প্রতিবাদ

লিখেছেন লিখেছেন লবঙ্গ ফুল ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:২৫:৫৬ রাত

দুটি বরফের টুকরো হাত দিয়ে উঠিয়ে গ্লাসে ফেললেন রশিদ সাহেব। গ্লাসে প্রথম চুমুক দেয়ার সাথে সাথেই শব্দটা কানে এল। । কেউ পা টেনে টনে আসছে, এমন শব্দ । লোকটি চেয়ারের পিছনে এসে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এত রাতে এখেনে কারো আসার কথা না। এই বাংলোটি অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিরাপদ। পিছন থেকেই কথা বলে উঠল সে।

-স্যার আমি শফিক, খাতা পত্রে লেখা আছে শফিকুর রহমান ।

-আমার ধারনা তোমার সমস্ত খাতা পত্র পড়েও আমি তোমাকে চিনতে পারব না, তার থেকে বল এত রাতে কেন বিরক্ত করছ , তুমি এসেছ কোথা থেকে ।

- রাজশাহী ভার্সিটি থেকে, স্যার।

বেশ কিছু দিন ধরে ভার্সিটিতে কমিটি গঠনের তোর জোর চলছে। অনেকেই বাসায় আসা যাওয়া করছে। এই সময় গুলোয় ব্যস্ততাও বেড়ে যায় অনেক। সেই সাথে এর ওর গাছের ফরমালিন দেওয়া ফল সব্জি কচু ঘেচুও পাওয়া যায় ।

-স্যারের কি একটু সময় হবে কথা শুনার?

-হ্যা । বলুন।

(রাজশাহী ভার্সিটিতে শব্দটি সুনতেই তুমি থেকে আপনিতে চলে আসলেন এই চতুর রাজনীতিবীদ।

শফিক টেবিলের অপর পাশে রাখা চেয়ারে বসল ।

-স্যার আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন । ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে ।যখন চাকরি নিবে তখন আর তাকে গরুর দুধ বেচা টাকায় চাল কিনতে হবে না।

ছোট ভাইটা ক্লাস এইটে পড়ে। টিউশনি করে যা পাই তা থেকে ওর জন্য কিছু পাঠাই। বড় ক্লাসে উঠলে খরচটা অনেক বেড়ে যাবে।

রশিদ সাহেব বুঝছেনা এসব কথা ছেলেটা তাকে বলছে কেন ? মতলব কি এর?

-স্যার বোনটার বিয়ে দিতে হবে । কিভাবে যে কি হবেনে বুঝছিনা।

এবার বিষয়টা ধরতে পারলেন রশিদ সাহেব । এসব ঝামেলা যে কেন তার কাছে পাঠায় তিনি বুঝেননা ।

রশিদ সাহেব অত্যন্ত কৌশলী ভোট গ্রহিতা।দয়ালু ব্যক্তিত্ব। দুরনিতিবাজ নেতা হিসেবে তার সুনাম অন্যান্য সবার থেকে একটু বেশিই।তবে সাধারন নির্বাচনে ভোটার ব্যলট পেপারে তার মার্কার উপরেই সিলটা দেবে। এই আশ্চর্য জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশলগুলি প্রয়গে তার কখনো ভুল হয় না।

তমাকে আমি কিছু টাকা দিয়ে দিচ্ছি কেমন?

হা হা হা হা করে হেসে উঠলো সফিক। তার জীবনে এখন টাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এখন তার জীবনে টাকা সহ কোন ধরনের বস্তুর আর প্রয়োজন নেই।

চেয়ারের ডান দিকে একটি ফুলদানিতে দুটি গোলাপ সাজানো আছে। ফুল দুটির সামনে এসে দাড়াল সফিক।

আজ আমার জন্মদিন ছিল স্যার। রুপা দুটো ফুল নিয়ে এসেছিলো আমার জন্য। আমি তখন বুকের ভিতরে দুটো বুলেট নিয়ে শুয়ে আছি, পিছ ঢালা ্রাস্তার উপরে। লাল রক্ত গুলো চুইয়ে চুইয়ে পরছিল কালো পিচের উপরে। রুপার চিৎকার গুলো এখনো কানে বাজছে, ।

-কেন আমাকে, কেন মেরে ফেললেন স্যার?

আমি ত আপনার প্রতিপক্ষ নই , কোন নেতাও নই।

কিছু অন্যায় এর প্রতিবাদ করেছি মাত্র।

কয়েকটি ছেলেকে সাথে নিয়ে এক্তি সুন্দর সমাজ গরার চিন্তা করেছিলাম ।

তার প্রতিদান হিসেবে আমি এই সমাজ হতে বিতারিত হলাম।

আমি আর কোনদিন ফুল হাতে নিতে পারব না ।আজ আমি পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্যের বাইরে ।

লাল গোলাপ দুটো লাল রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে। বুক চেপে ধরে আমি লালের দিকে তাকিয়ে আছি ।

অসয্য যন্ত্রনায় একটু পরে সব আলো নিভে গেলো এখন আবার প্রতিবাদ জনাতে এসেছি স্যার।

আমি কোন নেতাও নই।

স্যার, স্যার আপনি কি আমার কথাগুলো শুনছেন?

সফিক এবার রসিদ সাহেবের দিকে এগিয়ে আসছে । সামনের দিকে প্রাণ পণে ছুটছেনরসিদ সাহেব । তিনি তার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দউরাচ্ছেন । হঠাত করে তিনি লক্ষ করলেন তিনি এক জায়গায় দারিয়ে দউরাচ্ছেন। যারপরনাই অবাক হলেন রসিদ সাহেব। একটি ভুত তাকে মারতে এসেছে, অথছ তিনি কিনা এখন পিটি করছেন? কনা তাকে যথারথই গাধা বলে। রসিদ সাহেব আরও জরে দৌর দিলেন । অথচ তিনি দরজার কাছে পউছতে পারলেন না। কন অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রেখেছে। এবার তার গা থেকে দর দর করে ঘাম বেরতে লাগলো। তিনি চিৎকার করছেন। তার মনে হল কেউ তার গলা চেপে ধরেছে।রসিদ সাহেব তার গলা থেকে অদৃশ্য হাতটি সরানর জন্য প্রান পন চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি কোন হাতের অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছেন না। তিনি এতক্ষণে একটি হাতের অস্তিত্ব খুযে পেলেন। অনুভব শক্তির সাথে সাথে তিনি দৃষ্টি শক্তিও ফিরে পেলেন। এবং তিনি দেখতে পেলেন যে হাতটি তিনি ধরে আছেন তা তার মে কনার হাত।



একটি চেয়ারের উপর বসে আছেন রসিদ সাহেব । সূর্যের আলো এখনো পুরোপুরি উজ্জল হয়নি। এই রকম কাক ডাকা ভরে তিনি সাধারনত প্রাত ভ্রমনে বের হন । কিন্তু আজ তিনি বাড়ির সামনে ছোট উঠনের এক কিনারে বসে আছেন । গত রাতের স্বপ্নটি তার দিনের শান্তি কেরে নিয়েছে । কতক্ষণ তিনি এভাবে বসে আছেন তা তিনি জানেন না। তার হাতে এক কাপ চা। চায়ে অভ্যাস বশত চুমুক দিয়ে জাচ্ছেন তিনি।

-কি করছ বাপি? কনার প্রশ্ন

-কিন্ত তোমার কাপ তোঁ খালি। খালি কাপে চা খাচ্ছ? বাবাকে লুকিয়ে মুখ টিপে হাস্ল কণা।

অপ্রস্তুত হয়ে টেবিলে চায়ের কাপ রাখলেন রসিদ সাহেব।

- পত্রিকাটা দিয়ে যা তো মা।

কয়েকটি খবরের উপর চোখ বুলিয়ে একটা জায়গায় এসে থেমে গেলেন তিনি। খবরের হেড লাইন রাজশাহী ভার্সিটিতে মেধাবি ছাত্র খুন। ভিতরের খবর পরে তিনি জানতে পারলেন । সন্ত্রাসী রাজু তার দল বল নিয়ে শফিক নামের একটি ছেলেকে খুন করেছে। রাজুকে কল করলেন রসিদ সাহেব। অফিসে আস তো এখনি।

রসিদ সাহেবের অফিস। তার টেবিলের অপর পাশে বসে আছে রাজু। যার নামে সব মিলিয়ে ৩২ টি মামলা ঝুলছে যার মধ্যে ৮ টি খুন ১১ টি ধর্ষণ। কোন এক অজ্ঞাত কারনে পুলিশ রাজুকে একবারও গ্রেফতার করেনি। রাজনীতির মাঠে এই রাজুই রসিদ সাহেবের সব থেকে বড় অস্ত্র।

-শফিক টা কে? রসিদের প্রশ্ন

-ওই যে ছেলেটা ভার্সিটিতে কি সব আদর্শ প্রচার করছিল ।সৎ, দক্ষ,সুনাগরিক তৈরি নিয়ে বেশ মাতামাতি করছিল । পার্টির জন্য এটি হুমকি হয়ে দারিয়েছিল । বলল রাজু

-যে ছেলে গুলকে মসজিদে নিয়ে যেত?

-জি। আপনিই তো মেরে ফেলতে বললেন।

-আচ্ছা তুই এখন যা

একটা সিগারেট ধরালেন রসিদ সাহেব।

রাত ১১ টা পয়ত্রিশ। এখন তার ঘুমুতে যাবার সময় হয়েছে। তিনি জানেন আজ রাতেও তিনি স্বপ্নটি দেখবেন। শফিক নামের একটি ছেলে তার কাছে প্রতিবাদ জানাতে আসবে। সে ঘুমানোর আনন্দ তার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য কেরে নিয়েছে।

বিষয়: সাহিত্য

১১৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File