ছোট্র দুটি ঘটনা ঃ আমাদের শিক্ষণীয়

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৫ জুলাই, ২০১৩, ০১:০০:৪২ রাত

আমি এখন ভার্জিনিয়ার র্স্টালিং শহরের ডি এম ভি অফিসে বসে আছি। দু ঘন্টা যাবত এখানে বসে আছি। আগেই বলা হয়েছিল যে ডি এম ভি অফিসে ওয়েটিং টাইম দু ঘন্টার মত তাই আমি আমার ল্যাপ টপটা নিয়ে আসলাম যদি বসে একটু সময় কাটানো যায়।

আজকের দুটি ঘটনা আমি উল্যেখ করতে চাই। প্রথমটি সকাল বেলা। আমি মিশিগান থেকে ভার্জিনিয়া বা ওয়াশিংটন ডি.সি এরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়ে চলে এসেছি কিছুটা নিজের ইচ্ছায় কিছুটা চাকুরীর সুবিধার্থে। মাসখানেক হলো আসলাম, মিশিগানে নিজের তিন বেড রুম, গ্যারেজ সহ বাড়ি যে ভাড়ায় দিয়েছি তারচে তিন চারগুণ বেশী ভাড়া দিয়ে একরুমের বাড়ীতে থাকছি সাবলেট নিয়ে। তাও আবার গাড়ী পার্কিং এর ব্যাবস্থা নাই তাই বাড়ী থেকে সিকি মাইল দুরে গাড়ি পার্ক করে হেটেঁ বাসায় আসতে হয়।

আজ সকালে অফিসে যাবার উদ্যোশ্যে বাসা থেকে বেরিয়েই দেখি বৃষ্টি পড়ছে। গুঁডি গুঁড়ির চেয়ে বেশী। ছাতা টাতা আমার নাই, কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে তাই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই হাটছি। লক্ষ্য করলাম আমার বাসা থেকে পার্কিং এর স্থান পর্য্যন্ত রাস্তার পাশে যে স্থানগুলো আছে তাতে শ খানেক গাড়ি পার্ক করা যাবে কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এর নির্দেশিত স্থান ছাড়া আর কোথাও পার্ক করা নিষিদ্ধ বিধায় রাস্তায় জায়গা খালি থাকলেও কেউ গাড়ী যেখানে সেখানে পার্ক করতে পারেনা বা করেনা। আজ সকালে আমি যখন হাটছিলাম তখন ভাবছিলাম বাংলাদেশের কথা ঢাকা শহরের কথা। এরকম স্থান থাকলে ট্রাক, বাস, টেক্সি তো বাব ড় বড় হোমরা চোমরাদের গাড়ী যেখানে সেখানে পার্ক করা হতো, কেউ কিছু বলতে গেলে হয়তো চোখ রাঙিয়ে বলতো ব্যাটা তুমি জানো, আমি কে? ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝাতে পেরেছি কিনা জানি না, তবে আমার বলার মুল বলার বিষয়টা হলো এখানে আইন মানার প্রবণতা। আমেরিকায় যারা থাকেন, বা সফর করেছেন, কিংবা এখানকার জীবনযাত্রা সর্ম্পকে জানা শোনা আছে তাঁরা হয়তো মনে করতে পারেন, এটা আবার নতুন কথা কি। আমি এখানে যে বিষয়টা বলার চেষ্টা করছি সেটা হলো, পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেয়া বা আইনের ক্ষেত্রে নিজের যুক্তি প্রয়োগ না করা। ব্যাপারটা আরো বিস্তারিত বললে ব্যাপারটা ভালভাবে হয়তো বুঝা যাবে। যেহেতু পার্কিং এর প্রয়োজনে রাস্তার পাশে পার্ক করতে হবে তাই কোন কোন বা অনেক রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করার অনুমতি দেয়া আছে তাই লোকজন ঠিক সে পাশেই পার্ক করে অন্য পাশে বিশাল জায়গা খালি পড়ে থাকলেও পার্ক করবে না বা করতে পারবেনা। ভার্জিনিয়াতে আরো একটা বিশেষ নিয়ম লক্ষ্য করলাম সেটা হলো প্রতিটি রাস্তার কোণে বাঁক নেয়ার সুবিধার্থে কোণা থেকে ২০-২৫গজ জায়গায় চিহ্ন দেয়ে থাকে যেখানে পার্ক করা যাবে না। সুতরাং ঐ রাস্তার ঐ পার্শ্বে পার্কিং এর অনুমতি থাকলেও এই কোণের ২০-২৫ গজের মধ্যে পার্ক করতে পারবে না। জনগনের পক্ষ থেকে আইন মানার প্রবণতা অপরদিকে পুলিশ সরকার কৃর্তক ব্যবহ্রত না হয়ে নিজস্ব গতিতে আইনকে অনুসরণ করেন।

এবার আসি দ্বিতীয় ঘটনায় আসিঃ প্রথমেই বলেছি আমি এখন ভার্জিনিয়া রাজ্যোর ডি.এম.ভি অফিসে বসে আছি। মিশিগান থাকে স্থানান্তরিত হয়ে আসার কারণে আমার গাড়ির রেজিসেট্রশন এবং প্লেইট পরিবর্তন করতে হবে। ডি.এম.ভি অফিসে লম্বা লাইন। প্রথমে অফিসের সামনে এসেই দেখি বাইরেই লম্বা লাইন যে লাইনে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন দাঁড়িয়ে আছে। অফিসের ভেতরে ৯৩ জন লোকের জন্য নির্ধারিত তাই ৯৩ জন এর বেশী প্রত্যেককেই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ভেতরের ৯৩ জন থেকে কাজ সেরে কেউ বের হলে যতজন বের হয় সিকিউরিটি গার্ড ততজন লোককে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। আমিও এসে বাইরে লম্বা লাইনের পেছনে দাঁড়ালাম। আনুমানিক দশ থেকে পনের মিনিট দাঁড়ানোর পর দেখলাম অফিসের সামনে এসে একটা গাড়ি থামে এবং গাড়ী থেকে দু’জন বুড়ী নামে এক বুড়ীর বয়স আনুমানিক ৯০ হবে আরেকজন মনে হচ্ছে ৯০ থেকে একটু কম মনে হয়েছে। দু বুড়ী আস্তে আস্তে গাড়ী থেকে নেমে আসা এবং লাঠি ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসতে দেখে সবাই তাকিয়ে ছিলো, বুড়ীরা আস্তে আস্তে লম্বা লাইন পেরিয়ে লাইনের একেবারে পেছনে গিয়ে আমাদের মত দাঁড়ায়। বুড়ী দুজন যখন আমাকে পার হচ্ছিল, সিকিউরিটি গার্ড সে সময় দরজায় দাড়ানো ছিলনা, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভিতরে গিয়েছিল। তখন আমি শব্দ করে নিজে নিজে বললাম ”এঁদেরকে তো লাইন পার করে ভেতরে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমার কথাটা সিকিউরিটি গার্ড হয়তো শুনেছিল কিংবা কেউ একজন গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে বলেছিল তখনই দেখলাম সিকিরিটি গার্ড এসে বুড়ী দুজনকে বলে ভেতরে নিয়ে গেল।

লক্ষ্যণীয় বিষয়টা হলো, বুড়ীদের দুজনের একজন দেখতে এবং চলতে এতই বুড়ো মনে হচ্ছিল যে দেখলে যে কারুরই দয়া হবে। আর বুড়ীরাও জানতো সিনিয়র সিটিজেন বা বয়বৃদ্ধ হিসেবে তারা লাইনে না দাঁড়িয়েই ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাওয়ার কথা তথাপী বুড়ীরা কোন দাবীও করলোনা, আইনকে নিজের হাতেও তুলে নিলনা কিংবা চেঁচামেচিও করলো না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File