অবাস্তববাদী ধর্মহীনান্ধতা, ইসলামাতাংক এবং দমননীতি

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৫৬:০৪ বিকাল

অবাস্তববাদী ধর্মহীনান্ধতা, ইসলামাতাংক এবং দমননীতি

আবু এস. মাহফুজ

আধুনিক এবং প্রগতিশীল বিশ্বের একজন সুপরিচিত লেখিকা ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর লেখার একটি অংশ দিয়েই আজকের এই লেখা শুরু করতে চাই। ক্যারেন আর্মস্ট্রং তাঁর অন্যতম বিখ্যাত বই The battle for God, A History of Fundamentalism এ বলেছেন, “History shows that attempts to suppress fundamentalism simply make it more extreme. It was clear we had to learn how to decode the fundamentalist imagery so that we could understand what fundamentalist in all three faiths were trying to express, because these movements expressed an anxiety and disquiet that no society could safely ignore.” The battle for God, A History of Fundamentalism, Karen Armstrong, published by Ballantine Publishing Group, February 2001, page ix,

তাঁর কথার সরল বাংলা যা হতে পারে যে, ’ইতিহাস প্রমান করেছে যে, যুগে যুগে মেীলবাদকে যখনই দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে, দমননীতিতে এটা আরো চরম আকারই শুধু ধারন করেছে। আমাদেরকে বুঝতে এবং শিখতে হবে কিভাবে মেীলবাদের মূল তত্ব এবং কারণ বুঝা যায়। যাতে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্ম ইহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ এবং ইসলামের মেীলবাদীরা আসলে কি বলতে চায় বা কি বুঝাতে চায় কারণ এই তিন ধর্মেরই মেীলবাদী আন্দোলনগুলো বিশ্বময় কিছু উদ্বেগ এবং উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে যা কোন সমাজই সহজে উপেক্ষা করতে পারে না।”

আজকের এই লেখাকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার আগে ক্যারেন আর্মস্ট্রং সর্ম্পকে একটু বলা দরকার। ক্যারেন আর্মস্ট্রং হলেন একজন ব্রিটিশ লেখিকা, যিনি একজন রোমান খৃষ্টানদের ধর্ম যাজিকা ছিলেন। তাঁর প্রথম বই ”ঈশ্বরের ইতিহাস ঃ ইহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ এবং ইসলাম সম্পর্কে চার হাজার বছরের জিজ্ঞাসা” এই বইতেই তিনি বিখ্যাত হয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি তাঁর খৃষ্টান যাজকতার পদ পরিহার করেন। অনেক নাস্তিক মতাবলম্বিরা মনে করেন, ক্যারেন আর্মস্ট্রং একজন নাস্তিক। নাস্তিক হোক বা আস্তিক হোক সাবেক এই রোমান খৃষ্টান ধর্ম যাজিকা আধুনিক বিশ্বে ধর্ম সর্ম্পকে, মানুষের বিশ্বাস সর্ম্পকে বা মানুষের মনস্তত্ব সর্ম্পকে এত গভীর জ্ঞান এবং উপলদ্ধি রাখেন বা সৃস্পষ্ট প্রকাশ করেন যা খুব কম মানুষেরই আছে।

ক্যাারেন আর্মস্ট্রং এর উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে, Holy War: The Crusades and their Impact on Today's World (1988) (ধর্ম যুদ্ধ এবং আজকের বিশ্বে এর প্রভাব।) Muhammad: A Biography of the Prophet (1991) (মোহাম্মদ ঃ নবীর জীবনী।) The Battle for God: Fundamentalism in Judaism, Christianity and Islam (2000) ঈশ্বরের জন্য যুদ্ধ ঃ মেীলবাদ : ইহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ এবং ইসলামে।

ক্যারেনের লেখা বা বাস্তবতার নিরীখে আরেকটি কথা স্পষ্ট যে, মেীলবাদ সকল ধর্মেই রয়েছে। তিনি আরেকটি ঐতিহাসিক সত্য কথা যে, মেীলবাদ প্রথমত খৃষ্টধর্মেই এসেছিল। তাঁর একই বইয়ের ভুমিকার ১২ (xii) পৃষ্ঠায় আরো বলেছেন, We must look briefly at the term ‘Fundamentalism” itself, which has been much criticized, American Protestants were the first to use it. The fundamentalist wanted to go back to basics and reemphasize the “fundamentals” of the Christian tradition. আজকের এই লেখাটা অবশ্যই বাংলাদেশ সর্ম্পকে। বাংলাদেশ সরকারের অবদমন সম্পর্কে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যে খুবই কঠিন এবং ভয়াবহ এটা সম্ভবত অনেকের মত আমিও উপলদ্ধি করছি। এবং এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য বর্তমান সরকার যে মেীলিক অংশেই দায়ী সেটা অনেকে একমত, অপরদিকে দায়ী হলো অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী পাশ্চাত্যে অন্ধপ্রেমী এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি মহল।

হলমার্ক, পদ্মা, শেয়ার মার্কেটের মতো হারিয়ে যাওয়া হাজারো কেলেংকারীর মাঝে যখন আমাদের রাসূল সর্ম্পকে কটুক্তির বিষয়টা এলো তখন আমার এক বন্ধু আমার কাছে এলেন, আওয়ামী লীগের নেতা সৈয়দ আশরাফ যখন বলেছিলেন তিনি হিন্দু ও না মুসলিমও না। তখনই আমার বন্ধুটি এসেছিলেন এবং বললেন, ”নপুংশকা বলে কি! হিন্দু ও না মুসলমানও না, গাই ও না বলদও না?”। শতকরা ৮৭ ভাগ মুসলমানের দেশে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নেীকার মালিক তুই আল্লাহ শ্নোগান দিয়ে, তসবিহ আর বোরকা হাতে নিয়ে সৈয়দ নাম নিয়ে জনগনের ভোট নিয়ে নংপুশকটা বলে কি! বন্ধুটি তারপর, খুব খারাপ ভাষায় একটা গালির শব্দ বাবহার করে বললেন, আমার মন চায় এদের সামনে তাদের বঙ্গবন্ধুকে এমন একটা গালি দেই তারপর বলি, ’কিরে, খারাপ লাগছে?’ তোদের বঙ্গবন্ধু তো গুটি কয়েক লাখ মানুষের নেতা, তাকে গালি দেয়াতে এত খারাপ লাগছে। কিন্তু যে মানুষটি আজ পনের শত বছর ধরে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় ব্যাক্তি হিসেবে অম্লান হয়ে আছে তাকে গালি দেয়া হলে তোদের কোন প্রতিক্রিয়া নাই কেন? তোরা এই মানুষটাকে ভালবাসতে না পারিস, কিন্তু যাদের ভোটের জন্য তোরা নেীকার মালিক তুই আল্লাহ বুলি ধরিস সেই কোটি কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় ব্যাক্তিটিকে গালি দেয়া হলে তোদের স্পষ্ট কোন উত্তর নাই কেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হঠাৎ করে আবার নবী প্রেমে গদ গদ, হঠাৎ করে মদীনার সনদই আবার এত প্রিয় হয়ে গেল!

আমার ঐ বন্ধুটির অতি আবেগী কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু সত্যিই তো, সৈয়দ আশরাফ সাহেব কিভাবে বললেন, তিনি মুসলমানও না হিন্দু ও না। ব্যাপারটা নীতি এবং আইনগতভাবে আলোচনা করা যাক, বাংলাদেশের আইন এবং নিয়মানুযায়ী, নিঃসন্দেহে সৈয়দ আশরাফ সাহেব জন্মের পর একজন মুসলমান হিসেবে নাম রেজিস্ট্রি করেছেন। তাঁর লেখাপড়া বা কর্মজীবনের অনেক ক্ষেত্রে তাকে অনেক স্থানে ফর্ম পুরণ করতে হয়েছে সেখানে ধর্ম ইসলাম লিখতে হয়েছে। তিনি যদি দাবি করেন যে, তিনি সে সব ফর্মে ধর্ম পরিচয় দেননি তাহলে তা যাচাই না করেই প্রথম বলতে চাই আইনগতভাবে সেটা সিদ্ধ কিনা। আর তিনি যদি বলেন যে, সে সময় তিনি মুসলমান ছিলেন এখন আর নাই, তাহলে আইনগতভাবে আমাদের প্রশ্ন তিনি কবে ধর্ম ত্যাগ করেছেন সে ঘোষনা তিনি কখনো দিয়েছেন কিনা। তিনি যেহেতু মুসলিম সংস্কৃতির দেশে মুসলিম পরিবারে মুসলিম নামে জন্ম নিয়েছেন সেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা তাকে মুসলমান হিসেবেই ধরে নিয়েছে এবং মুসলমান হিসেবেই প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে সেক্ষেত্রে তিনি যদি মুসলমান বিশ্বাস ত্যাগ করে তা গোপন রাখেন আইনের দৃষ্টিতে তা অন্যায় কিনা তা আইনের অধ্যাপক ডঃ আসিফ নজরুল, ব্যাারিস্টার আন্দালিব সহ সুস্থ মস্তিস্কের আইনজীবিদের কাছে

আসুন কিছু বিষয়ে কিছু কথা খোলা মেলা আলোচনা করা দরকার। প্রথমেই আসা যাক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। এখানে প্রশ্ন হলো কে যুদ্ধাপরাধী? এ ব্যাপারে কিছু খোলা প্রশ্ন বা ওপেন চ্যালেঞ্জ এর জবাব আমাদের প্রয়োজন

(১) বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে বিরোধী জোটকে দুর্বল বা নিঃশেষ করার পরিকল্পনায় করছে এটা কি আওয়ামী লীগ অস্বীকার করতে পারবে?

(২) আওয়ামী লীগের নিজের দলে স্বাধীনতা বিরোধী বা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধী ছিল বা আছে একথা কি আওয়ামী লীগ বা কেউ অস্বীকার করতে পারবে।

(৩) ট্রাইবুনাল নিয়ে যে ঘাপলা আছে সেটা কি সরকার বা কেউ অস্বীকার করতে পারবে? স্কাইপি কেলেংকারী, আর্ন্তজাতিক নিয়ম না মানা, ইত্যাদি যে সব বিষয়গুলোকে ইকনমিস্ট ম্যাগাজিন বা আমেরিকান যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন র্যাপ সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন।

(৪) হলমার্ক, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, বিশ্বজিত হত্যাকান্ডের মত অজস্ত্র হত্যাকান্ড গুম, র মত অজস্ত্র অপকর্ম, সাগর, রুনি, কালো বিড়াল রেল কেলেংকারী সমস্যা সবচে বড় সমস্যা হয়ে আছে।

ইসলাম এবং রাসুল সাঃ সম্পর্কে কটুক্তি এবং হেফাজতের আন্দোলন ঃ

হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন মাইল ফলক। তবে এক দৃষ্টিতে এটা নতুন কিছু নয়। ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর বক্তব্যকে একটু ব্যাখ্যা করলেই বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশ ৮৭% মুসলমানের দেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসলামকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে সে প্র্ক্ষোপটে হেফাজতের এই আন্দোলন আসলে কিছুই না। ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর এই দেশের ১৪ কোটি মুসলমান যে হাসিনা সরকারকে উড়িয়ে দেয়নি সেটাই সরকারের ভাগ্য। হেফাজতের আন্দোলন দেখে সরকার এবং বামপন্থীরা বলতে শুরু করেছে যে, এটা জামাতকে বাঁচানোর কেীশল। বুদ্ধিজীবি নামধারী অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী এই নির্বোধদের কথা শুনে হাসি ও আসে ঘৃণাও হয়। খৃষ্টান ইহুদী মেীলবাদীদের চামচামি করে, ইসলাম বিদ্ধেষী কয়েকটি চটি বই পড়ে তাফালিং মারো, বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝনা, এসব বুদ্ধিহীন বুদ্ধিজীবিদের কারনেই তো জাতির এই দুর্গতি! আ.গা.চেী আর মুনতাসির মামুনদের মত কিছু আগামাথাহীন কলমবাজ আসে আলেমদেরকে ইসলামের সবক দিতে। দু’চারটি বাংলা হাদীস মুখস্ত করে এসে ওয়াজ করে বোখারা শরীফে আছে লাকুম দী নুকুম। এরা কত নির্বোধ। এবং জাতির জন্য মারাতœক বিষবাষ্প।

আলহাজ হজরত মাওলানা মুনতাসির মামুন হুজুর সম্প্রতি তার কোন এক লেখায় হেফাজতে ইসলাম এবং আল্লামা শফি সাহেবকে যথেষ্ট ওয়াজ নসিহত করেছেন, শুনিয়েছেন হজ করে এসে সারা জীবনের পাপ মোছনে গল্প। আলহাজ মাওলানা মুনতাসির মামুন হুজুর পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতের বাংলা অনুবাদ উদ্ধৃত করে আল্লামা শফি সাহেবকে হেদায়েত করা শুরু করেন যে, ভাবখানা এমন যে, আল্লামা শফি সাহেব কোরআনের আগা মাথা বুঝেন আলহাজ মুনতাসির একরাতেই কোরআনের মর্মবানী বুজে ফেলেছেন। আহা, ভন্ডামির একটা সীমা থাকা দরকার। মুনতাসির মামুনের ভন্ডামী দেখে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের এক গন্ড মুর্খ মুখচাড়া কয়েকটি কয়েকটি রোগ আর অষুধের নাম মুখস্ত করে গিয়ে প্রফেসর ডাক্তার বদরুদ্দোজা চেীধুরীকে গিয়ে বলছে ডাক্তার সাহেব আপনি তো ডাক্তারী জানে না। এই এই জায়গায় আপনার ভুল আছে। সর্বনাশ, এ জাতির বারোটা বাজবে না কেন!!

ষোল কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে চেীদ্দ কোটি মুসলমানের এই দেশে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, কবির চেীধুরীদের মত যাঁরা ইসলামকে অবমাননা করছে তারাই বাস্তবতা বর্জিত এবং বিবেক বর্জিত নয় কি? এরাই চরমপন্থী নয়কি?

আলহাজ মুনতাসির মামুন আরো বলেছেন, ইসলাম নাকি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। বাহ! ভালই তো। আলহাজ মুনতাসির সাহেব, আল্লামা শফি বা কোন আলেম কি দাবী করেছেন যে, ইসলাম কাউকে ইজারা দেয়া হয়েছে? কিন্তু আপনারা এত বেকুব কিভাবে হলেন, না কি বুঝেও না বুঝার ভান করেন। পৃথিবীতে প্রতিটি জ্ঞান এবং সিস্টেমে একটা ট্র্যডিশন থাকে। ডাক্তারী না পড়ে শুধু রোগের নাম আর ঔষধের নাম মুখস্ত করে কেউ ডাক্তার হয় না। অনেকগুলো জটিল রোগের জন্য ডাক্তারদের বোর্ড বসে আলোচনা হয়। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত দেন সেটাই রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের ফতোয়া। তেমনিভাবে আইনের ক্ষেত্রে আইনজ্ঞরা আইনের ব্যাখ্যা দেন। তাহলে ইসলামী শরীয়তের আইনের ব্যাখ্যা কি আমরা আল্লামা শফির কাছ থেকে নেব নাকি তুমি একরাতের মুফতি আলহাজ মুনতাসির মামুনদের কাছ থেকে নেব? আর্শ্চয্য!! এ জাতির কপালে এ দুর্গতি হবে না কেন। আর এসব ইডিয়টদেরকে আমরা বুদ্ধিজীবি ভাবি। তাদের গাঞ্জাখুরি কলমবাজি পত্রিকাগুলো ছাপে।

ইসলাম কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। অবশ্যই নয়। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাও কারো বাপ দাদার সম্পত্তি নয়। সম্প্রতি অতি সম্প্রতি একজন প্রসিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা এবং গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডঃ জাফরুল্লাহ চেীধুরী স্পষ্টতই বলেছেন শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২০-২২ বছরের যুবক ছিলেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। শাহরিয়ার কবির পাকিস্তানী সেনাদেরকে মুরগী সরবরাহ করেছেন আর আজ এই শাহরিয়ার আর তবে আলহাজ মুনতাসির স্বাধীনতার সোল এজেন্ট হয়ে আছেন।

ইসলাম এবং রাসূল সাঃ কে অবমাননার বিষয়ে ঐতিহাসিক সত্য হলো। ইসলামের চেীদ্দ-পনেরশত বছরের ইতিহাসে ইসলামের শক্রতা অনেক হয়েছে। রাসুল সাঃ এর জীবদ্দশায়ই যা হয়েছে তা আমরা বেশ কম অনেকেই জানি। তায়েফের সেই রক্তাক্ত অধ্যায় ও আমরা জানি যেখানে রাসুল সাঃ শরীরের রক্ত বেয়ে নীচে পবিত্র জুতা পর্যন্ত্য রক্তাক্ত হয়েছিল। রাসুল সাঃ এর বিরুদ্ধে লেখালেখিও সে যুগেও কম হয়নি। রাসুল সাঃ কে পাগল গনক এমন নামে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু এ সমস্ত করেছিল কাফির রা। সোজা কথায় যারা রাসুল সাঃ কে মানতে পারেনি। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা মুহম্মদ সাঃ কে নবী হিসেবে মানেন না। কিন্তু বাংলাদেশের মত সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশে মুসলিম নাম নিয়ে নির্বাচন আসলে তসবিহ হাতে নিয়ে, বোরকা পরে, নেীকার মালিক তুই আল্লাহ বলে, নবীজির নাম বলে আর মদিনার সনদের দোহাই দিয়ে ইসলাম কে বা রাসূল সাঃ কে এভাবে অপমান পৃথিবীর কোন দেশেই কোন কালেই হয়নি। ইসলামের ভাষায় এদেরকে বলা হয়েছে মুনাফিক। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৪ নং আয়াতে এদের সর্ম্পকে বলা হয়েছে,

”এর যখন ঈমানদারদের সামনে আসে তখন বলে আমরা তো ঈমানদার, আর যখন তাদের শয়তানদের কাছে যায়, তখন বলে আমরা তো তোমাদের সাথেই আছে, আমরাতো এই বোকাদের সাথে ঠাট্রা করছি।”

ইসলাম এবং রাসুল সাঃ সর্ম্পকে অপমান এবং অবমাননার ক্ষেত্রে সরকার এবং নাস্তিক তথ্যমন্ত্রি ইনু, বা হিন্দু ও না মুসলমানও না সৈয়দ সাহেবকে স্পষ্টভাবে দুটি প্রশ্ন করা দরকার

১. এভাবে রাসুল সাঃ সর্ম্পকে কেউ যদি অবমাননাকর কথা লিখে বা বলে তার শাস্তি কি হওয়া উচিত। এবং এব্যাপারে তাঁদের নিজেদের মত কি। রাসুল বা ইসলাম সর্ম্পকে যা লিখা হয়েছে ঐ ব্লগারদের দ্বারা এব্যাপারে তাঁরা নিজেরা কি বিশ্বাস করেন

২. দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যেভাবে আল্লাহ এবং রাসুল সম্পর্কে শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেভাবে যদি আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে লেখা হয় তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে।

এখন একজন মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আসলে এ সমস্যাগুলোর কারন কি?

এ সমস্যাগুলোর জন্য যারা প্রধানত দায়ী ঃ

১. আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কারণ ঃ

১.১. সরকার জানে জামাত চারদলীয় জোটের প্রধানতম অংশ। চার দলীয় জোট কে বিভক্ত করা না হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট আবার ক্ষমতা হারাবে। তাই যে কেীশলেই হোক চার দলীয় জোট কে শেষ করে দেয়া ছাড়া ক্ষমতায় থাকার বিকল্প নাই। এজন্যই সরকার নিজেই সমস্যা আরো উস্কে দিচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যাবহার করছে। পুলিশ বাহিনী, বি.জি.বি বা সরকারের যে কোন শক্তি কোন দলের নয়, আওয়ামী লীগের নয়। পুলিশ বাহিনীকে সরকার যেভাবে বিরোধী দল দমনে ব্যাবহার করছে এটা স্পষ্টভাবে এবং যে কোন দৃষ্টিতেই অন্যায় এবং এর পরিনতি খারাপ।

২. পাশ্চাত্য প্রেমী (ইউরোসেন্ট্রিক) হীনমন্য কিছু অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী বুদ্ধিজীবি ঃ

ধর্ম নিয়ে মারামারি করার ইতিহাস অনেক পুরনো। কমপক্ষে চার হাজার বছরের ইতিহাস। ইহুদী এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ধর্ম নিয়ে অনেক অনেক বেশী মারামারি করেছে ইসলামের জন্মের আগেই। খৃষ্টান এবং ইহুদীরা আড়াইহাজার বছর মারামারি এবং সংঘাত করার পরই ইসলাম এসেছে।

পাশ্চাত্য এবং পাশ্চাত্য প্রেমী (ইউরোসেন্ট্রিক) হীনমন্য কিছু অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী বুদ্ধিজীবি খৃষ্টান এবং ইহুদী মেীলবাদীদের একটি অংশ যারা ইসলামকে সহ্য করতে পারে না। যারা ইসলামকে তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ মনে করে।

৩. ভারতীয় আধিপত্যবাদ

৪. অবাস্তববাদী বস্তুবাদীদের ধর্মহীনান্ধতা এবং ইসলামাতাংক

এটা ঠিক, বাংলাদেশে ধর্মের কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু বাড়াবাড়ী আছে। ইসলামিক নিয়মনীতির ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতিমালার ঘাটতি রয়েছে। তথাপী একথা অবশ্যই ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, ধর্ম বিশ্বাস বাংলাদেশের সভ্যতা সংস্কৃতির অবিবেচ্ছদ্য অংশ। কিন্তু ইসলাম বিরোধী একটি গোষ্ঠী যারা মিডিয়া এবং সংস্কৃতিক কর্মীদের মাধ্যমে বাস্তবতা বর্জিত ধর্মহীনান্ধতা এবং ইসলামাতাংক রোগে আক্রান্ত।

বস্তুবাদীদের অবাস্তববাদী ধর্মহীনন্ধতা এবং ইসলামাতংক। হ্যাঁ, এরা অবাস্তববাদী বস্তবাদী। এরা আসলে বস্তুবাদটাই বুঝেনি। বস্তুবাদ এবং বাস্তববাদ শব্দ দুটি একই মেীলিক শব্দ থেকে উতসারিত। বাস্তবতা বাদ দিয়ে যে বস্তুবাদ সে বস্তুবাদ ভুল বস্তুবাদ। এমনকি একই শব্দের ইংরেজী শব্দ মেটেরিয়ালিস্টিক এবং রিয়ারিস্টিক একই শব্দমূল থেকে উৎসারিত। রিয়ালিজম কে বাদ দিয়ে মেটেরিয়ালিজম আসতে পারে না।

ইসলাম ধর্মই বাংলাদেশের বাস্তবতা, রিয়ালিটি। যে দেশের ৮৭ ভাগ মানুষ মুসলমান সে দেশে আপনি হিন্দু ও না মুসলমান ও না হয়ে নিজে যা ইচ্ছা করতে পারেন, নপুংশক বা যা কিছু হয়ে থাকতে পারেন কিন্তু জনগনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। ভোটের আগে তসবিহ, বোরকা হাতে নিবেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নেীকার মালিক তুই আল্লাহ শ্লোগান দিয়ে জনগনের ভোট নিবেন আর ভোট চলে মসজিদে তালা লাগাবেন। এই ভন্ডামী চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ।

আজকের এই লেখা আপাতত ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর যে উক্তি দিয়ে শুরু করেছিলাম সেরকম দু’একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো। যুক্তরাষ্ট্রের ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের পর বুশ প্রশাসন যখন ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষনা করে তখন যুক্তরাষ্ট্রে পবিত্র কোরআন মজিদ সবচে বেশী পঠিত হয়েছিল এবং অুমসলমানদের মধ্য থেকে ইসলাম গ্রহনের মাত্রা বেড়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে যারা মসজিদে যাওয়া বা ধর্ম পালনে আলসেমী করতো, তারা আরো বেশী মনযোগের সাথে ধর্ম পালন শুরু করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছে যারা জামাতকে সমর্থন করতেন না তারা এখন জামাতের সমর্থক হয়ে যাচ্ছে। জামাতের মত বা আদর্শ নিয়ে অনেকের দ্বিমত আছে কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা চলছে তা যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চাতুরী, এবং অবাস্তববাদী বাম রামদের ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র তা সবাই বুঝে।

বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন বা ভবিষ্যতে করার খায়েশ আছে একটা বিষয় বুঝা দরকার। ব্যাক্তিগতভাবে আপনি হিন্দু, মুসলিম, গাই, বলদ, নপুংশক কিছুই না হতে পারেন কিন্তু রাজনীতি করতে হলে জনগনের বিশ্বাসকে মুল্যায়ন করতে হবে। শুধু বাংলাদেশ কেন, খোদ আমেরিকাতে নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিকারীরা নাকে খত দিয়ে নিজের ধর্মের পরিচয় দিতে হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজের ধর্মগ্রন্থ হাতে শপথ নেন। ইংল্যান্ডে হাউজ অফ লর্ড যেটা মুলতঃ খৃষ্টান ধর্ম কর্তৃক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রনের একটি প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত।

পৃথিবীর একমাত্র বিচিত্র দেশ ভারত ধরনিরপেক্ষতা ছদ্মাবরণে মুসলিম নিধন চলে। নামে ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু নরেন্দ্র মোদীরা যখন হাজার হাজার মুসলমানদেরকে গনহারে হত্যা করে তখন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদ কথা বলে না।

বাংলাদেশে কিছু বিভ্রান্ত উশৃংখল যুবক যুবতীকে পাশ্চাত্যের চাকচিক্যের লোভ দেখিয়ে চরম ইসলাম বিদ্ধেষী কিছু বই থেকে কিছু যুক্তি শিখিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

পরিশেষে, তরুন যুবক ভাইবোনদের প্রতি অনুরোধ এবং দাবী তোমরা দয়া করে পড়াশোনা করো। বিভ্রান্তমূলক ইসলাম বিদ্ধেষী কিছু বই পড়ে অহেতুক নিজদেরকে বিভ্রান্ত করো না। তোমরা যে সমস্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের বই পড়ে বড় হচ্ছো এসব বুদ্ধিজীবিরা আর যাই হোক জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেনি। কারণ তারা বস্তুবাদী দাবী করতে পারে বাস্তবতাবর্জিত। একপেশে জ্ঞান নিয়ে পৃথিবীতে কেউ কোনদিন বাস্তবতা বুঝতে পারে না। তুমি যদি শরৎ চন্দ্রের বই পড়ো, হুমায়ুন আহমদের বই পড়ো, রবীন্দ্রনাথের বই পড়ো, কার্ল মার্কসের বই পড়ো তাহলে প্রায় পনেরশত বছর ধরে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যে গ্রন্থ পড়ে জীবনকে ধন্য মনে করে সে বই পড়লে তুমি বাস্তবতা বুঝবে কি ভাবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File