প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১১ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৪৬:৩২ সকাল
প্রিয় প্রেসিডেন্ট বারাক এইচ ওবামা,
আমি একজন বাংলাদেশী আমেরিকান। আজ ১৮ বছর আমেরিকায় বসবাস করছি। প্রায় ১২ বছর যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতির সাথেও জড়িত। আমি একজন ডেমোক্র্যাট। আমার মত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী আছেন এই আমেরিকায়, আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সাথেও জড়িত আছেন অনেকে। কেউ কেউ রিপাবলিকান পার্টির সাথেও হয়তো জড়িত। বাক্তিগতভাবে আমি অন্য অনেকের চে' একটু বেশী তৎপর। মিশিগান ডেমোক্র্যাটিক পাটি বাংলাদেশী ককাসে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম আমি। যতটুকু সম্ভব সবসময় নিজকে সামাজিক কাজে তৎপর রাখার চেষ্টা করি।
গেল বছর ২০১২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমি প্রায় চার মাস যাবৎ আপনার ক্যাম্পেইনে কাজ করেছি। আমি সারা জীবন ক্যাম্পেইনে কাজ করেছি সম্পূর্ণ বিনে পয়সায়। এ যাবত আমেরিকায় প্রায় ৭-৮ ক্যাম্পেইনে সরাসরি কাজ করেছি কোনদিন কোন ক্যাম্পেইন থেকে একটি কানাকড়িও নিইনি। বিজ্ঞ পাঠকদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা করার যদিও কোন কারণ নাই তবুও শুধু এতটুকু বলি যে, আমি একটা বিশ্বাস এবং দর্শন নিয়েই কাজ করি, সে ক্ষেত্রে সাময়িক কিছু কানাকড়ি পাওয়ার চেয়ে আমার বিশ্বাসের জয়, দর্শনের জয় সেটাই বড় পাওয়া।
২০১২ সালে আপনার ক্যাম্পেইনের সময় আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বেশীর ভাগ প্রশ্নই এসেছে এমন পরিচিত জনদের কাছে যাঁরা খুব কঠিন আদর্শে বিশ্বাস করেন। আমার প্রতি প্রশ্নগুলো এসেছে আপনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সমূহের ব্যাপারে। আমাকে অনেক তিরস্কারের ও সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি বাংলাদেশের একটি নামকরা ধর্মীয় পরিবার থেকে এসেছি, আমার বাবা, চাচাদের মধ্যে ভারতের বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের সিলসিলার নামকরা স্কলার ছিলেন, আমি নিজেও ধর্ম নিয়ে কিছু লেখাপড়া করেছি। যারা আমার সে সব ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন তাঁরা অনেকে হতাশ হয়েছেন এই দেখে যে, আমি কেন আমার ধর্মকর্ম বাদ দিয়ে আপনার ক্যাম্পেইনে এত মাতোয়ারা হলাম।
অনেকে আমাকে এই বলে আক্রমন করেছেন যে আপনার হাতেও রক্ত আছে। কেউ কেউ এই বলে আমাকে তিরস্কার করেছেন যে, আমেরিকায় যেই ক্ষমতায় যায় সেই নাকি মুসলমানদের রক্ত পিপাসায় কাতর থাকেন।
এমনকি আমার এক পুর্ব পরিচিতজন অস্ট্রেলিয়া থেকে এবারে যখন আমার ফেইসবুকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করা শুরু করেন তখন বাধ্য হয়ে আমার সেই অস্ট্রেলিয়ার ফেইসবুক বন্ধুর সাথে ফেইসবুক বন্ধুত্ব ছিন্ন করতে বাধ্য হই।
আপনার পক্ষে রাস্তায় ক্যাম্পেইন করতে গেলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমি একজন মুসলমান, আপনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা একজন মুসলমান হিসেবে বা বিশ্বাসী হিসেবে আমার পক্ষে গ্রহন করা কঠিন। তারপরও আমি আপনার পক্ষে কাজ করেছি।
মিস্টার প্রেসিডেন্টঃ আমি আপনার এত বেশী ভক্ত হবার কয়েকটি কারণ ছিল। যেদিন আমি আপনার লেখা "ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার" বইটি পড়েছিলাম সেদিন আমি কেঁদেছিলাম। আপনার বাবা কাহিনি দাদার কাহিনী, কেনিয়ার কাহিনী, আফ্রিকার কাহিনী,আপনার ইন্দনেশিয়ায় ছেলেবেলার কাহিনী, আমেরিকার সাদা কালো দ্বন্ধের কাহিনী, আপনার কঠিন সংগ্রামের কাহিনী পড়ে সত্যি সত্যি আপনাকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে বিশ্বাস জন্মেছিল।
সেদিন থেকে আপনার ভুল বা দোষগুলোকে আমার কাছে গেীণই মনে হয়েছিল। আমি ধরে বিশ্বাস করেছিলাম হবে হবে সবই হবে, আস্তে আস্তে হবে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট জনাব বারাক ওবামাঃ আপনি প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েই কিছুদিনের মধ্যেই মুসলিম দেশ তুকিস্তান গিয়েছিলেন, তারপর মিশর গিয়েছিলেন, মিশরে বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, সে সব বক্তব্য আপনি স্পষ্টই বলেছিলেন। "আমেরিকা ইজ নট, উইল নেভার বি এট ওয়ার উইথ ইসলাম"। আপনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন প্রাশ্চাত্য বিশেষভাবে আমেরিকা এবং মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক হতে হবে পরস্পর আস্থা, এবং সম্মানের ভিত্তিতে। আপনি আরো বলেছিলেন যে, বিশ্বে আমেরিকা কোন পুলিশী ভুমিকা পালন করবে না।
মিঃ প্রেসিডেন্ট আমি জানি, আপনার উপরোক্ত মন্তব্যের সাথে কোন রিপাবলিকানই হয়তো একমত নন, এমনকি অনেক ডেমোক্র্যাট আপনার সেই উদার মতে ক্ষুব্ধ হতে পারে।
সম্মানিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, আপনার নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, ২০০৮ সালে আপনি এমন এক সময় প্রেসিডেন্ট হিেসবে শপথ নিয়েছিলেন যে সময় শুধু আমেরিকা নয় সারা বিশ্বের মানুষ বুশ প্রশাসনের নাভিশ্বাস থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছিলেন। যা একটা প্রধান কারণ ছিল ইরাক আফগানিস্তান সহ সারা বিশ্বে আমেরিকার পুলিশী ভুমিকা।
আপনার প্রথম মেয়াদে সিনেটর হিলারী ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব করেছিলেন। কিন্তু দশ চক্রে ভগবান ভুতের মত লিবিয়ার বেনগাজিতে তুলকালাম সহ শেষ পর্যন্ত হিলারী ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে থাকতে চাইলেন না। আপনি চেয়েছিলেন সুজান রাইস কে দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রী করবেন কিন্তু রিপাবলিকানরা দিলেন না। তারপর আপনারা জন কেরি কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিলেন।
জন কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবার পর পরই খুব তড়ি ঘড়ি করে কয়েকটি মুসলিম দেশ ভ্রমন করলেন, তারপরই শুরু হয়ে গেল সকল মুসলিম দেশগুলোতে গন্ডগোল, মারামারি খুনাখুনি। কিছুদিন আগে তুর্কিস্তানে হানাহানি হয়ে গেল। এখন শুরু হলো মিশরে। মিশরে সামরিক বাহিনী দিনে দুপুরে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করলো।
আপনি বিবৃতিতে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে, কিন্তু খবরে জানা গেছে যে, মিশরে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে আমেরিকার অর্থ যোগান রয়েছে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, এ খবর যদি সত্য হয়, তাহলে আমরা খুবই ব্যাথিত হলাম। আমেরিকার একজন নাগরিক হিসেবে, আপনার একজন একনিষ্ঠ সমর্থক এবং ভক্ত হিসেবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন