সময় এখন সরকারের একগুঁয়েমির অবসান ঘটানো
লিখেছেন লিখেছেন নদীকন্যা ১৩ মে, ২০১৩, ০২:৫৫:৫৪ দুপুর
বাংলাদেশে এখন বিদ্যমান একটি চরম রাজনৈতিক সঙ্কট। বিশেষত আগামী নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, সে প্রশ্নে যখন সরকারি দল ও বিরোধী দল পরস্পর অনড় বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান নিয়েছে, তাকে ঘিরেই প্রধানত এই রাজনৈতিক সঙ্কট। সরকারি দলের কথা হচ্ছে, বিদ্যমান দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা সুনির্দিষ্ট করে দৃঢ়তার সাথে বলছেন, শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আর তার সরকারের অধীনেই হবে এ নির্বাচন। বিরোধী দল জোটসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে আগামী নির্বাচন। এমনই প্রেক্ষাপটে বিরোধী দল জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার দাবিতে থেমে থেমে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু যেহেতু এটি সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বছর, তাই বিরোধী দলের জন্য দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না। বিরোধী দল সে আন্দোলন যখন প্রায় শুরু করতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সরকারের নির্বিচার হত্যার ঘটনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার-কেন্দ্রিক আন্দোলন কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছে। আজ রাজধানী ঢাকায় ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। এখান থেকে নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। কঠোর কর্মসূচিই ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখনই বিরোধী দলের আন্দোলন কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় ঠিক তখনই সরকারের দায়িত্বশীল নেতানেত্রীরা যেখানে-সেখানে বক্তৃতা-বিবৃতিতে উড়ো প্রস্তাব দিয়ে বলছেন, যেকোনো স্থানে বিরোধী দলের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে; সংসদে অথবা সংসদের বাইরে। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য রাখার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হবে। কিন্তু এরপর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এখনো পাঠানো হয়নি। ফলে সংলাপের বিষয়টি থেকে গেছে অনিশ্চিতই। অপর দিকে গত ১১ মে ১৪ দল বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। আবার প্রধানমন্ত্রী বললেন, সংলাপের প্রস্তাব অব্যাহত থাকবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি দল ও জোট ছাড়া বাংলাদেশে বাকি দলগুলো ও সুশীলসমাজের প্রত্যাশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ইতোমধ্যে একটি গণদাবিতে রূপ নিয়েছে। এই গণদাবি মেনে নিতে সরকারের একগুঁয়েমি দেশকে ঠেলে দিচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের দিকে। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলছে, রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান না ঘটলে বাংলাদেশে আরো রক্তপাত ঘটবে। দেশের সচেতন মানুষও তা-ই মনে করে। তাই তাদের চাওয়া হচ্ছে, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবি মেনে নিয়ে দেশকে অনিবার্য সঙ্ঘাতের হাত থেকে বাঁচাবে। গত শনিবার দৈনিক প্রথম আলো একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করে। এ জনমত জরিপ মতে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে পেতে চায়। এ জরিপ সরকারি দলকে ুব্ধ করেছে। প্রথম আলো সম্পাদককে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা নানা বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন।
এ দিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, সরকারি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না, বিরোধী দল চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ নিয়ে চলছে সঙ্কট। কেউ কারো কথা শুনছে না। অতএব সঙ্কট নিরসনে এ প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। অপর দিকে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। বিরোধী দলকে কোনো ধরনের সুযোগ না দিয়ে সরকার দমন করার যে উপায় বেছে নিয়েছে, তাতে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেশের যে সঙ্ঘাতময় চিত্র ফুটে উঠেছে সেখানে সরকারের অসহিষ্ণুতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। দেশের জনপ্রিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিলেও আছে সরকারের একগুঁয়েমি।
বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে এখন চরম সময় হচ্ছে সরকারের একগুঁয়েমির অবসান ঘটিয়ে বিরোধী দলের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছা; যাতে করে দেশের সঙ্ঘাতময় রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সমাধানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন