অনির্ধারিত কলাম ১

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৩৩:৩০ রাত

সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখালেখির সময় হয়ে উঠে না। কর্মব্যাস্ত জীবন ছাড়াও পরিবারের একটু আধটু দেখাশোনা। তাছাড়া সত্যি বলতে কি, লেখালেখির মনটাই হারিয়ে ফেলেছি। কেন হারালাম, কিভাবে হারালাম সেটার বর্ণনা দিতে গেলেও একটা থিসিস লিখতে হবে। কোনটা দিয়ে শুরু করবো সেটাই একটা বড় বিষয়। সারা বিশ্বের যে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা বিশেষ করে মুসলমানদের। এবং এ সমস্যার সমাধান আমার মত অচেনা অজানা এক আনাড়ি লেখকের দু'কলম কলম খোচানীতে কিছুই যে হবেনা সেটা আমি অনেকটাই নিশ্চিত।

যারাঁ আমাকে আগে থেকে চিনতেন, বা যাঁরা আমার লেখা পড়তে ভালবাসতেন আমি হাল ছেড়ে দিলেও তাঁরা হাল ছাড়েন নি। সেই অগনিত পাঠক বন্ধুদের সম্মানার্থেই আমার প্রচন্ড ব্যাস্ততার মাঝেও কম্পিউটারের কী বোর্ড খোঁচানিতে বসলাম। আর মনে একটু আশা যে, পাঠক বন্ধুদের দোয়ায় আল্লাহ পাক হয়তো কাজে একটু বরকত দিবেন।

ইসলামের উপর কিছু লেখাপড়া থাকার কারনে মুসলমানদের আদ্যন্ত বিভক্তি, ফেরকাবাজী, আক্কিদাগত মতবিরোধ এবং মতপার্থক্য সম্পর্কে বিভক্তির কারণ এবং জড় সম্পর্কে ও পড়াশোনা করার সুযোগ হয়েছে। একসময় বড় হয়েছি বাংলাদেশে কেয়াম বেকেয়ামী দ্বন্ধের মধ্যে, উপজেলা শহরের বড় মসজিদে শবে বরাতে ভরা মসজিদে ইয়া নাবি সালাম আলাইকা যখন প্রায় পুরো মসজিদের মুসুল্লিরা যখন দাড়িয়ে যেতেন তখন এখানে সেখানে দু'চার জনকে দেখেছি বসে থাকতে তারপর সে নিয়ে মারামারিও হতে দেখেছি। একজন আরেকজনকে ওয়াহাবী, বেদাতী, রিজভী ইত্যাদি বলে গালি দিতে শুনেছি।

আরেকটু যখন বড় হলাম সে সময় দেখলাম তাবলীগ জামায়াত বিরোধী ততপরতা, তাবলীগিদেরকে ইলিয়াসবাদী, জাকারিয়াবাদী ইত্যাদি গালি দিতেও শুনেছি। তারপর দেখেছি জামায়াতীদের প্রতি বিরোধীতার ধরন। সে সময়কার এ ধরনের জামায়াত বিরোধীতা কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছিলনা, সে সময় বরং আওয়ামী লীগ জামায়াত হয়তো পিরিত পিরিত ভাবও ছিল। বরং সে সময়কার জামায়াতের বিরোধীতা ছিলা ওলামায়ে দেওবন্দ পীর পন্থী আলেম সুফীদের। সে সময় মিস্টার মওদূদীর নতুন ইসলাম নামে একটা বই পড়েছিলাম, বইটি সম্ভবত আবদুল আওয়াল নামে জনৈক ব্যাক্তির লেখা, যিনি অবশ্য দেওবন্দপন্থী ছিলেন না, বরং কট্রর দেওবন্দ বিরোধীও ছিলেন। সে সময় জামায়াত বিরোধী আরেকটি বই পড়েছিলাম যার লেখক ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, শামসুল হক ফরিদপুরীর লেখা বইটির নাম ছিল "ভুল সংশোধন"। এছাড়াও "ইজহারে হাক্কিকত" নামে উর্দুতে জামায়াতের বিরুদ্ধে লেখা আরেকটি বই পড়েছিলাম সে সময়।

পরবর্তী একটা সময় ওহাবী মতবাদের বিরুদ্ধে অনেক জানতে এবং পড়তে হয়েছে। বই পড়া ছাড়াও বিছিন্নভাবে জানতে হয়েছে আরো অনেক। আমাদের গ্রামে এক মেীলভী ছিল, যাকে লোকজন বাসু মুলভী বলে ডাকতো। তিনি ছিলেন কট্রর ওয়াহাবী বিরোধী। সে সময় অবশ্য জামায়াতে ইসলামের এত তোড় জোড় ছিল না। ওয়াহাবী মতবাদ সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে হলে একটা থিসিস প্রয়োজন হবে। সংক্ষেপে দু'তিনটা দিক একটু আলোচনা একান্ত প্রয়োয়জন। ওয়াহাবী মতবাদ মুলত এসেছে আবদুল ওয়াহাব নজদী নামক জনৈক সোদি ধর্মীয় সংস্কারকের নাম থেকে। নজদ হলো সেীদি আরবের একটি প্রদেশ। ১৭০৩ সালে এই প্রদেশে জন্ম নিয়েছিলেন মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব নজদী। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় মুহম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব ছিলেন সংস্কারক। কারো কারো দৃষ্টিতে তিনি ইসলাম ধর্মের বেদাত, ফিতনা বা ভুল চিন্তা পরিবর্তন করে মুসলমানদেরকে সুপথে ফিরিয়ে এনেছিলেন। আবার অনেকের মতে, তিনি ছিলেন কট্ররপন্থী, এবং নতুন ফিরকার জন্মদাতা। আরব ভুখন্ডে আবদুল ওয়াহাব নজদীকে অধিকাংশ আরবই ভাল সংস্কারক মনে করে। বাংলাদেশে বা উপমহাদেশে যখন এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে ওয়াহাবী বলে গালি দেন তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেওবন্দ পন্থীদেরকেই বুঝিয়ে থাকে। মিলাদে কেয়াম বেকেয়াম পন্থী যাঁরা সে ক্ষেত্রে যাঁরা কেয়াম করেন তারা ওয়াহাবী বলে যারা কেয়াম করেন না তাঁদেরকেই বুঝিয়ে থাকেন। মিলাদ শরীফে কেয়াম কেন করা হয় সেটাও আরেকটা বড় থিসিসের বিষয়, সংক্ষেপে বলতে হবে এটা একটা গভীর দর্শন এবং যারা করেন তাদের বিশ্বাসের অংশ। তাঁরা বিশ্বাস করেন, মিলাদ যখন পড়া হয় তখন রাসূল সাঃ স্বশরীরে বা আত্নিকভাবে সে মিলাদে শরীক হন, এজন্যই দাঁড়াতে হয়।

বাংলাদেশে মুসলমানদের পরস্পর বিরোধীতার আরেকি শক্ত পর্যায় ছিল দোয়ালিন আর জোয়ল্লিন নিয়ে। অর্থাৎ সুরা ফাতিহার সর্বশেষ আয়াত সে আয়াতকে কেউ দোয়াল্লিন আবার কেউ যোয়াললিন পড়তেন। এই দোয়াল্লিন জোয়াল্লিন এর ফিতনা নিয়ে বুঝা যায় যে এরা কত বেকুব এবং কত ঠুনকো এদের বিশ্বাস। দোয়াল্লিন আর যোয়াল্লিন মুলত আরবপন্থী আর ভারত-পাকিস্তানপন্থী। অর্থাৎ আরবী অক্ষরের ১৫তম অক্ষরকে আরবরা দোয়াদ উচ্চারন করেন, কিন্তু উর্দু বা হিন্দিভাসিরা যোয়া উচ্চারন করেন। অজু, রমজান এই দুটো শব্দই কিন্তু একই অক্ষর থেকে, এজন্যই আমেরিকা বা যেখানেই বাঙালী মুসলমানরা আরবদের সংস্পর্শে এসেছে সেখানে অজু এখন উদু এবং রমজান এখন রামাদান হয়ে গেছে। তেমনিভাবেই আগের যুগের বাঙালি মুসলমানরা যারা ভারতের দেওবন্দে বা পাকিস্তানে পড়াশোনা করেেছন তাঁরা যোয়াল্লিন পড়তেন, আর যারা আরব দেশের কোন প্রতিষ্ঠানে বা আল আজহারে পড়াশোনা করেছেন তারা দোয়াল্লিন পড়তেন, আর এটা নিয়েই মুর্খ বাঙালী মারামারি করতো।

(চেষ্টা করবো এই অনির্ধারিত কলাম চালিয়ে যেতে, দোয়া এবং মতামতের প্রতিক্ষায় )

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257885
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৩
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বিষয়টা কিন্তু ভালো, আশা করি এ অনির্ধারিত কলামের পরবর্তী পর্বগুলোর মাঝে এ ব্যাপারে আপনার অর্জিত জ্ঞান আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। এসব নিয়ে আমাদের মতো অনেকেই দ্বিধা-দন্দ্বে ভুগে।

ভালো লাগলো।
257898
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪৪
আবু সাইফ লিখেছেন : পাঠক গ্যালারীতে বিনিদ্র রাত-দিন কাটাতে রাজি আছি- আপনি ক্লান্ত না হলেই হয়!

কলম চলুক বিরামহীন
নেই পরোয়া- রাত কি দিন.... Praying Praying
257909
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : যুক্তিপুর্ন পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আবুল মনসুর আহমদ এর "আয়না" গল্প গ্রন্থের মুজাহিদিন গল্পের মত সামান্য বিষয় নিয়ে তর্ক বা বাহাস করে এই ভাবেই মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে রেখেছে। মজার ব্যাপর সেই সময় এই ধরনের বাহাস এর পিছনে উৎসাহ দিত জমিদার রা যাদের বেশিরভাগই হিন্দু। মাঝখানে মুনসি মেহেরুল্লাহ,মাওলানা আকরাম খান,মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদি দের উদ্যোগে এই বাহাস বন্ধ হলেও এখন আবার পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আবার ফিরে এসেছে! এতে লাভ টা হচ্ছে কার????
257939
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:০৯
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আমরা আপনার অনির্ধারিত কলামের সফলতা কামনা করি! ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File