মানবতা, মানবপ্রেম, ইসলাম এবং
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২২ মে, ২০১৫, ১০:৫০:৪৮ সকাল
আমার জ্ঞানী গুণী এক বন্ধু কিছুদিন আগে এক ফেইসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেন,
"কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা নিয়ে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে কিছু রবীন্দ্রসংগীতকে আসলে একেশ্বরবাদী প্রার্থণাসংগীত বলেই মনে হয়।"
আমার যতদুর মনে পড়ে কবি সুফিয়া কামাল একবার বলেছিলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনাকে তিনি এবাদত মনে করেন। বলা বাহুল্য কথিত আছে যে, কবি সুফিয়া কামাল নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
আমার অপর এক বন্ধু একসময় সাংবাদিক এবং ভাল লেখক ছিলেন। অনেক বছর আগে একবার আমি তাঁর সাথে তাঁর গাড়ীতে উঠলে দেখলাম (এবং শুনলাম) রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছে। আমি কিছু বলার আগেই তিনি আমাকে বললেন, "আমি জানি না, আপনি কি মনে করেন, তবে আমি রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়মিত শুনি এবং এবাদতের সাথে সামাঞ্জস্যশীল মনে করি।
আমার যতদুর মনে পড়ে, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর কোন এক ক্যাসেটে একবার শুনেছিলাম তিনি রবীন্দ্রনাথ এবং শরৎ সাহিত্য পড়েছেন এবং সম্ভবত বলেছেন যে তিনি কেঁদেছেন।
মাওলানা সাঈদী কেঁদেছেন বলেছেন কিনা আমার নিশ্চিত মনে নাই, তবে শরৎ চন্দ্রের মহেষ এবং রবীন্দ্রনাথের পোস্ট মাস্টার সহ অনেক লেখা পড়ে অনেকের মত আমিও কেঁদেছিলাম।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা নিয়ে আমার ও কোন ধারণা নেই, এবং সে ব্যাপারে মাথা ঘামানোও প্রয়োজন মনে করি না। তবে আমার মনে হয়, কবি গুরু নিজেও তাঁর ভক্তরাও এ ব্যাপারে মাথা হয়তো ঘামান না।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক গল্প উপন্যাস আমি পড়ে থাকলেও কবি গুরুর দর্শন বা ধর্ম চিন্তা সম্পর্কে আমার কোন পড়াশোনা বা জ্ঞান নাই সেহেতু এ ব্যাপরে কথা বলার সামান্যতম যোগ্যতা আমার আছে বলে আমি মনে করি না।
তবে কবি গুরু রবি ঠাকুর, শরৎচন্দ্র বা এ জাতীয় লেখকদের লেখার মধ্যে কি ছিল। এবং এদের লেখার সাথে ধর্মবোধ, আধ্যাতিকতাবোধ বা মানবতাবাদের কি সম্পর্ক ছিল।
ইসলাম ধর্ম সর্ম্পকে যেহেতু আমার সামান্য কিছু লেখাপড়া রয়েছে, সেহেতু এব্যাপারে আমি একটা সর্ম্পক তৈরি করার চেষ্টা করবো।
একটা বিষয় আমাকে আসলে খুবই পীড়া দেয়। সেটা হলো, এক শ্রেণীর তথাকথিত মুসলমানরা ইসলামটাকে খুবই সস্তা ডাল শুটকির মত করে ফেলেছে। কথায় কথায় ইসলামের ব্রান্ড লাগানো, কথায় কথা ফতোয়া জারি করা। কথায় কথায় হারাম জারি করা একটা রেওয়াজ হয়ে পড়েছে। কথায় কথায় কোরআনের একটা আয়াত বা একটা হাদীস জুড়ে দিয়েই একটা ফতোয়া জারি করে দেয়া।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি খুব ধার্মিক নই। আমি বা আমাদের পরিবার সেই তথাকথিত ধর্মপন্থী নই। অন্যদিকে সেীভাগ্যক্রমেই বলবো আমি এবং আমার পরিবারের অনেকেই ধর্ম সম্পর্কে কিছু লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছে। আমার বাবা একজন দেওবন্দী আলেম হয়েও খুব আধুনিক ছিলেন।
কিছুটা বাবা বাধ্যবাধকতায়ই এবং সেীভাগ্যক্রমেই আমাকে আরবী শিখতে হয়েছে, এবং আমার উপর আল্লাহর কোন বিশেষ রহমত যদি থেকে থাকে সে হলো, আরবী জানার কারণে, পবিত্র কোরআন শোনার পর সহজেই বুঝতে পারি। তাই নিজে খুব ধার্মিক না হলেও এই কোরআন আমাকে গাইড করে। পবিত্র কোরআন শুনলে প্রায়ই কাঁদি।
আমার আজকের লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় এখানেই। সেটা হলো, রবীন্দ্রনাথের পোস্ট মাস্টার পড়ে, শরতচন্দ্রের মহেষ গল্প পড়ে কাঁদার কথা বলেছিলাম। আগেই বলেছি রবি ঠাকুর বা শরৎ বাবুদের ধর্ম চিন্তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নাই। তবে যে কোন মানবতাবাদী ব্যাক্তি ঐ লেখাগুলো পড়লে কাঁদতে পারে, কাঁদাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, আমার এই কোরআনে কি অসাধারণ মহৎ বানী রয়েছে, সেগুলো কজন মুসলমান জানি।
আমার কষ্ট লাগে, আজ অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধর্মীয় কোন কথা ওয়াজ শুনতে গেলে শুধু দাঁত মুখ খিচানো বিপ্লবী বাণীই শুনি, পবিত্র কোরআন হাদীসে যে অসংখ্য ভালবাসার কথা আছে, মানব সেবার কথা আছে সেগুলো কোথাও শুনি না।
আজকের যুগে মানবতাবাদীরা, প্রগতিশীলরা কেন ইসলাম থেকে দুরে, কেন, ইসলামের বিরোধীতা করে। আজকে লম্বা দাঁড়িওয়ালা হুজুরদের ওয়াজে দাঁত মুখ খিচানো কর্কশ কন্ঠি কিছু চর্বিত চর্বণ কোরআন হাদীসের অসাধারণ জ্ঞানের কথাগুলো, ভালবাসার কথাগুলোতো আমরা শুনি না। দ্বিতীয় যে কথা সেটা হলো, ইসলামের ইতিহাসে নবী রাসূল ছাড়া মহাপুরুষদের সেই অসাধারণ জ্ঞান, ভালবাসার কথাগুলো কেন শুনি না। মহামতি কবি হাফিজের অনেকগুলো কবিতা, মাওলানা রুমির অসাধারন দর্শন, আল্লামা ইকবালের সেই শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া, ইমাম গাজালীর ইহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দীন সেগুলো থেকে জ্ঞান বা ভালবাসার কথা শুনি না কেন।
আজকে এমন অবস্থা হয়ে দাড়িঁয়েছে যে সে যেখানে সেখানে কোরআনে একটা আয়াত বা একটা হাদীস জুড়ে দিয়ে একটা ফতোয়া জারি করে বসে আছেন।
আল্লাহ পাকে একটা বিশেষ রহমত আর আমার আব্বা আম্মার দোয়ার বরকতেই হয়তোবা কোরআন হাদীস সম্পর্কে আমার যে যতসামান্য পড়াশোনা আছে, তাতে একটা কথা অকপটে বলতে বাধ্য হচ্ছি, অনেক সময় এসব মুলভীদের ওয়াজ শুনলে খুবই বিরক্তি বোধ করি। এবং আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় যে, এই মুলভীদের জ্ঞানতো সীমতিই এমনি লেখাপড়াটাও একেবারে সস্তা এবং কচুরীফানার মত।
হ্যাঁ, রবি ঠাকুর প্রসঙ্গে শুরু করেছিলাম। রবীন্দ্রনাথকে ঈশ্বরপন্থী এবং একেশ্বরবাদী বলা না বলা আমার উদ্যেশ্য নয়, সে ব্যাপারে আমার মাথা ব্যথাও নাই। আমার বক্তব্য হলো, ইসলামে মাক্কাসিদ আল শরীয়াহ এবং মাক্কাসিদ আল শারে' বলে যে পরিভাষা আছে, সেটা মানবতাবাদী, রবি ঠাকুর বলি বা শরৎ বাবু, কিংবা মাওলানা রুমি, আল্লামা ইকবাল, কিংবা হাফিজ যাদের কথাতেই মানবতাবাদী কথা থাকবে, মানবপ্রেমের কথা থাকবে, তাদের সে কথাগুলো সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যের পরপন্থি নয়। বরং পরিপুরক। ইসলামী পরিভাষায় যেটা মাক্কাসিদ আল শারিয়ার সাথে সামঞ্জস্যশীল।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইসলামকে রসকসহিন বলে প্রমান করার জন্য এই ধরনের কিছু মোল্লামেীলভি সবসময় এগিয়ে আসেন। উদ্দেশ্যটা মনে হয় মানুষকে ধর্ম থেকে বিচ্যুত করা। ডঃ শমশের আলি স্যার একটা ভাষনে বলেছিলেন নামাজ রোজা করলেই জান্নাত পাওয়া যাবে এমন কথা কুরআন ও হাদিসে নাই। যেটা আছে সেটা হল আমল বা সৎকর্ম এর কথা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন