দোজখে যেতে চাও, যাও! আমাকে নিতে চাও কেন? আবু সাইদ মাহফুজ

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৩১:১১ রাত

বেশ কয়েক বছর আগে তসলিমা নাসরিনের কোন এক বইতে বা নিবন্ধে পড়েছিলাম, তসলিমা নাসরিন ইসলামপন্থীদের সমালোচনা করে সরাসরি লিখেছিলেন, ”শায়খুল হাদিস, নিজামীরা নিজেরা বেহেশতে যেতে চান, যান, কিন্তু সব মানুষকে বেহেশতে নিতে চান কেন।” তসলিমা নাসরিনের সে উক্তির প্রতি উত্তরে আমি আমার এক প্রবন্ধে লিখেছিলাম, ”ভাল কথা, তসলিমা নাসরিন, মুনতাসির মামুন, কবির চেীধুরীরা নিজেরা দোজখে যেতে চান, যান, সারা দেশের মানুষকে দোজখে নিতে চান কেন?”।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে ৪২টি বছর পার হয়ে গেলেও কিছু কিছু মেীলিক সমস্যা সমাধান তো হয়ই নি, বরং আরো বেশী তালগোল পাকিয়েছে। আমাদের আসল পরিচয়টা কি? আমরা কি বাঙালী বাংলাদেশী। আমাদের কোন পরিচয়টা আগে, বাংলাদেশী, নাকি বাঙালী নাকি, মুসলমান বা হিন্দু? নাকি অন্য কিছু? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের বুদ্ধিজীবি সমাজ দিতে পারেন নি, বা কখনো সঠিকভাবে খুঁজেও দেখেননি। এ ব্যাপারে আমার এক আমেরিকান বন্ধু একবার বলেছিলেন, ”আসলে মানুষ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশ্নের সঠিক উত্তর খোঁজার আগে, আগে সঠিক প্রশ্ন খোঁজা দরকার।” কথাটা প্রথমে আমার বুঝে আসেনি। ব্যাপারটা যে তৎক্ষনাত আমার বুঝে আসেনি তা তিনি আঁচ করে একটু ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, মনে করো তোমার শহরের মেয়র সে আবার পুনরায় নির্বাচিত হবে কিনা, বা জনগন তাকে আবার ভোট দেবে কিনা, বা কারো কাছে ভোট চাইতে গেলে সেটা হবে একটি ভুল প্রশ্ন বা ভুল চাওয়া। বরং সে প্রশ্ন করা উচিত, আমি কি ঠিকভাবে জনসেবা করেছি? আমি কি এমন কাজ করেছি যে কাজে জনগন আমার উপর সন্তুষ্ট?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার জন্য মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে যত দোষারোপ করে তারচে’ অনেক অনেক বেশী দায়ী আমাদের বুদ্ধিজীবি সমাজ। আমাদের বুদ্ধিজীবিরা জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারেন নি। আমাদের সঠিক পরিচয় আজ ৪২ বছরেও নির্ধারণ করতে পারেন নি। এটাই চিরন্তন স্পষ্ট কথা। আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বন্দুক যুদ্ধ, খুনাখুনির প্রেক্ষাপটে কবি আল মাহমুদ একটা কবিতা লিখেছিলেন, যার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে ডাকাতদের গ্রাম?”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সবচে’ বড় বিদ্যাপীঠ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে দাবীদার। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ধরে আল মাহমুদ লিখেছিলেন, ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে ডাকাতদের গ্রাম।?” আমি যতদুর কবি আল মাহমুদ এখনো জীবিত আছেন, আশা করি সুস্থ আছেন। কবি আল মাহমুদ এক সময় বাম আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাম ধারার পত্রিকা গনকন্ঠের সম্পাদক ছিলেন এবং মুজিবের দুঃশাসনের কট্রর সমালোচনা করে সম্ভবত জেল ও খেটেছেন। সে আল মাহমুদ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের মাথায় পচন ধরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে লিখেছিলেন, মাথায় পচন ধরলে যেমন একজন রুগীকে বাঁচানো যায় না তেমনিভাবে, একটি জাতির মাথা তথা বুদ্ধিজীবিদের মাথায় পচন ধরলে আর সে জাতিকে বাচানো যায় না।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের মাথায় পচন ধরেছে অনেক আগেই। এই পচন ধরা বুদ্ধিজীবিদের ভুল নির্দেশনার কারনেই বাঙালী জাতির এই অধপতন। বাংলাদেশের অধপতনের জন্য রাজনীতিবিদরা দায়ী নয়। দায়ী নয় এজন্য যে, রাজনীতিবিদরা সারা জীবনই মিথ্যুক আর ধান্দাবাজ। রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এই ধারনা এবং মন্তব্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশী প্রচলিত আছে। আর সব রাজনীতিবিদরাই এব্যাপারে কমবেশী সমানে সমানে। তাছাড়া একটা জাতীর দর্শন এবং মেীলিক দিক নির্দেশনা ঠিক করার দায়িত্ব বুদ্ধিজীবিদের। রাজনীতিবিদরা সেটা বাস্তবায়ন করবেন। চালাকী ধান্দাবাজী করে ক্ষমতার রদবদল হবে কিন্তু জাতীয় মেীলিক দিক নির্দেশনা একই থাকবে। তখন ক্ষমতার রদবদল হলেও জাতিয় উন্নতির ক্ষেত্রে কোন ব্যাপক ক্ষতি হবে না।

বন্দুকের নলে মানবাধিকার

বিষয়: বিবিধ

১১৫৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272234
০৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নেতৃত্ব যখন ধ্বংস হয়ে যায় তখন পতন ঘটবেই।
272239
০৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫১
ফেরারী মন লিখেছেন : বুদ্ধিজীবিরাই তো রাজনৈতিক সুযোগ সুুবিধা আদায়ে তৎপর। ফলে তাদের বুদ্ধি বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠীর কাছে বিক্রিত। ফলে তাদের সঠিক পথ জানা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা জাতিকে দিতে পারছে না।
272247
০৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৪২
সাদাচোখে লিখেছেন : আপাতঃ মনে হয় বুঝিবা ঠিক ই বলেছেন। কিন্তু প্রাকটিক্যাল দৃষ্টিকোন হতে চিন্তা করলে আপনার ধারনার সাথে একমত হওয়া যায়না।

শাসকশ্রেনী যদি - বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণীকে ধ্বংশ করতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তথা পুলিশ, প্রশাসন ও আইনী কাঠামোকে লেলিয়ে দেয়, বাধ্য করে - তবে বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেনী পার্টিশান তথা বিভাজনের মধ্যে যেতে বাধ্য হবে অথবা মাহমুদুর রহমানের মত জেলে পঁচবে।

১৯৯০ এর আগে আমেরিকার সিভিল সোসাইটি আর ২০০১ এর পর আমেরিকার সিভিল সোসাইটি কে চিন্তা করুন - একই চিত্র পাবেন। পুরো পাশ্চাত্যেই এই ধারা। বিবেক তাড়িত পান্ডিত্যপূর্ন কথা আপনাকে মিডিয়া হতে দুরে ফেলে দিবে আপনি বাধ্য হবে সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিতে - তারপরে এফবিআই, সিআইএ এবং তাদের মুখপত্র সিএনএন, সিবিএস, বিবিসি, আলজাজিরা আপনার প্রান ওষ্ঠাগত করে দেবে - সো আপনি হয় মূক হবেন নয়তো জেলে এ পঁচবেন।

স্যরি দ্বিমত করার জন্য।
272251
০৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:২১
আবু মাহফুজ লিখেছেন : সাদা চোখ ঃ আপনার সাদা চোখে সুন্দর গভীর কথা বলেছেন। আপনার মন্তব্যের উপর মন্তব্য করা কঠিন, কারন এ ব্যাপারটা আসলেই জটিল, এবং দুঃখজনকভাবে হলেও বলতে হবে আপনার কথা কোন কোন অংশে বাস্তব। তবে এখানে অর্ন্তনিহিত কথা হল, কয়েকটা বিষয় ১. সত্য মিথ্যার দ্বন্ধ, সত্য সারা জীবন সত্যই থাকবে। মিথ্যা মিথ্যাই থাকবে। পৃথিবী উলট পালট হবে, হয়েছে এবং হবে, উলট পালট সবকিছু হয়ে আবার সত্যের কাছে চলে আসবে। এখন প্রশ্ন হলো, সত্যটা আসলে কোনটা? এটাই সবচে জটিল প্রশ্ন। চোর চুরি করেও নিজকে সত্য মনে করে কখনো কখনো, অন্যায়কারি কখনো নিজের অন্যায়কেই ন্যায় মনে করে, এটা হয় যখন অন্যায় করতে করতে এটাই স্বাভাবিক সংস্কৃতি হয়ে পড়ে। এর আরো একটা কারণ হলো যে যেভাবে বেড়ে উঠে। যে ব্যাক্তি যে ধর্মে, যে বিশ্বাসে বড় হয় তিনি সে বিশ্বাসকেই সত্য মনে করে বড় হন। তবে মানুষের জীবনে কিছু কিছু চিরন্তন সত্য থাকে যেটাকে ইউনির্ভাাসাল ট্রুথ বলা হয়ে থাকে। কোন মানুষ যখন সেই চিরন্তন সত্যকেও অস্বীকার করতে শুরু করে তখন মানুষ পশুর চেয়ে ও অধম হয়ে যায়।
272255
০৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:০৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কথা সত্য
272292
০৮ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:২১

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : ভুত, পেত্নি, রাক্ষ্যস, আল্লা, দৈত্য, দানব, দোজক, বেহেস্ত,পাতালপুরী আছে কি?
272562
০৯ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের মাথায় পচন ধরেছে অনেক আগেই।

এখন আমরা তার ফল ভোগ করছি। আপনার সাথে একমত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File