে হয় তারা সফল। মুসলিম বিশ্বে যে দূনীতি ও জনগণের ভোগান্তি এবং সৈরাচারি দেশ পরিচালনা লক্ষনীয় সে তুলনায় অন্তত আইনের শাসন, সকলের নায্য অধিকারের নিশ্চয়তা, এক কথায় সামগ্রিক যে সুসাশন তারা প্রতিষ্ঠা করেছে আমরা কি সেটা প্রতিষ্ঠা করতে শতভাগ ব্যার্থ নই ?
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৯
238224
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : জীবনের নিরাপত্তা বিধান কর সম্পদের নিরাপত্তা, ধর্ম বিশ্বাসের নিরাপত্তা, পরিবার পরিজনের এবং সন্তান সন্ততির নিরাপত্তা, আক্কল বা চিন্তা বা বুদ্ধির নিরাপত্তা বিধান করা। যে পাচ জিনিসের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সত্য ধর্মের অনুসারীদের উপর সে দায়িত্ব মিথ্যা ধর্মানুসারীরা যখন আদায় করে দেখিয়ে দিচ্ছে তখন আমাদেরতো লজ্জা হওয়া উচিত ছিল। কেন আমরা আল্লাহর দেয়া সে দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হচ্ছি।
294443
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:১৫
কাহাফ লিখেছেন :
আল্লাহ আপনার বাবা স হ সকল বাবাকে কবুল করুন!
সুন্দর সাবলীল বর্ণনা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে!
,কোরান-হাদীস'এর দু'একটা উদৃতি দিয়ে সহীহ আক্বীদার দাবীদারদের জন্যে উসুলে ফিকহ শেখার প্রয়োজনীয়তা প্রস্ফুটিত হয়েছে!
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩৪
238221
আবু মাহফুজ লিখেছেন : আমীন, আপনার এই দোয়া এবং শুভ কামনার জন্য আল্লাহ পাক আপনাকেও এবং আপনার পিতামাতাকে কবুল করুন এবং উত্তম জাযা দান করুন। দোয়া করবেন, অসুলে ফিকাহ এবং ইসলামী শরীয়ার মেীলিক বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে আল্লাহ পাক যেন তেীফিক দেন। বিষয়টা খুবই জরুরী।
294448
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:০০
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেক পুরানো স্মৃতিতে নাড়া দিয়ে গেলেন৷ ধন্যবাদ৷
294455
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:২৯
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খয়রান। দ্বীন ইসলামের কিছু খিদমত করুন।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩৫
238222
আবু মাহফুজ লিখেছেন : আল্লাহ পাক আপনাদেরকে উত্তম জাযা দান করুন।
294559
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
কিন্তু ইসলামি আইন এবং বিধান কে আমরা কি অতি আলোচনার ফাঁদে কঠিন করে ফেলি না??
294563
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
পরবাসী লিখেছেন : ইসলামী আইন, কিংবা ফতোয়ার ক্ষেত্রে জনকল্যাণের বা জন স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। উরফ বা ঐতিহ্যও ইসলামী আইনের ক্ষেত্রে একটা উৎস।

ক্বুরআন অথবা সহীহ হাদীস থেকে মাত্র একটা দলীল চাই যে জনস্বার্থ বা ঐতিহ্যও আনুগত্যের ক্ষেত্রে দলীল হতে পারে।
294745
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৩
আবু মাহফুজ লিখেছেন : ভাই, পরবাসী, প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নটাই আসলে একদিকে আপনার উত্তর। অর্থাৎ অসুলে তাফসীর, অসুলে হাদীস এবং অসুলে ফিকাহর এর প্রয়োজনীয়তা এখানেই। এবং এটাই বিপদজনক যে বা যারা কোরআনের একটি বা দুটি আয়াত তুলে দিয়ে বা একটা দুটা হাদীসের অনুবাদ দিয়েই ফতোয়া দিয়ে দেন। আমার লেখায় অনেকগুলো আরবী পরিভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে যেন, নাসেখ মানসূখ, আ'ম খাস, মুশতারিক মুয়াওয়াল। এছাড়া একটা আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট বা শানে নুঝূল রয়েছে, এসব কিছু বিবেচনায় না এনে কোরআনের একটি দুটি আয়াত দিয়েই ফতোয়া দিয়ে দেয়াটা জঘন্য। তাছাড়া আরবী ভাষায় একটা শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে, পরিভাষা রয়েছে, তার উপর রয়েছে বালাগাত এবং ফাসাহাত এবং ভাষার উচ্চ মান। এসব গুলো বিষয় সামনে না রেখে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দেয়া বা ফতোয়া দেয়া ঠিক নয়। তবে আপনার প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে সংক্ষেপে এটাই বলি, জনস্বাের্থ রক্ষার বিষয়টা ইসলামী পরিভাষায় বলা হয়েছে আল মাসালিহ আল মুরসালাহ। আবার কোন কোন ওলামা এটাকে ইসতিহসান ও বলেছেন। পবিত্র কোরঅনের সুর নুর ২৭, ২৮, ২৯, সুরা মায়িদা ৯১, সুরা নিসা ১০১, এছাড়াও সুরা আলে ইমরানের ১৫৯, হাশর ৭, মায়িদা ৩৪, ওযাক্কিয়া ২৬, হজ্জ ৩৭,৭৬, বাকারা ১৭৮, ২৩০, ১৮৯, এভাবে অজস্ত্র হাদীস রয়েছে। তবে আবারো স্পষ্ট ভাবে বলছি, ব্যাপারটা শুধু কয়েকটা কোরআনের আয়াত এবং হাদীসের দলীল নয়, এটাই জঘন্য আমাদের আলেম সমাজের এখানেই ব্যার্থতা, তাঁরা ঐক্যমত্যে পেীঁছাতে পারে না। কোরআনের একই আয়াত দিয়েই সবাই দলীল দেন তবে ব্যাখ্যা দেন ভিন্ন। দাওয়াত এবং তাবলীগের উপর তাবলীগ জামায়াত এবং জামায়াতে ইসলামী একই হাদীস ব্যাবহার করেন, কিন্তু আমরা জানি জামায়াতে ইসলামী এবং তাবলীগ জামায়াতের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সুতরাং বিষয়টা কোরআন হাদীসের একটা দুটা আয়াত মুখস্ত করা নয় এবং যেখানে সেখানে দললি পেশ করা নয়। আল্লাহু হুয়াল মুয়াফফাক্ক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File