কুরআন তিলাওয়াতকারী, নামাজী অথচ হিংসুক, গিবতকারী এবং মিথ্যাবাদির কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৭ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৫:৩৫ সকাল
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গর্ব করে দাবী করেন তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং সকালে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে তাঁর দিন শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি খুব গর্ব করে তা প্রকাশ করেছেন। আমরা কেউ তাঁর নিয়মিত আসলেই নামাজ পড়েন কিনা, কুরঅান আদেী করেন কিনা, নাকি শুধু টি.ভি ক্যামেরা দেখলেই তিনি তসবিহ হাতে নেন এবং নামাজে বসেন সেটা জানি না। তবুও মেনে নিলাম তিনি সত্যি সত্যিই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্নাত ওয়াজিব নফল সহই আদায় করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোথায় কিভাবে যে লেজে গোবরে একাকার করে একটা বিতি কিচ্ছিরি সৃষ্টি করছেন তিনি তা বুঝতে পারছেন কিনা জানিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, প্রতিদিন কোরান তেলাওয়াত করেন, কিন্তু নামাজের সালাম ফিরিয়েই তিনি গীবত শুরু করেন, মিথ্যা বলা শুরু করেন। এই গীবত আর মিথ্যা দিয়েই তিনি তাঁর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আর তার সাথে সুন্নত নফল এবং তসবিহ তাহলীল সব কিছুর সওয়াবকে আজাবে পরিনত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে অপমানজনকভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন, বের করে দেয়ার সময় তিনি নাকি বোতল দেখেছেন। সে বোতলগুলি তিনি এবং তাঁর পেটোয়া বাহিনীরাই দেখেছেন, আমরা কেউ দেখি নাই। সে বোতলগুলো তাঁর মাস্তান এবং পেটোয়া বাহিনী আগে থেকে জমা করে রেখে টি.ভির সামনে এনেছিল কিনা জানি না।
স্বপ্নে কিংবা জাগরনে তাঁর দেখা সেই বোতলগুলি নাকি তাঁর নিজের বাড়ী থেকে আনা সেটাও আমরা জানি না। কিন্তু প্রশ্ন হলো সে বোতলগুলি নিয়ে এখন রসিয়ে রসিয়ে গল্প বলা কোন নামাজীর কান্ড হতে পারে? এটা কি প্রকাশ্য গীবত নয় কি। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে "আল গীবাতু আশাদ্দু মিন আল যিনা"। অপরের গীবত করা বদনাম করা ব্যাভিচারের চেয়ে জঘন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গীবতের চোয়াল কাকে আক্রমন করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচন্ড হিংসুক প্রকৃতির। তিনি চিরাচরিতই বিরোধী দলীয় নেত্রী সম্পর্কে এমনভাবে মুখ ভেংচিয়ে কথা বলেন যেটা কোন সভ্য মানুষের ভাষা বলে মনে করা কঠিন। তিনি বা তাঁর চেলা চামুন্ড সাংবাদিকরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কখনোই বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন না। পদমর্যাদার দিক থেকে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বলা হলে বেগম খালেদা জিয়াকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান বিরেধী দলীয় নেত্রী বলা উচিত অথচ তিনি এবং তাঁর অসভ্য সাংবাদিকরা কখনোই খালেদা জিয়াকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী সম্বোধন করেন না। এমনিকি এসব তথাকথিত নেতা এবং সাংবাদিক নামের কলং কলমবাজরা অনেক ক্ষেত্রেই শুধুই খালেদা শব্দটি ব্যাবহার করেন। যে নিঃসন্দেহে একটি অসভ্য আচরণ। এবং যে সব সাংবাদিকরা এমনভাবে লিখেন বা ছাপেন তারা কোন সভ্য এবং ভদ্র সাংবাদিক হতে পারে না।
শেখ হাসিনা এতই হিংসুক প্রকৃতির যে, তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীর কোন বিষয় উল্লেখ করতে গেলে থাকতো তাঁকে সম্মানের সাথে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে সম্বোধন করবেন বরং এমনভাবে সম্বোধন করেন যেন খালেদা জিয়া কোন মানুষই না। "তঁারা, উনার, কেউ কেউ" এমন সব শব্দ ব্যাবহার করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা জীবন জামায়াতের সাথে রাজনীতির স্বার্থে পিরিত পিরিত করেছেন, হঠাৎ করে জামাতের বিরুদ্ধে লেগেছেন তো লেগেছেনই তারপর তিনি এমনভাবে ভাষা ব্যাবহার করেন যেটা কোন সভ্য মানুষের ভাষা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওলানা দেলওয়ার হোসের সাইদীর জেলা পিরোজপুরে গিয়ে তাঁর বক্তব্যে সাইদীকে কুলাংগার বলে গালি দিয়েছিলেন। একটা মানুষ কত অসভ্য হলে এমন আচরণ করতে পারে তা অবিশ্বাস্য।
বাংলাদেশের কে না জানে জামায়াত নেতাদের সাথে মাসের পর মাস বছরের পর বছর একত্রে আন্দোলন করেছেন, বসেছেন খেয়েছেন। দরকার পড়লে দোয়া চাইতে গেছেন। বদরূর হায়দার চেীধুরী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কালে জামায়াত নেতাদের পায়ে চুমু করতেও রাজী ছিলেন আর এখন এমন অসভ্য ভাষা ব্যাবহার করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিংসার হাজার হাজার ছোবলের মধ্যে সর্বশেষ ছোবলের শিকার হন বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয়, আলেম আল্লামা শফির বিরুদ্ধে। কি অপরাধ আল্লামা শফির? আল্লামা শফি এবং হেফাজত বারবার বলেছে,হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল নয়, আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য আন্দোলন করছিনা। আমরা নিরেট আমাদের ঈমানের তাগিদে আন্দোলন করছি। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বাহিনীর হিংসা এবং মিথ্যাচার থেকে মুক্তি পাননি আল্লামা শফির মত একং সম্মানিত ব্যাক্তিও। সর্বশেষ খবর মতে জানা গেল যে, আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ৫০টি আসন ছেড়ে দিয়ে অন্যন্য ইসলামী দলগুলোর বিরোদ্ধে হেফাজতকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল হেফাজত এবং আল্লামা শফি যখন রাজী হননি তখনই ডাইনী বুড়ীরা ক্ষেপে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাম শফির বিরুদ্ধে এই বলে কুৎসা রটায় যে তিনি নাকি মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছেন।
কি বলেছিলেন আল্লামা শফি? বলা হয় যে তিনি নাকি নারিদেরকে তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিলেন। আল্লামা শফির বিরুদ্ধে এই অভিযোগের ভিত্তির কয়েকটি স্তর রয়েছে ঃ
(১) কেউই এখনো নিশ্চিত নয় যে একথাগুলো আসলেই আল্লামা শফির কিন, কারন ভিডিওটি ডাবিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে
(২) ভিডিওটি চট্রগ্রাম বা বাংলাদেশের কো গ্রামাঞ্চলের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ওয়াজ মাহফিলের। গ্রামের মানুষের কাছে গ্রামীন উপমা দিয়ে দেয়া একটি ওয়াজ মাহফিলের একটি ভি.ডি.ও নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রাজনিতিক হুলুস্থুল করা কতটুকু নৈতিক, বা যুক্তিযুক্ত এবং সেটা নিয়ে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পদে বসা ব্যাক্তি এভাবে কথা বলা কতটুকু মর্যাদাকর?
(৩) আল্লামা শফি যদি বলেও থাকেন, এই উপমা দ্বারা অসম্মানের কি হয়েছে। এটা একটা উপমা মাত্র। একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি আসক্তি চিরন্তন সত্য। কোন পুরুষ যদি সেটা স্বীকার না করেন তাহলে সে নিঃসন্দেহে সে পুরুষত্বহীনতা রয়েছে কিংবা তিনি চরম মিথ্যাচার করছেন। নারী পুরুষের এই আকর্ষন পৃথিবীর ইতিহাস অবদি সবচে বড় সত্য। তাই যুগে যুগে সকল ধর্মই নারী এবং পুরুষকে আলাদা আলাদাভাবে রাখার ধর্মীয় বিধান দিয়ে এসেছে। পৃথিবীর সবচে' পুরাতন এবং প্রভাবশালী ধর্মগুলোর অন্যতম ইহুদী ধর্ম এবং খৃষ্ট ধর্ম নারী পুরুষকে পৃথিকীকরনের প্রবীনতম প্রবক্তা। ইহুদী এবং খৃষ্টধর্মে আধুনিকতা এসেছে সংস্কার এসেছে কিন্তু এটা এইসব ধর্মের প্রাচীন বিধান এটা কোন ঐতিহাসি অস্বীকার করতে পারে না।
আধুনিকতার কোন প্রবক্তা আধুনিক যুগে এর প্রযোজ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন বা তোলাটা স্বাভাবিক কিন্তু নারী পুরুষের পৃথিকীকরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে একমাত্র গন্ড মূর্খ বা চরম মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
সম্প্রতি আমরা আরো দেখলাম যে, যুক্ত্রাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর এক গবেষনায় আল্লামা শফির কথাটারই প্রতিদ্ধনি এসেছে। একজন সুন্দরী নারী দেখলে একজন পুরুষের জিভে পানি আসাটা অবাস্তব কিছু নয়।
শেখ হাসিনা আল্লামা শফি সাহেবকে আক্রমন করেছেন যে, "তাঁর কি মা বোন নাই, স্ত্রী নাই?" মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আল্লামা শফি হয়তো আপনার এই বিকৃত মানষিকতা সম্পন্ন প্রশ্নের উত্তর দিবেন না বা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না, তাই আমি আল্লামা শফির হয়ে আমার পক্ষ থেেক একটা উত্তর দিচ্ছি যে, অবশ্যই আল্লামর শফির মাও আছেন বা ছিলেন, স্ত্রীও আছেন সম্ভবত কন্যাও আছেন, এবং আল্লামা শফি তাঁর মা, স্ত্রী এবঙ কন্যাকে অনেক অনেক সম্মান দেন এবং তাঁর মা স্ত্রী, এবং কন্যারাও তাকেঁ এত সম্মান করেন যে যে সম্মান আপনি কোনদিন কল্পনাও করতে পারবেন না, যে সম্মানের কোটি ভাগের এক ভাগও আপনি ডঃ ওয়াজেদকে দেননি, ইতিহাস সাক্ষী।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, পবিত্র কুরঅান তেলাওয়াত দিয়ে দিন শুরু করেন তাঁর এই প্রচারমুখী আত্নম্ভরিতার জবাব পবিত্র কোআনের একটি আয়াত এবং একটি হাদীস দিয়েই শেষ করবো।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে আপনাদের মত তথাকথিত নামাজীদের সম্পর্কে খুব কঠোর এবং ঘৃণাভরে বলেছেন, "লাইসাল বিররা, আন তুয়াললু উজুহাকুম কিবালাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, ওলাকিন্নাল বিররা মান আ'মানা" অর্থাৎ তোমরা পুব দিকে ফিরে ঢুঁ মার নাকি পশ্চিম দিকে ফিরে ঢুঁ মার তাতে কোন কল্যাণ নাই, বরং কল্যান হলো যদি খালিস নিয়তে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।
আর আপনার মধে্য যে হিংসা, বি.এন.পি বা কোন বিরোধী দলের নাম শুনলেই আপনি হিংসায় মরে যান, ভাবখানা এমন যে, বাংলাদেশে দল থাকলে একমাত্র আওয়ামী লীগই আছে। বাংলাদেশে শেখ পরিবার ছাড়া আর কোন পরিবারই নাই। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাত্র লীগ ছাড়া আর কোন মানুষ বাস করেনা।
প্রধান বিরোধী দল অনেক বারের ক্ষমতাসীন, কোটি কোটি মানুষের প্রিয় দল বি.এন.পিকে ক্যান্টনমেন্টের দল বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা চরম হিংসারই বহি প্রকাশ। এই হিংসা সম্পর্কে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, "ইন্নাল হাসাদা লা ইয়াকুলুল হাসানাতা, কামা তা'কুলু অান নার আল হাতাবা"। অর্থাৎ হিংসা এমন এক জঘন্য রোগ যে, রোগ, মানুষ যত ভাল কাজই করুক, সকল ভাল কাজকে এমনভাবে জ্বালিয়ে ফেলে এবং খেয়ে ফেলে যেমনি ভাবে আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়।
সর্বশেষ আসি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার সম্পর্কে। আমার মনে হয় আপনার মিথ্যাচার সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে হবে না। সারা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের সামনে সি.এন.এন এর রিপোর্টার ক্রিস্টিনা আমানপোর আপনাকে মিথ্যাবাদি বলেছে। লজ্জা লাগেনা আপনার। আপনি মিথ্যা বলে জাহান্নাম কিনতে পারেন, তাদের আমাদের সমস্যা নাই কিন্তু, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বের সামনে আমাদেরকে এভাবে অপমান করবেন এটা আমরা সহ্য করতে পারিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্বাস করলাম আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়েন। শুধুমাত্র টি.ভি ক্যামেরা সামনে নয়, ধরে নিলাম ঘরেও পড়েন। তবে কোন লাভ হবে না। হিংবা বন্ধ করুন। মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আপনার মিথ্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আপনার হিংসা সীমা অতিক্রম করেছে।
আপনি মিথ্যা, জালিয়াতি, হিংসা, ভাওতাবাজি বি.এন.পির সাথে করেছেন, জামাতের সাথে করেছেন। সর্বশেষ আপনার মিথ্যাচার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল্লামা শফির সাথে করেছেন। বন্ধ করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন