মানুষ বাঁচার মত বাঁচতে চায়
লিখেছেন লিখেছেন নদীকন্যা ১১ মে, ২০১৩, ১২:২৪:১৮ রাত
বাঁচার মতো বাঁচতে চাওয়া মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। দুনিয়ার সব মানুষই বাঁচতে চায় এবং ভালোভাবে বাঁচতে চায়। ফুটপাতে, গাছতলায়, পরের বাড়ির বারান্দায় পড়ে থাকা যে জীবন সেটা কারো কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সাদা-কালো, শ্যামলা কোন মানুষের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। জন্মের পর থেকে মানুষের যা কিছু চেষ্টা, যা কিছু কর্মপ্রয়াস, আশা-আকাক্সক্ষা সবই ভালোভাবে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য। এদিক হতে আমিও ব্যতিক্রম নই। আমিও ভালোভাবে বাঁচতে চাই। এই চাওয়া এই মনের আকুতি সাম্প্রতিককালীন কোন চেতনার বহিঃপ্রকাশ নয়। বহিঃবিশ্বের জীবন সম্পর্কে যখন আমাদের জ্ঞান বা ধারণা ছিল না, যখন গ্রামই ছিল দেশ। অন্য কথায় কূপম-ূকতায় আচ্ছন্ন ছিল আমাদের জীবন এবং চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণায় তখনো মানুষ বাঁচতে চেয়েছে। আজকের মানুষও সেদিনের মানুষের মতোই ভালোভাবে বাঁচতে চায়। এই চাওয়ার প্রবণতা হতেই অজানা আকাশ পথে, পানি পথে সে পাড়ি জমায়, বিরূপতা জয় করতে উন্মুখ হয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম করে।
এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলেও ছিল একই প্রেরণা। তবুও আজ পর্যন্ত সূর্যালোকের মতো যা দেদীপ্যমান তা হলো ক্ষুধা-দারিদ্র্য। মানুষ তার ন্যায়সঙ্গত পাওনা বা অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং জীবন বিড়ম্বনায় ভরা। আজও মোটা ভাত, মোটা কাপড়, ন্যায় সঙ্গত পাওনা বা অধিকার এদেশের বৃহদাংশের জীবনে এক বিরাট সমস্যা। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী এই মুহূর্তে বিরাট বাড়ি, দামি গাড়ি, শান-সওকাত কিছুই প্রত্যাশা করে না। শুধু দুটি অন্ন আর আর বস্ত্র নিয়ে প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও অনস্বীকার্য যে, আজও এদেশের মানুষের এই চাওয়া পূরণ হয়নি। যা পাওয়ার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এতসব উদ্যোগ-আয়োজন, ধার-দেনা, সাহায্য, দেশ-বিদেশে ছুটাছুটি। তারপরও কেন আমাদের এই অবস্থা প্রশ্নটা এখানেই।
এ প্রশ্নে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন, দেশে এমন কোন সম্পদ নেই যা দিয়ে আমাদের অবস্থার উন্নতি করা যায়। কেউ বলেন, আমাদের দেশের চলার পথ অনির্দিষ্ট এবং সঠিক নয়। সোজা কথায় আজ পর্যন্ত আমরা কোন পথে চলব তাই ঠিক করতে পারিনি। পক্ষান্তরে দেখা যায়, এসব কিছুর জন্য দায়ী এদেশের সর্বস্তরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। যারা নাকি এদেশে সব বিষয়ে প্লানিং করেন; আমাদের দেশে সম্পদের প্রাচুর্য নেই যেমন ঠিক, তেমনি একেবারে সম্ভাবনাহীনও নয়। তবু কেন আমাদের কাঙালের দশা ঘোচেনা? তবুও কেন মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের ন্যায়সঙ্গত পাওনা এদেশের বৃহদাংশ লোকের জীবনে স্বপ্নবিলাস হয়ে আছে? এর সঠিক জবাব হয়ত কেউ দিতে পারবে না।
আমাদের চিন্তাশীল মহল এতে শংকিত হয়ে উঠেন। গোটা দেশের মানুষের জন্য এটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তারা তখন হাত-পা ছেড়ে নিরুপায়ের মতো বসে না পড়ে যার যার ক্ষেত্র হতে এর প্রকৃত কার্যকারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করেন। এর ফলে বিভিন্ন তথ্য বের হয়ে আসে। এসব তথ্যের একটার সঙ্গে অন্যটার সম্পূর্ণ মিল আছে এমনও নয়। রাজনীতিকরা যে কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা তা বলেন না, আবার সমাজবিজ্ঞানীর অভিমতের সাথে সরকারি ধ্যান ধারণার গড়মিল দেখা যায়। তবে সবার উপরে যে ব্যাপারটি প্রকট হয়ে উঠে তা হলো, নিজ নিজ অঙ্গন হতে বিভিন্ন মহলের পরিস্থিতির মূল্যায়ন এবং সমাধাকরণের প্রয়াস। আর এই প্রয়াসের ফলেই পরিস্থিতি এক সময় নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন উদ্যোগ বড় বেশি দেখা যায় না। সমাজে কোন একটা সমস্যা দেখা দিলে গোটা সমাজকেই তা পীড়িত করে। তাই প্রত্যেকেরই কর্তব্য থাকে, সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করার। কিন্তু প্রায় আমরা তা ভুলে যাই, পাশ কাটানোর মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসে। আমরা বলতে আরম্ভ করি, এ কাজ আমাদের নয়।
বলা বাহুল্য, শুধু সমস্যা নয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐ একই পরিস্থিতি বিদ্যমান। সে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর এবং তা এজন্য যে, অজ্ঞতা সবচেয়ে বড় পাপ। নিজ দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়ে কথাটি আরও অধিক প্রযোজ্য। যিনি যে কাজে নিয়োজিত তিনি যদি তার কাজটা কি তা না জানেন, তাহলে তাকে দিয়ে সে কাজের সুচারু রূপে সম্পাদন সম্ভব না। তাই সবার আগে প্রয়োজন কাজটা কি তা জানা। কিন্তু পরিতাপজনক হলেও স্বীকার্য যে, দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এক্ষেত্রে অজ্ঞতাই বেশি লক্ষ করা যায়। দেখা যায়, কর্মজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ যারা আমরা নিষ্পেষিত তাদের বেশিরভাগই জানিনা কি আমাদের কাজ, কি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে তার অধঃস্তন কর্মচারীকেও জিজ্ঞেস করতে হয়। তিনিও তখন পুরো চিত্র তুলে ধরতে পারেন না। কেউ কেউ বলেন, শত শত বছরের চেষ্টায় সবার জন্য মোটা ভাত, মোটা কাপড় এবং ন্যায়সঙ্গত পাওনা পাওয়ার সংস্থান না হওয়ার এটাও একটা কারণ। তাদের মতে অবস্থার উন্নতি করতে হলে কার কি কাজ প্রত্যেককে তা জানতে হবে এবং পলায়নী মনোবৃত্তি বিসর্জন দিয়ে যার যা দায়িত্ব এবং কর্তব্য তা তাকে পালন করতে হবে যথার্থ মর্যাদা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন